১)
বরষার আগমনে
.
ওই শোনো ঘনঘন, গুরুগুরু গম্ভীর
বাজে কার দুন্দুভি? কোন সে মহান-বীর?
গ্রাস করে দাবদাহ, খুলে মহা-জটাভার,
নিশুতি রাতের মতো ঢেকে দিয়ে চারিধার!
ঝলমলে পরিবেশ ধোঁয়া করে পলকে,
উড়িয়ে পথের ধুলো কোথা থেকে এলো কে?
বজ্রের তলোয়ারে ফালা-ফালা অম্বর,
ঝরে পড়ে ঝলকানি কাঁপে পাড়া, প্রান্তর!
ঝড়ো হাওয়া বেগে বয়, পাল ছিঁড়ে বারবার--
হারিয়েছে মাঝি পথ, উত্তাল পারাবার।
দোলা লাগে বনে বনে ডাল ভাঙে দুড়-দাড়,
বিচলিত বিহগের ভয় বাসা হারাবার!
মেঘ-ভাঙা বারিধারে শুকা-মন কাদা ক'রে,
শার্সিতে মাথা মুড়ে চাষীভাই হাল ধরে।
ঝড়-জল দুর্যোগে কেউ হাসে, কেউ ভাসে!
তবুও তো বাঁচে ধরা-- বৃষ্টিকে ভালোবেসে।
.
ভয় নেই ভয় নেই! বরষার আগমনে
বাহিরের আঙিনায় ভিজে দ্যাখো আনমনে,
টুপ-টাপ জলকণা ছুঁয়ে দিলে গভীরতা--
পাথরেও জাগে প্রাণ, ধুয়ে যত মলিনতা।
২)
চঞ্চলা বরষা
নিলাম্বরীর ঐ পুঞ্জিত কুন্তলে
বিহ্বল বলাকা বিপন্নপাখা মেলে,
সারে-সারে উড়ে যায় আপনার ঠিকানায়
ময়ূরপুচ্ছ নাচে গুর-গুর বাজনায় ।
ধূলা ধূসরিত যত তৃণ, বনপল্লব
কানপেতে ধরণীও শুনছে মেঘের রব ।
ঈশানে বিষাণ শুনে উন্মাদ সমীরণ,
নৈর্ঋতে ঝড় তুলে ধেয়ে আসে শনশন ।
নিলাম্বরীর কেশ দমকা-হাওয়ায় খুলে
ছড়ালো আঁধার কালো অম্বরে দুলে-দুলে ।
ম্লান করে খরতাপ প্রদীপ্ত-তপনের,
দুরন্তমৌসুমী বরষা আনিল ফের ।
ঝিরি-ঝিরি বারিধারে ধুয়ে যত মলিনতা
কদম,কামিনী, কেয়া, মেলেছে নতুন পাতা ।
কোমল কমলদলে বরষার নৃত্যে
উঠেছে মাতাল ঢেউ সরোবর-চিত্তে ।
ছলছল জলতলে নদী, নালা,খাল, বিল
গেঁও-পথ পিচ্ছল চলাচল মুশকিল ।
চরাচর মর্মরে লেগেছে খুশির হাওয়া
চিন্তিত কিষাণের শেষ হলো পথচাওয়া ।
৩)
বর্ষা
.
ঐ, দূরগগনে পাখনা মেলে
নিলাম্বরীর কবরী খুলে
ছড়ালো অন্ধকার,
হাটের পসরা বন্ধ হয়েছে
পোষ্য,বন্য বাসায় ফিরেছে
বন্ধ গৃহের দ্বার ।
বিরহিনী ওই কাজলা মেয়ে
কোন্ প্রেমিকের পথপানে চেয়ে
হৃদয় করেছে ভার ?
.
তড়িৎকুঠার হানল কে রে !
কাঁপিয়া উঠল গুরু-গুরু সুরে
টলমল আঁখি তার,
সব নীরবতা ভঙ্গ করে
ব্যথাভরা বুক ফালা-ফালা করে
ঝরলো অশ্রুধার ।
.
লাঙল কাঁধে চাষীরা ছোটে
তারই পিছে ধায় বীজের মুটে
বীজবোনা হবে আজ,
গেঁও চাষীদের মন ভিজেছে
লাঙলের ফালে মাটি চষেছে
শুরু হলো কৃষিকাজ ।
গ্রীষ্মে জ্বলিয়া সর্বহারা
গুমরেকাঁদা বসুন্ধরা
সাজবে নতুন সাজ ।
৪)
গম্ভীর বর্ষা
অম্বরে গর্জিত গম্ভীর ঘনমেঘ,
বিহঙ্গ শঙ্কিত সাঁই-সাঁই বায়ু-বেগ ।
থরথর কম্পিত বাঁশবন ঝাউবন,
হাম্বা-হাম্বা সুরে বাছা খোঁজে ধেনু-মন ।
দিগন্তে দিবাকর কালি হ'ল বনতল,
ঘুরপাক ঘূর্ণিতে উছলিত দীঘিজল ।
গ্যাওঁ-গ্যাওঁ ঘ্যান-ঘ্যান গান গায় মণ্ডূক,
শূন্যে বাদুড় ডাকে গহ্বরে জম্বুক ।
পাতিহাঁস হাঁস-ফাঁস বাঁধা প'ড়ে শৈবালে,
কিষাণ লাঙল কাঁধে গৃহপানে ফিরে চলে ।
বাজ পড়ে কড়-কড় বারি ঝরে ঝর্-ঝর্ ,
বিজলীর চিক্কুরে আলোকিত চরাচর ।
উত্তাল নদীজল থৈ-থৈ খাল-বিল,
বাসার হদিস খোঁজে দিশেহারা গাঙচিল ।
জলধিতরঙ্গেতে শিহরিত মাল্লা,
ছিঁড়ে পাল ভাঙে হাল চোখ রসগোল্লা ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন