Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

গল্প ।। রণেশ রায়






দিল্লী কা লাড্ডু


ভারতের রাজধানী দিল্লির উপকন্ঠে হরিয়ানা প্রদেশে গড়ে উঠেছে গুরগাঁও শহর যার বর্তমান নাম গুরুগাঁও। আমাদের কলকাতার গুরুকুল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামের আদলে এই আধুনিক শহরের নামকরণ।এ এক নয়া চমকপ্রদ আধুনিক ভারত। রাজপথের দুধার ধরে গড়ে উঠছে আধুনিক আবাসন, এক একটি হাজার দুহাজার ফ্ল্যাট নিয়ে আধুনিক জীবন যাপনের উপকরনে সজ্জিত সোসাইটি। যেন এক একটা উপগ্রহ নগর। তার সঙ্গে অফিস বাড়ি মল ব্রিজ। গ্রামের পর গ্রাম সাফ করে নগর নির্মাণ কাজ চলছে  যেখানে কাজ করতে আসছে দেশের বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জ থেকে লাখ লাখ শ্রমিক যারা নির্মাণ কাজের কাছে শিবিরে বা বস্তিতে থাকে যতদিন কাজ চলে ততদিন। তারপর নতুন জায়গায় নতুন নির্মাণ কাজে চলে যায়। এদের কাজের স্থায়ীত্ব নেই, স্থায়ী আশ্রয় নেই। এরা দিন মজুর। রোজএর কাজ, রোজ মজুরী। কোন শ্রম আইন এদের জন্য প্রযোজ্য নয়। নেই স্বাস্থ্য নেই শিক্ষা। এরা যাযাবর শ্রমিক যার অভিজাত নাম পরিযায়ী শ্রমিক।শ্রমিকরা বেশিরভাগ ঘরবাড়ি ছেড়ে দেশের এ প্রান্তে হাজির। কারো কারো সঙ্গে বউ বাচ্চা।ঘেষাঘেষি করে থাকে ছোট্ট একটা এসবেষ্টার বা তাবুর ঘরে। সঙ্গে কোনমতে আট দশজনের জন্য একটা তথাকথিত শৌচাগার।এই নির্মাণ প্রকল্পের মালিকরা দেশী বিদেশি বড় বড় শিল্পপতি হলেও শ্রমিকরা শ্রমিক কন্ট্রাক্টরের হাত ধরে এখানে কাজ করতে আসে। সুপারভাইজারের অধীনে কাজ করে। এদের প্রতি নির্মাণ মালিকের কোন দায় নেই। এই ধরনের নির্মাণ কাজে বিনিয়োগ খুব বেশি নয়। ফলে এই প্রকল্পগুলো অসংগঠিত বিভাগ বলে পরিচিত।


অন্যান্য রাজ্যের মত পশ্চিমবঙ্গ থেকে এখানে একটা প্রকল্পে এসেছে এমন শ দুই পরিযায়ী শ্রমিক। সুন্দরবন  অঞ্চল থেকে এদের আগমন। হিন্দু মুসলমান নিম্নবর্ণ দলিত মিশ্রিত শ্রম সমাবেশ। রাম রহিম লালু কালু নাম এই শ্রমিকদের। এদের অনানুষ্ঠানিক নেতা ছোটু যে কথাবার্তায় কিছুটা চনমনে। হিন্দিটা ভালো বলতে পারে। এখানে এরা বছরখানেক হল এসেছে। সব প্রদেশের ভিন্ন ভাষাভাষী ভিন্ন আচার ধর্মের সহকর্মীদের সঙ্গে এদের বাস।কাজের পাশাপাশি একসঙ্গে খাওয়া পরা। দিব্যি হেসে খেলে কেটে যায়। বহুর মধ্যে একের সমাহার। কাজের সূত্রে বসবাস, থাকা খাওয়া। গড়ে ওঠে একটা কমরেডশিপ যেটা নেহাত বন্ধুত্ব নয় তার থেকে বেশি কিছু যা অনুভব করা যায় কিন্তু বলে ওঠা যায় না।এটা নিয়ে আনন্দে থাকায় বাড়ি থেকে এত দূরে বিচ্ছিন্ন থাকার একাকিত্ব ভুলে এরা থাকে। প্রথম প্রথম ভাষা আচার ধর্মগত পার্থক্যের দরুন অসুবিধে হত। বছর না ঘুরতেই অসুবিধেটা দূর হয়ে গেছে। আজ যেন সবাই মিলে একটা পরিবার, শ্রমিক পরিবার। এরই মধ্যে যে যার আচার ধর্ম পালন করে। বাড়াবাড়ি নেই, ধর্ম বর্ণ নিয়ে বিভেদ বিবাদ নেই। এই জীবনে গ্রাম্য সংস্কারাচ্ছন্নতা যেমন উবে গেছে তেমনি নগরের আর্থিক স্বাচ্ছন্দতা ভিত্তিক অহংটাও নেই। এক সহজ সরল কোন মতে টিকে থাকার জীবন। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি। তার বাইরে এই সমষ্টি জীবনের আনন্দ হাজার কষ্টের মধ্যেও। অথচ এদেরই শ্রমে গড়ে ওঠে উচ্চবিত্তদের জন্য এক স্বাচ্ছন্দের নগর জীবন। সেটার কোন সুযোগ এরা পায় না বলে এদের কোন নালিশ নেই। ঈর্ষা পরায়ণ হওয়ার সময় নেই।


হঠাৎ খবর আসে করোনা নামে এক মারাত্বক সংক্রমক মারণ রোগ রাজধানীতে হানা দিয়েছে। এগিয়ে আসছে এদিকে । কাউকে নাকি রেহাই দেবে না। বিদেশ থেকে উড়োজাহাজে তার আগমন। সারা পৃথিবীজুড়ে তার ভয়ঙ্কর প্রতাপ। এর কোন ওষুধ নেই। একমাত্র প্রতিষেধক একজনের আরেকজনের থেকে দূরে থাকা। এই দূরে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার প্রয়োজনে যান বাহন স্কুল কলেজ কল কারখানা ক্ষেতের কাজ সব বন্ধ করে দিতে হয়। সরকারও তাই ভাবছে। তিনটে কথা মুখে মুখে চালু হয়ে যায়: লক ডাউন, সামাজিক দূরত্ব আর পরিচ্ছন্নতা। লক ডাউন আর পরিচ্ছন্নতা কথা দুটির মানে বোঝা যায়। শ্রমিকদের জীবনে লক আউট কথাটা চালু, ওটা শ্রমিক জীবনের অঙ্গ। সেটাই আজের লক ডাউন। শুধু কোন কারখানা নয় পুরো জীবন স্তব্ধ হয়ে যাওয়া লক ডাউন। আর পরিচ্ছন্নতা তো সমাজ জীবনের অঙ্গ। সংক্রমক রোগ হলে ঘটি বাটি আলাদা করে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার সনাতনী নিয়মটা সবাই জানে। গ্রামে গঞ্জে পক্স যক্ষা কলেরা হলে পরিবারে এই নিয়ম চালু হয়। কিন্তু সামাজিক দূরত্বটা কি? অসুখ হলে মা বোনের সেবা পাওয়া যাবে না। খেলাধুলো বন্ধ রোগ না হলেও রোগের ভয়ে। একে অন্যের থেকে দূরত্ব রেখে চলবে। এটাই নাকি আগামী সমাজের নিয়ম হয়ে যাবে। তবে জীবনটার আর থাকে কি? আর এই ছোট্ট ঘরে ঠাসাঠাসি করে থাকা মানুষদের কাছে এর মানে কি? কেউ বোঝে না। একরাশ দুশ্চিন্তা। সবচেয়ে দুশ্চিন্তা হল রুটি রোজগারের হবে কি? তবে এখনো কাজ বন্ধ হওয়ার খবর আসে নি। কাল কাজে গিয়ে বোঝা যাবে। সবাই একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে ঘরে ফেরে।


পরের দিন সবাই কাজে যায়। যথারীতি কাজ হয়। ছোট্টু আর কয়েকজন মুখিয়াস্থানীয় শ্রমিক সুপারভাইজারের কাছে জানতে পারে দিল্লিতে লক ডাউন চালু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ভারতব্যাপি লকডাউন ঘোষণা করতে চলেছে। ওদের মালিক কাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত জানায় নি। ওদের নির্মাণকাজ পুরোদমে চলছে। সেটা বন্ধ হয়তো মালিক করতে চায় না। সেটাই একমাত্র সান্ত্বনা। তবু ভয় কেন্দ্রীয় সরকার যদি লক ডাউন করে তবে তো এই নির্মাণ প্রকল্প বাদ যাবে না। স্বস্তি কোথায়? রুটি রোজগার বন্ধ হলে ওরা কি করবে? খাওয়া দাওয়া বন্ধ ঘরভাড়া না দিতে পারলে ঘাড় ধাক্কা। আর অঞ্চলের মুখিয়া শিবিরের মালিককে সবাই এর মধ্যে চিনে গেছে। তবে কি ঘরে ফিরে যেতে হবে? প্রশ্নগুলো সবাইকে ছিড়ে খেতে থাকে।


এভাবে দুদিন চলার পর লক ডাউন ঘোষণা হয়। নির্মাণ কাজ বন্ধের নোটিশ আসে। শ্রমিকরা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসে। আলোচনায় প্রশ্ন ওঠে তবে কি সবাই ঘরে ফিরে যাবে? জানা যায় যে মালিক জানিয়েছে কয়েকদিন কষ্ট করে অপেক্ষা করতে। লক ডাউন উঠলেই আবার কাজ শুরু হবে। লক ডাউন একমাসের জন্য। কিন্তু ওরা থাকবে খাবে কি? ঘরে ভাড়া না দিতে পারলে তাদেরতো রাস্তায় বসতে হবে। তবে সরকার আর কাছের একটা সাহায্যকারী গোষ্ঠী একবেলার খাবার ব্যবস্থা করবে বলে আশ্বাস দেয়। কিন্তু সেটা আর কতদিন? তবে বাড়ি  ফেরার ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারছে না। না মালিক কোন ভরসা দিচ্ছে না সরকার। আর যানবাহন ট্রেন বন্ধ থাকলে সেটা কি করে সম্ভব। অথচ এই অবস্হায় সকলের বাড়ি ফেরার তাগিদটা বাড়তে থাকে। সকলে ঠিক করে পরেরদিন সুপারভাইজারের কাছে এ ব্যাপারে ওদের দাবিটা জানাবে। আর আসার সময় ট্রেনে লরিতে গাদাগাদি করে হলেও মালিক পয়সা খরচ করে ওদের আনিয়েছে। এবারে যদি সেরকম একটা ব্যবস্থা করা যায়। এর পর নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রেখে থাকার প্রশ্নটা আসে। সেটা নিজেদের স্বার্থে দরকার আর সরকারি নির্দেশ নামা। পুলিশ এসে জানিয়ে গেছে। এর মধ্যে ছোট্টু ফোনে গ্রাম থেকে জানতে পেরেছে যে গ্রামে মানুষরা বাইরে প্লাষ্টিকের তাঁবুতে বা গাছে মাচা বেঁধে থাকছে। সেটা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়। সবাই ঘরে ফেরে।


ঘরে ফিরে সবাই দুশ্চিন্তা ছুড়ে ফেলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে থাকার ব্যবস্থায় কাজে লাগে। ঘরে বাইরে ফাঁকা  জায়গায় প্লাস্টিকের তাবু করা হয়। গাছে মাচা বাঁধে। আর কেউ কেউ নির্মাণ প্রকল্পে গিয়ে থাকবে ঠিক করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সব ব্যবস্থা হয়। আর বসন্তের শেষে দক্ষিণা হাওয়া। বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। না ঠান্ডা না গরম তাই তেমন অসুবিধে হয় না। সবাই খাওয়া দাওয়া সারে। পরের দিন কাজ নেই। তাই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সবাই গল্প আড্ডায়। তবে সবার মাথায় দুশ্চিন্তা, বাড়ি ফেরার তাগিদ। বাড়িতে সবাই কেমন আছে। ভাবে বাড়ি গেলে সবার মধ্যে থাকা খাওয়াটা হয়ে যাবে। কিন্তু এখানে কদিন চলবে? আর অনুগ্রহের ওপর নির্ভর করে তো বেশিদিন বাঁচা যায় না। গল্প আড্ডায় প্রশ্ন ওঠে এ কি ধরণের রোগ! একটু বয়ঙ্করা জানায় এই কোন মতে টিকে থাকা মানুষদের আবার ভয় কি? অপুষ্টি  মারি মহামারি বন্যা খরা তো এদের নিত্য সঙ্গী। ম্যালেরিয়া ওলাওঠা এ সব নিয়েইতো ঘর করা। এই তো সেদিন আয়লা। সে কি ভয়ংকর। সব ধ্বংস হয়ে গেল। আবার ওরাই গড়ে তুললো। জীবনটাই ওদের ভাঙা গড়ার খেলা। সুতরাং কবিতার ভাষায় এই করোনা সম্পর্কে বলতে হয়:


শুনেছ কি নি:শব্দের বিস্ফোরণ

অকাল বৈশাখীর তান্ডব

ক্ষুদ্র সে অণুর ভয়ংকর গর্জন

সভ্যতার বুকে বর্বরের প্রলয় নাচন

সে মানে না ভেদ বিভেদ

মানে না ধর্ম বর্ণ বিদ্বেষ

ধ্বংসের মধ্যে তার সৃষ্টির বার্তা

শোন ওই নবজীবনের স্পন্দন

ভাঙি এসো দাসত্বের শৃঙ্খল

গড়ে তুলি সে পৃথ্বী নতুন।


পরের দিন। কাজ নেই। সবাই মিলে সুপারভাইজারের ঘরে যায়। ছোট্টু সহ পাঁচজন ঘরে ঢোকে। সুপারভাইজার জানায় ওরা যেন ঘরে যাবার কথা এখন না ভাবে। লক ডাউন উঠলেই কাজ শুরু হবে। ওরা ঘরে ফিরতে বাধ্য হলে ওদের মালিক যেন ব্যবস্থা করে সে আর্জি জানায় শ্রমিকরা। সুপারভাইজার জানায় সে মালিককে বলবে। হয়তো মালিক ওদের আর্জি মেনে নেবে। সুপারভাইজার জানায় দুতিনদিনের মধ্যে উনি একটা কিছুর হয়তো ব্যবস্থা করবেন। সবাই আশ্বস্ত হয়ে ফিরে আসে।


দিন পাঁচেক কেটে গেছে। যেন বরফের নিস্তব্ধতা। মালিকের কাছ থেকে কোন খবর আসে না। একবেলার খাওয়া দাওয়া সরকারি বা বেসরকারি সাহায্যকারী সংস্থার বদান্যতায় চলে যাচ্ছে। কিন্তু শিবিরের মালিক যে আর অপেক্ষা করতে রাজি না। ভাড়া না দিতে পারলে ওদের উঠে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। শ্রমিকদের বাড়ি যাওয়ার তাগিদ বাড়ে। তারা আবার আলোচনায় বসে। ওরা পাঁচজনের একটা প্রতিনিধি দল ঠিক করে। এই প্রতিনিধি দলই ওদের শ্রমিক সংগঠন যেটা আইনত স্বীকৃত নয়। শ্রমিকরা বোঝে বাঁচার জন্য কেন সংগঠন দরকার। ওদের বাড়ি ফেরার ব্যাপারে সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলবে এই প্রতিনিধি দল। এদিকে ট্রেন চালাবার সরকারি উদ্যোগ নেই। এরই মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য অন্য রাজ্য থেকে নিয়ে আসে এমন লরি মেটাডোরের সঙ্গে কেউ কেউ কথা বলেছে। ওরা যে টাকা চাইছে তা দেবার ক্ষমতা শ্রমিকদের নেই। তাই মালিকের ওপর চাপ সৃষ্টি করার দাবি ওঠে। কিন্তু মালিক না মানলেও ওদের যেতেই হবে। এর মধ্যে দেখা যায় নির্মাণ কাজে সুরক্ষাবাহিনী জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ মধ্যে মধ্যে আসছে। রাতে যারা নির্মাণ প্রকল্পে শুতে যাচ্ছে তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে এই বলে যে ওখান থেকে নির্মাণের মাল চুরি হচ্ছে।


পরের দিন পাঁচজন প্রতিনিধি আর বেশ কয়েকজন সুপারভাইজারের কাছে যায়। নির্মাণ অঞ্চলটা সুরক্ষা বাহিনী ঘিরে রেখেছে। একটা পুলিশ ভ্যান অপেক্ষারত। বাইরে সবাই অপেক্ষায়। পাঁচজনের প্রতিতিধিদল সুপার ভাইসারের ঘরে ঢোকে। আলোচনা শুরু হয়। সুপারভাইসার জানায় মালিকের ইচ্ছে থাকলেও লক ডাউনের জন্য কাজ চালু করা যাচ্ছে না। বলাও  যাচ্ছে না কবে খুলবে কারণ সরকার লক ডাউন বাড়াবে বলে শোনা যাচ্ছে । এই অবস্থায় শ্রমিকরা বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বলে। কিন্তু সুপারভাইসার জানায় লকডাউন থাকায় সেটা কি করে সম্ভব। তখন শ্রমিকরা মালিকের আর্থিক দায়িত্ব নেওয়ার দাবি তোলে কারণ এর জন্য তো তারা দায়ী নয়। গাড়ির ব্যবস্থা শ্রমিকরাই করবে। কিন্তু মালিক গররাজি। তর্কাতর্কি শুরু হয়। বাইরে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। পুলিশ এসে সামাজিক দূরত্ব না মানাটা অপরাধ বলে জানায়। লাঠি চালায়। ভেতর থেকে প্রতিনিধি দল বেরিয়ে আসে। তারা শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে গেলে পুলিশ ছোট্টু সহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। শ্রমিকরা একজোট হয়ে থানায় যায়। থানা ঘেরাও করে। কিছুক্ষণ থানায় আটকে রাখার পর পুলিশের উঁচুতলার অফিসাররা করোনার ভয়ে আর সরকারের ব্যাপারটা নিয়ে বেশি না এগোবার আদেশ আসায় ধৃতদের কেস দিয়ে ছেড়ে দেয়। ওরা বেরিয়ে আসে। ঘেরাও তুলে নেওয়া হয়। বাইরে দাঁড়িয়ে কিছু আঞ্চলিক নেতা ওদের নিয়ে ফেরে। যেন ওদের জন্যেই এরা মুক্তি পেয়েছে। ওরা শ্রমিকদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানালেও ওদের ঘরে ফেরার ব্যাপারে নিশ্চুপ। শ্রমিকরা বোঝে নিজেদের ব্যবস্থা যে করেই হোক নিজেদের করতে হবে। তারা ফিরে আসে।


ঘরে ফিরে সবাই একজোটে বসে । সন্ধ্যা হয়ে আসছে। সূর্যাস্তের আলো আবছা হয়ে এসেছে। আজ এক নতুন অতিথি। শ্যমলালের পনের ষোল বছরের মেয়ে কিছুদিন হলো এসেছে বিহারের ভাগলপুর থেকে। বাহন তার বাবার সাইকেল। সে অসুস্থ বাবাকে ঘরে নিয়ে যাবে সাইকেলে করে। সবাই অবাক হয়। কি করে সম্ভব।পারবে না।অঘোরে রাস্তায় মরবে। সবাই বারণ করে। কিন্তু সে নাচার। চোখে মুখে প্রত্যয়। বাবাকে সে বুঝিয়েছে। এখানে হয় করণায় নয় অনাহারে পড়ে মরতে হবে। তার চেয়ে ভালো শেষ চেষ্টা করা। দীর্ঘ অজানা পথ তাদের পাড়ি দিতে হবে। সময় লাগে লাগুক। পথই পথ দেখাবে। অদ্ভুত প্রাণশক্তিতে ভরপুর একটা পাতলা রোগা মেয়ে। বাবার প্রতি অগাধ ভালোবাসা। সব বিপদ তুচ্ছ করে এই পৃথিবীটাকে সে জয় করবে। সবাই মেয়েটির প্রত্যয়ের কাছে হার মানে। জেগে ওঠে নিজেদের ওপর আস্থা। তারাও ঠিক করে ঘরের পানে তারা রওনা দেবে। ইতিমধ্যে রাজপথে পারিযায়ী শ্রমিকের রোজের মিছিল দেখা যাচ্ছে। সবাই ঘর মুখো। হেঁটে সাইকেলে মেটাডোরে লরিতে চলেছে তো চলেছে। সবাই পারছে তারাই বা পারবে না কেন। সিদ্ধান্ত নেয় রাতের মধ্যে সবাই প্রস্তুত হবে। কাল তাদের যাত্রা শুরু । যেন মরু তীর্থ হিংলাজ। তীর্থ যাত্রা। ঘরই তাদের তীর্থ ক্ষেত্র। সবাই আলোচনা সেরে ঘরে ফেরে। বাক্স পোটলা বাধে। সঙ্গে বই বাচ্চা। কেউ কেউ অসুস্থ কারো বউ পোয়াতি। বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয় টানা গাড়ি যাতে অক্ষমদের টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। মুড়ি চিড়ে যা সামান্য আছে সঙ্গে নেওয়া হয়। পুঁজি নেই বললেই হয়। কিছু নেই, তাও আছে প্রাণশক্তিতে ভরপুর অদম্য ইচ্ছে শক্তি, আছে শ্যমলালের মেয়ের প্রত্যয় যা সবার দেহে ত্বরিতের মত প্রবাহিত।


ভোর হতে হতে শ্যমলালকে সাইকেলে চাপিয়ে তার মেয়ে রওনা দেয়। বউ বাচ্চা নিয়ে বাকিরা এসে রাজপথে জড়ো হয়। পুলিশ পথ আটকায়। আসে পাশে প্রকল্প থেকে পদব্রজে পারিযায়ী শ্রমিকের দল হাজারে হাজারে। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সবাই চলতে থাকে। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ। রাষ্ট্র এই জোটবদ্ধ  নিরস্ত্র সহায় সম্বলহীন মানুষের মেজাজের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। শুরু হয় চলা। বিভিন্ন ভাষায় দেহাতি গান ছড়া। এ যেন এক মহাযাত্রা। আমরা এ যাত্রার বর্ণনা দিতে পারি কয়েক ছত্রে:

নিঃশব্দে যাত্রা তাদের

শহর থেকে গ্রামে ফিরবে তারা ঘরে,

সহায় সম্বলহীন লোটা কম্বল কাঁধে

যেতে হয় সেই সুদুরে লম্বা যাত্রা পথে,

অসহায় তারা ফিরতে হয় নিজ দুয়ারে

এসেছিল খাবার সন্ধানে এ অজান শহরে।

করোনার থাবায় সবহারা সম্বলহীন

কাজ হারা রুটির সন্ধানী

আদেশ ভেঙে নামে এসে পথে,

কত যোজন যেতে হবে কত দূরে জানা নেই তাদের

নিজের অজান্তেই খিদের তাড়নায় রাষ্ট্রদ্রোহী তারা

ভাঙে রাষ্ট্রের নির্দেশ করোনার সংক্রমণ রুখতে,

জানে তারা ডাক এসেছে মরতে হবে খিদেতে নয় করোনায়।


মানুষ হেটে চলে এক বন্ধুর পথে। রাজপথ ধরে রেল লাইন ধরে গ্রাম নগর জঙ্গল পেরিয়ে। হাত গাড়িতে বসিয়ে পোয়াতি বউ বাচ্চাদের টেনে নিয়ে চলা। কাঁধে পিঠে চড়িয়ে শিশুদের। অভাবনীয় এক পথ চলা। এরই মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। গাড়ির চাকায় বা ট্রেনে চাপা পড়ে বহু মানুষের প্রাণ যায়। অনেকে না খেতে পেয়ে সহ্য করতে না পেরে মারা যায়। একই সঙ্গে এক  অভাবনীয় দৃশ্য। যে লরি মেটাডোর তাদের চুক্তিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশাল অংক দাবি করেছিল তারাই অনেকে গাড়ি থামিয়ে অনেককে গাড়িতে করে যতটা সম্ভব এগিয়ে দেয়। এতে সহজ হয় পথ চলা। শহরে গ্রাম গঞ্জে মানুষ খাবার দিয়ে জল চা দিয়ে সাহায্য করে। এ পথে যারা চলে তারাই পারে এর বর্ণনা দিতে। আমরা বড়জোর কল্পনায় মিশিয়ে একটা ছবি আঁকতে পারি এদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে যা সবটা তুলে ধরতে পারে না। এই প্রাণশক্তিতে ভরপুর মানুষগুলো কিছু মানুষের লাভের হাতিয়ার হিসেবে কলে কারখানায় ব্যবহৃত হয় মাত্র। এদের সৃষ্টিশীল ব্যবহার সম্ভব হয় না। যে সম্পদ এরা সৃষ্টি করে তার ভগ্নাংশও এরা পায় না।


এইভাবে পথ চলে, বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে দেশের বিভিন্ন মানুষ তাদের ঘরে ফেরে। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দর বনের মানুষরাও ফেরে দীর্ঘ কুড়ি দিনের যাত্রা সেরে। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে আমফুয়ের তান্ডব। সুন্দরবন নোনা জলে তলিয়ে যায়। এই শ্রমিকরা গ্রামে ফিরে দেখে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে এক একটা অঞ্চলে এক একটা দল গ্রাম পুনর্গঠনের কাজে লেগেছে। কিছুটা সরকারি সাহায্য কিছুটা মানুষের সাহায্যে তাদের অল্প মজুরি দেওয়া হয়। শ্রমিকরা বেশি সময় ধরে স্বেচ্ছা শ্রম দেয়। মহিলা পুরুষ শিশু বৃদ্ধ সবাই কাজে নেমেছে। প্রলয়ের মুখে বেঁচে থাকার লড়াই। চুক্তি শ্রম নয় স্বেচ্ছা শ্রমে কাজ। জীবনের পুনর্গঠন। একদিকে করোনা অপরদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে এক অসম যুদ্ধ। যুদ্ধে জিততেই হবে। অনিশ্চয়তা, হাড়ভাঙা খাটুনির মধ্যেও যেন এক সৃষ্টির আনন্দ।কবিতার ভাষায়:

নির্ঘুম চোখে ঘুম আমার

অচলা পৃথ্বী চলা শুরু করে

নির্বাক রাতের শেষে সবাক সকাল

কর্মের চাঞ্চল্য নিষ্কর্মের ঘরে

নিঃশব্দ জীবনে শব্দ ডেকে ফেরে

শীতের ঠান্ডায় পাতা ঝরে

নতুন কিশলয় জড়ায় বৃক্ষরে

স্রোতস্বিনী নদী আবার বয়ে চলে

জীবন ফেরে নিজ ছন্দে

আকাশ মুখর পাখির কলোরলে।


এভাবে চলতে থাকে। স্কুল বাড়ি ক্লাব বা কোথাও ভেসে যাওয়া মানুষের থাকার ব্যবস্থা। কমিউনিটি রান্না খাওয়া। একটু একটু করে গঠন কাজ চলতে থাকে। স্বাভাবিক জীবন ফিরতে থাকে। আবার একসঙ্গে বসবাসের স্বপ্ন। এর মধ্যে খবর আসে সেই শ্রম কন্টাক্টটার শ্রমিকদের কাছে আর্জি নিয়ে এসেছে। গুরুগাঁয়ে কাজ আরম্ভ হবে। লকডাউন উঠে গেছে। মালিক উড়োজাহাজে করে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে যাবার ব্যবস্থা করবে। এবার আর গরু গাধার মত লরিতে বা ট্রেনে একজনের ঘাড়ে আরেকজনকে চাপিয়ে নয়। একেবারে উড়োজাহাজে। বাপের জন্মে যা শ্রমিকরা ভাবতে পারে নি।এদিকে এত অভাবের মধ্যেও তাদের পূর্গঠনের কাজ চলছে। ওরা কি করবে ভাবতে পারে না। এরই মধ্যে উড়োজাহাজের হাতছানি। আর ওখানকার শ্রমিক জীবনটাকে অনেকটা ওরা মানিয়ে নিয়েছে। সবাই ছোট্টুর কাছে আসে। ওর পরামর্শ নিয়ে ঠিক করবে।


ছোট্টুর সঙ্গে সবাই স্কুল বাড়িতে বসে। আলোচনা করে। ছোট্টু বোঝে কেউ কেউ বিভ্রান্ত দোটানায়। আবার কেউ কেউ ফিরতে চায়। তবে অনেকেই ফিরে এসে এই জীবনটার নতুন এক স্বাদ পায়। ফিরতে চায় না। ছোট্টু কোন সিদ্ধান্ত দেয় না। ওদের কাছে একটা গল্প বলে। গল্পটা এইরকম:


সুমিতা, সবাই সুমি বলে ডাকে। এই ফ্ল্যাটে সেই ফ্ল্যাটে ঘরমোছা কাপড় কাঁচার কাজ করে। ফ্ল্যাটের  মালিকরা বলে খুব বিশ্বস্ত। ভালবাসে সবাই। সেটাই তার উপরি পাওনা।


সুমিতার মল্লিকের ঘরের কাজটা গেল। আজ মল্লিকগিন্নী টা টা করে দিয়েছেন। কিন্ত কেন? সে জানে না। তার দুশ্চিন্তা কাল আবার কেউ না দেয়। ভাবতে ভাবতে সে সন্ধ্যে নাগাদ বাড়ি ফেরে। বাড়িতে আরেকটা খবর তার জন্য অপেক্ষা করছিল। ননদ জানাতে ভোলে না যে থানার বড়বাবু তাকে থানায় দেখা করতে বলেছে। ননদ বেশ রসিকতা করে বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। ননদের অভিযোগতো সারা বছর কিন্তু থানার কি অভিযোগ থাকতে পারে?  সুমিতা ভেবে পায় না।


সুমিতার স্বামী শম্ভু আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছে। সেই সাত সকালে গায়ে জ্বর নিয়েই রিক্সা নিয়ে বেরিয়েছিল। সব শুনে সে সুমিতাকে থানায় নিয়ে যায়। ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষা করার পর বড়বাবু তার ঘরে কোন এক ভদ্রলোকের সংগে কথা বলা শেষ করে তার উপস্থিতিতেই সুমিতাকে ডাকে। থানায় এটাই নিয়ম। ভদ্রলোক থাকলে তাদের প্রাধান্য আগে। ছোটলোকদের আবার গুরুত্ব কি? 


ঘরে ঢুকে সুমিতা দেখে যার জন্য সুমিতাকে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে এতক্ষণ বসে থাকতে হয় তিনি  মল্লিক বাবু, সেখানে বসে। বড়বাবু তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন:

"এই যে এসেছো। তবে আর দরকার নেই। তুমি যেতে পার। বেঁচে গেলে। মল্লিকবাবু মোরাইলটা বাড়িতেই পেয়েছেন"।


মল্লিকবাবু লজ্জা লজ্জা ভাব করে বলেন:

"সুমি, তুমি কাল কাজে এস"।


সুমিরা বেরিয়ে আসে। শম্ভু রহস্যটা বোঝে। সে বলে, "বাবুদের ভালোবাসা হল মুর্গিপোষা। যখন তখন জবাই করে যে কোন অজুহাতে "।


গল্পটা শেষ করে সবাইকে ছটু বলে নিজেরা ভেবে চিন্তে যেন সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী মালিককে জানান হবে কটা উড়ানের টিকিট সে পাঠাবে।

মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩