বিস্মৃত বাঙালি বিপ্লবী ইন্দুভূষণ রায়
হাতে ঘা- মুখে, খাবার তুলতে পারতেন না পর্যন্ত। সেই অবস্থায় কাজ দেওয়া হয়েছিল তেলের ঘানিতে- যন্ত্রণায় ছারখার হতে হতে, রাতের পর রাত যন্ত্রণায় দগ্ধে দগ্ধে মরতে মরতে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করলেন। কাদের জন্য এত কিছু করলেন? কেই বা মনে রাখল?
খুলনার ছেলে ইন্দুভূষণ রায় কলকাতায় এসেছিলেন। একদিন কীভাবে যেন কলেজ স্কোয়ারে দেখা হয়ে যায় বারীন ঘোষের সঙ্গে। বারীন ঘোষ, সেই যুগান্তর ও অনুশীলন সমিতির বারীন- অরবিন্দের ভাই। বিপ্লবী সংসর্গে এসে ইন্দুভূষণের পরিবর্তন ঘটে। চলে, গীতা ও আনন্দমঠ পাঠ, উদ্বুদ্ধ হন দেশকে বিদেশি শাসন মুক্ত করতে। চন্দননগরের মেয়রের ওপর বোমা ছোঁড়ার অপরাধে এবং বিখ্যাত আলিপুর বোমা মামলায়- যুগান্তরের সদস্যদের সঙ্গে তাঁরও সাজা হল। যে-সে সাজা নয়। দ্বীপান্তর- কুখ্যাত কালাপানি- সেলুলার জেলে। ক'জন আর ফেরে?
সেলুলার জেলে রাজনৈতিক বন্দি আর অরাজনৈতিক বন্দিদের অবস্থা এক ছিল না। ব্রিটিশদের শত্রু মেনে যারা প্রাণ সমর্পণ করেছেন, তাঁদের কি ব্রিটিশ সরকার সহজে পরিত্রাণ দেয়। তাই, রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য ছিল হাড়ভাঙা খাটুনি, অসুস্থ হলেও সহজে বিশ্রাম মিলত না- মিলত অন্ধকুঠুরিতে নির্বাসন।
ইন্দুভূষণ জেলের পরিবেশে ও প্রচণ্ড খাটুনিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু, জেল-কর্তৃপক্ষের সেকথা বিশ্বাস হয় না। বরং অসুস্থতার ভান করছেন- এই মিথ্যা অভিযোগে ইন্দুভূষণের সাজা ঘোষণা হয়। কী সেই সাজা? তাঁর নিজেরই বিছানাপত্র প্রতিদিন চার মাইল মাথায় বহন করে নিয়ে যেতে হবে আর ফিরতে হবে। অথচ তখন ইন্দুভূষণের শরীর ভেঙে পড়ছে, ভারী বস্তু তোলা তাঁর পক্ষে অসম্ভব বোধ হচ্ছে।
ইন্দুভূষণ অনুরোধ করেন, তাঁকে জেলের ভিতর কাজ দিতে। জেলে তাঁকে হাতে-পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত। জেলের কাজ করতে করতে হাতে ঘা হয়ে যায়। এমন যন্ত্রণা যে রাতে ঘুম হয় না, নিজে হাতে খেতে পর্যন্ত পারেন না।
ইন্দুভূষণকে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাতের ঘায়ের অবস্থা এমন হয়েছিল যে, আঙুল পর্যন্ত নাড়তে পারেন না। সেই সঙ্গে জ্বর ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রণা। কিছুটা সুস্থ হয়ে ফিরে এলে তাঁকে আবার কাজে বহাল করা হয়। ইন্দুভূষণ আবার অনুরোধ করেন, তাঁকে অন্য কাজ দিতে- তিনি অসুস্থ, পরিশ্রমের কাজ করা কষ্টসাধ্য। প্রথমে তাঁর অনুরোধ গ্রাহ্য হয় না। তারপর, ব্রিটিশ জেলার তাঁকে আরও শাস্তি দিতে, তেলের ঘানিতে নিযুক্ত করেন- যা ছিল তাঁর পক্ষে আরও যন্ত্রণাদায়ক। এরই মধ্যে, যন্ত্রণায়, অবহেলায় ও পাশবিক অত্যাচারে ইন্দুভূষণ প্রায় উন্মাদ হয়ে যান। ২৯ এপ্রিল, ১৯১২ –রাতের নির্জন কুঠুরির অন্ধকারে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে ইন্দুভূষণ নিজের পরনের কাপড় গলায় জড়িয়ে আত্মহত্যা করেন। ( মতান্তরে তাকে মেরে ব্রিটিশ পুলিশ ঝুলিয়ে দিয়েছিল )।
যিনি নিজের প্রাণের ভয়ডর না-করে ব্রিটিশ শাসনকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, কত যন্ত্রণা পেলে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন ?
-----------------------কৃতঞ্জতা :
সুরগ মৈত্র , অনুশীলন সমিতির ইতিহাস এবং
ইন্টারনেটের তথ্য
==========================
প্রণব কুমার চক্রবর্তী , ৩৭/১ , স্বামী শিবানন্দ রোড , চৌধুরীপাড়া , বারাসাত , কোলকাতা - ৭০০১২৪ ,মোবাইল নং ৮৭৭৭৬৮৫৯৯২ এবং ৯৪৩৩০২৮৬৮৫ ৷
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন