অদ্ভুতুড়ে
বছরে এই একটা দিনের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে আদিত্য। কালীপুজো। আলোর রোশনাই ও অন্ধকার আকাশে তারাদের ঝিকিমিকি দেখতে তার বেশ লাগে ।প্রত্যেক বছর বন্ধু শিবুর সঙ্গে আদিত্য যায় পাশের গ্রামের বন্ধুর বাড়িতে নেমন্তন্ন খেতে। কালীপুজো উপলক্ষে সেখানে খাওয়া-দাওয়া।দুই বন্ধু মিলে একা রাত্রে বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার মজা আদিত্যের খুব । তবে শিবু একটু ভীতু, তাই রাস্তায় যেতে যেতে ওকে নিয়ে কম মজা করে না আদিত্য। তখন সন্ধে সাড়ে সাতটা। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হঠাৎ আদিত্যর একজনকে মনে পড়ে গেল।চেনা একটা গন্ধ আশেপাশে। চারিদিকে চিৎকার , ঢাকের আওয়াজের মাঝে মনটা খারাপ হয়ে গেল। শিবু ডাকলো- কিরে যাবিনা ? দুজনে একটা টর্চ হাতে বেরিয়ে পড়ল। চারিদিক অন্ধকার আর হালকা ঠান্ডা। দুজনে হাঁটছে , শিবু বলল কিরে, কি হল তোর? আদিত্য বলল কিছু না । দেখ আজ মেঘ করেছে , শীতকালে তো এমন মেঘ হয়না। চারদিকটা গুম মেরে আছে। বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার রাস্তায় পড়ে একটি শ্মশান আরএকটি গোরস্থান। অনেকবার আদিত্যকে শিবু বলেছে বড়ো কাউকে সঙ্গে নিতে কিন্তু আদিত্য শোনেনি। শুধু একটা কথাই বলে কিছু হবে না। গোরস্থান পেরিয়ে বন্ধুর বাড়ি। আজ গোরস্থানে এত লোক?কেউ হয়তো মারা গেছে ? তাকে দাফন করার জন্য সবাই উপস্থিত । শিবুর মন কু ডাকছে।আদিত্যকে বলল, দেখ আজ কি বাজে একটা দিন। অবশেষে পৌঁছলো বন্ধুর বাড়ি। খাওয়া-দাওয়া শেষ, এবার ফিরতে হবে।বাড়ি ফেরার নামেই শিবু শুকিয়ে গেল। ইতিমধ্যে বৃষ্টি হয়েছে।আমাবস্যার রাত।গোরস্থানের কাছে এসে ওরা দেখল মরাটা পড়ে আছে । বৃষ্টিতে সবাই তাকে ফেলে পালিয়েছে । ক্ষণিকের জন্য মনে হলো মরাটা নড়ছে। শিবু তো অজ্ঞান হয়ে যাবে এমন অবস্থা। আদিত্য বলল - দেখ ,ওর চাদরের ভিতরে একটা ইঁদুর ঢুকে আছে তাই চাদরটা নড়ছে। চল চল। হঠাৎ মাঠে আগুন জ্বলে উঠলো।কিন্তু বৃষ্টিতে আগুন কিভাবে ? আদিত্য তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিল । একের পর খারাপ ঘটনা।এবার শ্মশান, চারদিক নিস্তব্ধ।এই সেই শ্মশান যেখানে কত প্রিয় মানুষরা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।এত নিস্তব্ধতার মধ্যে ওরা শুনতে পেল খড়মের আওয়াজ। কোথায় যেন শুনেছিল কাপালিকরা নাকি আমাবস্যায় শ্মশানে নর বলি দেয় ।আদিত্য বলল - দাঁড়া ,দেখে আসি।শিবু্র বারণ শুনলো না। গিয়ে দেখল অন্ধকারে কে যেন সাদা কাপড় পড়ে দাঁড়িয়ে। শিবুর মাথা ঘুরছে। আদিত্য বলল- বৃষ্টির ফোঁটাটা ওই ভাঙ্গা গামলায় পড়ে আওয়াজ হচ্ছে। আর ওটা মানুষ নয়, গাছে সাদা কাপড় জড়ানো। কিন্তু কাপড়টা তো? আদিত্য চেনে কাপড়টাকে, কিছুদিন আগে সে নিজে সেটাকে পড়িয়ে দিয়েছিল। কাপড়টা যে তার খুব প্রিয় কারণ জীবনে প্রথম কিছু পয়সা জমিয়ে সে কাপড়টা কেনে। দুজনে বাড়ি ফিরল। রাত তখন অনেক। সকলে শুয়ে পড়েছে। নিজের রুমের দরজা খুলে আদিত্য রেগে বলল- আমি কি কোথাও একা যেতে পারবো না নাকি? বড় তো হয়েছি । এখনো যেতে হবে। কার সঙ্গে কথা বলে আদিত্য মাঝেমধ্যে? সামনে বাঁধানো জমানো পয়সায় দিয়ে কেনা কাপড় পড়া তার মায়ের ছবি। কথা বলে ও মায়ের সঙ্গে। মাকে দেখে চারপাশে। আজও গিয়েছিল ওর সঙ্গে, ওকে আগলাতে । এত বৈজ্ঞানিক তথ্য ও সত্য জানা আদিত্য কথা বলে তার মৃত মায়ের সঙ্গে । আসলে কি বলুন তো কিছু জিনিসের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া যায়না। আর অনন্তকাল ধরে মনের কোণায় জমা হওয়া কিছু গল্প হয়ে ওঠে অদ্ভুতুড়ে।
================
তৃণা মুখার্জী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন