google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re প্রবন্ধ ।। একটি ভাষার মৃত্যু ।। সবিতা বিশ্বাস - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শুক্রবার, ১৭ জুলাই, ২০২০

প্রবন্ধ ।। একটি ভাষার মৃত্যু ।। সবিতা বিশ্বাস

লিচো
 লিচো



একটি মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই

নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল একটি ভাষা

                                              

 

নামকরণে রয়েছে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল একটি ভাষা, এটি না বলে বলা চলে মৃত্যু ঘটল একটি ভাষার | হ্যাঁ, এখানে গ্রেট অন্দামানিজ পরিবারের প্রাচীনতম ভাষা “সারে” র কথাই বলা হচ্ছে | অন্দামানি ভাষা হল এক জোড়া ভাষা নিয়ে গঠিত একটি ভাষা | গ্রেট অন্দামানিজ নেগ্রিট এবং ওগান ভাষা | এই পরিবারেরই প্রাচীনতম ভাষা ছিল ‘সারে’ ভাষা |     

 

২০১০ সাল অবধি এই পরিবারে ছিল আন্দামানের প্রাচীনতম চারটি ভাষা | জেরো, সারে, খোরা এবং বো |  ওই বছরেই আন্দামান থেকে মুছে গিয়েছিল খোরা এবং বো | যে ভাষাটি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি সেই সারে ভাষায় কথা বলতে পারতেন মাত্র একজন | তিনি লিচো | লিচো ছিলেন রাজা জিরাকের প্রথম সন্তান | বয়স হয়েছিল ষাট বছর | যক্ষা ছাড়াও হৃদযন্ত্রের অসুখে ভুগছিলেন তিনি | এরমধ্যে থাবা বসাল করোনা | যদিও কোভিড—১৯ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ মহল নিশ্চিত নন | ৪ঠা এপ্রিল মৃত্যু হয় লিচোর | তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু ঘটল আন্দামানের প্রাচীনতম ভাষা সারের |

 

এখন প্রাচীন গ্রেট অন্দামানিজ ভাষা হিসেবে বেঁচে রইলো “জেরো” | এই ভাষায় কথা বলতে পারেন মাত্র তিনজন | তাদের প্রত্যেকেরই বয়স পঞ্চাশের উপরে | সকলেই বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত |  

 

রাজা জিরাকের প্রথম কন্যা লিচো জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৬০ সালে | তিনি পোর্টব্লেয়ারে বাস করতেন | খুবই বুদ্ধিমতী ছিলেন তিনি | তার অবদান রয়েছে গ্রেট অন্দামানিজ ভাষা ও ব্যাকরণ তৈরিতে | তিনি কাজ করেছেন আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের শিক্ষা দপ্তরে | ভাষাবিদ অনবিতা আব্বিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন সারে ভাষায় | অনবিতা আব্বির সেই গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে ২০১৩ সালে |” Dictionary  Of The Great  Andamanese Language”  একমাত্র এই গ্রন্থটি নথি রূপে ‘সারে’ ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখলো |  লিচো ‘সারে’ ভাষা ছাড়াও জেরু, পুজুক্কর, অন্দামানিজ হিন্দি ভাষা জানতেন |

 

লিচোর জন্মের সময়ে অর্থাৎ ১৯৬০ সালে গ্রেট অন্দামানিজ ভাষার বক্তা হিসাবে জীবিত ছিলেন ১৯ জন| বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র তিনজন ছাড়া বাকিরা সকলেই মারা গিয়েছেন |

 

সাধারণভাবে ভাষার মৃত্যু একটি ধীর ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া | পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি দু সপ্তাহ অন্তর একটি করে ভাষার মৃত্যু ঘটে | ভারতে এই মুহুর্তে বিপন্নপ্রায় ভাষার সংখ্যা ১৯৭ টি | আন্দামান ট্রাঙ্ক রোড চালু হবার পর থেকেই আন্দামানের আদিবাসী মানুষ বিপন্ন | কারণ তারা প্রকৃতিকে গায়ে জড়িয়ে বেঁচে থাকে | বাইরের মানুষের অনুপ্রবেশের কারণে তারা যক্ষা, সিফিলিসের মত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত | ২০০২ সালের সর্বোচ আদালতের রায়ের পরেও রমরম করে চলছে আন্দামান ট্রাঙ্ক রোড | ক্রমাগত বেড়ে চলেছে পর্যটন | এর ফলে দূষণের প্রভাবে মানুষগলো শ্বাসরোগে আক্রান্ত |

 

বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে | ওখানে যদি কমুনিটি সংক্রমণের মতো বিষয় ঘটে তাহলে দ্বীপের আদিবাসী মানুষগুলোর জীবন সংশয় হয়ে উঠবে | সেই সঙ্গে সংকটে পড়বে তাদের মুখের কথিত ভাষাগুলো | এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু মহামারীর সময়ে সাধারণ মানুষের চেয়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠির মৃত্যুর হার ছিল চারগুন বেশি |

এই দ্বীপপুঞ্জে আছে ওঙ্গে এবং জারোয়া আদিবাসী সংস্কৃতি | এই দুই সম্প্রদায় মিলিয়ে রয়েছে প্রায় ৬৭০ জন মানুষ | আং ভাষা পরিবারের মানুষ এরা | উত্তর সেন্টিনাল দ্বীপে বাস করে সেন্টিনালিজরা | কিন্তু তারা নিজেদের সভ্য মানুষদের কাছ থেকে আড়াল করে রেখেছে | তাদের দ্বীপের কাছাকাছি গেলেই বিষাক্ত তীরের ফলার আঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত | তাই তাদের সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত কিছুই জানা সম্ভব হয়নি | বাকি পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন্ হয়ে থাকার কারণে তারা অসুস্থ হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও সভ্য মানুষ জানতেই পারবে না তাদের কথা |

 

 কিন্তু যারা আমাদের সামনে আছে, তাদের বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের | প্রানোচ্ছল এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার দায় দায়িত্ব নিতেই হবে সভ্য মানুষদের | ইতিমধ্যে যথেষ্ঠ দেরী হয়ে গেছে | এখনো সতর্ক না হলে হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা এই সংস্কৃতির বিনাশের জন্য দায়ী থাকবে আধুনিক সভ্য মানুষ | নিশ্চয়ই আমরা তা হতে দিতে পারিনা |

 

‘সারে’ ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেলেও হাজার হাজার বছরের প্রাণোচ্ছল প্রাচীন গ্রেট অন্দামানিজ ভাষা হিসাবে বাঁচাতেই হবে ‘জেরো’কে | সেই ভাষার পরম্পরাকে |

                              -------

 

তথ্যসূত্র—সংবাদপত্র এবং অন্তর্জাল        

======================




সবিতা বিশ্বাস

প্রযত্নে – লন্কেশ্বর বিশ্বাস

গ্রাম + পোস্ট – মাজদিয়া (বিশ্বাসপাড়া)

(শুভক্ষণ লজের পাশে )

জেলা-নদীয়া পিন-৭৪১৫০৭

ফোন-৮৯০০৭৩৯৭৮৮

ভারত

ই মেইল- sraybiswas@gmail.com



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন