Featured Post
পৌরাণিক কাহিনি ।। বৃত্রাসুর বধ ।। দীপক পাল
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
বৃত্রাসুর বধ
দীপক পাল
পুরাণে গন্ধমাদন পর্বতের কথা উল্লেখ আছে। মনে হয় কারাকোরাম পর্বতকেই গন্ধমাদন বলা হতো। বদ্রীনাথ পাহাড়ে আছে গন্ধর্বদের অলকাপুরী। অপ্সরারা সেখান থেকে কৈলাসে যাতায়াত করতো। হিমালয়ের উত্তরে ইলাবৃতবর্ষের মেরু পর্বতকেই সেকালে স্বর্গ বলা হতো। কাশ্মীরে, হিমালয়ের উত্তরে, কারাকোরাম পর্বত তারই সমান্তরাল ভাবে অবস্থিত। হিন্দুকুশ পর্বত এসেছে পশ্চিম থেকে উত্তরে।এই দুই পর্বতশ্রেণীর মাঝখানে গিলগিট অঞ্চল দিয়েই কোন পথ বা সঙ্কীর্ণ গিরিপথ সেকালে ছিল বলে ধারণা। ঐ পথ দিয়েই দেবতারা মর্তে আসতেন এবং অসুরেরাও ওই পথ দিয়ে এসে স্বর্গ আক্রমণ করতেন বার বার। অসুররা ছিল মহা পরাক্রমশালী। তারা আঠার বার ইন্দ্রদের আক্রমণ করে পরাজিত করেছিল। স্বর্গের রাজাদের ইন্দ্র বলা হতো। বৃত্রাসুর মোট বত্রিশ বছর ইন্দ্রের সিংহাসন দখল করে রাজত্ব করেছিল। সে ছিল বেদে বর্ণিত হিরণ্যকশিপুর কন্যা রমা ও মহর্ষি ত্বস্টার পুত্র। পরে ইন্দ্রের কোন এক পুরুষ, যে ছিল বীর ও যোদ্ধা, সে বৃত্রকে যুদ্ধে পরাজিত করে বজ্র নিক্ষেপ করে সেই যাতায়াতের পথটি ধ্বংস করে ও অসুরদের অনেক নগর আর পুরী ধ্বংস করে দেয়। তাই তাকে বলা হতো বৃত্রহনতা বজ্রধারী পুরন্দর ইন্দ্র।
আগের ইন্দ্র বৃত্রের সঙ্গে যুদ্ধে বার বার পরাজিত হয়ে খুব অশান্তি ভোগ করছিলেন। বৃত্র ছিলেন যথেষ্ট শক্তিশালী তিনি ইন্দ্র আর তার প্রজাদের উৎপীড়ন করার জন্য পাহাড় ধ্বসিয়ে ৪টি নদীপথ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পুরন্দর ইন্দ্র বৃত্রকে হত্যা করে বজ্রাঘাতে পর্বতকে বিদীর্ণ করে রুদ্ধ নদী পথ খুলে দিয়েছিলেন। তাই তিনি পর্যন্যদেব, জলমোচনকারী।
এই বজ্র লাভ করার জন্য ইন্দ্র বিষ্ণুর কাছে গিয়েছিলেন। বিষ্ণু তাকে বলেছিলেন, 'এই বৃত্র অস্থিময় বজ্র দ্বারা নিহত হবে। এই জীব শত হস্ত প্রমাণ, মধ্যে ক্ষীণ, দুই পার্শ্বে স্থুল ছয় কোণ. অর্থাৎ পলযুক্ত ভীষণাকৃতি হওয়া চাই। তার নির্দেশে ইন্দ্র সরস্বতী নদীর তীরে গিয়ে দধিচীর দেখা পেলেন। ইন্দ্র তাকে বললেন, 'হে বিপ্র, আপনি ভিন্ন এত বিশাল প্রাণী আর দেখি না।' তার করোটি ছিল অশ্ব মস্তকের ন্যায়। সেই মস্তক নিয়ে তিনি গেলেন ইলাবৃতবর্ষ সংলগ্ন ভদ্রাশ্ববর্ষে (অধুনা চীন) ত্বস্টার (ইনি বৃত্রের পিতা নহে) নিকটে। তিনি বারুদ তৈরি করতে জানতেন। তিনি দধীচির অশ্ব করোটির ন্যায় সুবিশাল মস্তক দিয়ে যে বজ্রাস্ত তৈরী করে দিয়েছিলেন তা ছিল দীর্ঘ নালিক অস্থির সঙ্গে যুক্ত, বারুদ ধাতুখন্ড প্রস্তরাদি দিয়ে ঠাসা।
মানস সরোবরের কাছে বৃত্র দুটি নদী পথ, বিপাশা ও শতদ্রু, রুদ্ধ করে ৩৩ কোটি দেবতাদের কষ্ট দিচ্ছিলেন। পুরন্দর ইন্দ্র সেই বজ্র বৃত্রের প্রতি নিক্ষেপ করেছিলেন। তার শব্দ এমনিই বিশ্ব প্রকম্পিত যে, অগ্নি ও ধুম্রজাল সৃষ্টি করে পর্বত ধ্বসিয়ে দিয়ে অবরুদ্ধ নদীদ্বয় আকাশের মত উঁচু হয়ে পুনরায় প্রবাহিত হয়েছিল।
-০-০-০-০-০-০-০-০-
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন