Featured Post
গল্প ।। অমল আলোয় ।। বিজয়া মিশ্র
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
অমল আলোয়
বিজয়া মিশ্র
আমরা পাঁচ বন্ধু অফিস ফেরত বেরোলাম পুজোর মার্কেটিং করতে। আমরা মূলত শাড়ি, সালোয়ার কেনার জন্যই বেরোলাম। সাহানা বড্ড হুজুগে।একের পর এক দোকানে গিয়ে ঢুকছে। কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই ওর দুটো হাত প্রায় ভ'রে গেল।ড্রাইভারকে দিয়ে আবারও কিনলো অনেককিছু। আমরা একটু অবাক,পয়সা থাকলেই অপব্যায় করতে হবে নাকি। কেবলই ছোটদের শোরুমে গিয়ে মেয়েদের জুতো, জামা, শালোয়ার, টপ কিনছিল সঙ্গে কয়েকটা শার্ট,শাড়ি-বাপরে! যতদূর জানি ওর বিয়েটা কী কারণে যেন ভেঙে গিয়েছিল, মায়ের সঙ্গে থাকে, তবু এত কেনাকাটা...! আজ ও আমাদের কয়েকজনকে নেমন্তন্ন করেছে।বেশ কিছুদূর গিয়ে ড্রাইভার একজায়গায় গাড়ি থামাতেই সাহানা আমাদের নামতে বলল। একটি বারান্দা ঘেরা সুন্দর বাড়ি, নাম "কুঁড়িদের খেলাঘর।"সামনেই মঞ্চ বাঁধা। বাৎসরিক সাংস্কৃতিক ও সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান। ছোট্ট ছিমছাম আয়োজন। পেছনে একটি চারতলা বাড়ি।কলিংবেল দিতেই দারোয়ান দরজা খুলে স্বাগত জানালো। ভেতরে গিয়ে আমরা হতবাক। ছিমছাম,পরিপাটি।বুঝতে পারছি সাহানার নিজের বাড়ি নয়, চারিদিক ছোটদের জন্য সাজানো বিছানা,ডেক্স,আলনা, লেখাপড়ার উপকরণ। দেওয়ালে অপটু হাতে গাঢ় রঙের ছবি-পশুপাখি,জঙ্গল,নদী,পাহাড়,সূর্যোদয়...। অস্ফুটে বলে উঠলাম "কী সুন্দর!" সম্বিত ফিরলো শিশুকন্ঠের কলতানে।অনেকগুলো শিশুকন্যা ছুট্টে এসে সাহানাকে জড়িয়ে ধরে কলকল করে কত কথা বলছে। তাদের অনেকেই নাটকের সাজে তৈরি।সাহানা মাটিতে হাঁটুমুড়ে বসে জড়িয়ে ধ'রেছে ওদের।মাথায়,গায়ে হাত বুলিয়ে,আদর ক'রে বলল "আজ কিন্তু খুব ভালো করে...। " কী উৎফুল্ল লাগছিল ওদের। সাহানা বলল "আজ সবার জন্য উপহার আছে।"সাহানাকে নিয়ে একটু আগের ভাবনাগুলো আচম্বিতে হোঁচট খাওয়ায় সামলে নিতে সময় লাগলো একটু। আমরা এতক্ষণ হতবাক হয়ে দেখছিলাম সবকিছু। বাকি সবাই এ ওর মুখের দিকে চেয়ে ওর এতদিনের রহস্যময় জীবনের দ্বারোদ্ঘাটনে ব্যস্ত। অনুষ্ঠান শুরু হতেই চমক। উপস্থিত প্রধান অতিথির ভাষণে আমরা হতবাক।বিয়ের সময় পণের বিরোধীতা করে নিজেই বিয়ে ভেঙে দিয়েছিল সাহানা, ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল লগ্নভ্রষ্টার তকমা। তার পর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই, সেখানে ও সফল ... ।অবশেষে মায়ের উৎসাহে অনাথ মেয়ে শিশুদের আশ্রয়দাত্রী।শুধু তাই নয় ওদের প্রতিভা বিকাশের লড়াই।প্রত্যেকে যাতে সমাজের মুখ হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে পারে সেই লড়াই...একের পর এক অবাক করা উপস্থাপনায় আমরা বিস্মিত ।বারে বারে চা,কফি সার্ভ করলেও আমরা উৎসাহ পাচ্ছিলাম না। সাহানার প্রতি শ্রদ্ধায় জল এসে যাচ্ছিল দুচোখে। বিশেষ করে সম্বর্ধনা পাওয়া ওই শিশুটি অঙ্কিতা,যে এবার রাজ্যস্তরে স্পোর্টস চাম্পিয়ান, মনে হল এত ভালোলাগা আগে আসেনি জীবনে। কী অনাবিল আনন্দের আবাস এই "কুঁড়িদের খেলাঘর। " নিজেদের কেনা জিনিসগুলো ওদের বিলিয়ে দিয়ে কী যে ভালো লাগছিল...! আমরা ফিরলাম সাহানার দৃষ্টিভঙ্গির আলোকময় পথে অনেক সম্পদ সংগ্ৰহ ক'রে।
============
বিজয়া মিশ্র
আদর্শনগর, ঢাকুরিয়া কল:৩১
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন