Featured Post

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ৮৬তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩২ এপ্রিল ২০২৫

ছবি
সম্পাদকীয় এই সংখ্যাটি বাংলা নববর্ষ বিষয়ক সংখ্যা। নৱৰ্ষকেন্দ্রিক বহু তথ্যপূর্ণ লেখা এই সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস, রীতিনীতি, উৎসব, পার্বন, লোকাচার, রূপান্তর বহুবিধ বিষয় প্রকাশিত হয়েছে এই সংখ্যার লেখাগুলিতে। এই সংখ্যার বাছাই কিছু লেখার সঙ্গে আগামীতে আরও কিছু লেখা সংযুক্ত করে বাংলা নববর্ষ বিষয়ক একটি মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশ করার ইচ্ছে রইল।  সকলকে নববর্ষের আন্তরিক শুভকামনা জানাই। উৎসবে আনন্দে থাকুন, হানাহানিতে নয়। ধর্ম-ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে সহনাগরিকের পাশে থাকুন। মনে রাখুন, ধর্মকে মানুষই সৃষ্টি করেছে। ঈশ্বর আল্লা গড ইত্যাদির জন্মদাতা মানুষই। মানুষকে ভালোবাসুন। মানুষের পাশে থাকুন।  নিরাশাহরণ নস্কর  সম্পাদক, নবপ্রভাত।  সূচিপত্র প্রবন্ধ-নিবন্ধ-স্মৃতিকথা পয়লা বৈশাখ ।। সিদ্ধার্থ সিংহ নববর্ষকেন্দ্রিক মেলা, পার্বন, উত্সব, লোকাচার ।। সবিতা রায় বিশ্বাস নববর্ষ আবাহন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিভিন্ন দেশে ।। তুষার ভট্টাচার্য নববর্ষের সেকাল ও একাল ।। হিমাদ্রি শেখর দাস নববর্ষের হাল-হকিকৎ ।। শংকর ব্রহ্ম বোশেখি বাঙালি নাকি পোশাকি বাঙালি? ।। দিব্যেন্দু...

অণুগল্প ।। ডাক্তার ।। দেবাংশু সরকার

ডাক্তার 

দেবাংশু সরকার

      বারো বছর লন্ডনে কাটানোর পর দেশে ফিরেছেন সুজয়, অর্থাৎ ডাক্তার সুজয় মন্ডল। কলকাতা থেকে এম এস করার পর লন্ডনে পাড়ি দিয়েছিলেন সুজয়। এরমধ্যে কয়েকবার বাবা মাকে লন্ডনের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু গ্রাম্য পরিবেশে অভ্যস্থ তার বাবা মা বিদেশে যেতে রাজি হননি। এতোদিনে পাকাপাকি ভাবে লন্ডনের পাট চুকিয়ে দেশে ফিরলেন সুজয়।

      মালদহ জেলার এক অখ্যাত গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে সুজয়। পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র সুজয় স্থানীয় স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর জয়েন্ট এন্ট্রান্সে কৃতকার্য হয়ে সুযোগ পান ডাক্তারি পড়ার। অনেক কষ্টে তার বাবা তাকে ডাক্তারি পড়ান। কলকাতা থেকে এম বি বি এস এবং এম এস করার পর সুযোগ পান লন্ডন থেকে এফ আর সি এস করার এবং সেইসঙ্গে লন্ডনের একটা হসপিটালে চাকরি করার সুযোগও পেয়ে যান। প্রথমে দেশ ছাড়ার ইচ্ছা না থাকলেও অনেক ভেবেচিন্তে পাড়ি জমান লন্ডনে। পড়াশোনা এবং চাকরি দুটোই চলতে থাকে। লন্ডন থেকে এফ আর সি এস এবং এম আর সি পি করার পর এডিনবরা থেকেও এফ আর সি এস করে লন্ডনেই জাঁকিয়ে বসলেন এক পেশাদার ডাক্তার হিসেবে। 

      এভাবে কেটে গেল বারোটা বছর। ব্যাঙ্কে অগাধ অর্থ। সঙ্গে পশ্চিমী দুনিয়ার অতি আধুনিক জীবনযাত্রা। সবই করায়ত্ব সুজয়ের। তারপরেও কি যেন নেই! বাবা মাকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছা, মাটির টান, শেকড়ের খোঁজে আবার সুজয় ফিরে এলেন এই পোড়া দেশে। মালদহ জেলার অজ গাঁয়ে।

      ভরা বর্ষাকাল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন সব কিছু ওলোট পালোট করে দিচ্ছে। খবর আসছে নদীর বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে। অবিলম্বে দুর্যোগ না থামলে বড় বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। মধ্যরাতে খবর এলো বাঁধে একটা বিরাট বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। গ্রামের মধ্যে জল ঢুকতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ভেঙে পড়েছে বেশ কয়েকটা কাঁচা বাড়ি। আতঙ্ক ছড়িয়েছে মানুষের মনে। ঘর বাড়ি ছেড়ে সবাই বেরিয়ে এসেছে। ভয়ে আতঙ্কে তারা চিৎকার করছে, আর্তনাদ করছে, কাঁদছে। মাঝ রাতে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভেঙে যায় সুজয়ের। দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসেন। দেখেন হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছে খোলা আকাশের নিচে।

      বাঁধের অবস্থা খুব খারাপ। আশু মেরামতির প্রয়োজন।  না করলে আসে পাশের গ্রামগুলো সুর্যোদয়ের আগেই জলের তলায় চলে যাবে। যা করার রাতের মধ্যেই করতে হবে। কিন্তু মাঝ রাতে সরকারি সাহায্য দুরঅস্ত। সরকারি সাহায্য আসতে আসতে সব কিছু ভেসে যাবে জলের স্রোতে। তার আগে ভাঙন রুখতে সিমেন্ট দরকার। বস্তা বস্তা সিমেন্ট। সুজয় ফোন করলেন পঞ্চায়েত প্রধানকে। ফোন বেজে গেল।  অপর দিক থেকে কোন সাড়া নেই।  বারে বারে ফোন করলেন। কোনো সাড়া পেলেন না। হতাশ হয়ে পঞ্চায়েত প্রধানকে ছেড়ে ফোন করলেন এম এল এ কে। স্বনামধন্য বিলেত ফেরত ডাক্তার সুজয় মণ্ডলের সঙ্গে ভালোই আলাপ পরিচয় আছে এম এল এ সাহেবের। কিন্তু এবারও বারে বারে ফোন বেজে গেল।  কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। চূড়ান্ত হতাশ সুজয় বুঝে গেছেন এই দুর্যোগের রাতে এদের কাউকে পাওয়া যাবে না। কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থাকলেও চলবে না। যা করার তাকেই করতে হবে। এখনই করতে হবে।

      গ্রামের লোকজনদের নিয়ে সুজয় গেলেন স্থানীয় ইমারতি ব্যবসায়ীর কাছে। তার গোডাউনে আছে দুশো বস্তা সিমেন্ট। সঙ্গে আনা চেক বইয়ের একটা পাতা ছিঁড়ে দাম মিটিয়ে দিলেন সুজয়। কিন্তু নিয়ে যাবেন কি করে? এই দুর্যোগের রাতে লরি পাওয়া সম্ভব নয়। অগত্যা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যায় গ্রামবাসীরা। তারা মাথায় করে নিয়ে যাবে সিমেন্টের বস্তা। সেই সারিতে দাঁড়িয়েছেন ডাক্তার সুজয়। বিলেত ফেরত প্রখ্যাত অর্থোপেডিক সার্জন ডাক্তার সুজয় মন্ডল মাথায় তুলে নিয়েছেন সিমেন্টের বস্তা। বস্তা মাথায় দৌড়াচ্ছেন ডাক্তার সুজয়। দৌড় দৌড় দৌড়। প্রাণপণে দৌড়চ্ছেন ডাক্তার সুজয়। তাকে যে পৌছাতে হবে বাঁধ ভাঙার আগে। বাঁচাতে হবে শত শত মানুষের প্রাণ। মানুষের প্রাণ বাঁচানোই যে তাঁর কাজ। তিনি যে ডাক্তার।

                       ।। সমাপ্ত ।।



দেবাংশু সরকার,
34/10/A. M.G.ROAD,
               BUDGE BUDGE, 
               KOLKATA  - 700137.


মন্তব্যসমূহ

সূচিপত্র

আরও দেখান

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল