Featured Post

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৬তম সংখ্যা ।। আষাঢ় ১৪৩১ জুন ২০২৪

ছবি
  সূচিপত্র  প্রবন্ধ-নিবন্ধ-মুক্তগদ্য-ভ্রমণকথা মেল্লক গ্রামের মদনগোপাল জীউর মন্দির ।। সায়ন মণ্ডল কথাসাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদার ... হেমন্ত মুখোপাধ্যায় : জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি ।। উজান... আমার রবীন্দ্রনাথ ।। সত্যেন্দ্রনাথ পাইন বৈকালিক বৈশাখ ।। ছন্দা দাম বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকার ।। পাভ... মে দিবস : অধিকারহরণ ।। শ্যামল হুদাতী শরীর ও মনের সুস্থতা ।। রতন বসাক মানুষ কী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নিকট ভৃত্যমাত্র? ।।... আমাদের পরিবেশ ভাবনা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত বিশ্বপ্রেম ।। আরতি মিত্র টান ।। মনোরঞ্জন ঘোষাল স্রষ্টার নিষ্ঠা ।। শংকর ব্রহ্ম বেগুনিয়া : বাংলার মন্দির স্থাপত্য ।। সু... ।। গল্প ।। বিকেল বাঁচাও আন্দোলন ।। সুবীর ঘোষ রাখে হরি তো মারে কে ।। সমীর কুমার দত্ত বিভ্রান্ত ।। রানা জামান সম্পর্ক ।। মাখনলাল প্রধান  ধারা মাস ঝরা মাস ।। প্রদীপ কুমার দে গল্পের মত অবিশ্বাস্য সত্য ।। বন্দনা সেনগুপ্ত ধর্মরাজ, লাখাই আর ডমরু সর্দারের গল্প... ভূতের বাচ্চা ।। নবী হোসেন নবীন গোধূলিবেলায় ।। সুচন্দ্রা বসু বিয়ে ।। রেজাউল করিম রোমেল ঘোড়ার ডিমের গল্প ।। প্রবোধ কুমার মৃধা নাত জামাই ।। সুদামক

ছোটগল্প ।। প্রথম দেখা ।। উত্তম চক্রবর্তী



প্রথম দেখা 

উত্তম চক্রবর্তী

অবশেষে দমদম সেন্ট্রাল থেকে আজ ছাড়া পাচ্ছে অবনি হালদার। বারাসতের কাজী পাড়ায় নিজের খুড়তুতো ভাইকে সম্পত্তির বিবাদে খুন করবার অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিল আজ থেকে বারো বছর আগে। কিন্তু কারাগারে থাকা কালীন তাদের আচার ব্যবহারে খুশী হয়ে সরকার রাজ্যের একশ জন পুরুষ কয়েদি ও দুজন মহিলা কয়েদিকে এই পনেরই আগস্টে মুক্তি দিচ্ছে। অবনি হালদারও তাদের মধ্যে একজন। প্রথমে অবনি এই খবরটা শুনে শুধু হাউ হাউ করে কেঁদেছিল প্রায় একঘণ্টাএই বারোটা বছর প্রতি ঘণ্টা প্রতি মিনিট তার কী ভাবে কেটেছে এই জেলের চার দেওয়ালের মধ্যে সেটা একমাত্র অবনি নিজেই শুধু জানে।
        সেদিন ছিল সোমবার, সকাল থেকেই শুরু হয় অবনি ও তার জ্যাঠার মধ্যে ওদের  জমিতে বেড়া দেওয়া নিয়ে ঝামেলা। অবনির জ্যাঠা ও তার পরিবার পাশাপাশি দুই আলাদা বাড়িতে থাকে। জ্যাঠার দুই ছেলে আর অবনির একটা মাত্র ছেলে তখন। জ্যাঠার দুই ছেলে, একজন সবে পুরসভায় কেরানীর কাজ পেয়েছে, আরেকজন স্কুল ফাইনাল দেবে সেবার। অবনির ছেলে তখন মাত্র ক্লাস ফাইভে পরে। জ্যাঠা অসুস্থ, প্রাইভেট কোম্পানির কাজ থেকে রিটায়ার করে সারাদিন বাড়িতেই শুয়ে বসে দিন কাটান আর সারাদিন জেঠিমার সাথে খিট খিট করেন। এদিকে অবনির বাবা মা দুজনেই মারা গেছেন অনেক দিন আগে। সেইদিন হটাত ওদের দুই বাড়ির মাঝের পুরানো বেড়া পাল্টে নতুন করে বেড়া লাগাতে গিয়ে জ্যাঠার নির্দেশে কাজের লোকেরা অবনিদের দিকে প্রায় দুই ফুট জমির ভিতর বেড়া লাগাতে শুরু করে।
        অবনি সকাল থেকেই ওঁর স্ত্রী লতাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল। লতার আবার ছেলেপুলে হবে, ভোর রাতে লেবার পেইন উঠেছে । অবনি এ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করছিল, ছেলেটা ঘরে মায়ের কাছে বসা। হটাত অবনি লক্ষ্য করে জ্যাঠার কাজের লোকগুলি ওঁদের উঠোনের শেষে বাগানের গা ঘেঁসে নতুন বেড়া লাগাতে বাঁশের খুঁটি পুতে ফেলেছে। অবনি চেঁচিয়ে উঠে ওদের বাধা দিতে গিয়েই জ্যাঠার সাথে ঝগড়া লেগে যায়। জাঠতুতো ভাই অমল বাবার হয়ে কাকাকে অনেকগুলি খারাপ কথা শুনিয়ে দিল। ঠিক তক্ষুনি এ্যাম্বুলেন্স এসে পড়ে। বারাসাত হাসপাতালের স্টাফরা লতাকে ও পাশের বাড়ির মিনুদিকে নিয়ে এ্যাম্বুলেন্সে উঠে পড়ে। কিন্তু অবনি নিজে না গিয়ে ওর ছেলেকে পাঠিয়ে দেয় মার সাথে।
        অবনির না যাওয়ার করন ছিল জ্যাঠার লোকদের আটকানো। এ্যাম্বুলেন্স  হাসপাতালের উদ্দেশে চলে যাবার পর জ্যাঠা তার ছোট ছেলে ও অবনির মধ্যে শুরু হয়ে যায় চূড়ান্ত ঝামেলা। অবনির আপত্তিতে লেবারগুলি কাজ বন্ধ করে বসেছিল। জ্যাঠা অবনির মতই বদরাগী মানুষ। ওদের বসে থাকতে দেখে তার মাথা গরম হয়ে যায় আর নিজে লেবারদের হাত দাও তুলে নিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় পুতে ফেলা বাঁশের খুঁটির পাশে আর লেবারদের বলেন,'নিয়ে আয় তো বেড়া গুলি, দেখি কে আটকায় তোদের।' জ্যাঠার পাশে এসে দাঁড়ায় তার ছোট ছেলে অমল। দাদা অফিস বেরিয়ে গেছে, সুতরাং বাবার দল ভারি করতে ছোট ছেলেই ভরসা।
        অবনি ওদের এই জোর জবরদস্তি দেখে আরও রেগে যায় ও চেঁচিয়ে ওদের সাবধান করতে থাকে। আসে পাশের বাড়ির কয়েকজন এসে ওদের থামাবার চেষ্টাও করছিল, কিন্তু ঝগড়া চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছিল। শেষে অবনি এতোটাই রেগে গিয়েছিল যে জ্যাঠার হাত থেকে ওই হাত দাওটা কেড়ে নিয়ে আচমকা ওর জাঠতুতো ভাই অমলের ঘাড়ে সজোরে এক কোপ বসিয়ে দিয়েছিল। পাড়ার লোকরা এসে অবনিকে ধরে আটকে রাখে আর কয়েকজন গিয়ে ছুটে ধরে অমলকে। হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই অমল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। পুলিশ এসে অবনিকে ধরে নিয়ে যায় থানায়। প্রায় কোন প্রতিবাদ ছাড়াই অবনি ওর দোষ স্বীকার করে এবং কোর্ট ওকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনায়। এদিকে লোকমুখে অবনি খবর পায় যে লতা একটা ফুটফুটে মেয়ের জন্ম দিয়েছে সেই রাতে। 
        অবনিকে জেলখানায় মাঝে মাঝেই এসে দেখে যেত লতা। ওর দাদাদের সাহায্যে সংসার চালিয়ে ছেলেকে সরকারী স্কুলে পড়িয়ে অনেক কষ্টে সংসার সামাল দিয়েছে লতা। ছেলে কয়েকবার জেলখানায় এলেও লতা ওর মেয়েকে কোনদিনই তার খুনি বাবার সামনে নিয়ে আসেনি। লতার মুখে সব ঘটনাই শুনেছে ওর মেয়ে গীতা, কিন্তু বাবাকে দেখবার সৌভাগ্য ওর কোনদিন হয়নি। আজ এই প্রথম গীতা জিদ ধরেছে বাবাকে যখন জেলখানা থেকে ছাড়বে তখন ও মার সাথে গিয়ে গেটের বাইরে দাঁড়াবে যাতে বাবা আজ জেল থেকে বেরিয়ে প্রথমেই তার মেয়ের মুখ দর্শন করেন। লতা মেয়ের এই আবদার ফেলতে পারেনি।
        অবনি সকালেই স্নান করে পরিষ্কার জামা কাপড় পরে রেডি ছিল। বেলা সাড়ে দশটায় সরকারের একজন মন্ত্রী ও এস ডি ও সাহেব এলেন। দুজনেই তাদের ভাষণে ওদের জেলের প্রায় কুড়ি জন কয়েদিকে খোলা জায়গায় এক লাইনে দাঁড় করিয়ে বললেন ওদের ভাল ব্যবহারের জন্য এই বারো বছরের সাজা কাটাবার পর আজ মুক্তি দেয়া হচ্ছে, কারণ এবার যাতে ওরা সবাই ভাল হয়ে সমাজে অন্য পাঁচটা ভদ্র মানুষের মত বেঁচে থাকতে পারে ও পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। কয়েদিরা সবাই খুব হাততালি দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করল। এবার ওদের গচ্ছিত সম্পত্তি ইত্যাদি সবার হাতে তুলে দিলেন জেলার সাহেব এবং একে একে সবাই গেটের দিকে এগিয়ে গেল। 
        গেটের বাইরেই আরও অনেকের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিল অবনির স্ত্রী লতা আর তার হাত ধরে দাঁড়িয়ে ফ্রক পরা বারো বছরের তরুণী গীতা। গীতা এখন বড় হচ্ছে এলাকার সরকারি স্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়ে এখন। বাবাকে জীবনে প্রথমবার দেখবে মেয়েটা। মনের ভিতর একটা চাপা ভয় ও আনন্দ কাজ করছে একসাথে। ওর বাবা ওকে দেখে কেমন অবাক হয়ে যায় সেটা দেখার লোভে গেটের দিকে তাকিয়ে রইল মেয়েটা। অনেক বয়স্ক লোক বেরিয়ে এলো একে একে। একজন মাঝবয়সী লম্বা মত লোক এসে লতার সামনে দাঁড়াল। লতা গীতার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে ওঁকে বলে, 'এই যে তোমার মেয়ে গীতা। বা বাঃ সকাল থেকে বায়না করছে 'বাবাকে আনতে যাব' বলে। তাই নিয়ে এলাম।'
        গীতা অবাক হয়ে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে ছিল। ওর জন্মের দিনই ওর বাবা জ্যাঠা দাদুর সাথে ঝগড়া করে তার ছোট ছেলেকে কুপীয়ে খুন করে জেলে গিয়েছিলেন ও শুনেছেকিন্তু ওর বাবার এই শান্ত শিষ্ট চেহারা দেখে মোটেই বাবাকে একজন খুনি মনে হচ্ছে না। মুহূর্তের মধ্যে এতদিন যাবত মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভয় ভীতি সব উড়ে গিয়ে একটা অদ্ভুত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জন্ম নিলো গীতার মনে। দেখে ওর বাবার চোখে জল, দু'হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তার মেয়ের দিকে। গীতা ঝাঁপিয়ে পড়ল বাবার বুকে আর ফিস ফিস করে বলল,'বাবা, আমার বাবা

                      --------শেষ--------


Uttam Chakraborty.

Bangalore.

Phone - 9650711700. 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৬তম সংখ্যা ।। আষাঢ় ১৪৩১ জুন ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৫তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ মে ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত