Featured Post

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ছবি
  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

গল্প ।। বিভ্রান্ত ।। রানা জামান

বিভ্রান্ত

রানা জামান



ছিটকে পড়েছে, না কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে বুঝতে না পারলেও উঠে দাঁড়ালো রোকন। সামনে তাকিয়ে দেখতে পেলো ট্রেনের কামরার হ্যান্ডেল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা ওর দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের হাসি হাসছে। এর মানে লোকটাই ওকে ধাক্কা মেরেছে। এটা মেনে নেয়া যায় না! তার আগে দেখতে হবে টিকিটটা আছে কিনা। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে দেখতে পেলো যথাস্থানে আছে টিকিট। দৌড়াতে শুরু করলো ট্রেনে চড়ার জন্য। ট্রেনের গতির সাথে কুলিয়ে উঠছে না , ট্রেনের গতি বাড়ছে; পড়ছে পিছিয়ে। শেষ বগিটায় হলেও উঠতে হবে ওকে। দৌড়ের গতি বাড়িয়ে দিলো। এখন লাফ না দিলে মিস করবে ট্রেনটা। লাফ দিলো রোকন। শেষ বগিটার একমাত্র দরজার হ্যান্ডেল ধরে ঝুলতেই গতি কমতে থাকলো ট্রেনের। প্লাটফর্মের মাথায় থেমে গেলো ট্রেন। রোকন অবাক: ট্রেন থামলো কেনো? দরজার কাছে এসে হ্যান্ডেল ধরে বাইরে তাকিয়ে হয়ে গেলো ! শুধু ওর বগিটা থেমে আছে, পুরো ট্রেন চলে গেছে অনেক দূর! কেমন কাণ্ড!
এমনটা হতে পারে কখনো ভাবে নি ও। রোকনের মেজাজ খারাপ হতে থাকলো। বগি থেকে নেমে এগিয়ে গেলো স্টেশন মাস্টারের কক্ষের দিকে। দরজায় প্রহরি না থাকায় ঢুকে গেলো সরাসরি ভেতরে। স্টেশন মাস্টার নিজ চেয়ারে বসে গভীর মনোযোগ সহকারে স্মার্ট ফোনে কী যেনো ঘাঁটাঘাঁটি করছেন। রোকনকে একবার দেখে ফের মোবাইল ফোনে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললেন, এনি প্রবলেম? কী সাহায্য করতে পারি মিস্টার?

রোকন বললো, ট্রেনটা শেষ বগিটা রেখে চলে গেলো স্টেশন মাস্টার সাহেব! এখন আমার কী হবে?

স্টেশন মাস্টার ওভাবে থেকেই বললেন, বগিটায় সমস্যা দেখা দিয়েছিলো; তাই রেখে দিতে হয়েছে।
রোকন বললো, আমি দৌড়ে কোনোমতে ওটায় চড়তে পেরেছিলাম।

এবার স্টেশন মাস্টার রোকনের দিকে তাকিয়ে বললেন, এতো বগি থাকতে আপনি শেষ বগিটায় উঠলেন কেনো? কী আশ্চর্য!

সাধে কী আর উঠেছিলাম স্টেশন মাস্টার সাহেব!

মানে?
আমার টিকিট ছিলো বগির। উঠবার সময় একজন আমাকে ধাক্কা দেয়ায় দরজা থেকে ছিটকে পড়ে গেলাম প্লাটফর্মে। উঠতে উঠতেই দেখি ট্রেনের সব বগি চলে গেছে সামনে। উর্ধশ্বাসে দৌড়ে কোনোমতে উঠেছিলাম শেষ বগিটায়।

সো স্যাড! আপনার টিকিটটা দেখি মিস্টার।

রোকন মানিব্যাগ থেকে টিকিটটা বের করে স্টেশন মাস্টারের বাড়ানো হাতে দিলো। স্টেশন মাস্টার টিকিটের ভাঁজ খুলে একবার দেখে নির্ণিমেষে তাকিয়ে রইলেন রোকনের দিকে। ওর চোখে বিস্ময়।

স্টেশন মাস্টার ওভাবে তাকিয়ে থাকায় অস্বস্তি দূর করার জন্য রোকন অন্যদিকে দৃষ্টি সরিয়ে বললো, ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো স্টেশন মাস্টার সাহেব?

তথাকথিত ট্রেনের টিকিটটা রোকনের চোখের সামনে নাড়িয়ে স্টেশন মাস্টার বললেন, এটাকে টিকিট বলছেন আপনি মিস্টার? এটা টিকিট হয় কিভাবে! এটাতে না আছে বগির নম্বর, না আছে সিট নম্বর! ব্ল্যাঙ্ক টিকিট এটা!

রোকন ততোধিক বিস্ময়ে বললো, কী বলছেন আপনি!

রোকন স্টেশন মাস্টারের হাত থেকে টিকিটটা নিয়ে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলো। স্টেশন মাস্টার ঠিক কথাই বলেছেন। কিন্তু এটা হলো কিভাবে? স্টেশন মাস্টারের দিকে তাকিয়ে বললো, এটা কী করে হলো! গতকাল আমি নিজে এসে কাউণ্টার থেকে টিকিট করেছি!

কী নাম আপনার মিস্টার?

রোকন হায়দার।

আমি ভেরিফাই করে দেখছি। আপনি বসেন, প্লিজ!

এতক্ষণ রোকন দাঁড়িয়েই কথা বলছিলো। এবার রোকন স্টেশনমাস্টারের মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসলো। স্টেশন মাস্টার কম্পিউটার ঘাঁটছেন। একটু পরে বললেন, রোকন হায়দার নামে গতকাল কেউ টিকিট নেয় নি। এবং আজকের বগিতে রোকন হায়দার নামে কোনো যাত্রীও নেই। এই দেখেন প্যাসেঞ্জার লিস্ট।

স্টেশন মাস্টার কম্পিউটারের পর্দাটা রোকনের দিকে ঘুরিয়ে দিলেন। রোকন মনোযোগ দিয়ে কম্পিউটারের পর্দায় দেখলো। স্টেশন মাস্টারের কথাই সত্য। কিন্তু..

তখন স্টেশন মাস্টার কম্পিউটারের পর্দা নিজের দিকে ঘুরাতে ঘুরাতে বললেন, আপনি নিশ্চয়ই হেলুসিনেশনে আছেন। অবস্থায় কোথাও যাওয়া ঠিক না। তাছাড়া আজ ময়মনসিংহ যাবার আর কোনো ট্রেন নেই। আগামীকালের টিকিট কেটে নিয়ে যেতে পারেন। আমি টিকিট কেটে দিচ্ছি।

হতভম্ব ভাব না কাটলেও রোকন বললো, তাই দিন স্টেশন মাস্টার সাহেব।

টিকিট নিয়ে প্লাটফর্মের বাইরে এলো রোকন।মনে মনে বললো: অদ্ভূত কাণ্ড! তাছাড়া কতগুলো টাকা গচ্ছা গেলো। একটা অটোতে চড়ে গাইটাল যেতে বললো। গাইটাল হর্টিকালচারাল গার্ডেনের উত্তর দিকে ওর এপার্টমেণ্ট। তৃতীয় তলায় উঠে উত্তর দিকের এপার্টমেণ্টের কলবেল দিলো টিপে।

দরজা খুলে এক মধ্যবয়সী ভদ্রমহিলা জিজ্ঞেস করলেন, কে আপনি? কাকে চান?

রোকন বিস্মিত হয়ে বললো, কে আমি মানে? আমি এই এপার্টমেণ্টের মালিক! আপনি কে? আমাকে এপার্টমেণ্টে ঢুকতে না দিয়ে দরজা আগলে দাঁড়িয়ে আছেন? দরজা থেকে সরে আমাকে ঢুকতে দিন।

ভদ্রমহিলা ততোধিক আশ্চর্য হয়ে বললেন, কোথাকার কে আপনি এই এপার্টমেন্টের মালিক বলছেন! এই এপার্টমেন্টটা আমরা কিনেছি কুড়ি বছর হলো।

তখন ভদ্রমহিলার স্বামী হেদায়েত হাসান এসে দরজা পুরো খুলে দিয়ে বললেন, কোথাও আপনার ভুল হচ্ছে ভাই সাহেব। এই এপার্টমেণ্টটা নির্মাণের পরপরই আমরা ক্রয় করি। কাজেই আপনি কখনো এটার মালিক হতে পারেন না!

তখন রোকন বললো, আমার ব্যাগটা গেলো কোথায়! ওটায় আমার এনআইডি আছে। এনআইডিতে আমার এড্রেস হিসেবে এই এপার্টমেণ্টে ভবনের নাম ও এপার্টমণ্টে নম্বর দেয়া আছে।

এখন আপনি কোত্থেকে এসেছেন ভাই সাহেব?

কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে।

তাহলে ব্যাগটা ভুলে ওখানেই রেখে এসেছেন হয়তোবা। একটা অটো নিয়ে দ্রুত চলে যান। দেরি হলে ব্যাগটা না-ও পেতে পারেন!

আর কিছু না বলে রোকন নেমে এলো নিচে। ইজিবাইকে চলে এলো ফের রেলস্টেশনে। স্টেশন মাস্টারকে ব্যাগের কথা বললে স্টেশনমাস্টার বললেন ওর হাতে কোনো ব্যাগ ছিলো না। তাহলে ব্যাগটা কি ট্রেনেই রয়ে গেছে? স্টেশনমাস্টারকে বললে সিসিটিভি দেখতে রাজ হলেন। কিন্তু সিসিটিভিতে ওকে ট্রেনে চড়তে বা ট্রেনের আশেপাশে দেখা গেলো না; তবে দৌড়ে শেষ বগিতে চড়তে এবং থেমে যাবার পরে শেষ বগিটা থেকে ওকে নামতে দেখা গেছে। এই বিভ্রান্ত লোকটার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবার জন্য থানায় জানালেন স্টেশনমাস্টার। থানা থেকে এক সাব-ইন্সপেক্টর এসে রোকনকে নিয়ে গেলো থানায়।

রোকন বসে আছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার খাসকামরায়।

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর আহসান রিভলভিং চেয়ারে হেলান দিয়ে স্মার্ট মোবাইল ফোনে নিমগ্ন। ওঁকে দেখে মনেই হচ্ছে না যে সামনে একজন বিভ্রান্ত লোক বসে আছে, লোকটাকে ওরাই এনেছে রেলস্টেশন থেকে। রোকনেরও যেনো কোনো তাড়া নেই, পুরোপুরি নিরুদ্বিগ্ন। তাকিয়ে আছে টেবিলের উপর রাখা একটি পিতলের পুতুলের দিকে। পিতলের পুতুলটা একটি অর্ধনগ্ন বালকের। একটা মাছি এসে রোকনের নাকের ডগায় বসলে ওর ভঙ্গ হলো ধ্যান। খুব ধীরে নিঃশব্দে দুই হাত দুই দিকে এগিয়ে এনে এক থাপ্পড়ে মেরে ফেললো মাছিটাকে। বিরল কৃতিত্ব!

থাপ্পড়ের শব্দে ইন্সপেক্টর আহসানেরও ভঙ্গ হলো মনোযোগ। আহসান রোকনের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকালে রোকন মৃত মাছিটাকে ফেললো টেবিলের উপর। আহসান সামান্য উঁকি দিয়ে মৃত মাছিটাকে দেখে বিস্মিত হয়ে বললেন, এক থাপ্পড়ে মাছিটা মেরে ফেললেন! এক্সেলেণ্ট!

রোকন কিছু না বলে মৃত মাছিটাকে একবার দেখে মুখ টিপে হাসলো।

আহসান ফের বললেন, আপনি কে? কী কাজে এসেছেন?

রোকন বললো, আমি কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনে স্টেশনমাস্টারের রুমে নিজকে খুঁজছিলাম, তখন এই থানার একজন অফিসার আমাকে নিয়ে এসেছে।

নিজকে খুঁজছিলেন মানে? খুলে বলুন তো ঘটনা কী?

রোকনের কাছ থেকে আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনা শোনার পরে ইন্সপেক্টর আহসান বললেন, ঘটনাটা বেশ আশ্চর্যের। আপনার এনআইডি নম্বর মনে আছে?

এতো লম্বা নম্বর মনে থাকে না!

ইন্সপেক্টর আহসান মনে মনে বললেন: এই আজবকে ঘাড়ে নেয়া ঠিক হবে না! বেভুল শালা! ওকে সোসাল ডিপার্টমেন্টে চালান করে দেই!

ইন্সপেক্টর আহসান নিজে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে ডেকে এনে রোকনকে হস্তান্তর করে বললেন, উনার সমস্যাটা আপনাদের জুরসিডিকশানে পড়ে। উনাকে ভবঘুরে সেন্টারে রেখে নির্বাচন অফিসে খোঁজ নিয়ে উনাকে আইডেণ্টিফাই করুন। আমার মনে হয় উনি সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। নিশ্চয়ই উনার ফ্যামিলি মেম্বাররা উনাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

 

জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জুনায়েদ চৌধুরীর সামনে বসে আছে রোকন। রোকন তাকিয়ে আছে নিচের দিকে; কোনো কিছু দেখছে না।

জুনায়েদ চৌধুরী তাকিয়ে আছেন রোকনের দিকে তাকিয়ে রোকনকে লক্ষ্য করছেন। আস্তে ডাক দিলেন রোকনকে, রোকন সাহেব!

রোকন সাড়া দিলো না বা ওর মাঝে কোনো পরিবর্তন এলো না। এবার জোরে ডাক দিলে রোকন তাকালো ওঁর দিকে। তখন জুনায়েদ চৌধুরী জিজ্ঞেস করলেন, কী ভাবছেন রোকন সাহেব?

রোকন নিস্পৃহ স্বরে বললো, কিছু ভাবছি না।

ফ্যামিলির কাউকে মনে পড়ে না আপনার?

ফ্যামেলির কারো মনে পড়ে না আমার। আমার নামটাও মাঝে মাঝে মনে থাকে না।

জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বুঝতে পারলেন রোকনের সাথে কথা বলে কোনো তথ্য বের করা যাবে না। জেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে রোকন নামে অনুসন্ধান দিয়ে সতেরো জন রোকন পেলেন। রোকন নামের আগে বা পেছনে পদবী লাগানো; কিন্তু এই রোকনের চেহারার সাথে মিলে না। এর মানে কি এই রোকনের জাতীয় পরিচয় নম্বর নেই! তাহলে কিভাবে এই রোকনের পরিচিতি তথা ঠিকানা বের করতে পারবে? অফিসের সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করে জাতীয় স্থানীয় পত্রিকায় রোকনের ছবি দিয়ে প্রাপ্তি বিজ্ঞপ্তি দিলেন।
পরদিন সকাল এগারোটায় এক পরিবার এলো জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার অফিসে। সবাইকে উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে। মোট তিনজন। পরিচয় দিলো নিজেদের এভাবে: একজন রোকনের স্ত্রী এবং দু'জন ছেলে মেয়ে। তারা যা জানালো তা এরকম:

এক বছর আগে রোকন হায়দার সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। ওরা থাকে ময়মনসিংহ। প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির সময় রোকন হায়দার বিদেশে ছিলেন। দেশে আসার পরে আর উদ্যোগ নেয় নি। এবং দুই মাস আগে ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ আসার পথে এক বাস দূর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যান রোকন হায়দার। খবর পেয়ে ওরা ঘটনাস্থলে এসে লাশ শনাক্ত করে।

জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জুনায়েদ চৌধুরী চা পান করছিলেন। বিষম খেয়ে কাশতে লাগলেন। এক ঢোক পানি পান করে কাশি থামিয়ে বিস্মিত কণ্ঠে বললেন, কী বলছেন আপনারা! তাহলে এই রোকন কে? আপনাদের রোকনের কোনো জমজ ভাই না তো?

মিসেস রোকন হায়দার বললেন, আমার জানামতে আমার প্রয়াত হাসব্যান্ডের কোনো জমজ ভাই ছিলো না।

তাহলে দুজন কি একই চেহারার লোক?

মিসেস হায়দার জিজ্ঞেস করলেন, ওর কোনো ফটো আছে আপনার কাছে স্যার?

জুনায়েদ চৌধুরী বললেন,আছে। এই দেখেন। ওকেও আনাচ্ছি। কিন্তু বিষয়টা খুব মিরাকল! আচ্ছা উনি কি সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন?

জ্বী

এই রোকনও সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। কিছুই মনে করতে পারছেন না, রোকন নামটা ছাড়া।

জুনায়েদ চৌধুরীর মোবাইল ফোনে রোকনের ছবি দেখে তিন জনই কেঁদে ফেললেন। মিসেস রোকন হায়দার মনে মনে বললেন: তাহলে কি আমরা সেদিন ভুল লোককে শনাক্ত করলাম। আল্লাহ, যেনো তাই হয়।

জুনায়েদ চৌধুরী ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন, একটা বিষয় জানা দরকার।

কী বিষয় স্যার?

আপনারা যে ওর আত্মীয়; অর্থাৎ আপনি যে ওর স্ত্রী তার কী প্রমাণ আছে আপনাদের কাছে? বিয়ের কাবিননামা নিয়ে এসেছেন।

মিসেস রোকন হায়দার বললেন, জ্বী এবং ওর সাম্প্রতিক ফটোও এনেছি।

জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জুনায়েদ চৌধুরী বিয়ের কাবিননামা ও সাম্প্রতিক অনেকগুলো ছবি দেখে নিশ্চিত  হলেন যে এই রোকন এই পরিবারের- লোক।

ইণ্টারকমে এক অফিসারকে বললেন রোকন হায়দারকে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু রোকন হায়দারকে ভবঘুরে কেন্দ্রের কোথাও পাওয়া গেলো না।


====================



রানা জামান
 আনিলা টাওয়ার
বড়বাগ, মিরপুর-২;
ঢাকা-১২১৬; বাংলাদেশ


মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত