গুচ্ছকবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত
(১)
বর্ণমালা
শূন্য হতে হতে বুকের বাতাস একদিন...
নিভে যাবে হাওয়ার সঙ্গে
তার থেকে বরং
দুরন্ত নদীর বুকে একটা সকাল লিখি
দেখতে দেখতে অতিক্রান্ত হয়েছে ইচ্ছেরা
ভালোবাসার গভীরে এখন দিনলিপির ছাপ
বৃষ্টির ধারা কখনও কখনও
তোমার শাড়ির আঁচল ছুঁয়ে
আমার একতারা জুড়ে এখন লালনের বর্ণমালা।
(২)
অচিনপুরের যাত্রা
থমকে দাঁড়িয়ে আছি
ধানক্ষেতের বুলবুলি সবুজের গায়ে
এখন চির নিদ্রায় মগ্ন
তোমার মুখের দিকে
অস্পষ্ট যে রেখা দক্ষিণের পথে
তুলসী মঞ্চের দিকে বেঁকে গেছে
সেই পথে,
শব্দের পর শব্দ সাজানো
ছোটো গ্রাম, গাছগাছালি
তোমার স্পর্শে এখন অচিনপুরের যাত্রা।
(৩)
ভৌগোলিক দূরত্ব
নৈঃশব্দের সেলুরারে বন্দী হিসেবের তর্জমা
রৈখিক ব্যবধানে আর্তনাদের অনুভূতি
একান্ত ফেলে আসা স্মৃতির দিকে...
ক্রমশঃ বিবর্তন হতে হতে
মিশে যাওয়া যত গ্লানি একদিন
মুছে যাবে আদিগন্তের পথে
হিসেবের বর্ণমালা বহু পথ ধরে
ক্লান্তমুখর জনস্রোত হারিয়ে যাবে
ভৌগোলিক দূরত্বে।
(৪)
মনে পড়ে
আরও একবার তোমার মুখোমুখি হতে চাই
নুয়ে পড়া গাছটির আসা যাওয়া
প্রতিদিন দেখি আর ভাবি...
বিবর্তনের দৈনিক পদাবলী
তারপর কি এমন হলো,
কথা দেওয়া ব্যক্তিগত পার্লামেন্ট
একদিন...
বনলতা তোমায় মনে পড়ে সমুদ্রতীরে।
(৫)
সমস্ত অপেক্ষা ভুলে
সমস্ত অপেক্ষা ভুলে,
যাবতীয় অন্ধকার উঠে আসে তোমার চুলে
উদাসীনতা কত দূর যেতে পারে?
ফাঁকা জমিতে এখন হোগলা পাতা
ক্রমশঃ...
এই অবেলা ঘুমের মধ্যে জেগে থাকে সময়
উঠোনে পিপুলের চারা বেড়ে উঠছে।
(৬)
কিছু কথা
অবনীর দরজায় তালা ঝুলছে
রাস্তাটা মোটেও সোজা নয়
পথ দেখার অভীপ্সা সকলের
যত এগোই তত গভীর ক্ষত
মনে হয় সব নয়ের নামতায় বিয়োগ বসেছে
সেজে উঠেছি আমি,তুমি,প্রত্যেকে
কেউ শিকি কেউ আধুলি কেউ ...
গান গেয়ে যায় বাউলে
অবনী চির নিদ্রায়
তালাটা আজও ঝুলছে দরজায়।
(৭)
অবুঝ ভাষা
দ্রুত প্রত্যাবর্তন নিজের সাথে
মুহুর্তের মধ্যে বদলে নেওয়া কথা
ঠিক ঘড়ির মত সময় পাল্টে গেছে
হুবহু এক দৈনিক চাওয়া
নৌকা ভেসে চলে আপন গতি ছাড়িয়ে
তখনই বুঝি পালে হাওয়া লেগেছে
এভাবে কত পথ পথ হয়ে সরে গেছে
একান্ত গোপনে
তোমরা নদী দেখো
নৌকার ভাষা বোঝো না !
===================
তীর্থঙ্কর সুমিত
মানকুণ্ডু, হুগলী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন