Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

ছোটগল্প ।। বিশ্বনাথ ব্যানার্জী



লোকটা

" প্রথম যেদিন  ভদ্রলোক সিটিং দিতে এলেন , তখন প্রথমেই মনে হলো, দূর ছাই এই লোকটা আবার কেন 

অথচ আপাতদৃষ্টিতে ভদ্রলোকের চেহারাটা  বেশ সমীহ করার  মতো কাঁচাপাকা চুল, পাকা গমের মতো গায়ের রং- নাকটা ধারালো, চোখ দুটোর দৃষ্টি অন্তর্ভেদি  এক্স 'রের মতো- মনে হয় মনের ভেতরের জোয়ার- ভাঁটার খেলা এই লোকের হাত থেকে নিস্তার  পাবে না

 

ভদ্রলোকের গায়ে ফিনফিনে আদ্দির পাঞ্জাবি, গিলেকরা ধুতি আর কাশ্মীরি শাল আমার আরও বিরক্তি  উদ্রেক করছিলো- মনে হচ্ছিলো এই জোকারটা এভাবে  আমার সামনে না এলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে  যেত অথচ আমি খুব ভালো করেই জানতাম এই পোশাকটা আমিই ওনাকে সাজেস্ট করেছিলাম ভদ্রলোককে মানাচ্ছিলোও দারুন. আর তত  আমার মাথায় খুন চেপে যাচ্ছিলো কাজ করতে করতে এই লোকটা এতো অসাধারণ কেন  ? গোবেচারা মতো একটা মানুষ আমার সামনে দুঃখী দুঃখী মুখে  সিটিং  দিতে বসবে- আমি তার দুঃখ কাঁচা আমের মতো তারিয়ে তারিয়ে খাবো- তা না……

লোকটার মাত্রাতিরিক্ত ভদ্রতা আমার অসহ্য লাগছিলো- বার বার লোকটা বলছিলো- ' তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো ভাই? 'তত আমার মনে হচ্ছিলো,  মারি লোকটার মুখে এক ঘুঁষি তারপর যখন কাজের মাঝখানে একগাদা ফল- মিষ্টি সমেত প্লেট এসে গেলো ঠান্ডা সরবতের সাথে- আমার মনে হলো যথেষ্ট হয়েছে সব কিছু ছুড়ে মারি ওই লোকটার মুখে

কিন্তু থেকে থেকে  দাঁত বের করে বিগলিত বদনে হাসা ছাড়া আমি  কিছুই করতে পারছিলাম না কেননা একেই ভদ্রলোক বেজায় রকমের ধনী  তার ওপর আমার পোর্ট্রেট আঁকার এটাই প্রথম কাজ আজকাল ফটোগ্রাফির যুগে পোর্ট্রেট আঁকানোর চল উঠেই গেছে - কিন্তু বড়োলোকের খেয়াল প্রিন্সিপাল সাহেবের সুপারিশে কাজটা উনি আমাকে দিয়েছেন- নাহলে আমার মতো চালচুলোহীন একটা থার্ড ইয়ারের ছাত্র এই বাড়ির গেট পেরিয়ে ঢুকতে পারবে- সে আশা না করাই বোধয় ভালো

কাজ করতে করতে নিজেই  বুঝতে পারছিলাম- কিচ্ছু হচ্ছে না আমার হাতে তুলি আমার কথা শুনছে না রেখা আমার বারণ মানছে না তুলির দাগের রং চোখের তলায় গাঢ়তর হয়ে যাচ্ছে  ওই লোকের কি ওরকম ভাঙ্গা চোয়াল অসহ্য অসহ্য...

সেদিন কিভাবে যে আমি বাড়ি এসেছিলাম টলতে টলতে সে শুধু আমিই  জানি বাড়ি ফেরার পথে খালাসিটোলা ঘুরে এলাম ভেবেছিলাম দু ' পাত্তর পেটে পড়লে একটু শান্তি আসবে- কিন্তু কোথায় কি ?  লোকটার পরিতৃপ্ত সুখী মুখখানা দেখে কেবল মনে হচ্ছিলো ,আমি যদি লোকটার সব সুখ নিজের হাতে দলে মুচড়ে দিতে পারতাম  

বাড়িতে ফিরে অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে শুয়ে পড়লাম টক টক  বমির সাথে সব খাবার উঠে গেলো পরেরদিন আবার যেতে হবে পোর্ট্রেট আঁকতে গরমের ছুটির মধ্যে কাজটা শেষ করে ফেলতে হবে. এই একটা পোর্ট্রেট আঁকতে ভদ্রলোক যা টাকা দিচ্ছেন - সেটা আমার মতো অকিঞ্চৎকর ফাইন আর্টস এর ছাত্রের কাছে স্বপ্নের মতোই

 

কিন্তু আঁকবো কি ? দ্বিতীয় দিনও প্রথম দিনের পুনরাবৃত্তি কাজের মধ্যেই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি ভদ্রতার পরাকাষ্ঠা ভদ্রলোক আমাকে বলে বসলেন- "  ভাই , তোমার শরীর যদি  খারাপ  মনে হয়- তাহলে আজকে ছেড়ে দাও কাল একটু সকাল সকাল চলে এস " ভেবেছিলাম বলি - ' আমার শরীর খারাপ তাতে তোমার কি রাসকেল ' কিন্তু সে-সব কিছু না বলে আমি বিগলিতবদনে মাথা নাড়লাম  

  আমি বাঁচলাম- বাড়ি ফিরে ক্যানভাস টা ভালো করে দেখতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম- ছবিটা ভদ্রলোকের ছবির মতো না হয়ে হয়ে যাচ্ছে যে গোবেচারা লোকটা আমার সামনে বসে পোর্ট্রেট আঁকালে আমি সবচয়ে খুশি হতাম সেই লোকটার মতো যে লোকটাকে আমি নিজের চোখে কখনো দেখিনি - কিন্তু  চোখ বন্ধ  করে বলে দিতে পারি তার মুখের মানচিত্র , প্রত্যেকটা ভাঙাচোরা কিন্তু - ইস্পাতকঠিন স্তব্ধতা এর চোখে নেই- উল্টে কেমন যেন তাড়া খাওয়া খরগোশের মতো বিবর্ণ ভয়ের ভাবঠোঁটের কোনে নেই কোনো ক্রূর হাঁসি  -উল্টে একটা বিগলিত ভাব

অসম্ভব- এই ছবি দেখলে ভদ্রলোক তো আমাকে একটা ফুটো কড়ি ঠেকাবেনই না- উল্টে দারোয়ান দিয়ে ঘাড়ধাক্কা দেবার সম্ভাবনা আছে যথেষ্ট

 

তৃতীয় দিন ভেবে রেখেছিলাম যে পোর্ট্রেট করে ফেলি একটা পুতুলের মত   চোখে থাকবে না কোনও ঝিলিক ।  হলে হবে তাতে যদি ভদ্রলোকের সাইকোলজি প্রতিবিম্বিত না হয়- তাতে আমার  ভারী বয়েই গেলো মোটা  টাকার জন্যে আঁকতে গেছি- পোর্ট্রেট যদি কেষ্টনগরের পুতুলের মতো দেখতে হয়- তাতে আমার কি ওনার মতো দেখতে হলেই হলো

আজকে ঠাণ্ডামাথায় ঘন্টাখানেক কাজ করার পর পরিষ্কার বুঝতে পারলাম- এই পোর্ট্রেট এঁকে পয়সা পাওয়া আমার ভাগ্যে নেই

যত আঁকতে চেষ্টা করছিলাম আমার সামনে বসে থাকা ভদ্রলোকের প্রতিকৃতি- তত অবয়ব পরিবর্তিত হয়ে রূপ নিচ্ছিলো একজন সাধারণ মানুষের ভাঙাচোরা চেহারায় যে মানুষকে আমি অনেক বেশি চিনি যার মুখ  আমার সামনে বসে থাকা ভদ্রলোকের মতো সন্তুষ্টির হাসিতে তেল চুকচুক করা নয় উল্টে জীবন সংগ্রমের অনবরত ঘা   খেতে খেতে  ডুবন্ত এক মরিয়া মানুষের মুখ

না অসম্ভব   .সির ঠান্ডাতেও কপালে  দেখা দিচ্ছিল  বিন্দু বিন্দু ঘাম  এমন সময় ভদ্রলোক হটাৎ উঠে দাঁড়ালেন আমার পিঠে হাত দিয়ে শান্ত স্বরে বললেন- " বা , বেশ ভালো হয়েছে তো "

কণ্ঠস্বরে পরিহাসের লেশ মাত্র নেই কিন্তু আমি মনে করলাম এটা  একটা বিরাট ঠাট্টা যখন ক্যানভাস আর ঈসেল   বগলদাবা করে উঠছি , তখন ভদ্রলোক হটাৎ গলা খাঁকড়ি দিয়ে বলে উঠলেন- '  তোমাকে একটা কথা বলতে ভুলে গেছি শুভ্রজিৎ. আমি সপ্তাহ খানেকের জন্যে ব্যবসার কাজে জাপান যাচ্ছিতুমি পরের সোমবার চলে এস- কাজ তো প্রায় হয়েই এসেছে-  ও'দিন ফিনিশিং টাচ দিলেই হবে"

মিথ্যা বলবো না- আসার সময় ভদ্রলোক অগ্রিম বাবদ আমার হাতে বেশ কিছ টাকা গুঁজে দিলেন

বাঁচা গেলো আর মুখো নয়.. কুরিয়ার করে ছবিটা ভদ্রলোককে পাঠিয়ে দিলেই চলবেআগে একটু ফিনিশিং টাচ দিয়ে নি

দুদিন পরের কথা কলেজ তখন খোলেনি এক বন্ধুর বাড়িতে যাচ্ছিলাম হটাৎ দেখলাম ,গাছের ছায়ায় একটা বেঞ্চের ওপর বসে আছেন একটি মানুষ বৈশিষ্টহীন চেহারা জীবন সংগ্রামে ডুবতে থাকা একটা মানুষের মুখ ভাঙাচোরা চেহারা আশ্চর্য্য...এই মুখ যে আমার ভীষণ চেনা । তাঁর ছবি যখন আঁকতে চেষ্টা করেছি অহরহ তখন পেন্সিল , তুলি সব বিদ্রোহ করেছে রেখা  ভেঙেচুরে রূপ নিয়েছে এই একটি মানুষের এমনিতে হয়তো হেঁটে চলে গেলে চিনতেই পারতাম না এমনি বিশেষত্বহীন চেহারা অথচ এই মুহূর্তে  মানুষটিকে মনে হলো , যেন কতকালের চেনা ওনার জন্যেই তো আমার ছবি আঁকা

গেলাম ভদ্রলোকের কাছেবললুম –' বসতে পারি ?'

হাঁসলেন ভদ্রলোক গরমের দুপুরে টলটলে পুকুরের জলের মতো স্নিগ্ধ হাঁসি তারপর বললেন- "বা রে, বসুন না"

বসলুম আলাপ পরিচয় জমে উঠতে দেরি হলো না রমণীমোহন সমাদ্দার ভদ্রলোক সত্যি জীবনযুদ্ধে অনেক লড়াই করেছেন একটা বই প্রকাশনীর  পাঠ্য বইয়ের ক্যানভাসার

সেদিন চলে এলাম তারপর আবার একদিন ওনাকে দেখলাম সেই বেঞ্চিতেতারপর আবারভদ্রলোকের সাথে কথা বলাটা নেশার মতো হয়ে যাচ্ছে বোধকরি..

কলেজ খুলে গেছে কিন্তু সেই বিশিষ্ট মানুষটি - যিনি আমাকে তারঁ পোর্ট্রেট আঁকার ভার দিয়েছিলেন- তিনি আর আমার সাথে যোগাযোগ করেননিকাজের চাপে ভুলে গেছেন মনে হয়. . আমিও ওনাকে পাঠাইনি ছবিটা কুরিয়ার করে

একদিন সাহস করে বলে বসলাম- 'একটা কথা বলবো যদি  কিছু মনে না করেন'

হাসলেন তিনি নীল সাগরের গভীরতার অতলান্তিক হাসি তারপর বললেন- 'বলুন না'

কিন্তু কিন্তু করে আমি বললাম- 'একটা ছবি আঁকবো আপনাকে মডেল করে দেবেন  আঁকতে'

এবার সশব্দে হেসে  উঠলেন ভদ্রলোক- 'কেন নয় ? রবিবার আমি আস্তানায় থাকি সাত  বাই ছয় ফকির চরণ স্ট্রিটআসবেন বিকেলের দিকে এক'সাথে চা খাওয়া যাবে'

গেলাম । মনে হল আমার তুলি রঙ পেন্সিল  -সব যেন এঁর অপেক্ষাতেই ছিল এতদিন ধরে ক্যানভাস হেসে উঠল যেন পরিতৃপ্তির হাসি আমিও খুসি হলাম এমন একটা পোর্ট্রেট তো আমি আঁকতে চেয়েছিলাম আমার কল্পনায় সারাজীবন ধরে । আমার মাস্টারপিস ।

মাঝে মাঝেই যাওয়া শুরু করলাম ভদ্রলোকের আস্তানায় সত্যি আস্তানাই বটে । মেরেকেটে দশ বাই  দশের একটি ঘর সাথে একটা বাথরুম

তারপর এলো সেই দিন যার পর ভদ্রলোক সম্পর্কে আমার চিন্তাভাবনা কেমন সব ওলোট পালট হয়ে গেলো ।

 

দিল্লিতে একটি ছবির প্রদর্শনীতে যোগ দেবার কথা ছিল আমার আমার মতন একটা নতুন শিল্পীর ক্ষেত্রে এ' খুব বড়ো সুযোগ ট্রেনে টিকিট কাটাও হয়ে গেছে । ইছে আছে এই ছবিটাও ডিসপ্লে করার ভদ্রলোককে সেই কথা বললাম একদিন   সংক্ষেপে তিনি বললেন- " তোমার যাওয়া তো হবে না "

আকাশ থেকে পড়লাম উনি কি জানেন , ঠিক কি বলছেন ? জানেন আমার মতো স্ট্রাগলার এর কাছে এই সুযোগের কি দাম ? কিন্তু ভদ্রলোক নির্বিকার শুধু বললেন- " দেখো , যেতে পারো কি না "

ট্রেন যেদিন ছাড়বে তার আগেরদিন রাত্রে শরীরে অসহ্য যন্ত্রনা... পরেরদিন সকালে নিজেকে আবিষ্কার করলাম হসপিটালের বেডে । শুনলাম- মারিজুয়ানার ওভারডোজে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে আমার বন্ধুরাই  

পরেরদিন সংবাদপত্রের হেডলাইন দেখে চমকে উঠলাম দিল্লিগামী তুফান মেলে দুর্ঘটনা বাইশ জন নিহত আহত প্রায় শ; দেড়েক। হিসাব করে দেখলাম আমার যে কামরায় যাবার কথা ছিল সেটা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সবচেয়ে বেশি হয় মরতাম । না হয় হাত পা ভেঙ্গে পড়ে থাকতাম - এই ছিল আমার কপালে

ভদ্রলোককে একটা ধন্যবাদ দেওয়া দরকার দেওয়া উচিত তার থেকে বড়  ব্যাপার এতদিন ভদ্রলোকের সাথে আলাপ হয়েছে- একবার মনে হয়নি উনি একজন সাইকিক ভবিষৎ দেখতে পারেন এরকম ক্ষমতার কথা বইতে পরেছি মনে হত ধাপ্পাবাজি ওনার সাথে দেখা করাটা তাই  খুব জরুরি

এবারে একা যেতে ইচ্ছে করছিল না তা' ছাড়া শরীরটাও খারাপ তাই বন্ধু বিক্রমকে সঙ্গে নিলাম

 

গেলাম. সেই রবিবার সাত  বাই ছয় ফকির চরণ স্ট্রিট জীবনের সবথেকে বড় চমক খাওয়া তখনও বাকি ছিল

এই বাড়িটা এখানে এল কোথা থেকে ? একটা ভেঙে পড়া বাড়ি ইটের কঙ্কালপাঁজর হাড় সব বেরিয়ে আছ. বাড়ি না বাড়ির মৃতদেহ  একশো বছরের এই বাড়িতে মানুষ কোনোদিন বাস করেছে বলে মনে তো হয় না 

আমি যে ভাড়া বাড়িটার ছোট্ট একটা ঘরে গিয়েছি-বার বার  সেটা কোথায় ? ভানুমতীর খেল নাকি ?

 

সামনে একজন ভদ্রলোক রাস্তা দিয়ে সাইকেল করে যাচ্ছিলেন-তাঁকে জিগেস করলাম-" মশায় শুনছেন? "

সাইকেল থামিয়ে ভদ্রলোক আমার দিকে ফিরে তাকালেন   সপ্রশ্ন দৃষ্টি

" এই বাড়িতে রমণী বাবু  থাকেন না?"

" এই পাড়াতে আমি আছি কম সে কম দশ বছর এই বাড়িটা তো তখন থেকে ফাঁকাই পরে আছে মালিক খুঁজে পাওয়া যায়নি বোধয় না'হলে প্রমোটররা এতবড়ো একটা বাড়ি…."

দু চারজনকে জিজ্ঞাসা করলাম কেউ রমণী বাবু  বলে কারুকে কস্মিনকালে এখানে দেখেনি কেউ নাম জানেনা

বিক্রম আমার দিকে কেমন চোখে চেয়ে আছে দেখে রেগে গেলাম বললাম –' তুই বাড়ি চলে যা আমি দেকছি "

বিক্রম একটু কিন্তু কিন্তু করে চলে গেল

কিন্তু তাও আমাকে এখানে অপেক্ষা করতে  হবে  অপেক্ষা করতে হবে রমণী বাবুর  জন্যে  আমি জানি , তিনি আসবেনই   তার সাথে যে আমার ভীষণ দরকার   ভীষণ "

এই পর্যন্ত লেখাটা পরে , বরাট সাহেব সাব ইন্সপেক্টর তীর্থকে জিগ্যেস করলেন  -"তাহলে তোমরা শুভ্রজিৎকে কি অবস্থায় পেয়েছো?"

" খাটে পরে ছিল স্যার. মুখ  দিয়ে গাঁজলা বেরুচ্ছিল .পাশে পরে ছিল এই লেখাটা "

"পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট কিবলছে"

' কোনো রকম কড়া বিষ স্যার   সম্ভবত  স্ট্রিকনিন  ওভারডোজ স্যার. আমরা ওর ঘরে দুটো  মদের গ্লাস পেয়েছি  দুটোতেই পাওয়া গেছে বিষ   আরও জেতা বলার দুটো গ্লাসে  তলানি মদ ছিল"

"তাহলে কি আর কেউ ওর  সাথে ছিল? এটা সুইসাইড না হোমিসাইড ?"

" আর কারু ফিঙ্গার প্রিন্ট নেই স্যার । কাছাকাছি খোঁজ নিয়েছি  । পানের দোকান আর একটা মুদির দোকানে । কাল রাত্রে কোন অজানা  লোককে  ঘরে আসতে দেখেনি কেউ ।"

" শুভ্রজিতের দিল্লির এক্সিবিশন এর ব্যাপারে খোঁজ খাবার নিয়েছো?'

" হাঁ স্যার মাস ছয়েক হলো , কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে  কোনো এক্সিবিশন টেক্সিবিশন ছিল না তবে ভালো আঁকতে পারতো ওর কলেজের স্যাররাও  কিছু জানেন না মোবাইল বন্ধ তিন কূলে কেউ ছিল না স্যার একটা অনাথ আশ্রমে মানুষ সেই অনাথ আশ্রমের ফাদার নাথনিয়েলও কিছু জানেন না তার সাথে যোযাযোগ নেই কলেজ ছাড়ার পর থেকে      মাস ছয়েক আগে হটাৎ হোস্টেল ছেড়ে চলে গিয়েছিল'

এবার তীর্থ একটু আমতা  আমতা করে বললো- "স্যার এই ছবিটা যদি একটু দেখতেন .. এটা ভিক্টিমের ঘর থেকে পাওয়াগেছে "

ছবিটা দেখে প্রায় লাফিয়ে উঠলেন বরাট সাহেব তীর্থকে বললেন –" এটা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট পৃথ্বিশ জানার ছবি না"

তীর্থ মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিলো বরাট সাহেবের অনুমান সঠিক

' ছবিটা তো দারুন হয়েছে শুভ্রজিৎ কি যেন লিখেছে বললে -একদম হয় নি এনার ছবি আঁকছিল বুঝি শুভ্রজিৎ ' ?'

তীর্থ  ছবির গুনাগুন নিয়ে  কোনো মন্তব্য করা মোটেই সমীচীন বলে মনে করল  না  

"হ্যাঁ স্যার. শুভ্রজিতের কলেজের প্রিন্সিপাল বলছিলেন সত্যি সত্যি জানা সাহেবের ছবি আঁকা শুরু করেছিল মাস ছয়েক আগে ইন ফ্যাক্ট আমরা হিসেব করে দেখেছি যেদিন শুভ্রজিৎ হোস্টেল ছেড়ে ছলে যায় সেদিন থেকেই জানা সাহেব মিসিং ।  তারপর একদিন কলেজ হোস্টেল সব ছেড়েছুড়ে বেপাত্তা ওর এখনকার আস্তানার খোঁজ কেউ জানে না স্যার ।"

" জানা সাহেবের মিসিং কেসটা তো সি .আই .ডি দেখছিলো এত বড় ভাইটাল   পয়েন্টহি মাইট হ্যাভ কিল্ড হিম আউট অফ ডিপ্রেশন   তা ওরা ছোকরাকে খুঁজে বের করে নি? "

 

"সেটা স্যার ,আমি কি করে বলবো?"

"হ্যাঁ, তাও তো বটে তুমি আর কি করে

"সাত  বাই ছয় ফকির চরণ স্ট্রিট . এই ঠিকানাটা খুব চেনা চেনা তো মনে হচ্ছে না তীর্থ "

"মনে তো হবেই  স্যার পুলিশের কাছে মর্গের ঠিকানা চেনা চেনা  বলে মনে হবে না?"

 

উত্তেজনায় চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান ডি . সি .হোমিসাইড বরাট  সাহেব  


=======================


বিশ্বনাথ ব্যানার্জী

গঙ্গা এপার্টমেন্ট

ফ্লাট ন - ১০০ বি , বি ব্লক

২২/ দেশবন্ধু রোড

কলিকাতা ৭০০০৮৬

দূরাভাস-৬২৯১৯৬৮৮৫৭


মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩