google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re অণুগল্প ।। গহনাজীবন ।। সৌমেন দেবনাথ - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪

অণুগল্প ।। গহনাজীবন ।। সৌমেন দেবনাথ

গহনাজীবন

সৌমেন দেবনাথ 


সজনির বেশিদিন বিবাহ হয়নি। আশীর্বাদের সময় সে খুব বেশি গহনা পায়নি। তবে হাতের, কানের, নাকের, গলার একটি করে হলেও অলংকার পেয়েছে। নিজের বাবাও দিয়েছে, মামারাও দিয়েছে গহনা। গহনাপ্রিয় সজনির তবুও গহনার লোভ থেকেই গেলো।

স্বামীর ঘরে যাওয়ার পর থেকেই খুব মিষ্টিকণ্ঠে আবদার করে বসে, কানপাশা গড়ে দেবে, সোনাপাখি!
বিবাহটা সেরে উঠেছে মাত্র ঋষভ। হাতে টাকা-পয়সা তেমন বাড়তি নেই। বিবাহের পর থেকেই খরচ বেড়েছে আগের থেকে তিনগুণ। কিন্তু বৌয়ের মিষ্টি আবদার সে ফেলতে পারলো না।

নতুন কানপাশা পরে বাবার বাড়ি গেলো সজনি। কাকিকে কানপাশা দেখালো আর স্বামীর প্রশংসা করলো সে। বৌদি এসে দেখলো; পাশ্ববর্তী আরও দুই তিনজন মহিলাকে দেখালো। সজনির আনন্দময় মুখ দেখে সবাই মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়ে বাড়ি গেলো।

কিছুদিন পরেই স্বামী যখন তাকে আদর দিতে কাছে আসে আদরকণ্ঠে সজনি আবদার করে, আমার ছোটোবেলা থেকেই মাকড়ির খুব শখ। গড়ে দাও না!
আদর আর না দিয়ে ঋষভ কিছুটা সরে যায়। মুখ গোমড়া করে থাকে সজনি। সজনির স্বর্ণের গহনার বাহানা তাকে বেসামাল করে দিয়েছে। নির্দিষ্ট রোজগার তার, সঞ্চয় করবে ভাবে; হয়ে পড়ে ঋণগ্রস্ত। পরের বার  মাকড়ি নাকে পরে বাবার বাড়ি গেলো। স্বামীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ সজনি, দেখে আর হিংসায় মরে প্রতিবেশিনীরা।

এরপর সজনি স্বামীর থেকে ব্রেসলেট আদায় করলো চরম ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে। তার চাওয়ার ধরনের কাছে হেরে যায় ঋষভ। এ বছর মঙ্গলসূত্র চেয়ে নিলো, সামনের বছর সীতাহার নেবে বাহানা রাখলো। এসব স্বর্ণালংকার সে বাবার বাড়ি গিয়ে বরাবরের মতো সবাইকে দেখায়, আর স্বামীর প্রশংসা করে।

ঋষভ এবার শ্বশুরবাড়ি গেলো, শ্বশুর আর শ্বাশুড়ির থেকে বড্ড প্রশংসা পেলো। নিজেরা মেয়ের যখন গহনা গড়ে দিতে পারতো না, তখন বলতো, তোর স্বামী তোর সব গড়ে দেবে। আজকে তারা খুব খুশি এমন জামাই পেয়ে। 

শ্বশুরবাড়ি এসে একা একটু চা খেতে যাচ্ছিলো চার রাস্তার মোড়ে ঋষভ। তিন চারজন অপরিচিত আবার বলা চলে পরিচিত লোক, নিজের কাকা শ্বশুর, নিজের চাচাত দাদা লাঠি হাতে তার সামনে। বৌকে এত স্বর্ণালংকার গড়ে দিয়ে দিয়ে নিজেদের সংসারে এত অশান্তি ঢোকানোর সে কে!
ঋষভ হাত জোড় করে ক্ষমা চাইলো, আর কেঁদে দিলো। স্বর্ণালংকার গড়ে দিতে গিয়ে সে যে পরিমাণ ঋণগ্রস্ত হয়েছে তার শেষ সম্বল নিলামে উঠালেও শোধ হবে না।

এমন বিপদগ্রস্ত এক মানুষের কথা শুনে সবাই তাদের হাতের লাঠি ফেলে দিলো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন