google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re প্রণব কুমার চক্রবর্তীর বিশেষ রচনা - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বুধবার, ১৮ জুলাই, ২০১৮

প্রণব কুমার চক্রবর্তীর বিশেষ রচনা




জার্মান কবি গ্যেঁটের রচনায় ফরাসি গজলের নবীকরণ

                     

  ..."In the word we see the brigde
      Bridegroom in the spirit
      For this wedding sanctified
      Hafis takes the merit ."...
অামাদের দেশে মাইকেল মধুসূদন তাঁর লেখায় প্রথম
শব্দের সাথা শব্দের বিবাহের কথা বলেছিলন , কিন্তু গ্যেঁটে নতুন করে এখানে তাঁর লেখায় শব্দের সঙ্গে ভাবের বিবাহের কথা বললেন ৷
এবং সেই  মেলবন্ধনের কৃতিত্ব তিনি সম্পূর্ণভাবে
হাফেজকে ( বিখ্যাত গ্রন্থ দিওয়ান নামায় ) দিয়েছেন ৷
 ফরাসি গজলের সম্রাট হাফজ ছিলো গ্যেঁটের সবথেকে প্রিয়তম কবি ৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , তিনি কালিদাসের লেখা শকুন্তলা নাটকের ইংরেজী  অনুবাদ ( স্যার ড্বল্যু জেমসের অুবাদ ) পড়ার পরে এতটাই প্রভাবিত এবং অনুপ্রাণিত  হয়েছিলেন যে , তাঁর লেখা ফাউস্ট নাটকের প্রোলগ চরিত্রটির মধ্যে তার ছায়া লক্ষ্য করা যায় বলে অনেকেই  বলে থাকেন ৷ বলা বাহুল্য ,
গ্যেঁটের হাফেজ অনুরাগের ব্যাপারটা অারোও  কিছুদিন পরের ঘটনা ১৮১২ সালে ৷ এই সময়েই বিশিষ্ট কবি হ্যামার পার্গস্টালের ইংরেজী অনুবাদ করা হাফেজের গজল পড়ে তিনি যেন এক নোতুন কাব্য জগতের স্বাদ পেলেন ৷ হাফেজের কবিতা যন হয়ে উঠলো তাঁর প্রাণের অতীব মূল্যবান সম্পদ ৷ এই দিওয়ান গ্রন্থেরই শুরুতে দিওয়ান - নামা অধ্যায়ে গ্যেঁটে সাহেব লিখেছেন -
 ..."And let the world entirely sink
     Hafis ,with you or else with none
     I will compete ! Let joy and pain
     Be ours , in twins , in common . "...
অাসলে , গ্যেঁটে তাঁর লেখার জগতে হাফেজ ছাড়া অন্য কাউকে প্রতিযোগিতায় অানতে রাজি ছিলেন না ৷ তাঁর কাছে এইব্যাপারে অশ্রু এবং অানন্দ যেন সমধারায় প্রবাহমান ৷৷অন্য সব লেখা গ্রন্থের মধ্যে "ওয়েস্ট-ইস্টার্ন দিওয়ান" গ্রন্থটি নিসন্ধহে একটি অসামান্য রচনা ৷ এই  গ্রন্থের ভেতর দিয়েই  তিনি তাঁর  প্রাচ্যের প্রতি  একটি বিশেষ অনুভূতির ব্যাঞ্জনা ব্যক্ত করেছেন ৷ তাঁর স্মৃতি , প্রঞ্জা , সর্বোপরি  মানবতার প্রেম য পাশ্চাত্ব থেকে অনেকাংশে বেশি সেটা তাঁর এই গ্রন্থের ছত্রে ছত্রে প্রতিফলিত ৷ অধ্যাপক অলোক রঞ্জন দাশগুপ্তের মতে - গ্যেঁটের এই "ওয়েস্ট-ইস্টার্ণ দিওয়ান " প্রকৃত অর্থে  ভারতের সাহিত্যের অন্যতম  সংস্করণ  মাত্র ৷ তিনি তাঁর বাংলায় রূপান্তর করা বই  -"প্রাচী- প্রতীচীর মিলন বেলার পুঁথি " লিখেছেন ১৯৯৭ সালে ৷ নামটি যদিও  সুন্দর , কিন্তু ব্যবহৃত শব্দবন্ধের মধ্যে অাসল অনুষঙ্গটিই থেকে গেছে অনুপস্থিত ৷ অাসলে গ্যেঁটের রচনায় তাঁর কবিকৃতি দারুন ভাবে পরিনত ৷ অন্য কোনও বিদেশী ভাষার অনুবাদ বা রূপান্তরীত করা খুব সহজ সাধ্য ব্যাপার নয় ৷ ইংরেজ কবি এডওয়ার্ড ডাওডেন এবং গ্রাহাম জেওভালে বলা বাহুল্য এই ব্যাপারে ইংরেজী অনুবাদ করেছিলেন , কিন্তু সেগুলি তেমন মনোগ্রাহী হতে পারেনি ৷ কাজি অাব্দুল ওদুদ তাঁর লেখা " কবিগুরু গ্যেঁটে"  গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডে এই " দিওয়নের" কিছু কবিতা অনুদিত করেছিলেন বটে , কিন্তু সেগুলিও তেমন মনোগ্রাহী হয়ে উঠতে পারেনি ৷
  তবে সমস্ত ব্যাপারটা অালোচনা  করলে একটা জিনিষ অবশ্যই অাবুল হাসনাত সাহেবের মতে - অনুবাদ বা রূপান্তরের কিছু কিছু জায়গায় অারবি এবং ফা্র্সি শব্দের প্রয়োগ ঘটালে হাফেজের কাব্যের পরিবেশ সৃষ্টিতে বেশী সহায়ক হতো ৷ বলা বাহুল্য , মহাকবি গ্যেঁটেও তেমনটাতেমনটাই করেছিলেন ৷ অধ্যাপক পার্বতী চরণ ভট্টাচার্য  তাঁর "ওমর খৈয়াম" অনুবাদে যেমনটি করেছেন ৷
   মহাকবি গ্যেঁটের দিওয়ান কাব্যগ্রন্থটি মোট বারোটি খন্ড ৷ প্রথমটির নাম - "মেগাল্লিনামা" ৷
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত এটি অনুবাদ করে নাম দিয়েছিলেন " গায়েন পুঁজি" ৷
   গ্যেঁটের এই দিওয়ানে গ্রন্থের অন্যতম বিশেষ কবিতা - "হেজিয়া-মহাযাত্রা"র ছত্রে ছত্রে অামরা দেখতে পাই  : সমস্ত দিকের ( উত্তর , দক্ষিন ,,এবং পশ্চিম দিকের ) সমস্ত ভূ-খন্ডই ভেঙে  চাখনাচুর ৷ সিংহাসন সব চূর্ণ -বিচূর্ণ ৷ সাম্রাজ্য কম্পিত এবং শিহরীত ৷ সেখানে গোষ্ঠীপতির অাসরে অানন্দ উৎসব হবে ৷ অথচ ....
     অন্য এক জায়গায় উল্লেখ অাছে স্বাধীনতার কথা : তুমি অামার জন্য রেখে যাও  শুধু ধাবমান অশ্ব অার লাগাম ৷ অামি অানন্দে ছুটবো - দূর থেকে বহুদূর ৷ মাথার উপরে বিরাজ করবে শুধু অাসমানের হুরী অার সুরাইয়া ৷ ....
   সত্যিই  একথা অনস্বীকার্য যে , জার্মান কবি শব্দের সাথে ভাবের বিবাহ সম্পন্ন  করেছিলেন ৷

( এই লেখাটির ব্যাপারে মূলত অাবুল হাসনাত সাহেব , অাব্দুল ওদুদ , অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ,  অধ্যাপক পার্বতী চরণ ভট্টাচার্য , সহ অন্যান্ন ইংরেজী সাহিত্যের লেখকদের লেখার সাহায্য নিয়েছি ৷ )



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন