খোকা ফিরে আয়
✍️পার্থ প্রতিম দাস
অনেক বছর হলো তার খোকা চলে গেছে। কোথায় গেছে কেউ জানে না। বিধবা মায়ের একমাত্র সম্বল হারিয়ে গেছে। কাঁদতে কাঁদতে মায়ের চোখের জল শুকিয়ে গেছে।
সময় বদলেছে। ইলেকট্রিক এসেছে,সবার হাতে মোবাইল ফোন। কিন্তু খোকা এলো না। মায়ের উপর এতো রাগ।
বিধবা মা জানে না, এখন চিঠির সময় নাই। এখন ইমেল, মোবাইলের যুগ। বাড়িতে রাখা পুরাতন পোষ্ট কার্ডে বৃদ্ধা কাঁপা কাঁপা হাতে লিখলেন, "আর কতদিন রাগ করে থাকবি বাপ? আমি একা একা আর পারছি না। খোকা ফিরে আয়। তোর হাতের আগুন কি পাবো না?"
তারপর একাকী মা কঠিন অসুখে পড়ে। মৃত্যু শয্যায় ছেলের মুখ দেখার জন্য তাকিয়ে থাকে। কিন্তু তার নাড়ি কাটা ধন, আদরের খোকা কোনো দিন এলো না। মায়ের মৃত্যু হলো।
এখন কয়দিন ধরে পোষ্ট অফিস তার পুরাতন স্থান ছেড়ে নতুন স্থানে সিফ্ট হচ্ছে।পোষ্টমাস্টারের নজর গেল পোষ্ট বক্সের দিকে। পুরাতন পোষ্ট বক্স খুলে পোষ্ট মাস্টার দেখে বুড়ি মায়ের চিঠিটা তখনো বক্সের মধ্যে পড়ে আছে।
বুড়ি মা তার ছেলের ঠিকানা জানতো না। ঠিকানা ছাড়া চিঠি তাই কোথাও যায়নি।
পোষ্টমাস্টার চিঠি খানা পড়ার চেষ্টা করলো। দীর্ঘ দিনের জল হাওয়া লেগে চিঠির প্রায় সমস্ত অক্ষর মুছে গেছে। শুধু চিঠির একটা লাইন তখনো পড়া যাচ্ছে। লাইনটা হলো, "খোকা ফিরে আয়।" নিঃসঙ্গ মায়ের বুকের এই আতুর ডাক মোছার মতন ক্ষমতা নেই রৌদ্র জলের।
=================
✍️পার্থ প্রতিম দাস
আকন্দা, বেলদা, পশ্চিম মেদিনীপুর
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন