google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re প্রতিটা দিনই হয়ে উঠুক বিশ্ব পরিবেশ দিবস ।। পাভেল আমান - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫

প্রতিটা দিনই হয়ে উঠুক বিশ্ব পরিবেশ দিবস ।। পাভেল আমান

প্রতিটা দিনই হয়ে উঠুক বিশ্ব পরিবেশ দিবস 

পাভেল আমান


পরিবেশ শব্দটার সঙ্গে জুড়ে গেছে দেহ মন প্রাণের এক নিবিড়তা একাত্মতা সর্বোপরি প্রকৃতির সংস্পর্শে মাতৃক্রোড়ের মত স্নেহ মায়া মমতায় একে অপরের সাথে আরো বেঁধে বেঁধে থাকার চিরন্তন অঙ্গীকার।প্রকৃতির নির্মল প্রশান্তি সবুজায়ন প্রাত্যহিক জীবনে আমাদের সবার সাথে অবলীলায় জুড়ে দিয়েছে ভারসাম্যের যোগসূত্র। এভাবেই পরিবেশ প্রকৃতি প্রত্যেক মানুষের জীবনধারার সঙ্গে মিলিত হয়ে গেছে। আমরা সকলেই অবহিত সভ্যতার সূচনাকাল থেকে মানুষ এবং পরিবেশ পরস্পর পরস্পরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। মানব সভ্যতা এবং প্রকৃতির পারস্পারিক বন্ধন চিরন্তন, শাশ্বত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষ জীবনে বেঁচে থাকার সকল প্রকার উপাদান সংগ্রহ করে তার চারপাশের পরিবেশ থেকেই। পরিবেশের ন্যূনতম সাহায্য ছাড়া মানব সভ্যতার অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। আবার সেই মানুষই স্বার্থপরের মতো পরিবেশকে দূষণ করে যথেচ্ছভাবে। যে পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে মানব সভ্যতার এত উন্নতি ও সমৃদ্ধি, সেই পরিবেশের এমন দূষণ সভ্যতার পক্ষে প্রতিকূল হয়ে দাঁড়ায়। আমরা যেন ব্যক্তিগত স্বার্থচারিতা লোভ-লালসা সর্বোপরি অমানবিকতার শ্রেষ্ঠত্ব নিদর্শনে পরিবেশের উপর চরম কর্তৃত্ব ফলাতে গিয়ে ডেকে আনছি পরিবেশের সমূহ সর্বনাশ। সাজানো-গোছানো সবুজের সমারোহে গড়া পরিবেশ যেন আজ বিপন্নতার শিখরে পৌঁছে বিনাশের দিকে ধাব্যবান। ফলে দেখা যায় পরিবেশের নানা ধরনের ব্যাপক অবক্ষয়, বিপর্যয় এবং যার ফলস্বরূপ আবির্ভূত হয় নানা প্রকার জরা-ব্যাধির, বিপর্যস্ত হয় বিশ্ব সমাজ। প্রকৃতির সাথে সম্পর্কের অবক্ষয় মানুষকে ঠেলে দেয় নিশ্চিত ধ্বংসের পথে। তাই পরিবেশ ও মানুষের পারস্পরিক অঙ্গীভূত নিবিড় সম্পর্ককে উদযাপনের উদ্দেশ্যে প্রতিবছরের এই দিনে পালন করা হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস। মানুষ ও প্রকৃতির চিরন্তন বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করে তোলার ক্ষেত্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন পরিবেশ ও প্রকৃতি। কিন্তু প্রতিনিয়ত এ পরিবেশকে আমরা নানাভাবে দূষিত করে আসছি। বিশ্বজুড়ে এখন পরিবেশ দূষণের মাত্রা ভয়াবহ। পরিবেশ দূষণের উল্লেখযোগ্য কারণের মধ্যে রয়েছে অত্যধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দরিদ্রতা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার, দ্রুত শিল্পায়ন, অপরিকল্পিত গৃহনির্মাণ, পলিথিন-প্লাস্টিক সামগ্রীর যথেচ্ছ ব্যবহার, অধিক হারে প্রসাধনসামগ্রীর উৎপাদন ও তার ব্যবহার ইত্যাদি।
এবারে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের ইতিহাসের পাতায় একটু চোখ বুলানো যাক। পরিবেশ সুরক্ষাকে সামনে রেখে ১৯৭২ সালে সুইডেনের স্টকহোমে জাতিসংঘের এক সম্মেলনে ৫ জুন-কে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এই দীর্ঘ পঞ্চশ বছরে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সংরক্ষণে রাষ্ট্রসমূহ কতটুকু কার্যকর ভূমিকা রাখতে পেরেছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। পরিবেশবাদীরা বলছেন, বিশ্বে কার্বন নিঃসরণ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। গড় তাপামাত্রা বাড়ার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিসমূহ আরও দৃশ্যমান হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই পঞ্চাশ বছরে হয়তো পৃথিবীতে দারিদ্র্যের হার কিছুটা কমেছে, অনেক শিশুর শিক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবার বেশ কিছুটা উন্নতি হয়েছে কিন্তু সমানতালে বিশ্বব্যাপী অসমতা বেড়েছে আর এর পেছেনে মূল ভূমিকা রেখেছে কিছু মানুষের স্বার্থে প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছাচার ব্যবহার।পরিবেশ দূষণের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সংযোগ সরাসরি। পরিবেশ দূষণের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন যেমন ত্বরান্বিত হয় তেমনি পরিবেশ দূষণের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব আরও মারাত্মক রূপ লাভ করে, যার চূড়ান্ত ভুক্তভোগী মানুষ এবং প্রাণ-প্রকৃতি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বিশ্ব নেতৃবৃন্দ পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্পবিপ্লব পূর্ববর্তী সময় থেকে ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় প্রাকৃতিক পরিবেশের যথাযথ সংরক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। যদিও উন্নয়নের সঙ্গে প্রাকৃতিক পরিবেশের সম্পর্ক কী হবে এ আলোচনা দীর্ঘদিনের। ১৯৯২ সালের ব্রাজিলের রিও শহরের নাম অনুযায়ী পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্পর্কিত ঘোষণায় উন্নয়নের অধিকারের পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।পরিবেশ শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। পরিবেশ শব্দটি আমাদের মনের মাঝে শিহরণ জাগায়। সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশ কেমন হওয়া দরকার আমরা তাও জানি। নেই শুধু এই পরিবেশ ভালো রাখার মনমানসিকতা। আমরা বুঝি শুধু নিজেকে ভালো রাখা। কিন্তু এটা মনে আনি না যে পরিবেশ ভালো না থাকলে দিনশেষে কেউ ভালো থাকবে না। প্রতিনিয়িতই পরিবেশ দূষণ হচ্ছে বিভিন্ন ভাবে। এ থেকে সংশোধনের পথ আমরা তৈরি করতে পারছি না। যার ফলে আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি তেমনি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি দুঃসহ পরিবেশ সৃষ্টি করে যাচ্ছি। পরিবেশ রক্ষা একক কোন কাজ নয়। এমনকি সরকারের পক্ষেও এককভাবে এ থেকে উত্তোরনের কোন পথ নেই। শুধু কাগজে কলমে বক্তৃতায় পরিবেশ রক্ষা করে চলছি।এবারের ২০২৫ সালের  বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে " প্লাস্টিক দূষণ আর নয়" এবং শ্লোগান হচ্ছে " প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়।"একটু আলোচনা করা যেতে পারে পরিবেশ দূষণ কি এবং কি কারণে পরিবেশ দূষিত হতে পারে ? পরিবেশের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক উপাদানের অবাঞ্চিত পরিবর্তন, যা জীবজন্তু ও প্রকৃতির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। দূষণের ফলে মাটি এবং বায়ু দূষণ হয়। এর ফলে মানুষের পাশাপাশি পরিবেশের ক্ষতি সাধন হয় এবং জলবায়ুর পরিবর্তন হয়ে জনজীবন হুমকির মুখে চলে যায়। প্রতিবছর পৃথিবীর ৪০ শতাংশ ভূমি ক্ষয় হচ্ছে, যা সরাসরি বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যাকে প্রভাবিত করছে। ২০০০ সাল থেকে এই পৃথিবীতে খরা প্রবণ জমির এলাকা বেড়েছে ২৯ শতাংশ, যা ২০৫০ সালের মধ্যে তিন চতুর্থাংশের বেশি বেড়ে যেতে পারে। এই খরা প্রবণ এলাকাগুলোকে পুনরায় সবুজ করে তোলা সুরক্ষা দরকার। প্রতিনিয়ত যেভাবে গাছ কেটে দেওয়া হচ্ছে, তাতে আর কিছু বছরের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাবে আরো কয়েক গুণ। এই তাপমাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণে আনতে গাছ লাগানো প্রয়োজন।প্রতিটা মুহূর্তেই আমরা উপলব্ধি করছি আমাদের হঠকারিতা আকাশ ছোঁয়া চিন্তাভাবনার পূরণে আগ্রাসী মনোভাবকে বাস্তবায়ন করতে সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষার অতৃপ্ততায় আজ প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যুদ্ধ রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে লড়াই চক্ষুনিমেষে হানাদার ইসরাইল গাঁজা ভূখণ্ডকে মৃত্যুভূমিতে পরিণত করলো সব ক্ষেত্রেই গোলা বারুদে কেঁপে উঠল পৃথিবী তার সঙ্গে বিনষ্ট হলো জীব বৈচিত্র্য প্রাকৃতিক ভারসাম্য এবং পরিবেশের সজীবতা। এ যেন জোর যার মুলুক তার। দুর্বলের বিরুদ্ধে শক্তিশালীর অমানবিক লড়াই। সেখানে বিশ্ব নিরব নিশ্চুপ দর্শক। বিশ্ব ধরিত্রী আর কত সহ্য করবে তার ওপর যুদ্ধের ধ্বংসলীলা। শুধুমাত্র মুখে শান্তির বাণী বললেই হবে না পরিবেশ দিবসে কয়েকটি গাছ লাগালাম আর বড় বড় গাল ভরা কথা সেখানেই বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের সার্থকতা নয়। সময় এসেছে বিদ্বেষ বিভাজন অসহিষ্ণুতা অস্থিরতা ভেদাভেদ বৈষম্য ধর্মীয় অনৈক্য প্রাদেশিকতা সাম্রাজ্যবাদ সরিয়ে রেখে মানবতার আহবানে সাড়া দিয়ে পৃথিবীকে বাঁচাতে জীব বৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে সর্বোপরি আমাদের জীবনের বেঁচে থাকাকে স্বাভাবিক করে তুলতে সবুজায়নের প্রসার ঘটিয়ে আমাদের পরিবেশকে স্থিতিশীল নির্মল সজীব করে তুলতে হবে। একে অপরের বিদ্বেষ বিভেদ ভেঙে দিয়ে মনুষ্যত্বের জাগরণে পৃথিবীর সুস্থতায় ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের হাত থেকে পরিবেশ ও প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত ও সজীব করে তুলতে আমাদের পারস্পরিক সচেতনতা পাশাপাশি সারা বছর গাছ লাগাতে হবে গাছকে রক্ষা করতে হবে সেখানেই পরিবেশ দিবস পালনের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা। শুধুমাত্র ৫ ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে নয় আমাদের পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা কর্তব্য নিষ্ঠা বন্ধুসুলভ নজরদারি  লাগাতার চলতে থাকুক বছরের প্রতিটা দিন যেখানে আমাদের সঙ্গী হোক বৃক্ষরোপন কর্মসূচি। 

---------------------------------
পাভেল আমান -হরিহরপাড়া -মুর্শিদাবাদ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন