চতুর্থ বিশ্বের কবিতা
রূপক চট্টোপাধ্যায়
১)
শরীরের সিঁড়ি বেয়ে উঠছে সময়।
ফুরানো আলোয় দেখা মুখ
ভাঙাচোরা ক্ষত, অসম্পূর্ণ জন্মফুল
আর একটি ঝাপসা কলতলা!
কার জন্য নৌকায় সাজলে নদী
কার জল সংলাপে মগ্ন হলে সান্ধ্য সোহাগের
তেরাছা অস্তরাগ! আকাশ পূর্ণ পক্ষী আবেশ!
সবেই নিয়ে গেল যে জন
তার জন্য প্রতিটি প্রহর জন্মান্তর মনে হয়!
২)
ত্রিতাইপে রেখো। দহনে রেখো, তবু
নিমগাছের ছায়ায় শরীর জুড়োতে দিও।
খাটে পা ছড়িয়ে বসা অনার্য আমি, তবু
বিশ্বরূপ দেখিও চোখের গভীর
জানলায় আটকে থাকুক ভুবন ভোলানো অবসর!
ভয়ে ভয়ে প্রেমে পড়ছি তোমার,
তোমার নব নব অসুখের
তোমার কাঙাল হওয়া দিগন্তের
তোমার নাভির গোলাপী নাব্যতার
প্রেমে পড়ছি আমি!
দহনে রেখো,
আমি যতক্ষণ না তোমার জন্য উন্মাদ প্রেমিক হই!
৩)
লাস্ট ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। গন্তব্য নেই।
যাওয়াটাই মনে রেখো। পায়ের ছাপে
একটি একটি প্রহর এঁকে পূর্ণ করো অর্ধচন্দ্র মাস!
ঘাসে ঘাসে ক্ষুধা ছড়িয়ে আছে। হরিণ জন্মে দেখা হবে।
এখন ব্যস্ত সৌর টান। তোয়ালে জড়িত নদীর শরীর
স্নানের জন্য পর্যন্ত নয়। শ্যাওলায় জড়িয়ে আসা জল।
যুদ্ধের প্রয়োজনে শিশুদের শবদেহগুলি
সাজিয়ে রাখো। পাশে থাক শান্তির ভ্যাবলা পতাকা!
লাস্ট ট্রেন ঝুলে আছে গতির গলায়। গতি জাড্য
তাকে নিয়ে যায়। ট্রেন চলে না। গন্তব্য নেই।
পরজন্মে যুগ বদলাবে। শামুকের খোলায়
গুটিয়ে রেখো বোরলিন মাখা শীতকাল,
যুদ্ধের শেষদিকে দেখা হবে মুণ্ডহীন দেহে
ঘাসে ঘাসে ক্ষুধা ছড়াবে
আমি হব তোমার জন্য রৌদ্র হরিণ!
৪)
কেন পারিনি মীন জন্মে তোমার জাল ছিঁড়ে
বার হতে। শ্যাওলার ঘরে আমরা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে
চারজন থাকি। কলহের শেষে পাত পেড়ে
খেতে বসি সবাই। আমাদের দেহজাত
আঁশটে গন্ধে কোন ধার্মিক ভাব নেই।
বিশুদ্ধ কাম আর খাদ্য মিলে আমরাই
পাললিক লিপিতে জীবন চরিতে লিখি।
নদীর জরায়ু জুড়ে আমাদের মেলা ও মৃতদেহ
ভাসে। দুটি পাড়ে ঝুঁকে পড়ে সোনাঝুরি।
ডালে ডালে মাছরাঙাদের ঠোঁটের তীক্ষ হাসি
তোমার জাল ছিঁড়ে
আমাদের চিৎকার মুক্তি পাবে কবে!
রূপক চট্টোপাধ্যায়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন