'গন্ডার' রূপকের আস্তানা থেকে বেরিয়ে এসে ছুঁড়ে দেয় কিছু স্পষ্ট বাস্তব-ভিত্তিক প্রশ্ন
আলাপন রায় চৌধুরী
বর্তমান সময় এবং সামাজিক পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে বিখ্যাত ইউরোপীয় নাট্যকার ইউজিন ইওনেস্কো রচিত কালজয়ী ও বহুমাত্রিক নাটক 'রাইনোসেরস'-এর ওপর ভিত্তি করে একটি বাংলা নাটক লিখেছেন শ্রী সুভাষ লংমার্চ। সেই স্ক্রিপ্টের ভিত্তিতে স্বয়ং সুভাষ বাবুর দ্বারাই নির্দেশিত নাটক 'গন্ডার'-এর বেশ কয়েকটি শো ইতিমধ্যেই কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে! 'রাইনোসেরস' যে আজকের দিনেও খুবই প্রাসঙ্গিক, এবং হয়তো আগের থেকেও বেশি প্রাসঙ্গিক, সেটাই মঞ্চে তাঁর নিজস্ব থিয়েটার গ্রুপ 'রামধনু'-র সদস্যদের অভিনয় পারদর্শীতার সাহায্যে দেখিয়েছেন নাট্যকার সুভাষবাবু।
মূখ্য চরিত্রদের নজরকাড়া অভিনয় এবং সব চরিত্রদের মধ্যে সমন্বয় উল্লেখযোগ্য! এছাড়া নাটকের বিভিন্ন পদ্ধতির ব্যবহারও দর্শকের মনোযোগ মঞ্চেই আবদ্ধ রাখতে সক্ষমI বিখ্যাত জার্মান নাট্য-ব্যক্তিত্ব ব্রেখটের পন্থা অনুসরণ করে কিছু-কিছু দৃশ্যে দর্শক এবং চরিত্রদের মাঝের দূরত্বও মুছে দেয় এই নাটকটি। স্টেজ প্রপের ব্যবহার, বিশেষ করে গন্ডারের মুখোশগুলি, দর্শকদের ভালো লাগবে। সংলাপে বুদ্ধিদীপ্ত হাস্যরসের প্রয়োগও প্রশংসনীয়! সব মিলিয়ে এটি একটি, যাকে বলে, কমপ্লিট পারফরম্যান্স- যা বিষয়বস্তুটি দারুনভাবে ফুটিয়ে তুলেছে! দু-ঘন্টা দৈর্ঘের এই নাটকটি কাউকে সময়ের আগে সিট ছেড়ে উঠতে দেবে না, এটুকু নিশ্চিত ভাবে বলা যায়।
আজকের দিনের একজন প্রকৃত সচেতন নাগরিকের মনের কথা বলে 'গন্ডার'- রূপকের আস্তানা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের দিকে ছুঁড়ে দেয় কিছু স্পষ্ট বাস্তব-ভিত্তিক প্রশ্ন! যাই হোক, সবকিছু বিস্তারিতভাবে বলে নাটকটি দেখার আনন্দ মাটি করবো না। কাজটির মোট আবেদন এতটাই যে তা মানুষের মন ছুঁয়ে যেতে বাধ্য! তাই আমার মতে নাটকটি সকলের দেখা উচিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন