google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re গদ্যভাবনা।। শেফালি সর - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শুক্রবার, ১৭ জুলাই, ২০২০

গদ্যভাবনা।। শেফালি সর


হিংসা ও সন্ত্রাসহীন পৃথিবীর সন্ধানে                   

 

বর্তমান বিশ্বের মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে অভাবনীয় উন্নতি লাভ করেছে।ধন সম্পদেও মহাশক্তিধর হয়েছে, নিমেষেই গোটা পৃথিবী ধ্বংস করে দিতে পারে এমনি সব হাবভাব।বিশ্ব তৈরি করতে পারেনা কিন্তু ধ্বংস করতে পারে।  এতসব পারে কিন্তু আখ থেকে চিনি তৈরী করার কৌশল জানলে ও , চিনি থেকে আখ তৈরী করার কৌশল টি জানা নেই। জীবনের প্রায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জ্ঞানের অপূর্নতা তবু জ্ঞানের বড়াই করতে ছাড়ে না মানব জাতি।                          

      মানব সমাজে এখন হিংসার তান্ডব চলছে সর্ব্ত্র। এইসব নগ্ন হিংসার তান্ডবে নরনারী তটস্হ। প্রতিহিংসা দিয়ে হিংসা কে  দমন করতে চায় সবাই।ফলে হিংসা প্রতিহিংসার আগুন ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর সবখানে। এই পথে একদিন মানুষ ঢিলের ব্যবহার করতো।বিলের আঘাত ঠেকাতে আবার তীর ধনুকের উদ্ভাবন হল। আবার তীর ধনুকের আঘাত এড়াতে এলো বন্দুক।পরে পরে আবিষ্কার হল পারমাণবিক বোমা।

 আমরা সাধারণত কাটাকাটি মারামারিকে বলি হিংসা। কিন্তু এটি যথার্থ নয়। ঈর্ষা,অসূয়া, পরশ্রীকাতরতা, ঘৃণা,ক্রোধ, অহংকার,ছছলনা, পাশবিকতা ইত্যাদি আসুরিক প্রবৃত্তিগুলিকেও হিংসা বলা যায়। মহাত্মা গান্ধী বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন-উত্তেজিত হ ওয়া,মন্দ কথা বলা, সর্বজনীন বিষয়ের উপর ব্যক্তিগত অধিকার প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা-এগুলো সব ই হিংসার অন্তর্ভূক্ত। হিংসার সারকথা হলো শোষণ। আমাদের মন ই  এর উৎস স্হল।মনে লোভ জাগলেই সেখানেই  হিংসার জন্ম হয়।সব অশুভের মধ্যেই আছে হিংসা।অত এব হিংসা হল অশুভ শক্তি।আজ সর্বত্র হিংসার দাপট বাড়ছে। তবু ও মন থেকে হিংসা মুক্ত হবার আকাঙ্ক্ষা কিন্তু উবে যায় নি। মানুষের মনটাকে মেরামত করে নিয়ে প্রতিকারের যথার্থ কার্যকরী পথে সজ্জন শক্তি দলবদ্ধভাবে অগ্রসর হলেই হিংসার বিলোপ সম্ভব।প্রায় পাঁচ বছর আগে নদীয়ায় জনজীবন ক্লেদাক্ত হয়ে পড়েছিল। তখন নগরবাসী মদ, মাংস দিয়ে যক্ষ পূজা করতো। সেই সময়ে শাসকেরা ও অত্যাচারী ছিল। এই দুঃসহ  অবস্থার প্রতিকারার্থে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য হরিনাম সংকীর্তনের মাধ্যমে কিছু সৎ মানুষ কে নিয়ে সজ্জনশক্তি সংগঠিত করেছিলেন।

প্রায় দেড়শ বছর আগে শ্রীরামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ ইংরেজি শিক্ষা ও সভ্যতার কুফল ও লোভে পড়ে খ্রীষ্টান হওয়ার বিকৃতি থেকে দেশ ও সমাজ কে  রক্ষা করেছিল, সমাজের মানুষ কে নতুন এক দিশা দেখিয়েছিল।এ ব্যাপারে চৈতন্য মহাপ্রভু বা রামকৃষ্ণ পরমহংস ও বিবেকানন্দের কাজ ছিল ধর্মাশ্রিত। ধর্মের মধ্যে যত ই অপূর্নতা থাকুক না কেন হিংসাকে আটকাতে ধর্মের পথ ই কার্যকর। ধর্মের নামে হিংসা যারা ঘটান  বা দাঙ্গা হাঙ্গামা করে তারা কেউ ধার্মিক নন, শুধু ধর্মকে শিখন্ডি করে স্বার্থ সিদ্ধি করে। অথচ ভারতবর্ষ উচ্চারণ করছে-অ হিংসা পরমধর্ম।যে সমস্ত বুদ্ধি জীবীরা মদ্যপান করেন , ঈশ্বর মানেন না , ক্ষমতার ঘুঁটিতে গাঁটছড়া বেঁধে ন্যুনতম শ্রমে সর্বাধিক উপার্জন করেন তাঁরা ই হলেন আজকের প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবী। ঈশ্বরে বিশ্বাস হীন  মানুষের হৃদয়ে করুনার সঞ্চার কখনো হয়না।আর হৃদয়ে করুনা না থাকলে কেবলমাত্র বুদ্ধির বলে কর্তব্য অকর্তব্য নির্ধারণ করা যায় না। হিংসা দমনে সরকারের  প্রধান অস্ত্র হল সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী ও সৈন্য বাহিনী। তাঁরা বড় অস্ত্র দিয়ে ছোট অস্ত্র কে অকেজো করে দেন।বড় হিংসা দিয়ে ছোট হিংসা কে  পরাজিত করার পথটি হল হিংসার পোষক।অত এব  সমাজ থেকে হিংসা কে নির্মূল করবার কোন মানবিক পথ আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

 হিংসা সে ছোট বা বড় যাই হোক না কেন তার জন্ম অসত্য,অন্যায় ও শোষণের পঙ্কে জন্ম। অহিংসা-ব্রত পালন করতে করতে ভয় কেটে যায়, বিবেক জাগ্রত হয়,সত্যের অনুভূতি ঘটে।সত্য ও অহিংসার মৃত্যু নেই।আলো যেমন অন্ধকারের অস্তিত্ব ঘুচিয়ে দেয়া ঠিক তেমনি সত্য মিথ্যার মৃত্যু ঘটায়-, আর অহিংসা হিংসা কে অকেজো করে দেয়। এই প্রক্রিয়াটি পরিবারের মধ্যে সফল হলে প্রতিবেশীর মধ্যে সম্প্রসারিত করবো।ক্রমে ক্রমে বিশ্বে পরিব্যপ্ত হবে। মানুষ স্বভাবে সংশয়ী! আমরা তো হিংসার অগ্ণিকুণ্ডে বসে আছি। এই অবস্থায় থেকে সন্ত্রাসহীন শান্তিময় পৃথিবীর কল্পনা খুবই কঠিন। তবুও তো সৃষ্টির উষা লগ্ন থেকেই মানুষ অগ্রসর হচ্ছে। বর্বর মানুষ সভ্য হয়েছে।সভ্যতার অগ্রগতি থেমে যায় নি।সত্য ও অহিংসার গান্ধী পথে সংঘর্ষহীন সন্ত্রাসহীন শান্তি ময় বিশ্বের উদয় হবে-এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।                             

---------:---------:---------    

শেফালি সর, জনাদাড়ি, গোপীনাথপুর, পূর্ব মেদিনীপুর     ৭২১৬৩৩ ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন