অমৃতা বিশ্বাস সরকারের মুক্তকথা - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Wednesday, July 18, 2018

অমৃতা বিশ্বাস সরকারের মুক্তকথা

এক পশলা টাটকা বৃষ্টি



আবার যথারীতি আকাশে দেখা যাচ্ছে মেঘেদের জটলা । এই সময়টায় মনে হয় যেন
মেঘগুলো খুব কাছে এসে গেছে । ইচ্ছে হলেই হাত দিয়ে দিব্যি ছুঁয়ে দেখতে
পারবো । জৈষ্ট্যের আম-কাঁঠাল পাকানো গুমোট গরমকে টেক্কা দেওয়ার একটাই
অস্ত্র বৃষ্টি । শেষ জৈষ্ট্যেই আসছে আসছে রব পড়ে যায় । কিন্তু আজকাল
সবকিছুতেই পরিবর্তন ঘটছে তো যেন যুগের সাথে তাল মেলানোর ভীষণরকম চেষ্টা ।
ঋতুরঙ্গেঁও তাই ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে । বর্ষাও আজকাল আর মান্ধাতার আমলের
রীতি মেনে চলে না । সেও নিজেকে আধুনিক করতে চায় । কোনো বছর আগে আসে, তো
কোনো বছর আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে চোখ দাঁড়িয়ে যায় । কোনো বছর
অতিবৃষ্টির সৌজন্যে বন্যায় ভাসে সবকিছু । আবার কোনো বছর অল্পবৃষ্টিতে সব
শস্য মাঠেই শুকিয়ে মরে ।
বাদল দিনে যখন ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা খোলা
জানালা দিয়ে প্রবেশ করে আমার ঘরে খেলা করে, তখন এলোমেলো হয়ে যাওয়া পর্দা,
কাগজের টুকরো সব কিছুকে ছাপিয়ে আমাকে নিয়ে যায় আমার ফেলে আশা শৈশবের
বর্ষা মরশুমের দিনে । আহা, কি ভালোই যে লাগে তখন... আমি আর আমার মধ্যে
থাকি না । তারিয়ে তারিয়ে অনুভব করি অতীতের সেই মধুময় স্মৃতির স্পর্শ ।
নিম্নচাপের টানাবৃষ্টিতে মাঠ-ঘাট তখন থই থই । চারপাশের জলভরা মাঠের মাঝে
দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের দোতলা বাড়িটাকে মনে হতো সমুদ্রে ভাসমান একটা জাহাজ ।
দুপুর বেলায় খিচুড়ি-ইলিশের মধ্যাহ্নভোজের পর ছোটোরা ঘটা করে ভাসাতাম
কাগজের নৌকো-কারটা কতদূর যেতে পারে । আমার আনন্দ ছিলো সব থেকে বেশী মায়ের
চোখ এড়িয়ে জলভরা মাঠের আল ধরে বেশ কিছুটা হেঁটে গিয়ে জলে পা ডুবিয়ে ছপছপ
করা । ঠান্ডা লাগতো-জ্বর হতো, তবুও তার আকর্ষণ ছিলো অটুট । দু-একটা
চ্যাঙ মাছ রাস্তা পুকুর এক হয়ে যাওয়া তার বাসস্থান থেকে পথ ভুলে ছুটে এসে
খাবি খেত সদর দরজার কাছে । হাতে করে ধরতে গেলেই আবার পিছলে যেতো । কি
আনন্দই না হতো । যেন এক নতুন খেলার কৌশল । সন্ধ্যে হলেই টানা বৃষ্টির
জেরে হোতো লোডশেডিং । আর তারই দৌলতে অল্প পড়েই বসতো গল্প বলার আসর ।
টেবিল ল্যাম্পের আলোকে ঘিরে বসতো আষাঢ়ে গল্পের যাচাই পরিবেশন । রাত্রি
দশটা বাজলেই মায়ের ডাক পড়তো গরম ভাত, পোস্ত, পটল ভাজা আর মাছের ঝোল দিয়ে
নৈশভোজ সারার জন্য ।তারপর ব্যাঙের অবিরাম ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ শুনতে শুনতে একটা
টানা ঘুম ।
হঠাৎ গুড়ুম গুড়ুম শব্দে স্তম্ভিত ফিরলো আমার ।
দেখলাম বাইরে শুরু হয়েছে ঝমঝম করে বৃষ্টি । দেখতে দেখতে এক পশলা টাটকা
বৃষ্টি হয়ে গেলো । যাক বর্ষা এসেছে তাহলে । চাষিরাও বুক বাঁধছে নতুন
আশায়।
~~~~****~~~~


AMRITA BISWAS SARKAR
VILL & POST- BHADUL
DIST-BANKURA

2 comments: