চেনা প্রতিবেশী
(দ্বিতীয় পর্ব )
দীপক পাল
আহিরের বকবকানিতে ইমনের ঘুম ভাঙে। তাকিয়ে দেখে আহির জানলার ধারে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আপন মনে কি সব বলে চলেছে। ইমন ওর গালে একটা চুমু খেয়ে বলল, 'কি বলিছিস রে আহির আপন মনে?' জবাবে আহির বলে, 'পাক্কে যাবো আমি।' ইমন হেসে বলে, 'দাঁড়াও, বারান্দার জামা কাপড়গুলো গুছিয়ে তুলি তারপর তোমাকে খাইয়ে জামা-প্যান্ট পড়িয়ে। দিয়ে পার্কে নিয়ে যাবো কেমন? ততক্ষণ তুমি এখানে বসে একটু খেল। আমি তোমার খেলনাগুলো দিচ্ছি এনে।' বলে আহিরের খেলনার বাক্সটা ওর কাছে দিয়ে তড়াতাড়ি করে বারান্দা থেকে শুকনো জামা কাপড়গুলো এনে গুছিয়ে রাখলো। খুব সাধারন ভাবে একটু হালুয়া বানিয়ে আহিরকে খাইয়ে। সাজিয়ে গুজিয়ে ও নিজে সেজে গুজে ওকে পার্কে নিয়ে গেল। পার্কে আহিরকে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে। সন্ধ্যে হলে বাড়ী ফিরে এলো।
ত্রিহান ফিরলো আরো প্রায় এক ঘন্টা পরে। ত্রিহান পাখার স্পিডটা আরো বাড়িয়ে দিয়ে আহিরের সামনে একটা চেয়ারে বসে বললো, 'কি আহিরসোনা আজকে পার্কে গিয়েছিলে?' আহির মাথাটা হেলিয়ে বলে, 'হ্যা'। ইমন ঘরে ঢুকে ত্রিহানকে বলে, 'জামা কাপড় পাল্টে হাত পা ধুয়ে এসো তাড়াতাড়ি। ততক্ষণে আমি তোমার খাবার রেডি করে নিয়ে আসি গরম গরম। আমি এখনো চা খাইনি কিন্তু।' ত্রিহান চেয়ার ছেড়ে উঠে বললো, 'এই যাচ্ছি। ভেরি সরি।'
পুরো রেডি হয়ে ত্রিহান খাবার টেবিলে বসতেই ইমন দুটো ডিসে করে রুটি ও সজনে ডাঁটা দিয়ে আলুর তরকারি। নিয়ে এসে টেবিলে রাখলো। সজনে ডাঁটা দিয়ে আলুর তরকারি খেতে বড়ো ভালবাসে ত্রিহান। ত্রিহান খেতে খেতে বলে, 'আমাদের অফিসের এক ড্রাইভার জীবন বাঘাযতীনে থাকে। সে বললো, 'আমাদের বাঘাযতীনে অনেক নতুন ফ্ল্যাট তৈরী হচ্ছে। যদি দেখতে চান তবে দেখাতে পারি আপনাকে।' আমি বললাম, 'আজকে যেতে পারবে টিফিন টাইমে?' 'আপনি।
যদি ব্যবস্থা করতে পারেন তবে আমার কোন আপত্তি নেই।' চেয়ার থেকে উঠে বলি,' দাঁড়াও দেখছি।' তারপর Senior Administrative Officer তড়িৎ সরকারের চেম্বারে ঢুকে তাকে সব খুলে বলে।
তিনি বললেন, 'ঠিক আছে আরওতো ড্রাইভার আছে কোন অসুবিধা হবে না। তুমি শ্রাবন্তিকে কাজটা বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাও। আর ওকে বলবে আমি বলেছি। তারপর ওকে নিয়ে প্রথমে যাই বাঘাযতীন তারপর ওর পরামর্শে গেলাম গড়িয়াতে।' সেখানে "ছায়ানীড়" নামে একটা হাউসিং এপার্টমেন্টে একটা ফিফথ্ ফ্লোরের ফ্ল্যাট পূব দিক খোলা আমার পছন্দ হয়েছে।
খুব কাছে মেট্রো রেল বাস স্ট্যান্ড রেলওয়ে স্টেশন। আমাদেরতো মেট্রোটাই বেশী দরকার। আমাদের অফিসটা ময়দান স্টেশনের কাছে।' খুব আগ্রহের সাথে ইমন সব কথা শুনে জিজ্ঞেস করলো,
- ' কিন্তু দামের কথা তো কিছু বললে না? মূল্য কত?
- ' ও বলিনি না। দাম আটত্রিশ লক্ষ টাকা। এটাই একমাত্র আয়ত্তের মধ্যে আছে দেখলাম।'
- ' ব্যাঙ্ক লোন নিয়ে?'
- ' ঠিক তাই। অবশ্য যদি ব্যাঙ্ক লোন জোগাড় করতে পারি। চল সামনের রবিবার দেখে আসি।'
- ' তা নাহয় গেলাম, কিন্তু আটত্রিশ লক্ষ টাকা কি কম বলো?'
- ' কিন্তু বাঘাযতীনে ফ্ল্যাটের দাম তো রিচের বাইরে। দামও বেশী আবার বড়ো কন্জেস্টেড।'
এর মধ্যে চা বানিয়ে আনলো ইমন। চায়ের কাপে একটা ছোট্টো চুমুক দিয়ে বললো,
- ' একটা ভালো খবর তোমাকে জানাই, আমার সামনে একটা প্রোমশনের খবর আসছে সেটা Asstt. Admin Officer.
- ' ওমা তাই নাকি কবে প্রোমশনের অর্ডারটা পাবে?'
- ' আমি এ ব্যপারে কিছুই জানি না যতটুকু শুনেছি আমার বসের কাছে। বলেছে অর্ডার আসছে খুব তাড়াতাড়ি। তৈরি থাক দায়িত্ব বাড়তে চলেছে। আবার ফ্ল্যাট দেখতে যাচ্ছো। ওটাও যদি হয়ে যায় ঠাকুরের কৃপায় তবে হবে ত্রহস্পর্শ যোগ। তাই যেন হয়। তোমার শুভ হোক।
- ' সত্যি এটা খুব ভাল খবর। ' ইমন উঠে রান্নাঘরে গেল। কথা বলতে বলতে অনেক দেরী হয়ে গেল। সব কিছু ধুয়ে টুয়ে রাখলো। ভাবছে ওদিকে আহিরের কি খবর কে জানে এখন সে কি করছে। একবারও তো এদিকে আসলো না।
পরক্ষণেই শুনতে পেল ত্রিহানের গলা 'চাই দৈ' তার সঙ্গে আহিরের খিল্ খিল্ হাসি। ইমনও মুচকি হাসলো। ত্রিহানের জন্য ছানা নিয়ে এসে দেখে আহিরকে কাঁধে চাপিয়ে চাই চাই করছে আর আহির হাসতে হাসতে ত্রিহানের কাঁধেয় গড়িয়ে পড়ছে। ইমন বললো, ' ত্রিহান ছানাটা ধরো, নামাও ওকে।' ত্রিহান আহিরকে নামিয়ে ছানার বাটিটা ধরলো।
তারপর আহিরকে কোলে বসিয়ে চামচে করে ছানা তুলে একবার নিজে খাচ্ছে আর একবার আহিরের মুখে তুলে দিচ্ছে। ইমন বসে বসে বাপ বেটির একসাথে ছানা খাওয়া দেখছে। বেশ লাগে ওদের একসাথে ছানা খাওয়া দেখতে।
রবিবার দুপুর একটায় একটা ক্যাব বুক করে সখেরবাজার থেকে গড়িয়ার দিকে রওনা দিল। একেবারে ক্যাম্পাসের গেটে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ক্যাব চালককে ছেড়ে দিল। ত্রিহান ফোনে কাউকে কল করলো। ওখান থেকে উত্তর এলো, 'হ্যাঁ স্যার আপনি সোজা আমাদের অফিসেচলে আসুন আমি গেটে বলে দিচ্ছি।' পরক্ষণেই মেন গেটটা খুলে গেল।। ইমন ও আহিরকে নিয়ে ত্রিহান গেট পেরিয়ে একটু হেঁটে অফিস রুমে ঢুকলো। সামনে রিসেপসনে। জিজ্ঞেস করলো,
- ' আচ্ছা মিনু ম্যাডামকে একটু খবর দেবেন? বলবেন যাকে আসার কথা বলেছেন এইমাত্র সে এসে গেছে।'
' আপনার নাম কি?' '
আমার নাম ত্রিহান চ্যাটার্জী।'
' আচ্ছা আপনারা ঐ চেম্বারে
গিয়ে বসুন, আমি এখুনি খবর পাঠাচ্ছি।' বলেই টেলিফোনটা তুলে নিল।
ওরা সুইংডোর ঠেলে নির্দিষ্ট চেম্বারে ঢুকে বসলো। সুইংডোরের খোলা বন্ধের আওয়াজ আহির অবাক হয়ে ইমনকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে, ' উঁ ' ছোট্ট জিজ্ঞাসা। মিনু ম্যাডাম এসে চেম্বারে ঢুকে বলে, 'নমস্কার, বলুন ফ্ল্যাট দেখতে এসেছেন একেবারে মিসেসকে নিয়ে। আর এই ছোট্টো মিসটাওতো আছে। খেয়াল করিনি আগে। তা দেখে আসুন মিসেসকে নিয়ে। আমি একজনকে দিচ্ছি আপনাদের সাথে সে দেখিয়ে দেবে। তবে একটা কথা লোক কিন্তু দেখে যাচ্ছে পরপর। যে কোনদিন বুক হয়ে যেতে পারে।' তারপর বাইরে বেরিয়ে একজনকে ডেকে নিয়ে এলো। সে এসে বললো, 'নমস্কার আমার নাম বীরেন। আপনি ও আর একজন ভদ্রলোক একদিন বিকেল বেলা এসে ফ্ল্যাট। দেখে গিয়েছিলেন না?' ত্রিহান উত্তর দিল, ' হ্যাঁ, আজকে স্ত্রীকে এনেছি সঙ্গে।'
'সে তো আনবেনই। আপনার নিশ্চয়ই কোন ফ্ল্যাট পছন্দ হয়েছে তাইতো দিদিমণিকে এনেছেন যদি তার পছন্দ হয়।
আমি বলছি পছন্দ হবেই দেখবেন। এতসব সুবিধা এই জায়গায় যে নাপছন্দ হওয়ার কিছু নেই। এখন নেওয়া না নেওয়া আপনাদের হাতে।'
কথা বলতে বলতে ওরা পৌঁছে গেল ঠিক জায়গায়। লিফটের কাছে এসে দাঁড়াল ওরা।
( চলবে )
_______________
Dipak Kumar Paul, ( 9007139853)
DTC Southern Heights,
Block-8, Flat-1B,
Diamond Harbour Road,
Kolkata - 700104
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন