রাণা চ্যাটার্জী
কাজী নজরুল ইসলাম কেবলমাত্র একটি নাম নয় এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক ।বাঙালির মনন চিন্তনের অন্যতম আসনে অধিষ্ঠিত এক বিস্ময় প্রতিভা। ঐক্য-সংহতির সেরা প্রতীক নজরুল বাঙালি আম আদমির ঘরের ছেলে দুখু মিঞা নামেও সমাদৃত। প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গসম, নজরুল জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৯ সালে২৪শে মে আমার জেলা বর্ধমানের চুরুলিয়া গ্রামে যা আমাকে ভীষণভাবে গর্বিত করে।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নজরুল "বিদ্রোহী কবি" এবং আধুনিক বাংলা গানের জগতে "বুলবুল" নামে খ্যাত। নজরুল টর্পেডো,তিনি মহাপ্রলয়ের নটরাজ।অফুরন্ত প্রাণ প্রাচুর্যের অধিকারী নজরুল, সাহিত্যকর্ম এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ, মৌলবাদ ও উপনিবেশবাদ এবং দেশি-বিদেশি শোষণের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন। "অগ্নিবীণা" হতে তাঁর প্রবেশ আর "ধূমকেতু"র মতোই তাঁর প্রকাশ ঘটে ।ইংরেজ সরকার তার কয়েকটি গ্রন্থ,পত্রিকা নিষিদ্ধ করে কারাদন্ডে দন্ডিত করেও তাকে দমাতে পারেনি এখানেই আমাদের প্রিয় নজরুলের প্রতিবাদী স্বত্তার সার্থকতা।
মানুষের দুঃখ-দুর্দশা যন্ত্রণা সহ নানাবিধ সমস্যাকে উপলব্ধিতে রাজনৈতিক-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ফুটিয়ে তিনি অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর লেখা কবিতা,প্রতিবাদী গান শুনলে আজও মন বিদ্রোহ ঘোষনা করে, এভাবেই নজরুল অবলীয়ায় বাঙালির চেতনায়,মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন।১৯২২ সালে "বিজলী" পত্রিকায় বিদ্রোহী কবিতা লিখে তিনি সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। "...বল বীর,বল উন্নত মম শির! শির নেহারি, আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর..." কি অসাধারন বলিষ্ঠ শব্দমালা কলমের ডগায় তাঁর। আবার যখন "কারার ঐ লৌহ কপাট,ভেঙে ফেল কর রে লোপাট" শুনি ভাষাহীন হই।কলমের ডগায় কি অসম্ভব মানসিক স্পিরিট ঝরছে যা দেশ- সমগ্র জাতিকে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম।
দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া নজরুল আদতে ছিলেন মহীরুহ। ছোট থেকেই বহুমুখী প্রতিভার বিচ্ছুরণ। দারিদ্রকে সামনে থেকে দেখেও কৈশোরেই নানা থিয়েটার দলে কাজ করে সম্যক জ্ঞান অর্জন করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজের অভিজ্ঞতা নজরুলকে সমৃদ্ধ করে তোলে। তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালোবাসা, মুক্তি ও বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গ ভেদ, হিন্দু-মুসলিম সংহতির একাধিক নিদর্শন নজরুলের লেখায়।ধর্মীয় অসহিষ্ণু, বিভাজনের উত্তাল সময়ে যখন স্মরণ করি নজরুলের লেখা "একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান "শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়।
ছোটগল্প,উপন্যাস, নাটক লিখলেও কবি হিসাবে বাংলা কাব্যের নতুন ধারার জন্ম দেন নজরুল। এমনকি অভিনয়,নাটকের সঙ্গে বাংলা ছবি পরিচালনাতেও এসেছিলেন।ইসলামী সংগীত, গজল ,শ্যামাসঙ্গীত,হিন্দু ভক্তিগীতি সবেতেই অসামান্য দূরদর্শিতার ছাপ। নিজের লেখা প্রায় তিনহাজার গান, অধিকাংশতে সুর প্রদান করেছেন নজরুল।।বাংলা গানকে উপমহাদেশে বৃহত্তম মার্গ সঙ্গীতের সঙ্গে সংযুক্তিকরণ নজরুলের অনবদ্য অবদান।
প্রিয় কবি,আমাদের আত্মজন বাংলা দেশের জাতীয় কবি নজরুল, ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মবিভূষণ সম্মান অর্জন করেন। ওনার জীবন , ধ্যানধারণা, কর্মকাণ্ড এতটাই বিশাল ব্যাপ্তির যে অল্প কথায় কাজী নজরুল ইসলামকে ব্যাখ্যা সত্যিই ভীষণ চাপের।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন