বুমেরাং
সমীর কুমার দত্ত
সোনাগাছির গৌরীশঙ্কর লেনের এক নিষিদ্ধ পল্লীতে বেড়ে উঠেছে সুনন্দা। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে এসেছিল ও। সমাজের মাথা ওলা কেউ একজন ওর বাবাকে হত্যা করে মাকে সম্ভোগ করে বিক্রি করে দিয়ে গেছে এই পতিতালয়ে। সেই থেকে ও বেড়ে উঠেছে এখানে। কতো মাতালকে ঢুকতে দেখেছে এই নিষিদ্ধপল্লীতে । কতো মাতলামি দেখেছে। কতো দেহ প্রসারিণীকে এমন কি নিজের মা কে সেই সব মাতালদের মনোরঞ্জন করতে দেখেছে। যদিও ওর মা বীণা ওর সাক্ষাতে কিছু করেনি, পাছে বড় হয়ে মেয়ে ওকে ঘৃণা করে।
নিষিদ্ধ পল্লীর মালকিনরা বাচ্চা সহ কোন মহিলাকে কিনে নিলে তাদের থাকার ব্যবস্থা আলাদা করে দেয়। ছেলেরা বড় হলে ফায় ফরমাশ খাটায় আর মেয়েরা বড়ো হলে, তাদের ভবিষ্যতে দেহ প্রসারিণী হবার প্রশিক্ষণ দেয়। তাদের বাইরে বের হতে দেয় না, পাছে পালিয়ে যায়। ইতিমধ্যে সুনন্দার মা মেয়ের ওই ঘৃণ্য বৃত্তি গ্রহণ করতে বাধ্য হওয়ার জন্য দেখে সহ্য করতে না পেরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। সেইদিন সুনন্দা মানসিক ভাবে ভীষণ ভেঙে পড়েছিলো এবং সেই থেকে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠেছিলো।
সুনন্দা ভবিষ্যতে দেহ প্রসারিণী হয়ে একটা বন্দুক জোগাড় করে অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িত কোন এক ব্যক্তির মনোরঞ্জন করে। উদ্দেশ্য যদি সেই ব্যক্তি, যে ওর বাবাকে হত্যা করে মায়ের সর্বনাশ করে এখানে ওদের এনে তুলেছে , যদি কখনও এখানে আসে, ওই পিস্তল দিয়ে তাকে ইহলোক থেকে ছুটি করে দিয়ে নিজেকেও শেষ করে ফেলবে। এখানে তার নাম বদল হয়ে নামকরণ হয়েছে শশীকলা।সত্যি সত্যিই একদিন সেই ব্যক্তি এলো ওই নিষিদ্ধ পল্লীতে। বয়স্ক এক দেহ প্রসারিণী গোপনে এসে ওকে বললো, " শশীকলা, দেখবি আয়, যে তোকে আর তোর মাকে এখানে এনে তুলেছে, সেই লোকটা এসেছে মালকিনের কাছে। আমি দেখেই চিনতে পেরেছি।" শশীকলা ওরফে সুনন্দা বললো," তুমি কি করে চিনলে?"
—তোকে আর তোর মা কে যেদিন ওই লোকটা মালকিনের কাছে নিয়ে এসেছিলো , আমি পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। আড়ালে দাঁড়িয়ে ওদের সব কথা শুনছিলাম। মালকিনকে লোকটার হাতে টাকা দিতে দেখেছিলাম। এখন দেখার পর খুব চেনা চেনা লাগলো। পরে মুখটা মনে পড়ে গেলো। মালকিন হয়তো তোর কাছেই নিয়ে আসবে মনোরঞ্জন করাতে
—আসাচ্ছি। আসুক না একবার।
বলতে বলতে মালকিন ওর ঘরে লোকটাকে নিয়ে এসে হাজির করলো। ভালো টাকা পে করেছে নিশ্চয়ই। কারণ অল্প বয়সী মেয়েদের দর বেশি।
সুনন্দা ওরফে শশীকলা প্রস্তুত হয়ে গেলো। দরজা বন্ধ করে লোকটার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বললো, " তুই আমাদের পরিবারের সকলের সর্বনাশের কারণ। ভগবান তোকে পাঠিয়েছেন আমার কাছে, যাতে আমি নিজের হাতে তোকে শাশ্তি দিতে পারি।" বলেই পিস্তলের ট্রিগারটা টিপে দিলো। বুকে আর একটা গুলি করলো মৃত্যু নিশ্চিত করতে। তারপর নিজেকে শেষ করে দিলো শেষ গুলিটা দিয়ে।
----------------------------------------
Samir Kumar Dutta
Pune, Maharashtra
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন