Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

প্রবন্ধ ।। নজরুলের গানের ভূবন ।। সমীরণ সরকার

নজরুলের গানের ভূবন  

সমীরণ সরকার


 বাঙালির হৃদয়ে যে সমস্ত  গান স্থায়ী আসন পেতেছে তার মধ্যে কাজী নজরুল ইসলামের গান অন্যতম। কবি নজরুল ইসলামের মতোই সুরকার ও গীতিকার নজরুল সমান জনপ্রিয়। গীতিকার ও সুরকার উভয় ভূমিকাতেই নজরুলের ভূমিকা অপরিসীম। 
          নজরুল এক জীবনে কম করে সাড়ে তিন হাজার গান রচনা করেছেন। যা এক চিরকালীন রেকর্ড বললেও অত্যুক্তি হয় না। এই পর্বের বয়স কিন্তু মাত্র বাইশ বছর। সামরিক জীবনের ইতি ঘটিয়ে ১৯২০ সালে কলকাতায় ফিরে আসেন তিনি। গীতিকার ও সুরকার রূপে নতুন পথচলা শুরু হয় তাঁর। ওই পর্বের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৯৪২ সালে। মাত্র বাইশ বছর সময়ের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিনহাজার গান রচনা করা,সুরারোপ করা এক অবিস্মরণীয় কীর্তি। কথায় কথায় তার কলম থেকে  গান বেরিয়ে আসত, কন্ঠ থেকে নিঃসৃত হত সুরের ঝর্ণাধারা। রকমারি গান সৃষ্টি এবং সুরের বৈচিত্র্যে তার গানের ভুবন অনন্যসাধারণ।
          গানের জগতে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করার জন্য ১৯৩০ সালের পর কাব্যজগৎ তথা সাহিত্য জগৎ পরিত্যাগ করেন তিনি এবং ১৯৪২ সাল পর্যন্ত শুধু সঙ্গীত সৃষ্টিতে নিমগ্ন থাকেন। এই প্রসঙ্গে ' রুবাইয়াৎ-ই- ওমর খৈয়াম' অনূদিত গ্রন্থের ভূমিকা লেখা প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন,
" কাব্যলোকের গুলিস্তান থেকে সংগীতলোকের রাগিণী দ্বীপে আমার দ্বীপান্তর হয়ে গেছে। সংগীত লক্ষ্মী, কাব্য লক্ষ্মী দুই বোন বলেই বুঝি ওদের মধ্যে এতো রেষারেষি। একজনকে পেয়ে গেলে আরেকজন বাপের বাড়ি চলে যান। দুইজনকে খুশি রাখার মত শক্তি রবীন্দ্রনাথের মতো লোকেরই আছে। আমার সে  সম্বলও নেই শক্তিও নেই।"
       আবার ১৯৩৬ সালে ফরিদপুর জেলা মুসলিম ছাত্র সম্মিলনীতে তিনি সভাপতির অভিভাষণে বলেছিলেন, " আমি বর্তমানে সাহিত্যের সেবা থেকে, দেশের সেবা থেকে, কওমের  খিদমতগিরি থেকে‌‌ অবসর গ্রহণ করে সংগীতের প্রশান্ত সাগর দ্বীপে স্বেচ্ছায় নির্বাসনদণ্ড গ্রহণ করেছি।"
       এই দুটো উদ্ধৃতি থেকে সঙ্গীতের প্রতি নজরুলের গভীর মনোনিবেশ ও অপরিসীম ভালোবাসার প্রমাণ পাওয়া যায়। 
                      বাঙালির সংগীত প্রীতির গগনে রবীন্দ্রনাথ ,অতুল প্রসাদ, রজনীকান্ত, দ্বিজেন্দ্রলাল ,নজরুল সকলেই উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। কিন্তু প্রত্যেকের সংগীতের বৈশিষ্ট্য আলাদা।রবীন্দ্রনাথের গান বাণীপ্রধান, ধ্রুপদের কাঠামোয় রচিত, দ্বিজেন্দ্র গীতির সুরে খেয়ালের প্রভাব বেশি আর অতুল প্রসাদের গানে ঠুংরির ঝোঁক লক্ষ্য করা যায়।
এই প্রসঙ্গে  সুর সাগর দিলীপ কুমার রায়ের একটি উক্তি স্মরণ করা যেতে পারে-- " বাংলা গানের বিকাশে রবীন্দ্রনাথ ধ্রুপদের দিকে ঝোঁকেন প্রধানত গোঁসাইজির( রাধিকা প্রসাদ গোস্বামী) অধিনায়কতায়, আর দ্বিজেন্দ্রলাল ঝোঁকেন খেয়ালের দিকে প্রধানত সুরেন্দ্রনাথের( সুরেন্দ্রনাথ মজুমদারের) অধিনায়কতায়। অবশ্য রবীন্দ্রনাথ ও দ্বিজেন্দ্রলাল উভয়েই ধ্রুপদ, খেয়াল ,টপ্পা তিন শ্রেণীর গানই রচনা করেছেন, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মূল প্রবণতাটি যে ছিল ধ্রুপদের দিকে, দ্বিজেন্দ্রলাল এর  খেয়ালের দিকে, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।....... বাংলা গানের শ্রেষ্ঠ ঠুংরি চালের প্রবর্তন প্রথম অতুলপ্রসাদ ই করেন।..... এরপরে কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গীতের উল্লেখ করা উচিত ছিল। কিন্তু তার সম্বন্ধে লেখার সময় এখনো আসেনি--- সাময়িক রুচির চঞ্চলতায় জোয়ার- ভাঁটা এখনো বড় বেশি প্রকট। গোলমাল একটু থিতিয়ে যাওয়া দরকার।
        প্রখ্যাত নজরুল গীতি গবেষক  ব্রক্ষ্মমোহন ঠাকুর একটি প্রবন্ধে বলেছেন, "১৯৩৮ সালে এই অভিমতটিতে নজরুলের সংগীতকৃতিকে কেন যে এড়িয়ে যাওয়া হল, তা ঠিক বোঝা গেল না।বিশের দশকে নজরুলগীতির প্রচারে তিনি ছিলেন অক্লান্ত। সে সময় বিভিন্ন সাময়িক পত্রে নজরুলগীতির প্রশস্তি তিনি করেছিলেন মুক্ত কণ্ঠে।"
        নজরুল তার বেশিরভাগ গানে নিজেই সুর দিয়েছেন।তাঁর দেওয়া সুরে বিচিত্র ধারার সন্ধান পাই আমরা। গীতিকার ও সুরকার নজরুলের গানগুলিকে গজল( যেমন, 'বাগিচায় বুলবুলি তুই', ' ভুলি  কেমনে আজও যে মনে,' ' আমারে চোখ ইশারায় ডাক দিল হায়' ইত্যাদি), কাব্য গীতি( যেমন,' ভৈরবী'তে গাওয়া ' মোর ঘুমঘোরে এলে মনোহর', 'বেহাগে' গাওয়া 'ভরিয়া পরাণ শুনিতেছি গান', ' মিশ্র কানাড়াতে' গাওয়া ' প্রিয় যেন প্রেম ভুলোনা' ইত্যাদি), দেশপ্রেমের গান( যেমন, ' কারার ওই লৌহ কপাট' , ' এই শিকল পরা ছল আমাদের' ইত্যাদি), বিদেশি সুরভঙ্গির গান( যেমন, মিশরীয় নাচের সুরে 'মোমের পুতুল মমীর দেশের মেয়ে', দক্ষিণ সমুদ্র দ্বীপের গানের সুরে ' দূর দ্বীপবাসিনী, আরবী সুরের গান  'শুকনো পাতার নূপুর পায়ে' ইত্যাদি), লোক গীতি( ভাটিয়ালি সুরে ' পদ্মার ঢেউরে', ঝুমুরের সুরে ' চোখ গেল ,চোখ গেল', ' এই রাঙ্গামাটির পথে লো' ইত্যাদি), ভক্তিগীতি(' বলরে জবা বল',' তোমার পূজার ফুল ফুটেছে মা', ইত্যাদি)  ভাগে ভাগ করা যায়।
           বাংলা গানে গজল বিশেষত পারসিক গজলের ব্যবহার করে নজরুল বাংলা সংগীত জগতকে মাতিয়ে তুলেছিলেন। যে সুরসাগর দিলীপ কুমার রায় ১৯৩৮ এ নজরুলের গান সম্পর্কে মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিলেন, তিনি বিলেত থেকে ফিরে একসময় প্রায় প্রতিটি গানের আসরে নজরুলের বিখ্যাত গজল 'বাগিচায় বুলবুলি তুই ' গানটি গাইতেন। প্রখ্যাত জনপ্রিয় গায়ক কে মল্লিকও তখন বিভিন্ন আসরে নজরুলের 'কে বিদেশি বন উদাসী' গানটি খুব গাইতেন। গানগুলির জনপ্রিয়তা দেখে রেকর্ড প্রতিষ্ঠানগুলি নজরুলকে গীতিকার ও সুরকার হিসেবে নিযুক্ত করেন ১৯২৮ সালে। তবে তার আগে ১৯২৬ সালে দেশাত্মবোধক গান লেখার অপরাধে নজরুলকে কারারুদ্ধ হতে হয়। ওই সময় একটানা ৩৯ দিন
অনশন করেন নজরুল। শেষে রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে তিনি অনশন ভঙ্গ করেন। কারাবাসকালে তিনি লিখেছিলেন কয়েকটি বিখ্যাত  গান , যেমন,'কারার ঐ লৌহ কপাট', 'শিকল পড়া ছল' ইত্যাদি।
        যে কোনও  সংগীতের মূল ভিত্তি কথা ও সুর। সংগীতে কথা না সুর কার গুরুত্ব বেশি এটা এক কথায় বলা যায় না। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ কথা ও সুর উভয়কে গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন," কথা যতখানি ভাব প্রকাশ করে,সুর ও প্রায় ততখানি ভাব প্রকাশ করে। এমনকি সুরের উপরেই কথার ভাব নির্ভর করে।" এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের আরেকটা মন্তব্য না লিখলেই নয়---" যে মানুষ গান বাঁধবে আর যে মানুষ গান গাইবে দুজনেই যদি সৃষ্টিকর্তা হয় তবে তো রসের গঙ্গা -যমুনা সঙ্গম।"
নজরুলের ক্ষেত্রে ঠিক এটিই হয়েছিল। তাঁর গানে বাণী ও সুরের হর - পার্বতী মিলন সম্ভব হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের গানে যে দার্শনিকতার ছোঁয়া আছে, নজরুলের গানে তা খুঁজে না পেলেও সুরের আকাশে রামধনু সৃষ্টিতে কৃতকার্য হয়েছিলেন তিনি।
 নজরুলের ভক্তিগীতি তো এক অসামান্য সৃষ্টি। ভিন্ন ধর্মের মানুষ হয়েও গানের মধ্য দিয়ে ভাব ও ভক্তির প্লাবনে ভেসে গেছে তার শ্যামা সংগীত। সহজ সরল ভক্তি রসের অপূর্ব প্রকাশ তাঁর প্রত্যেকটি শ্যামা সংগীত।তাঁর ' কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন' অথবা 'বল রে জবা বল' এসব গান শুনলে হৃদয় ভক্তি রসে আর্দ্র হয়ে ওঠে না, এমন মানুষ বিরল। 
   প্রখ্যাত সঙ্গীত সাধক ও সংস্কৃত পণ্ডিত গোবিন্দ গোপাল মুখোপাধ্যায় বলেছেন," কাজী নজরুল ইসলাম স্বভাবে ও স্বরূপে মাতৃ সাধক বা পরম শাক্ত। প্রথম জীবনে দেশ মাতৃকা রূপে এই জননীই তাঁর ধ্যান জ্ঞান আরাধনার বিষয় ছিলেন এবং শেষের দিকে বিশ্ব মাতৃকা বা জগজ্জননী রূপে তিনিই তার আরাধ্যা হয়ে উঠেছিলেন।"
        আগেই বলেছি যে, বাংলা গজল গানে নজরুল ইসলাম এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিলেন যে, স্বর্গীয় ডিএল রায়ের পুত্র দিলীপ কুমার রায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নজরুলের গজল গাইতেন।তাঁর বহু সুকন্ঠ ছাত্র ছাত্রীরা ও গজলের প্রেমে মুগ্ধ হয়ে গজল গাইতে শুরু করেছিলেন। প্রখ্যাত গীতিকার প্রণব রায়ের লেখা নজরুল বিষয়ক একটি প্রবন্ধ থেকে জানতে পারি যে, নজরুল  বাংলা গজল লেখার কিছু মুখড়া পেয়েছিলেন ' মঞ্জু সাহেব' নামে এক মুসলমান ওস্তাদের কাছ থেকে। সেই 'মঞ্জু সাহেব ' তখন  এসেছিলেন বিখ্যাত কীর্তন নায়িকা রাধারানীকে ঠুংরি শেখানোর জন্য । ওই 'মঞ্জু সাহেবের' সঙ্গে নজরুলের খুব হৃদ্যতা হয়েছিল। তখন প্রায়ই নাকি রাধারানীর বাড়িতে বা নজরুলের বাড়িতে গানের আসর বসতো। সেখানে বিবিধ গজলের মুখ, ঠুমরির মুখ কাজী সাহেব শুনতেন। এবং সেই মুখড়া অবলম্বন করে বাংলায় প্রচুর গজল লিখতে শুরু করলেন । সেই গানগুলির মধ্যে' কে বিদেশী মন উদাসী,' ' এত জল ও কাজলা চোখে', ' করুন কেন অরুণ আঁখি' ইত্যাদি বাংলা গানের জগতে এক নতুন দিক খুলেছিল। বাংলায় গজল রচনার প্রথম কৃতিত্ব অবশ্য অতুলপ্রসাদ সেনের। যদিও উনি খুব বেশি গজল লেখেননি।
        আগেই বলেছি যে, রবীন্দ্র সংগীতের মুখ্য আকর্ষণ প্রথমে বাণীতে তারপর সুরে। নজরুল গীতির মুখ্য আকর্ষণ সুরে, তারপর তার বাণীর প্রসঙ্গ। রবীন্দ্রনাথ প্রথম গানের কথা লিখতেন তারপর তাতে সুরারোপ করতেন। নজরুল অনেক ক্ষেত্রেই প্রথমে সুর ,তারপরে সুরের প্রয়োজনে বাণীর মূর্তি নির্মাণ করেছেন। যেমন, নজরুলের দোলনচাঁপা রাগ' নির্ভর করে ' দোলন চাঁপা বনে দোলে--- দোল পূর্ণিমা রাতে চাঁদের সাথে' কিংবা নীলাম্বরী রাগ আশ্রয় করে' নীলামবরী শাড়ি পরে নীল যমুনায়' গান দুটিতে রাগের উল্লেখ প্রথমেই করা হয়েছে। অর্থাৎ সুরের প্রয়োজনে কথা এসেছে।
        নজরুলের সুরের বৈচিত্র্য রাগাশ্রয়ী গানে। সেক্ষেত্রে নজরুল শাস্ত্রীয় নিয়মকে মেনেছেন। এই প্রসঙ্গে একটি লেখায় নজরুল ১৯৪০ সালে প্রকাশিত সেনোলা রেকর্ড কোম্পানির একটি বুলেটিনে বলেছেন," আধুনিক (মডার্ন) গানের সুরের মধ্যে আমি যে অভাবটি সবচেয়ে বেশি অনুভব করি তা হচ্ছে সিমিট্রি( সামঞ্জস্য) বা ইউনিফর্মিটির( সমতার)অভাব। কোন রাগ বা রাগিনীর মিশ্রণ ঘটাতে হলে সংগীত শাস্ত্রে যে সূক্ষ্ম জ্ঞান বা রসবোধের প্রয়োজন তার অভাব আজকালকার অধিকাংশ গানের সুরের মধ্যেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।.... রাগ রাগিনী যদি তার 'গ্রহ' ও 'ন্যাস' এবং বাদী-বিবাদী সংবাদী মেনে নিয়ে এই রাস্তায় চলে তাহলে তাতে কখনো সুরের সামঞ্জস্যের অভাব বোধ হবে না।"
       সেই কোন বাল্য বয়সে রোজগারের তাগিদে নজরুল লেটোর দলে যোগদান করেছিলেন। সেখানে নিয়মিত সংগীত চর্চার মধ্য দিয়ে জীবন কাটিয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তা বিকশিত হয়েছে, দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় নজরুল বুঝতে পেরেছেন যে, রাগের মিশ্রণ ঘটিয়ে সুরে বৈচিত্র্য আনা যায়। এই প্রসঙ্গে বিখ্যাত নজরুল গীতির গবেষক ব্রক্ষ্ম মোহন ঠাকুর বলেছেন," নজরুল তার সুর সৃষ্টিতে তথা সুরের কাঠামো নির্মাণে তিনটি প্রধান উপায় অবলম্বন করেছিলেন,এক, রাগ মিশ্রণ,দুই, একটি নির্দিষ্ট রাগের রূপ গ্রহণ,তিন, নব রাগ সৃজন।"
        রাগ মিশ্রণে নজরুলের ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। এইভাবে বিভিন্ন রাগের মিশ্রণে সুরারোপ করে তিনি অনেক অসাধারণ গান সৃষ্টি করেছেন। যেমন, বেহাগ, তিলককামোদ ও খাম্বাজ রাগের মিশ্রণে রচিত গান,' কেন কাঁদে পরাণ কি বেদনায়', বেহাগ ও বসন্ত রাগের মিশ্রণে রচিত ' ভরিয়া পরাণ শুনিতেছি গান' ইত্যাদি। নজরুল তাঁর সঙ্গীত জীবনে সতেরোটি নতুন রাগও সৃষ্টি করেছিলেন।
        নজরুলের গানের ভুবন বিশাল। যার স্বরূপ এই ছোট্ট প্রবন্ধে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সেই কবে। লেটোর দলে সংগীত রচনা ও সুর সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত নজরুলের মনে সংগীত প্রীতির যে বীজ রোপিত হয়েছিল, কালে কালে তা মহীরুহে পরিণত হয়েছিল। একথা আগেই বলেছি যে, শুধু সংগীত সরস্বতীর সেবার জন্য নজরুল কাব্য চর্চা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
        তাইতো নজরুল গভীর বিশ্বাস নিয়ে ১৯৩৮ সালে জন সাহিত্য সংসদের ভাষনে বলেছিলেন," সাহিত্যে দান আমার কতটুকু তা আমার জানা নেই তবে এইটুকু মনে আছে, সঙ্গীতে আমি কিছু দিতে পেরেছি। সংগীতে যা দিয়েছি সে সম্বন্ধে আজ কোন আলোচনা না হলেও ভবিষ্যতে যখন আলোচনা হবে তখন আমার কথা সবাই মনে করবে -- এ বিশ্বাস আমার আছে।"
        এ বিশ্বাস সমস্ত বাঙালির। বাংলার সংগীতপ্রেমী মানুষের হৃদয়ে নজরুলের গান আজ এক স্থায়ী আসন লাভ করেছে ,গানের সুরের মাদকতায় ও শব্দের যাদুতে।

তথ্যসূত্র:
গ্রন্থ :- (১) সংগীত বিচিত্রা/ নারায়ণ চৌধুরী (২) আমার দেখা বাংলা গানের জগত / রাজ্যেশ্বর মিত্র
পত্রপত্রিকা:- (১) দেশ, ১২ ই জুন ১৯৯৯ সংখ্যা সংখ্যা / বাংলা গানের সুরনির্মিতিতে নজরুল: ব্রক্ষ্মমোহন ঠাকুর (২) শহর ( বাংলা গান সংখ্যা) , এপ্রিল, 2012/ কাজী সাহেবের গান: সঙ্গ প্রসঙ্গ / প্রণব রায় (৩) পশ্চিমবঙ্গ( বর্ষ ৩২ ,সংখ্যা ৪৬-৪৯) / নজরুলের ভক্তিগীতি:তাঁর দুর্গা ও কালী চিন্তা / নির্মলেন্দু ভৌমিক (৪) যুব মানস( নজরুল সংখ্যা ,১৯৯৮)
ক) নজরুল গীতির সুর বৈচিত্র্য/ বিমান মুখোপাধ্যায়
খ) নজরুলের গান/যূথিকা বসু
গ) নজরুলের গানের ভুবন/ বরুণ কুমার চক্রবর্তী এবং আরো কিছু পত্রপত্রিকা।

************************************
        
             Dr. Samiran Sarkar,
             Khelaghar, Lautore,
             P.O.Sainthia,Birbhum,
             W.B. PIN--731234

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক