Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

গল্প - অদিতি সুর




 স্বপ্ন না বাস্তব


সকালে উঠে প্রথমে দৈনিক সংবাদপত্রে চোখ বুলানো রেশমীর ছোটবেলার অভ্যাস।আজ সাতাশটা বসন্ত পার করে এসেও তার ব্যতিক্রম হয়না।বেশ ভোরেই উঠে পড়ে সে।তা


Add caption

রপর খবরের কাগজের খবর পড়ে তৈরি হয় কোচিং এ যাওয়ার জন্য।শনি রবিবার তাড়া থাকে একটু বেশি,সেদিন কোন মত হেড লাইন গুলোতে চোখ বুলিয়েই দৌড়ায়।

আজ বুধবার,আজ তার  কোচিং এ যাওয়া থাকে না,আর আজ ছাত্রছাত্রীরা বাড়িতে পড়তেও আসেনা।ইচ্ছা করেই সে এই দিনটা ফাঁকা রেখেছে।তাই বুধবার তার কাছে রবিবারের মতন।বেশ উপভোগ করে রেশমী এই দিনটা।আজ অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু দেরি করে ঘুম ভাঙলো তার।বিছানাতে উঠে বসতেই মা সোমাদেবী জিজ্ঞেস করেন "কীরে শরীর খারাপ নাকি?"
মাথা নেড়ে না বলে রেশমী।তারপর আড়মোড়া কাটিয়ে খাট থেকে নেমে বারান্দায় যায়। নাহ্ খবরের কাগজটা সে ওখানে দেখতে পায় না।ঘরে এসে দেখে মা ততক্ষনে কাগজটা ড্রেসিং টেবিলের ওপর রেখে দিয়েছেন।রেশমী মুখ হাত ধুয়ে এসে কাগজটা নিয়ে আরাম করে জানলার ধারে চেয়ারে বসে।এর মধ্যে মা এককাপ চা আর বিস্কিট দিয়ে গেছেন সামনের টেবিলে।রেশমী মনযোগ দিয়ে কাগজটা পড়তে থাকে।অনেকক্ষন ধরে খুঁটিয়ে কাজের বাজারটা পড়ে,বুধবার করে জীবিকার খোঁজ থাকে এই দৈনিকে।না মনের মত কিছু কাজের খোঁজ পায় না সে।খেলার পাতাটা শেষে উল্টে দেখে নিরুৎসাহী হয়ে,হটাৎ একটা বিজ্ঞাপনে চোখ আটকে যায় রেশমীর।খুব ভালো করে মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে সে।তারপর একটু জোড়ে মাকে ডাকতে থাকে।
"মা একটু এদিকে এসো,দরকার আছে।"
মেয়ের ডাকে সোমা দেবী রান্নাঘরে হাতের কাজ ফেলে জল হাত কাপড়ে মুছতে মুছতে এসে বলেন"কি হলো তোর? সকালবেলা চেছাছিস কেন?"
"দেখো মা কি সুন্দর নেকলেসটা।"রেশমী  খবরের কাগজের শেষের পাতায় দেওয়া গয়নার বিজ্ঞাপনটা খুলে দেখায়ে সোমাদেবীকে।
"বাঃ, বেশ সুন্দর রে ।"সোমা দেবীর ও বেশ লাগে গয়নাটা।
"দেখো মা সাথে ম্যাচিং করে কানের ঝোলানো দুল আর টিকলি।পুরো ব্রাইডাল কালেকশন। রূপসী জুয়েলার্সে এর গয়নাগুলো সত্যি অসাধারণ।" খবরের কাগজ দেখতে দেখতে সোমা দেবী মেয়ের মুখের দিকে আড়চোখে একবার তাকান।রেশমীর মুখ জ্বলজ্বল করছে সোনালী গয়নার উজ্জ্বলতার স্বপ্নে।
সোমাদেবী একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়েন।তিনি জানেন নেকলেসটার মূল্য অনেক।তার স্বামীর ব্যবসাতে এখন ডামাডোল চলছে।ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা ছিল কিছুদিন আগে।রেশমীর জন্য তাও সংসারটা অনেক ভালো অবস্থাতে আছে। মেয়েটা অনেক পরিশ্রম করে,একটা বড়ো কোচিং সেন্টারে পড়াতে যায় সপ্তাহে চারদিন,তাছাড়াও ঘরে চার পাঁচ ব্যাচ ছাত্রছাত্রী পড়ায়।দিনরাত চাকরির খোঁজ করে চলেছে,প্রায়  চাকরির পরীক্ষাতেও বসে।
"মা এটার দাম কেমন হবে গো?"
রেশমীর প্রশ্নে মুখটা আরো শুকনো হয়ে যায় সোমা দেবীর।শুকনো গলায় উত্তর দেন" তা প্রায় তিন লাখ তো বটেই। যা দাম বেড়েছে সোনার।"
"ওঃ।" রেশমীর মুখের ঔজ্জলতা হটাৎ নিভে যায়।খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে সে বলে ওঠে"একটা চাকরি করলে মাসে মাসে টাকা জমিয়ে কিনে নিতাম।অবশ্য আজকাল যা অবস্থা তাতে এসব সোনার গয়না  পরে রাস্তাঘাটে কেউ বেরোতে পারেনা।এর থেকে নকল গয়না অনেক ভালো।" কথাটা বলে খিলখিল করে হেসে ওঠে রেশমী মায়ের দিকে তাকিয়ে।
"তোকে বিয়েতে এরকম গয়না দেওয়ার ইচ্ছা ছিল রে  মা। তুই তো কখনো কিছু চাস নি আমাদের কাছে।কিন্তু তোর বাবার যা অবস্থা এখন....." কথাটা মুখ কালো করে বলেন সোমা দেবী। চোখের কোণটা ভিজে আসে তার।
"ধুস আমি এসব গয়না নিয়ে কি করবো বিয়েতে,এসব তো একদিনই পড়তে পারবো,তারপর সব ব্যাংকের ভল্টে রাখতে হবে।ডিজাইনটা পছন্দ হলো বলে তোমাকে দেখলাম।তুমি আবার কি  ভাবলে যে এসব পড়তে চাইছি আমি?"
"কেন না ভাবার কি আছে? তোর তো সখ থাকতেই পারে।এতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।আমাদের সামর্থ্য নেই লজ্জা আমাদের পাওয়া উচিত।তোর  কোন সখটাই পূর্ণ করতে পারিনা।"
"উফ মা,তোমাকে না এইজন্য কিছু বলি না।এত সেন্টিমেন্টাল কেন তুমি।যেই বললাম অমনি হিন্দি সিনেমার  ট্র্যাজেডি কুইন নিরূপা দেবীর মত কাঁদতে শুরু করলে। সত্যি তোমাকে নিয়ে আর পারি না।তোমার মেয়েকে দেখতে এমনিই সুন্দর ওইসব গয়না না পড়লেও চলবে।আর তুমি জানোই আমি গয়না পড়তে ভালবাসিনা।"
সোমা দেবী চুপ করে মেয়ের কথা শোনেন।উনি বুঝতে পারেন মেয়েটা সত্যি অনেক বড়ো হয়ে গেছে।এত বুঝদার মেয়ে ভাগ্য করে পাওয়া যায়।
"কি গো মাদার ইন্ডিয়া একটু হাসো দেখি!এরকম নকল গয়না শ্রিমানি কালেকশন এ অনেক পাওয়া যায়।এই মাসের মাইনে পেয়ে একটা কিনে নেবো।আর মা মেয়ে দুজনে মিলে গলায় দিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে দেবো বুঝলে!" হেসে বলে রেশমী।
মায়ের মনের কষ্টের মেঘটাকে একটু হাল্কা করার চেষ্টা করে সে।সোমাদেবী তখনও চুপ করে আছে দেখে রেশমী মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে আদর করে বলে "আমার কিন্তু প্যানপ্যানানি বাংলা সিনেমা ভালো লাগেনা।"
মেয়ের গলায় নাটকীয়তা শুনে এবার হেসে ফেলেন সোমা দেবী।
"যাই একটু প্যানকেক করে আনি জলখাবারে তোর জন্য।"
সোমাদেবী রান্নাঘরে যান জলখাবার করতে।
রেশমী আবার খবরের কাগজটা খুলে গয়নার ছবিটা দেখে।আনমনে গলার নেকলেস এর ছবিটাতে হাত বোলাতে থাকে।এরকম হার  বিয়েতে পড়ার খুব ইচ্ছা তার।যাক গে সবার সব ইচ্ছা পূরণ হয় না।একটা চাকরি পেলে নিজেই বানিয়ে নেবে একদিন।বিয়েতে না হোক পরেই না হয় পড়বে। সূর্যকেও সে এসব দেওয়ার জন্য আবদার করে বলতে পারবেনা।আর মাবাবাকে সে এসব দেখাবে না।ওরা বেকার এসব ভেবে কষ্ট পাবে।অনেক করে মাবাবা এই সংসারটার জন্য।ওকে কোনোদিন কোন কষ্ট করতে দেয় নি বাবা।তবু বাবার কষ্ট দেখে নিজের বিবেকের তাড়নায় সে কলেজে পড়তে পড়তেই টিউশনি করতে শুরু করে।এখন বায়োলজির প্রাইভেট টিউটর হিসেবে তার বেশ নামডাক।আসলে রেশমী খুব সেলফ সাপোর্টেড ছোটো থেকেই।তাই কারুর কাছে আবদারটা সহজে সে করতে পারেনা। তা সে তার বাবাই হোক বা প্রেমিক।ছবি দেখে কাগজটা গুছিয়ে টেবিলে রেখে দেয় সে।তারপর বিস্কিটটা খেতে থাকে।চায়ের কাপটায় মুখ দিতে গিয়ে দেখে চাটা একদম জুড়িয়ে গেছে এসবের চক্করে।
"ধুস" মুখ দিয়ে বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে রেশমীর।মুখটা বেজার করে চাটা কোনরকমে গিলে নিতে থাকে সে।
"কিরে সূর্য কাল রাতে ফোন করেনি?" জলখাবার দিতে এসে সোমাদেবী জিজ্ঞেস করেন রেশমীকে।
চামচ দিয়ে প্যান কেকের ছোটো টুকরো কেটে মুখে নিয়ে মাথা নেড়ে না বলে রেশমী।
"কেন রে?"
"কীকরে আমি জানব। হয়েতো কাজে ব্যস্ত ছিল।জানোই তো সরকারি প্লান্টগুলোতে কিরকম কাজের চাপ থাকে।অহেতুক ফোন করে ডিস্টার্ব করতে আমার ভালো লাগেনা।"
"ঝগড়া করেছিস নাকি?"
মায়ের কথা শুনে একটু রেগে যায় রেশমী।
"আচ্ছা মা তোমার কি মনে হয় আমি বাচ্চা যে কথায় কথায় ঝগড়া করবো?"
"না মনে হলো তাই বললাম কথাটা।রাগ করিস না।"
রেশমী মায়ের কথাটা শুনে শান্ত হয়ে যায়।তারপর মন ঘোরানোর জন্য বলে"দারুন বানিয়েছো প্যান কেকটা মাদার ইন্ডিয়া।বাবার জন্য রেখেছ তো?"
"হুম,আগে ফিরুক বাড়ি,তারপর বিকেলে করে দেবো।"
"তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি।আজ বিকেলে তোমাদের সাথে সূর্য এর বাবা মা কথা বলবেন ফোন করে।কি জন্য ফোন করবেন তা জানিনা।"
সোমা দেবী ওর কথা শুনে চুপ করে থাকেন।উনি জানেন সূর্যর বাবা মা কেন ফোন করবেন।উনি বুঝতে পারেন না কীকরে মেয়েটাকে পার করবে স্বামী স্ত্রী মিলে।সূর্যর মত ছেলে তো তারা দেখাশুনো করেও আনতে পারবেন না।সত্যবাবু কাজ থেকে ফিরলে আজ দুপুরে একটা আলোচনা করবেন তার সাথে মনে মনে ঠিক করেন সোমা দেবী।

দুপুর  বেলা একটু দেরি করে ফেরেন সত্য বাবু।আজ ব্যাংকের লোন এর শেষ কিস্তি জমা করে এসেছেন।অনেক কষ্টে ঋণমুক্তি হয়েছে।মনটা বেশ হাল্কা লাগছে তার।দুপুরে হাসি হাসি মুখে খেতে বসে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন "কীরে মা কাল পাঠার মাংস খাবি?তুই আমি মিলে রাতে রান্না করবো। তোর মাকে ছুটি দেবো রান্নার কাজ থেকে।কি বলিস?"
রেশমীর ভালো লাগে বাবার মুখে হাসি দেখে। সে উৎসাহ দেখিয়ে বলে"হ্যা বাবা,নিয়ে এসো,দুজনে মিলে জমিয়ে  ডিনার  বানাবো কাল রাতে।"
সোমা দেবী বাপ মেয়ের কথা শোনেন কোন কথা বলেন না,শুধু কাষ্ঠল একটা হাসি মুখে ফুটিয়ে তোলেন। সত্যবাবু ব্যাপারটা লক্ষ্য করেন কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করেন না স্ত্রীকে।

দুপুরে খাবার টেবিলে বাবার কথায়ে আজ মনটা ভারী ভালো হয়ে যায় রেশমীর।অনেকদিন পর বাবাকে এত খুশি দেখে। ও জানতে পেরেছে ব্যবসার জন্য নেওয়া লোন এর আমাউন্টটা বাবা শোধ করে ফেলেছে আজ। খাটে বালিশটাকে জড়িয়ে শান্তির একটা ভাতঘুম লাগায় রেশমী।
পাশের ঘরে সত্য বাবু কাগজে চোখ বুলাছিলেন,স্ত্রী কে ঘরে ঢুকতে দেখে কাগজটা পাশে রেখে দেন।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকালে, সোমা দেবী বলেন"আজ সূর্যর বাড়ি থেকে ওর বাবা মা ফোন করে কথা বলবেন।মনে হয় বিয়ের ব্যাপারে।খুব চিন্তা হচ্ছে গো।"
সত্য বাবুর মুখটা কঠিন হয়ে যায়।খানিকক্ষণ চুপ করে কিছু একটা চিন্তা করতে থাকেন। 
"আমি ওনাদের সত্যি কথাটাই বলবো যে ব্যবসাতে যা ডামাডোল চলছে তার জন্য প্রচুর লোকসান হয়েছে।আমি ঘটা করে রেশমী মার বিয়ে দিতে অপারগ।তবে যতটা পারবো দেবো।"
"আর গয়নার কথা কি ভাবলে? আমার বিয়েতে বাবার দেওয়া হার, দুগাছা চুরি, কানের,আংটি এসব আছে,সাথে তুমি যে বারো মাসে পড়ার হার, পলা বাঁধানো আর দুটো আংটি দিয়েছিল সেসব রেশমীর জন্য রেখে দিয়েছি।তবে মেয়ের যদি ওইসব পুরনো ডিজাইন ভালো না লাগে তাহলে ওইগুলো দিয়ে সোনার দোকান দিয়ে নতুন গয়না নিয়ে নেবো।"
"ওই দিয়ে কি আর খুব ভালো লেটেস্ট ডিজাইন এর গয়না পাবো! তোমাকেও বিয়ের পর তেমন একটা কিছু দিও নি।তোমার দুটো হিরের ছোটো কানের ইচ্ছা ছিল,সেটাও দিতে পারলাম কই?"মাথা নিচু করে চুপ করে যান সত্যবাবু।
"আজ রেশমী এই নেকলেসটা দেখছিল।" কথাটা বলে খবরের কাগজে দেওয়া গহনার বিজ্ঞাপনটা স্বামীকে দেখান সোমাদেবী ।সত্যবাবু কাগজে নেকলেস এর ছবিটা দেখে মুখ ঘুরিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন।স্বামী স্ত্রী দুজনেরই দীর্ঘ নিঃশ্বাস পড়ে।
বিকেলে সূর্যর বাবা সন্তোষবাবু ফোন করেন।
"হ্যালো আমি সন্তোষ গুপ্ত বলছি, সূর্যর বাবা।"
"হ্যা বলুন,আমি রেশমীর বাবা সত্য সমাদ্দার বলছি।"
"বলছিলাম যে আগামী রবিবার যদি খালি থাকেন তাহলে একবার বৌঠানকে নিয়ে আসুন না।একটু গল্পগাছা করা যাবে সাথে আলাপ পরিচয়টাও সারা হবে।"
"আচ্ছা, নিশ্চয়ই আসবো।এই ধরুন পাঁচটা সাড়ে পাঁচটা  নাগাদ দুজনে যাবো।"
দুজনে খানিক কথা বলার পর সত্যবাবু ফোনটা কেটে দেন। ফোন রেখে দেখেন স্ত্রী আর মেয়ে তার মুখের দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে,উনি হেসে বলেন "ওরা ওদের বাড়ি যেতে বললেন রবিবার আমাদের দুজনকে।"
"তা বেশ,যাও দুজনে।দেওয়া থোয়ার কথা তুললে পরিস্কার বলবে বাবা তুমি পণ দিতে পারবেনা।"
"তুই চুপ কর রেশমী ওরা সজ্জন মানুষ এসব আশা করি বলবেন না ।তাও মাবাবা হিসেবে আমাদের কিছু তো দিতেই হয় নাকি?কি গো বলো কিছু?"স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলেন সোমাদেবী।
"হ্যা ঠিক বলছে রে তোর মা।আর যাই আগে দেখি ওনারা কি বলেন।সাধ্যের বাইরে হলে তখন বলবো ক্ষন।তুই এখুনি কিছু আবার বলতে যাস না সূর্যকে।"
সত্য বাবু মনে মনে চিন্তা করতে থাকেন।
              _____________
দেখতে  দেখতে রবিবার এসে যায়।সকাল থেকেই তিনজনেরই বেশ টেনশন হচ্ছে আজ।রেশমী আজ কোচিং থেকে ছুটি নিয়েছে,ঠিক করেছে  মা বাবার সাথে ও নিজেও যাবে ওর হবু শশুর বাড়ী।প্রথম থেকে সব ব্যাপারটা খোলাখুলি আলোচনা করে নেওয়া ভালো।
বিকেলে পাঁচটা পনেরো নাগাদ ওরা শোভাবাজারে সূর্যদের বাড়ির সামনে পৌঁছায়।সাবেকি আমলের বিশাল বাড়ি।বাড়ি না বলে অট্টালিকা বললে অত্যুক্তি হবেনা।লোহার গেট ঠেলে এগোতেই দারোয়ান এসে জিজ্ঞেস করে তাদের আসার কারণ।ওরা সন্তোষ বাবুর নাম করতেই দারোয়ান বৈঠক খানার ঘরে ওদের নিয়ে গিয়ে বসায়।বিশাল বৈঠকখানা ঘরটাতে অপূর্ব ঝাড়বাতি লাগানো।পেল্লাই সাইজের একটা সোফা পাতা সামনে ,সাথে একটা কাঠের কারুকাজ করা টেবিল,অনেকগুলো কাঠের কারুকাজ করা চেয়ার। ঘরে পূর্বপুরুষদের ছবি আর কিছু অপূর্ব অয়েল পেইন্টিং বাঁধিয়ে রাখা রয়েছে।ওরা এসব দেখতে থাকে বসে বসে।
"নমস্কার" হাত জোড় করে নমস্কার করেন সন্তোষ বাবু ।সত্যবাবু ও সোমাদেবী ও প্রতিনমস্কার জানান।রেশমী সোফা থেকে  উঠে এসে ওনাকে প্রণাম করে।উনি রেশমীর দিকে তাকিয়ে বলেন"তোমার ছবি সূর্য দেখিয়েছে আগে।খুব খুশি হয়েছি মা তুমি এসেছো।"
রেশমী ওনার কথাতে একটু হাসে।  ওরা কথা বলতে থাকে একটু পর সূর্যর মা শ্রীপর্ণা দেবী ও আসেন ঘরে।  তার সাথে একজন চাকরের হাতে তিনটে খাবার প্লেট ও জলের গ্লাস।ভদ্রমহিলা বেশ হাসিখুশি।একটু কথা বলে একটা চেয়ার টেনে রেশমীর সামনে এসে বসেন উনি।রেশমীর চিবুকে হাত দিয়ে আদর করেন।চাকর প্লেটগুলো টেবিলে  ওদের সামনে নামিয়ে রেখে চলে যায়।
"বলছিলাম যে এবার ছেলের বিয়ে দিতে চাই,আমাদের বয়েস হচ্ছে।আর ও তো বিয়ে করে বিদেশে চলে যাবে বলছে আগামী দুবছর এর জন্য।তাই তার আগে যদি চার হাত এক হয়ে যায়।"
সন্তোষবাবু সত্যবাবুর দিকে তাকিয়ে কথাটা বলেন।সত্যবাবু ওনার কথায় সায় দেন।বেশ কিছুক্ষন আলোচনা করার পর পাজিপুথি দেখে  দুপক্ষের সুবিধা মতো বিয়ের দিন ঠিক হয় পাঁচই ফাল্গুন ।রেশমী দুপক্ষের কথা চুপ করে শুনতে থাকে।
সত্যবাবু বলেন যে ওনার যা সামর্থ্য তাতে ছেলের হাতের আংটি ,গলার হার আর মেয়ে কে সামান্য কিছু গয়না দিতে পারবেন।সাথে কিছু আসবাব।কারণটাও বলেন উনি কোন লুকোছাপা না করে।ওনার কথা শুনে সন্তোষবাবু হাসেন।
" ছেলে যখনই জানতে পেরেছে আপনাদের সাথে বিয়ের কথা বলবো তখনই বলে দিয়েছে ওনাদের কাছ থেকে কিছু নেবো না বিয়েতে এটা তুমি বলবে।আমার বউকে একটু বেনারসি পরে সাজিয়ে পাঠালেই হবে।বুঝলেন তো বেয়াই ছেলেটা আমার এরকমই।আমার থেকেও কখনো কিছু হাত পেতে চায়নি।"সন্তোষবাবু হাসি মুখে বলেন।
"কিন্তু তাও কিছু না দিলে তো আমাদের খারাপ লাগবে।ওর সাথে আমি কথা বলে নেবো।"একটা আংটি আর হার তো অন্তত দেবো।সত্যবাবু  আস্তে করে বলে ওঠেন।
এরপর আরো খানিকক্ষন কথাবার্তার পর রেশমী ওর মা বাবার সাথে সূর্যর বাড়ি থেকে বের হয়।ওর মনটা আজ সত্যি আনন্দে ভরে গেছে।হবু বর সূর্যর মনটা অনেক বড়ো এটা কিছুক্ষন আগেই ও বুঝতে পেরেছে।নিজের ওপর বেশ গর্ব বোধ হয় ওর। না মানুষ চিনতে ও ভুল করেনি,এত বড়ো বাড়ির ছেলে হয়েও কোন দিন রেশমী ওকে অহঙ্কার করতে কখনো দেখেনি।
"এবার আস্তে আস্তে জোগাড়যন্ত্র করতে হবে গো।আর তহ মোটে তিনটে মাস।"সোমাদেবী চিন্তিত মুখে বলেন।
"মা রে তোর মায়ের গয়নাগুলো  একবার দেখে নিস।ওইগুলো নিবি না অন্য ডিজাইনের কিছু,তাহলে বদলাতে হবে,আর বেশি সময় তো নেই।"
বাবার কথায় রেশমী হেসে বলে"  মায়ের ওই সাবেকি গয়নাগুলো আমার  ছোটো থেকেই খুব পছন্দ,আমি একটু পালিশ করিয়ে নেবো ব্যাস।কোন বদলানোর দরকার নেই।"
ও জানে সামর্থের বাইরে কিছু চাইলে বাবা কে আবার ধার করতে হবে।আর সেটা ও চায় না।মাবাবা কে কষ্ট দিয়ে সন্তান কখনো সুখী হতে পারে না।
এটা ওটা আলোচনা করতে থাকে তিনজনে বাড়ি ফিরতে ফিরতে।

সেই রাত্রে রেশমী স্বপ্ন দেখে কাগজের দেওয়া বিজ্ঞাপন এর নেকলেসটা পড়ে ও বিয়ের কনের সাজে সজ্জিত হয়ে হবু বরের জন্য অপেক্ষা করছে।
সকালে উঠে  স্বপ্নের কথাটা মনে পরতেই মনটা ভালো হয়ে যায় ওর।ছোটো ছোটো জিনিসে খুশি হতে ও মায়ের কাছ থেকে শিখেছে।স্বপ্ন কখনো সত্যি হয় না কিন্তু এরকম স্বপ্ন মন ভালো করে দিতে পারে।মনে মনে ও ভাবে স্বপ্ন দেখা উচিত কিন্তু অবাস্তব আশা করা উচিত  না।তারপর নিজেই হেসে ফেলে নিজের পাগলামো দেখে।সেদিনের গয়নার ছবিটাও পরে কাগজ থেকে কেটে রেখেছিল ওর ডায়েরির মধ্যে।
          _______________
তিনটে মাস যেন চোখের পলকে কেটে যায়।বিয়ের দিন সত্যবাবু আর সোমাদেবীর চরম ব্যস্ততাতে কাটে। মেয়েকে বিদায় দিয়ে দুজনের মন আজ ভারাক্রান্ত।ক্লান্তিতে শরীর অবসন্ন। মেয়েটা শ্বশুর বাড়ি পৌঁছে ফোন করেছিলো ওদের।জামাই ও খোঁজখবর নিয়েছে।মাঝে আর একটা দিন,তারপর রিসেপশন এর দিন মেয়ের সাথে মাবাপের দেখা হবে।
আজ বৌভাত।খুব ভোরে উঠে তৈরি হয় রেশমী।সারা বাড়ি ভর্তি লোক গমগম করছে।সকালে ভাত কাপড়ের অনুষ্ঠানটা হয়ে যায়।
বিকেলে রিসেপশন। রেশমীর মামী শাশুড়ি যিনি লখনউ থেকে এসেছেন,উনি যত্ন করে ওকে শাড়ি পরিয়ে দেন। রিসেপশন এর জন্য পার্লার থেকে আসা মেয়েটি ওকে মেকআপ করে সুন্দর করে চুল বেঁধে সাজিয়ে দেয়।রেশমীকে আজ অপূর্ব লাগছে লাল  করিয়াল বেনারসিতে। ও  আয়েনাতে নিজেকে দেখতে থাকে,এমন সময় শ্রীপর্ণা দেবী ঘরে ঢোকেন।ওনার হাতে একটা  নীল রঙের ভেলভেটের গয়নার বাক্স।উনি রেশমীকে দেখে বলেন" খুব সুন্দর লাগছে আজ তোমাকে।সিঁদুর পড়ে আরো রূপ খুলেছে তোমার।"চিবুক ধরে একটা চুমু খেয়ে উনি রেশমীকে গয়নার বাক্সটা  হাতে দেন।রেশমী ওটা হাতে নেয়।
"ওটা খুলে দেখো পছন্দ হয়েছে কিনা?আমি নিজে গিয়ে রূপসী জুয়েলার্স থেকে এটা পছন্দ করে কিনে এনেছি।এত সুন্দর ওই দোকানের ডিজাইন।তুমি আজ এটা পরো কিন্তু।আমি এখন আসি তৈরি হই গিয়ে।"
শ্রীপর্ণা দেবী চলে যান। পার্লার এর মেয়েটিকে পৌঁছাতে মামী শাশুড়িও তার সাথে যান।রেশমী গয়নার বাক্সটা খোলে  আর ওর  সারা মুখে গয়নার দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ে। বাক্সতে সেই নেকলেসটা  রয়েছে যেটা ও খবরের কাগজের দেওয়া বিজ্ঞাপন দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল।খুব খুশি হয় রেশমী,নেকলেসটা হাতে নিয়ে গলায় পড়ে ও।তারপর আয়নাতে নিজেকে দেখে বিমুগ্ধ হয়।
মায়ের একটা কথা আজ খুব মনে পড়ছে ওর।মা বলতো কিছুই কখনো পাওয়ার আশা করতে নেই। আশা করে না পেলে স্বপ্নভঙ্গ হয়।স্বপ্নভঙ্গের অনেক জ্বালা।আর আশা না করে যদি কিছু পাও দেখবে তোমার আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। রেশমী মায়ের কথাটা অক্ষরে অক্ষরে  এতদিন মেনে এসেছে।ওর নেকলেসটা সেদিন খুব ভালো লেগেছিলো ঠিকই কিন্তু সেটা পাওয়ার অবাস্তব আশা ও করেনি।বিধাতা তাই ওর  স্বপ্নটা পূরণ করলেন হয়তো। স্বপ্নও তার মানে মাঝে মাঝে সত্যি হয়,রেশমী নিজের মনেই কথাটা বলে ওঠে।সারা মুখে ওর খুশির হাসি ছড়িয়ে পড়ে।


====================


লেখা ও আঁকা - অদিতি সুর



মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩