বিমূর্ত ছবি
কোথাও সশব্দে বাজ পড়ল। উথালপাথাল হাওয়া বইছে। সুলোচনার মনে হলো দক্ষিণের জানালাটা খোলা। আর হাওয়াটা বইছে দক্ষিণ দিক থেকে। ওখানে জানালা ঘেঁষে কম্পিউটার। কিছু বইপত্র ও আছে। জানালার আলসেতে ফুলগাছ। ওঘরে যেতে না যেতেই দুরন্ত হাওয়ার ঝাপট টের পেলেন তিনি। ফুলগাছের একটা হিলহিল করে বাড়তে থাকা কান্ড শাটার জানালার চাপে ভেঙে ঘরের ভেতর মুখ থুবড়ে পড়লো। তুলে দেখলেন অনেকগুলো ছোট ছোট কুঁড়ি। ভেতর থেকে কেমন কুঁকড়ে গেলেন সুলোচনা।
একমুঠো রোদ্দুর জানালায় পড়েছে। কালরাতে
যে ঝড় হয়েছিল তা তেমন জোরালো ছিল না। হঠাৎ করেই দমকা হাওয়া এলোমেলো স্ফূর্তি নিয়ে এলো। তবে অতগুলো ফুলের কুঁড়ি নিহত হলো তার হাতেই। এখনও সেই কুঁড়িসমেত ভাঙ্গা কান্ড পড়ার টেবিলে পড়ে আছে। সুলোচনা সেটি তুলে আরেকবার দেখলেন। প্রাণহীন ক'টি কুঁড়ি । চোখে জল এল হূ হূ করে। শ্রাবন্তী দেখে ফেলল। রাগ করে বলল- এই এক হয়েছে। আমি ত কাউকে কাঁদতে দেখি না, তুমি ছাড়া। ছেলেমেয়েরা ড্যাং ড্যাং করে টা টা দিয়ে চলে যায়। কোন পিছুটান আছে বলে তো মনে হয় না। যাকে নিয়ে কাঁদছো, এই গাছপালাগুলোও নির্লিপ্ত। তুমিই শুধু কেঁদে মরছো। ঢং যত।
জীবন অনেককিছু শেখায়। নিজের তৈরি করা ভুবন আর নিজের থাকে না। কোলাহল, ভিড় এসবের দাপট সব ভেঙ্গে দেওয়ার জন্যে উন্মুখ হয়ে থাকে। হয়তো এটাই জীবনের সবচাইতে বড় ট্রাজেডি। বড় মেয়ে শ্রাবন্তীর বিরক্ত চোখ এখনও তাকে অনুসরণ করছে। সুলোচনার আরও দুই ছেলেমেয়ে বাইরে আছে একজন চাকরিতে, একজন গবেষণায়। শ্রাবন্তী তাঁর ডিভোর্সী মেয়ে। মেয়েটার মন ভালো নেই। সদ্য ডিভোর্স হয়েছে।
আলসেতে ফুলগাছের আন্দোলন এরই মাঝে এক বিমূর্ত অনুভূতির জন্ম দেয়। সুলোচনার হাতে ঝুলে পড়া কান্ডটি এবার ফিসফিস করে - কেঁদো না মা, আমরা আবার আসছি।
- - - - - - - - - - - - -
বিজয়া দেব।
225,Purbachal North.
Kolkata - 78.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন