দ্বাপরের শেষে বুদ্ধিমান কলির প্রবেশ
--------------------------------------------------------------------এখন নাকি ঘোর কলি | কিন্তু কী করে এই কলিকাল শুরু হল‚ তা নিয়ে আছে আকর্ষণীয় পৌরাণিক আখ্যান | পুরাণ বলেছে হয়‚ মহাভারত পর্বের শেষের সঙ্গেই ঘনিয়ে ঘনিয়ে এসেছিল কলি। অর্থাৎ হয়েছিল দ্বাপর যুগের অবসান |
মহাভারতে মহাপ্রস্থানে যান পাণ্ডবরা | তারপরে কে বা কারা সামলাবে রাজ্যপাট ? কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন পাণ্ডবদের সব পুত্র | একমাত্র ছিলেন অর্জুনের নাতি পরীক্ষিৎ | তিনি ছিলেন অভিমন্যু-উত্তরার ছেলে | অর্জুন-সুভদ্রার পৌত্র | কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পরে জন্ম হয় তাঁর |
তার আগে অশ্বত্থামা উদ্যত হন উত্তরাকে হত্যা করতে | দ্রোণাচার্যকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে পাণ্ডবদের উত্তরপুরুষকে নির্মূল করবেন বলে স্থির করেন অশ্বত্থামা | কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের কৃপায় সে যাত্রা রক্ষা পান উত্তরা |
যাই হোক‚ যুদ্ধের অবসানে জন্ম হল পরীক্ষিতের | যথা সময়ে তাঁর হাতে রাজ্যপাট দিয়ে মহাপ্রস্থানের পথে যান পাণ্ডবরা | কিন্তু তাঁরা জানতেন পরীক্ষিৎ একদিন শাপগ্রস্ত হবেন |
সেটা ছিল খ্রিস্টপূর্ব একাদশ অথবা দ্বাদশ শতক | বহু বিশেষজ্ঞের মতে‚ আর্যাবর্তে তখন মধ্য বৈদিক কাল | চলছে লৌহ যুগ | সেই সময়কালে ক্রমে পরীক্ষিতের শাসনে আর্যাবর্তের মধ্যে খ্যাতির শীর্ষে উঠল হস্তিনাপুর |
রাজা পরীক্ষিৎ একদিন শিকার করতে অরণ্যে গেলেন | সেখানে কলি দৈত্য এসে পরীক্ষিতের কাছে অনুমতি চাইলেন‚ তাঁর রাজ্যে প্রবেশ করতে | রাজি হলেন না পরীক্ষিৎ | কিন্তু হাল ছাড়লেন না কলি | শেষে পরীক্ষিৎ বললেন‚ রাজ্যে কয়েকটি মাত্র স্থানে কলি থাকতে পারবেন | সেগুলো হল জুয়া এবং মদের ঠেক‚ বারাঙ্গনাদের পাড়া‚ পশু জবাইয়ের জায়গা আর যেখানে সোনা থাকবে |
বুদ্ধিমান কলি ঢুকে পড়লেন পরীক্ষিতের সোনার মুকুটে | এরপর থেকেই কলির প্রভাবে বাড়তে লাগল পরীক্ষিতের দুর্বুদ্ধি | একদিন ঋষি শমীকের আশ্রমে গেলেন পরীক্ষিৎ | তিনি তখন তৃষ্ণায় কাতর | এদিকে ঋষি শমীক ধ্যানমগ্ন |
জল না পেয়ে তৃষ্ণার্ত পরীক্ষিৎ কলির প্রভাবে মেজাজ হারালেন | তিনি একটা মৃত সাপ নিয়ে ঝুলিয়ে দিলেন ঋষির গলায় | এরপর বেরিয়ে গেলেন সেখান থেকে | একটু পরে সেখানে এল শমীক-পুত্র | তিনি অভিশাপ দিলেন‚ যিনি তাঁর বাবার এই হাল করেছেন‚ এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হবে সর্পরাজের আক্রমণে | ঋষি শমীক বুঝলেন‚ তাঁর ছেলে না বুঝে রাজা পরীক্ষিৎকে এই শাপ দিয়ে ফেলেছেন | কিন্তু কী করা যাবে ? অভিশাপ তো আর ফিরিয়ে নেওয়া যায় না |
রাজা পরীক্ষিৎও জানতে পারলেন অভিশাপের কথা | পুত্র জনমেয়জয়কে সিংহাসনে বসিয়ে পরীক্ষিৎ চলে গেলেন মহর্ষি শূকের আশ্রমে | জীবনের শেষ সাত দিন কাটালেন ভাগবৎ পুরাণ পাঠ শ্রবণ করে | সাত দিন পরে সর্পরাজের ছোবলে প্রয়াণ হল তাঁর | ২৪ বছর রাজ্য শাসনের পরে মৃত্যু হল ৬০ বছর বয়সী পরীক্ষিতের |
ততদিনে পৃথিবীতে জাঁকিয়ে বসেছে কলি দৈত্য | সত্য‚ ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের পরে শুরু হয়ে গিয়েছে কলিযুগ | আর এখন তো ঘোর কলি | কলি যুগে আবির্ভূত হবেন কল্কি দেব পাপের পাঁক থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষা করতে।
--------------------------------------------------------
লক্ষ্মী নন্দী
ভালোবাসা
মেখলিগঞ্জ
কোচবিহার