গদ্য ।। রমলা মুখার্জী - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Friday, July 17, 2020

গদ্য ।। রমলা মুখার্জী



 

  আমরা করবো জয়



   আজ পৃথিবীর এক কঠিনতম অসুখ, তার উন্নততম মনুষ্য প্রজাতিকে গ্রাস করেছে এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নভেল করোনা ভাইরাস। যদিও নভেল বলতে সাহিত্যের ভাষায় উপন্যাস বুঝি, কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই নভেল মানে নতুন। WHO এই ভাইরাসের নাম দিয়েছে SARSCOV2 বা সিভায়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনা ভাাইরাস 2 যেটি  শুধুমাত্র মানুষকে আক্রমণ করে কোভিড 19 রোগ ছড়ায়। এই ভাইরাসটির সংক্রমনের হার প্রচণ্ড বেশি এবং মানুষের ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটিয়ে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিচ্ছে সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষকে।
     চীন দেশের ইউহান প্রদেশে সর্বপ্রথম 2019 সালের ডিসেম্বর মাসে এই বিশেষ করোনা ভাইরাসঘটিত রোগটির দেখা মেলে।বার বার জিনের সজ্জা বদল করতে পারে বলে এই ভাইরাস সহজেই পরিবর্তিত পরিবেশে খাপ খাইয়ে সংক্রমণ ঘটিয়েই চলেছে যা বতর্মানে অতিমারীর রূপ নিয়েছে।
           আশার কথা বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে উঠে এসেছে যে জীবানু আর পোষক পারষ্পরিক সম্পর্কে বাঁধা। তাই জীবাণু কখনই পোষককে সম্পূর্ণ বিনাশ করে না।এক্ষেত্রেও করোনা ভাইরাস মানুষকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করবে না, কারণ তার পোষক মানুষ বিদায় নিলে করোনাও পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে। করোনা ভাইরাস মানুষের জীবিত কোষের আশ্রয় ছাড়া সক্রিয় হতে পারে না, তাই সম্ভাবনা তত্ত্বের দিক দিয়ে উভয়ের বিলুপ্তির সম্ভাবনা কম। বিবর্তনের তত্ত্ব অনুযায়ী সক্ষম মানুষের টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশি, সেই কারণেই দুর্বল ও বয়স্ক মানুষেরাই এই রোগে মারা যাচ্ছেন বেশি। মানুষ তার উন্নত বুদ্ধির প্রয়োগে বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে, পৌঁছে দেবে খাবার বুবুক্ষুকে, চিকিৎসায় সারিয়ে তুলবে আক্রান্তকে। আমরা হতাশ হব না, আমরা জিতবই। তবে আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে কারণ একটি প্রতিষেধক আবিস্কার করতে প্রায় দুবছর সময় লাগে। বিজ্ঞানীরা প্রতিষেধক আবিষ্কার করবেনই, জয় আমাদের হবেই।
 "বিপদে মোরে রক্ষা কর এ নহে মোর প্রার্থণা,
বিপদে আমি না যেন করি ভয়"।
  চরম সংকটের এক মহাবিপদের দিনে দাঁড়িয়ে আমরা যেন ভয়কে জয় করতে পারি। আমরা চিকিৎসকের দেওয়া বিধিনিষেধগুলি মানতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হই। করোনা ভাইরাস ছড়ায় রোগগ্রস্হ শরীরের আক্রান্ত  কোষ দ্বারা। ভাইরাসটি কোন শরীরে রোগ বিস্তারের পর যদি অপর কোনো সুস্থ শরীর না পায় তবে তার বিস্তার সম্ভব নয়। সেইজন্যই চলছে আমাদের এই গৃহবন্দী দশা। মুখে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে হাত বারে বারে ধোওয়া, যেখানে সেখানে থুতু না ফেলা ইত্যাদি নিয়মবিধিগুলি আমরা নিশ্চয়ই মানবো, তাহলে রোগের প্রকটতা কিছুটা কমবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষের পাশে মানুষকে দাঁড়াতে হবে। কর্মবিহীন ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে হবে, আশ্রয়হীন পথ-মানুষকে আশ্রয় দানের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি করোনা পজিটিভকে দূরে না রেখে সঠিকভাবে পরিসেবা দিতে হবে। শুধু ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী নয় সমগ্র মানবজাতিকেই মনের প্রসারতা ঘটিয়ে এই দারুণ ঝড়ে এগিয়ে আসতে হবে। অতিমারী থেকে আমরা একদিন না একদিন বেরিয়ে আসবই আমাদের বুদ্ধি, দয়া, ত্যাগ, ধৈর্য্য আর অসীম মনোবলে।
      কত কম প্রয়োজনেও যে বাঁচা যায় তা তো আমরা প্রকৃতির কাছে এই ক'দিনেই পাঠ পেলাম। জীবাণু ঘুমালে আমরা নতুন সেই সকালে সবাই মিলেমিশে এক হয়ে যাব। গাছ, পাখি, ফুল, মাছ, পৃথিবীর সবাইকে নিয়ে বাঁচার আনন্দে মশগুল হয়ে চিৎকার করে বলবো,
এসেছি আবার ফিরে, সুধা-সাগর তীরে...
প্রাণভরে নিতে প্রশ্বাস
রাখবো অম্লজানের বায়ু,
সুনীল সাগরে রূপালি ফসল, 
সবুজের সমারোহে, পাখিদের কুজনে ভরাবো প্রকৃতি,
আমরা মানুষেরা দিলাম আশ্বাস।

===================

ডঃ রমলা মুখার্জী
বৈঁচী, বিবেকানন্দপল্লী,
জেলা হুগলী, পিন 712134
মোঃ 7003550596
হোয়াটস এপ 9474462590



No comments:

Post a Comment