google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re গদ্য : পাভেল আমান - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শুক্রবার, ১৭ জুলাই, ২০২০

গদ্য : পাভেল আমান

বিপর্যয়ে মানবতার নিদর্শন



প্রাণ নাশক নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকে প্রতিহত করতে দুই মাস আধিক লকডাউন এর পর ঝিমিয়ে পড়া দেশীয় অর্থনীতিতে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি মানুষের বেঁচে থাকার রুটি-রুজির সংস্থানে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং স্বাভাবিক কাজকর্মের ব্যস্ততার সূচনা হয়েছে। লকডাউন কাটিয়ে ওঠে আমরা এখন আনলক -১ পর্যায় থেকে আনলক-২ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই দীর্ঘ লকডাউনে আমরা প্রতিনিয়ত সমাজের প্রান্তিক খেটে খাওয়া দিনমজুর শ্রমিক এবং দরিদ্র মানুষের কষ্ট, জ্বালা ,যন্ত্রণা বাঁচার নিরন্তর সংগ্রাম বিভিন্নভাবে লক্ষ্য করলাম। বর্তমান ডিজিটাল সোশ্যাল মিডিয়া ইন্টারনেটের যুগে চোখ কান খোলা রাখলেই টেলিভিশনে ফুটবল ক্রিকেট ম্যাচের লাইভ সম্প্রসারনের মত অসহায় নিরীহ মানুষের নিদারুণ দুরবস্থার হৃদয়বিদারক অসংখ্য লেন্স বন্দি ছবি, রেকর্ডিং করা ভিডিও , ক্ষেত্রবিশেষে লাইভ বুকফাটা রান্নার প্রতিচ্ছবি ও দৃশ্যমান। এই সমস্ত অসংখ্য দুঃখ ঝরা হতাশায় নিমজ্জিত মানুষের ছবিগুলো দেখলে অনুভূতিশীল মননে সহসা জেগে  উঠে মনুষ্যত্বের চরম বিপর্যয়ের ঘনঘটা। দীর্ঘ লকডাউন এ কত মানুষ কাজ হারিয়ে বেকারত্বের ঘোর তিমিরে পৌঁছে গেল যার কোন হদিস নেই। কত মানুষ বিপর্যয়ের তীব্র আর্থিক ধাক্কাকে সামলে ,দাঁতে দাঁত চেপে ,চোয়াল শক্ত রেখে ,অদম্য মনোবলের সঞ্চারণে আবারো স্বপ্ন দেখছে ঘুরে দাঁড়ানোর, বেঁচে থাকার অবলম্বন কে গতিশীল করার প্রতিনিয়ত স্বপ্নের জাল বুনছে নব নির্মাণের। ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ পৃথিবীতে যখনই কোনো দুর্যোগ বিপর্যয় সংহার কালের বিপদ তথা অতিবাহিত হয়েছে তাৎক্ষণিক একটা বিশাল ক্ষতি ধ্বংসসাধন এরপর নব আশায় উদ্দীপিত হয়ে প্রচন্ড মনোবল হার না মানা মানসিকতার পারস্পরিক সংযুক্তিকরণ এর মজবুত মেলবন্ধনে মানবজাতি আবার স্বমহিমায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে ,অস্তিত্বকে ধরণী বক্ষে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা মানবীয় সত্তার পূর্ণতায় মানবজাতি পুনরায় খ্যাতি সম্মান প্রভাব ফিরে পেয়েছে। এভাবেই কালের অমোঘ নিয়মে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা, জরা ,ব্যাধি মহামারী, যুদ্ধ, লড়াই কে প্রতিহত , পর্যুদস্ত করে মানবজাতি তার জয়যাত্রা বজায় রেখেছে। পৃথিবীব্যাপী কোভিড-১৯ এর তীব্র মারন সংক্রমণে মানবজাতি চরম বিপর্যস্ত ক্ষতিগ্রস্থ দিশেহারা বিপন্ন এবং মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছে। তবুও আশার আলো সমস্ত প্রতিকূলতাকে সাঙ্গ করে মানুষ বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে যেখানে লেগে আছে মজবুত বর্ম। এখানেই মানবজাতির বেঁচে থাকার সার্থকতা।
যেদিন থেকে অদৃশ্য ভাইরাসের প্রাণঘাতী সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রোগীর ভিড় জমছে, সেদিন থেকেই সশরীরে ময়দানে নেমে চিকিৎসক-নার্স স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনকে বাজি রেখে নিরবধি অক্লান্ত পরিশ্রমএ সেবা ধর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। একদা আমাদের সামাজিক ডাক্তার তথা চিকিৎসকের ভূমিকাটা বড় মলিন হয়ে গিয়েছিল বিশেষত একশ্রেণীর তথাকথিত ডিগ্রিধারী নাম-যশ ওয়ালা ডাক্তারের ব্যবসায়ী দৃষ্টিতে চিকিৎসার দৌলতে। তারা ডাক্তারি পেশাটাকে পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী পর্যবসিত করেছিলেন। তাদের কাছে সেবা নামক ধর্ম টা ছিল অধিগত বিদ্যার বড্ড সেকেলের পাঠ। নৈতিকতা ,মানবিকতা ,সেবা ব্রতের আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে তারা সমাজের একটা পুঁজিপতি চিকিৎসকে পরিণত হয়েছিলেন। যেটা ডাক্তারি পেশার চরম অবক্ষয়, চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক অশনী সংকেত। কিন্তু আরেক শ্রেণীর চিকিৎসকের বিপ্রতীপ সদর্থক ভূমিকা যেখানে প্রতিভাত সেবা ধর্মের যথার্থতা তাদের নিরলস মানবিক চিকিৎসাতে অসংখ্য মানুষ অতি মারির সংক্রমণে সংক্রমিত হয়ে মানবিক চিকিৎসার ধারাবাহিকতায় সুস্থতার হাসি হেসে জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়ে বাড়ি ফিরছে। এই নিবেদিতপ্রাণ ডাক্তারদের চিকিৎসার মানবীয় আরোগ্য পরশে মানবজাতি যুদ্ধের লড়াইয়ে ভাইরাসকে হারিয়ে দিল এবং বেঁচে থাকার নতুন ভাষা খুঁজে পেল যেটা তাদের কাছে পুনর্জীবন লাভ। তাদের নিরন্তর সেবায় আবারও তাদের প্রমাণ করল অসুস্থ মুমূর্ষ নিরীহদের কাছে জীবন্ত ঈশ্বর রূপে। এই অতিমারিতে সেই চিকিৎসক সমাজ বিলুপ্ত গৌরব পুনরুদ্ধারে সমগ্র চিকিৎসক সমাজকে সম্মানের উন্নত স্তরে নিয়ে গেল। প্রকৃতার্থেই এই চিকিৎসা কর্মী বৃন্দ আসলে যোদ্ধা যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সৈনিকের মতো অদৃশ্য ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে চলেছে। তাদের প্রশংসার কোন ভাষা নেই। মানব মননে তারা জীবন্ত ঈশ্বর রূপে আবারো পরিগণিত হয়ে থাকলো। পরিশেষে আনলক-২ পর্যায়ে পৌঁছে আমরা সকলে স্বাস্থ্যবিধি ,পারস্পরিক দূরত্ব ,বিধি-নিষেধ মেনে জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হবো কেননা ভাইরাস নির্মূল হয়নি তাকে আমাদের বিধি-নিষেধের বশে রাখতে হবে, যতদিন না প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হচ্ছে। আসুন আমরা সকলেই সংযমী, নিয়ন্ত্রিত স্বাভাবিক জীবনযাপন পালন করি বাঁচার স্বার্থে। তৎসহ আবশ্যিকভাবে দুস্থ ,অসহায়দের প্রতি কিছুটা হলেও মানবীয় সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করতে যেন কুন্ঠা বোধ না করি। বিপর্যয় এটাই আমাদের মানবতা তথা বিবেকের শ্রেষ্ঠ পরিচয়।
==================================
পাভেল আমান / হরিহরপাড়া

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন