Featured Post
ছোটগল্প ।। বিশ্বনাথ ব্যানার্জী
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
লোকটা
" প্রথম যেদিন ভদ্রলোক সিটিং দিতে এলেন , তখন প্রথমেই মনে হলো, দূর ছাই এই লোকটা আবার কেন ।
অথচ আপাতদৃষ্টিতে ভদ্রলোকের চেহারাটা বেশ সমীহ করার মতো । কাঁচাপাকা চুল, পাকা গমের মতো গায়ের রং- নাকটা ধারালো, চোখ দুটোর দৃষ্টি অন্তর্ভেদি এক্স 'রের মতো- মনে হয় মনের ভেতরের জোয়ার- ভাঁটার খেলা এই লোকের হাত থেকে নিস্তার পাবে না ।
ভদ্রলোকের গায়ে ফিনফিনে আদ্দির পাঞ্জাবি, গিলেকরা ধুতি আর কাশ্মীরি শাল আমার আরও বিরক্তি উদ্রেক করছিলো- মনে হচ্ছিলো এই জোকারটা এভাবে আমার সামনে না এলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত । অথচ আমি খুব ভালো করেই জানতাম এই পোশাকটা আমিই ওনাকে সাজেস্ট করেছিলাম । ভদ্রলোককে মানাচ্ছিলোও দারুন. আর তত আমার মাথায় খুন চেপে যাচ্ছিলো ।কাজ করতে করতে । এই লোকটা এতো অসাধারণ কেন ? গোবেচারা মতো একটা মানুষ আমার সামনে দুঃখী দুঃখী মুখে সিটিং দিতে বসবে- আমি তার দুঃখ কাঁচা আমের মতো তারিয়ে তারিয়ে খাবো- তা না……
লোকটার মাত্রাতিরিক্ত ভদ্রতা আমার অসহ্য লাগছিলো- বার বার লোকটা বলছিলো- ' তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো ভাই? 'তত আমার মনে হচ্ছিলো, মারি লোকটার মুখে এক ঘুঁষি ।তারপর যখন কাজের মাঝখানে একগাদা ফল- মিষ্টি সমেত প্লেট এসে গেলো ঠান্ডা সরবতের সাথে- আমার মনে হলো যথেষ্ট হয়েছে ।সব কিছু ছুড়ে মারি ওই লোকটার মুখে ।
কিন্তু থেকে থেকে দাঁত বের করে বিগলিত বদনে হাসা ছাড়া আমি কিছুই করতে পারছিলাম না । কেননা একেই ভদ্রলোক বেজায় রকমের ধনী ।তার ওপর আমার পোর্ট্রেট আঁকার এটাই প্রথম কাজ। আজকাল ফটোগ্রাফির যুগে পোর্ট্রেট আঁকানোর চল উঠেই গেছে - কিন্তু বড়োলোকের খেয়াল । প্রিন্সিপাল সাহেবের সুপারিশে কাজটা উনি আমাকে দিয়েছেন- নাহলে আমার মতো চালচুলোহীন একটা থার্ড ইয়ারের ছাত্র এই বাড়ির গেট পেরিয়ে ঢুকতে পারবে- সে আশা না করাই বোধয় ভালো…
কাজ করতে করতে নিজেই বুঝতে পারছিলাম- কিচ্ছু হচ্ছে না । আমার হাতে তুলি আমার কথা শুনছে না । রেখা আমার বারণ মানছে না । তুলির দাগের রং চোখের তলায় গাঢ়তর হয়ে যাচ্ছে । ওই লোকের কি ওরকম ভাঙ্গা চোয়াল ।অসহ্য অসহ্য...
সেদিন কিভাবে যে আমি বাড়ি এসেছিলাম টলতে টলতে সে শুধু আমিই জানি ।বাড়ি ফেরার পথে খালাসিটোলা ঘুরে এলাম । ভেবেছিলাম দু ' পাত্তর পেটে পড়লে একটু শান্তি আসবে- কিন্তু কোথায় কি ? লোকটার পরিতৃপ্ত সুখী মুখখানা দেখে কেবল মনে হচ্ছিলো ,আমি যদি লোকটার সব সুখ নিজের হাতে দলে মুচড়ে দিতে পারতাম ।
বাড়িতে ফিরে অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে শুয়ে পড়লাম । টক টক বমির সাথে সব খাবার উঠে গেলো । পরেরদিন আবার যেতে হবে পোর্ট্রেট আঁকতে । গরমের ছুটির মধ্যে কাজটা শেষ করে ফেলতে হবে.। এই একটা পোর্ট্রেট আঁকতে ভদ্রলোক যা টাকা দিচ্ছেন - সেটা আমার মতো অকিঞ্চৎকর ফাইন আর্টস এর ছাত্রের কাছে স্বপ্নের মতোই ।
কিন্তু আঁকবো কি ? দ্বিতীয় দিনও প্রথম দিনের পুনরাবৃত্তি । কাজের মধ্যেই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি । ভদ্রতার পরাকাষ্ঠা ভদ্রলোক আমাকে বলে বসলেন- " ভাই , তোমার শরীর যদি খারাপ মনে হয়- তাহলে আজকে ছেড়ে দাও । কাল একটু সকাল সকাল চলে এস । " ভেবেছিলাম বলি - ' আমার শরীর খারাপ তাতে তোমার কি রাসকেল ।' কিন্তু সে-সব কিছু না বলে আমি বিগলিতবদনে মাথা নাড়লাম ।
আমি বাঁচলাম- বাড়ি ফিরে ক্যানভাস টা ভালো করে দেখতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম- ছবিটা ভদ্রলোকের ছবির মতো না হয়ে হয়ে যাচ্ছে যে গোবেচারা লোকটা আমার সামনে বসে পোর্ট্রেট আঁকালে আমি সবচয়ে খুশি হতাম সেই লোকটার মতো । যে লোকটাকে আমি নিজের চোখে কখনো দেখিনি - কিন্তু চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারি তার মুখের মানচিত্র , প্রত্যেকটা ভাঙাচোরা । কিন্তু - ইস্পাতকঠিন স্তব্ধতা এর চোখে নেই- উল্টে কেমন যেন তাড়া খাওয়া খরগোশের মতো বিবর্ণ ভয়ের ভাব ।ঠোঁটের কোনে নেই কোনো ক্রূর হাঁসি -উল্টে একটা বিগলিত ভাব ।
অসম্ভব- এই ছবি দেখলে ভদ্রলোক তো আমাকে একটা ফুটো কড়ি ঠেকাবেনই না- উল্টে দারোয়ান দিয়ে ঘাড়ধাক্কা দেবার সম্ভাবনা আছে যথেষ্ট ।
তৃতীয় দিন । ভেবে রেখেছিলাম যে পোর্ট্রেট করে ফেলি একটা পুতুলের মত । চোখে থাকবে না কোনও ঝিলিক । হলে হবে । তাতে যদি ভদ্রলোকের সাইকোলজি প্রতিবিম্বিত না হয়- তাতে আমার ভারী বয়েই গেলো । মোটা টাকার জন্যে আঁকতে গেছি- পোর্ট্রেট যদি কেষ্টনগরের পুতুলের মতো দেখতে হয়- তাতে আমার কি। ওনার মতো দেখতে হলেই হলো…
আজকে ঠাণ্ডামাথায় ঘন্টাখানেক কাজ করার পর পরিষ্কার বুঝতে পারলাম- এই পোর্ট্রেট এঁকে পয়সা পাওয়া আমার ভাগ্যে নেই ।
যত আঁকতে চেষ্টা করছিলাম আমার সামনে বসে থাকা ভদ্রলোকের প্রতিকৃতি- তত অবয়ব পরিবর্তিত হয়ে রূপ নিচ্ছিলো একজন সাধারণ মানুষের ভাঙাচোরা চেহারায় । যে মানুষকে আমি অনেক বেশি চিনি । যার মুখ আমার সামনে বসে থাকা ভদ্রলোকের মতো সন্তুষ্টির হাসিতে তেল চুকচুক করা নয় । উল্টে জীবন সংগ্রমের অনবরত ঘা খেতে খেতে ডুবন্ত এক মরিয়া মানুষের মুখ ।
না অসম্ভব ।এ .সির ঠান্ডাতেও কপালে দেখা দিচ্ছিল বিন্দু বিন্দু ঘাম । এমন সময় ভদ্রলোক হটাৎ উঠে দাঁড়ালেন । আমার পিঠে হাত দিয়ে শান্ত স্বরে বললেন- " বা , বেশ ভালো হয়েছে তো ।"
কণ্ঠস্বরে পরিহাসের লেশ মাত্র নেই । কিন্তু আমি মনে করলাম এটা একটা বিরাট ঠাট্টা । যখন ক্যানভাস আর ঈসেল বগলদাবা করে উঠছি , তখন ভদ্রলোক হটাৎ গলা খাঁকড়ি দিয়ে বলে উঠলেন- ' তোমাকে একটা কথা বলতে ভুলে গেছি শুভ্রজিৎ. আমি সপ্তাহ খানেকের জন্যে ব্যবসার কাজে জাপান যাচ্ছি ।তুমি পরের সোমবার চলে এস- কাজ তো প্রায় হয়েই এসেছে- ও'দিন ফিনিশিং টাচ দিলেই হবে ।"
মিথ্যা বলবো না- আসার সময় ভদ্রলোক অগ্রিম বাবদ আমার হাতে বেশ কিছ টাকা গুঁজে দিলেন ।
বাঁচা গেলো ।আর এ মুখো নয়.. কুরিয়ার করে ছবিটা ভদ্রলোককে পাঠিয়ে দিলেই চলবে।আগে একটু ফিনিশিং টাচ দিয়ে নি ।
দুদিন পরের কথা । কলেজ তখনও খোলেনি । এক বন্ধুর বাড়িতে যাচ্ছিলাম ।হটাৎ দেখলাম ,গাছের ছায়ায় একটা বেঞ্চের ওপর বসে আছেন একটি মানুষ । বৈশিষ্টহীন চেহারা । জীবন সংগ্রামে ডুবতে থাকা একটা মানুষের মুখ । ভাঙাচোরা চেহারা ।আশ্চর্য্য...এই মুখ যে আমার ভীষণ চেনা । তাঁর ছবি যখন আঁকতে চেষ্টা করেছি অহরহ । তখন পেন্সিল , তুলি সব বিদ্রোহ করেছে । রেখা ভেঙেচুরে রূপ নিয়েছে এই একটি মানুষের । এমনিতে হয়তো হেঁটে চলে গেলে চিনতেই পারতাম না । এমনি বিশেষত্বহীন চেহারা । অথচ এই মুহূর্তে মানুষটিকে মনে হলো , যেন কতকালের চেনা । ওনার জন্যেই তো আমার ছবি আঁকা ।
গেলাম ভদ্রলোকের কাছে। বললুম –' বসতে পারি ?'
হাঁসলেন ভদ্রলোক । গরমের দুপুরে টলটলে পুকুরের জলের মতো স্নিগ্ধ হাঁসি ।তারপর বললেন- "বা রে, বসুন না ।"
বসলুম । আলাপ পরিচয় জমে উঠতে দেরি হলো না । রমণীমোহন সমাদ্দার । ভদ্রলোক সত্যি জীবনযুদ্ধে অনেক লড়াই করেছেন । একটা বই প্রকাশনীর পাঠ্য বইয়ের ক্যানভাসার ।
সেদিন চলে এলাম । তারপর আবার একদিন ওনাকে দেখলাম সেই বেঞ্চিতে।তারপর আবার।ভদ্রলোকের সাথে কথা বলাটা নেশার মতো হয়ে যাচ্ছে বোধকরি..
কলেজ খুলে গেছে । কিন্তু সেই বিশিষ্ট মানুষটি - যিনি আমাকে তারঁ পোর্ট্রেট আঁকার ভার দিয়েছিলেন- তিনি আর আমার সাথে যোগাযোগ করেননি ।কাজের চাপে ভুলে গেছেন মনে হয়. . আমিও ওনাকে পাঠাইনি ছবিটা । কুরিয়ার করে ।
একদিন সাহস করে বলে বসলাম- 'একটা কথা বলবো যদি কিছু মনে না করেন।'
হাসলেন তিনি । নীল সাগরের গভীরতার অতলান্তিক হাসি । তারপর বললেন- 'বলুন না ।'
কিন্তু কিন্তু করে আমি বললাম- 'একটা ছবি আঁকবো আপনাকে মডেল করে ।দেবেন আঁকতে ।'
এবার সশব্দে হেসে উঠলেন ভদ্রলোক- 'কেন নয় ? রবিবার আমি আস্তানায় থাকি । সাত বাই ছয় ফকির চরণ স্ট্রিট।আসবেন বিকেলের দিকে । এক'সাথে চা খাওয়া যাবে।'
গেলাম । মনে হল আমার তুলি রঙ পেন্সিল -সব যেন এঁর অপেক্ষাতেই ছিল এতদিন ধরে । ক্যানভাস হেসে উঠল যেন । পরিতৃপ্তির হাসি । আমিও খুসি হলাম। এমন একটা পোর্ট্রেট তো আমি আঁকতে চেয়েছিলাম আমার কল্পনায় । সারাজীবন ধরে । আমার মাস্টারপিস ।
মাঝে মাঝেই যাওয়া শুরু করলাম ভদ্রলোকের আস্তানায় । সত্যি আস্তানাই বটে । মেরেকেটে দশ বাই দশের একটি ঘর । সাথে একটা বাথরুম ।
তারপর এলো সেই দিন । যার পর ভদ্রলোক সম্পর্কে আমার চিন্তাভাবনা কেমন সব ওলোট পালট হয়ে গেলো ।
দিল্লিতে একটি ছবির প্রদর্শনীতে যোগ দেবার কথা ছিল আমার । আমার মতন একটা নতুন শিল্পীর ক্ষেত্রে এ' খুব বড়ো সুযোগ । ট্রেনে টিকিট কাটাও হয়ে গেছে । ইছে আছে এই ছবিটাও ডিসপ্লে করার । ভদ্রলোককে সেই কথা বললাম একদিন । সংক্ষেপে তিনি বললেন- " তোমার যাওয়া তো হবে না ।"
আকাশ থেকে পড়লাম । উনি কি জানেন , ঠিক কি বলছেন ? জানেন আমার মতো স্ট্রাগলার এর কাছে এই সুযোগের কি দাম ? কিন্তু ভদ্রলোক নির্বিকার । শুধু বললেন- " দেখো , যেতে পারো কি না ।"
ট্রেন যেদিন ছাড়বে তার আগেরদিন রাত্রে শরীরে অসহ্য যন্ত্রনা... পরেরদিন সকালে নিজেকে আবিষ্কার করলাম হসপিটালের বেডে । শুনলাম- মারিজুয়ানার ওভারডোজে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে আমার বন্ধুরাই ।
পরেরদিন সংবাদপত্রের হেডলাইন দেখে চমকে উঠলাম । দিল্লিগামী তুফান মেলে দুর্ঘটনা । বাইশ জন নিহত । আহত প্রায় শ; দেড়েক। হিসাব করে দেখলাম আমার যে কামরায় যাবার কথা ছিল সেটা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সবচেয়ে বেশি । হয় মরতাম । না হয় হাত পা ভেঙ্গে পড়ে থাকতাম - এই ছিল আমার কপালে ।
ভদ্রলোককে একটা ধন্যবাদ দেওয়া দরকার । দেওয়া উচিত । তার থেকে বড় ব্যাপার এতদিন ভদ্রলোকের সাথে আলাপ হয়েছে- একবার মনে হয়নি উনি একজন সাইকিক । ভবিষৎ দেখতে পারেন । এরকম ক্ষমতার কথা বইতে পরেছি । মনে হত ধাপ্পাবাজি । ওনার সাথে দেখা করাটা তাই খুব জরুরি ।
এবারে একা যেতে ইচ্ছে করছিল না । তা' ছাড়া শরীরটাও খারাপ । তাই বন্ধু বিক্রমকে সঙ্গে নিলাম ।
গেলাম. সেই রবিবার । সাত বাই ছয় ফকির চরণ স্ট্রিট । জীবনের সবথেকে বড় চমক খাওয়া তখনও বাকি ছিল ।
এই বাড়িটা এখানে এল কোথা থেকে ? একটা ভেঙে পড়া বাড়ি । ইটের কঙ্কাল।পাঁজর হাড় সব বেরিয়ে আছ.। বাড়ি না বাড়ির মৃতদেহ । একশো বছরের এই বাড়িতে মানুষ কোনোদিন বাস করেছে বলে মনে তো হয় না ।
আমি যে ভাড়া বাড়িটার ছোট্ট একটা ঘরে গিয়েছি-বার বার । সেটা কোথায় ? ভানুমতীর খেল নাকি ?
সামনে একজন ভদ্রলোক রাস্তা দিয়ে সাইকেল করে যাচ্ছিলেন-তাঁকে জিগেস করলাম-" ও মশায় শুনছেন? "
সাইকেল থামিয়ে ভদ্রলোক আমার দিকে ফিরে তাকালেন । সপ্রশ্ন দৃষ্টি ।
" এই বাড়িতে রমণী বাবু থাকেন না?"
" এই পাড়াতে আমি আছি কম সে কম দশ বছর । এই বাড়িটা তো তখন থেকে ফাঁকাই পরে আছে । মালিক খুঁজে পাওয়া যায়নি বোধয় । না'হলে প্রমোটররা এতবড়ো একটা বাড়ি…."
দু চারজনকে জিজ্ঞাসা করলাম । কেউ রমণী বাবু বলে কারুকে কস্মিনকালে এখানে দেখেনি । কেউ নাম জানেনা ।
বিক্রম আমার দিকে কেমন চোখে চেয়ে আছে দেখে রেগে গেলাম। বললাম –' তুই বাড়ি চলে যা । আমি দেকছি ।"
বিক্রম একটু কিন্তু কিন্তু করে চলে গেল ।
কিন্তু তাও আমাকে এখানে অপেক্ষা করতে হবে । অপেক্ষা করতে হবে রমণী বাবুর জন্যে । আমি জানি , তিনি আসবেনই । তার সাথে যে আমার ভীষণ দরকার । ভীষণ । "
এই পর্যন্ত লেখাটা পরে , বরাট সাহেব সাব ইন্সপেক্টর তীর্থকে জিগ্যেস করলেন -"তাহলে তোমরা শুভ্রজিৎকে কি অবস্থায় পেয়েছো?"
" খাটে পরে ছিল স্যার. মুখ দিয়ে গাঁজলা বেরুচ্ছিল .পাশে পরে ছিল এই লেখাটা ।"
"পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট কিবলছে।"
' কোনো রকম কড়া বিষ স্যার । সম্ভবত স্ট্রিকনিন ।ওভারডোজ স্যার. আমরা ওর ঘরে দুটো মদের গ্লাস পেয়েছি । দুটোতেই পাওয়া গেছে বিষ । আরও জেতা বলার দুটো গ্লাসে তলানি মদ ছিল"।
"তাহলে কি আর কেউ ওর সাথে ছিল? এটা সুইসাইড না হোমিসাইড ?"
" আর কারু ফিঙ্গার প্রিন্ট নেই স্যার । কাছাকাছি খোঁজ নিয়েছি । পানের দোকান আর একটা মুদির দোকানে । কাল রাত্রে কোন অজানা লোককে ঘরে আসতে দেখেনি কেউ ।"
" শুভ্রজিতের দিল্লির এক্সিবিশন এর ব্যাপারে খোঁজ খাবার নিয়েছো?'
" হাঁ স্যার । মাস ছয়েক হলো , কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে । কোনো এক্সিবিশন টেক্সিবিশন ছিল না । তবে ভালো আঁকতে পারতো ।ওর কলেজের স্যাররাও কিছু জানেন না । মোবাইল বন্ধ ।তিন কূলে কেউ ছিল না স্যার । একটা অনাথ আশ্রমে মানুষ । সেই অনাথ আশ্রমের ফাদার নাথনিয়েলও কিছু জানেন না । তার সাথে যোযাযোগ নেই কলেজ ছাড়ার পর থেকে । মাস ছয়েক আগে হটাৎ হোস্টেল ছেড়ে চলে গিয়েছিল।'
এবার তীর্থ একটু আমতা আমতা করে বললো- "স্যার এই ছবিটা যদি একটু দেখতেন .. এটা ভিক্টিমের ঘর থেকে পাওয়াগেছে । "
ছবিটা দেখে প্রায় লাফিয়ে উঠলেন বরাট সাহেব । তীর্থকে বললেন –" এটা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট পৃথ্বিশ জানার ছবি না"।
তীর্থ মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিলো বরাট সাহেবের অনুমান সঠিক ।
' ছবিটা তো দারুন হয়েছে । শুভ্রজিৎ কি যেন লিখেছে বললে -একদম হয় নি । এনার ছবি আঁকছিল বুঝি শুভ্রজিৎ ' ?'
তীর্থ ছবির গুনাগুন নিয়ে কোনো মন্তব্য করা মোটেই সমীচীন বলে মনে করল না ।
"হ্যাঁ স্যার. । শুভ্রজিতের কলেজের প্রিন্সিপাল বলছিলেন সত্যি সত্যি ও জানা সাহেবের ছবি আঁকা শুরু করেছিল । মাস ছয়েক আগে । ইন ফ্যাক্ট আমরা হিসেব করে দেখেছি যেদিন শুভ্রজিৎ হোস্টেল ছেড়ে ছলে যায় সেদিন থেকেই জানা সাহেব মিসিং । তারপর একদিন কলেজ হোস্টেল সব ছেড়েছুড়ে বেপাত্তা । ওর এখনকার আস্তানার খোঁজ কেউ জানে না স্যার ।"
" জানা সাহেবের মিসিং কেসটা তো সি .আই .ডি দেখছিলো । এত বড় ভাইটাল পয়েন্ট । হি মাইট হ্যাভ কিল্ড হিম আউট অফ ডিপ্রেশন । তা ওরা ছোকরাকে খুঁজে বের করে নি? "
"সেটা স্যার ,আমি কি করে বলবো?"
"হ্যাঁ, তাও তো বটে । তুমি আর কি করে …।
"সাত বাই ছয় ফকির চরণ স্ট্রিট . । এই ঠিকানাটা খুব চেনা চেনা তো মনে হচ্ছে না তীর্থ ।"
"মনে তো হবেই স্যার । পুলিশের কাছে মর্গের ঠিকানা চেনা চেনা বলে মনে হবে না?"
উত্তেজনায় চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান ডি . সি .হোমিসাইড বরাট সাহেব ।
=======================
বিশ্বনাথ ব্যানার্জী
গঙ্গা এপার্টমেন্ট
ফ্লাট ন - ১০০ বি , বি ব্লক
২২/১ দেশবন্ধু রোড
কলিকাতা ৭০০০৮৬
দূরাভাস-৬২৯১৯৬৮৮৫৭
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন