গভীর রাতে গলা শুকাতেই বিদিশা হাতড়ে দেখলো জলের জারটা খালি। কিচেনের দিকে এগোতেই কান্নার শব্দ পেল! বুঝতে পারলো রিমঝিম কাঁদছে! উৎকন্ঠায় দরজা ধাক্কাতেই স্থির হলো! দেখলো, রিমঝিম তার দুটো পায়ের ফাঁকের মধ্যে মাথাটা ঢুকিয়ে কাঁদছে। চারদিকে ছড়ানো ছিটানো কিছু ছবি আর ডাইরির পাতায় লেখা মনের কথা।
বোনের ঘর থেকে বেরিয়ে কিচেনের ফ্রিজার থেকে জল ঢকঢক করে খেয়ে
Harddranks-এর বোতলটা সাথে নিয়ে নিজের রুমের সাথে লাগোয়া ব্যালকনির চেয়ারে বসে একটু একটু পেগ শেষ করতে লাগলো বিদিশা। অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়েছিল চেয়ারেই। ঘুম ভাঙতেই ফ্রেস হয় তাড়াতাড়ি।
অর্নবের সাথে দুদিন পরেই বিয়ের ডেট বিদিশার। অর্নব এসে খোঁজ ক'রাতে দেখে বিদিশার ঘর ফাঁকা। অফিসে ফোন করে জানতে পারে, অফিসেও যায়নি। টেবিলে পরে থাকা চিঠি একনজরে দেখতে পায় অর্নব।
- "আমি আর্জেন্ট বিদেশ যাচ্ছি, বিয়ের সমস্ত আয়োজন কমপ্লিট, বিয়েটা ঠিকঠাক হওয়ার দায়িত্ব তোমাকে দিলাম, শুধু পাত্রী বদল হলো, আমার বোনকে বিয়ে করো। মাই ফাস্ট প্রায়রিটি ইজ বিজনেস।" বিদিশা চিঠিটা অর্নবকেই লিখে গেছে।
অর্নব চিঠিটা রিমঝিমিকে দিল । ও বললো,"বিদিশার কাছে এর বেশি আশা করা বৃথা। ওর কাছে প্রায়রিটি বিজনেস-ই, কোন রিলেশন নয়!"
পিছনের স্মৃতিতে ফেরে রিমঝিম। তখন বয়স মাত্র পাঁচ, দিদির পনেরো! বয়সের পার্থক্যে দিদি শাসনেই রাখতো। সেদিন থেকে পুরোপুরি উপযাচক হয়ে উঠলো, যেদিন বাবা-মা এক্সিডেন্টে চিরতরে চলে গেল। এমন কি হোস্টেলেও পাঠানো হলো ওকে। দিদি বাড়িতে থেকেই বিজনেসটা সামলেছে কিন্তু বোনের আনন্দের কথা মাথায় রাখেনি, টাকা পাঠিয়েই দায়িত্ব শেষ। তখন বয়স বারো, ছুটিতে বাড়ির এলে কাজের লোকটা অসভ্যতামি করলে লোকটার মাথা ফাটিয়ে দিদিকে জানালে দিদি চুপ করিয়ে দেয়, বদনামের অজুহাত দেখিয়ে। হোস্টেলে রাখার অজুহাত, কাজের অজুহাতে হোস্টেলে না আসা, এমন কি জন্মদিনেও এড়িয়ে যাওয়ার অজুহাত। কিন্তু রিমঝিমের আঠারো বছরের
জন্মদিনে যখন দিদি হোস্টেলে এলো অর্নব ছেলেটাকে সাথে নিয়ে তখন ভীষণ অবাক হয়ে জড়িয়ে ধরল' রিমঝিম দিদিকে, অপার আনন্দ। কিন্তু চোখ ছিল ছেলেটার দিকেই-সুঠাম গড়ন, জিম করা বডি দেখে চোখ ফেরাতেই পারছিল না। কিন্তু দিদি অবাক করে বলল, "ওরা দুজনে বিয়ে করছে।" শুনে ভীষণ রাগ হয়েছিলো।ওর 'প্রথম ভালোলাগা' দিদির বর হবে মানতেই পারলোনা। তখন থেকেই অর্নবের ছবি নিজের মোবাইল বন্দী করত ও। অর্নবকে নিয়ে নিজের কাল্পনিক স্বপ্নের কথাও লিখতো ডাইরিতে।
বিদিশার ফ্লাইট আকাশে উড়লো। ঝাপসা হয়ে আসছে ওর চারপাশ। বোনের সুখের জন্যই এইটুকু মিথ্যে অজুহাত দেখানো ভীষণ দরকার ছিল যে আজও....!!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন