প্রদীপ কুমার দে
শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরে সবে ফ্ল্যাটের লকে চাবি ঢুকিয়েছি পাশের ফ্ল্যাটের এক উপযাচী, উপকারী মহিলা ঝিঙাফুলের সামনে চলে এলেন,
-- কি এখনই ফেরা হচ্ছে? হ্যাঁ, হ্যাঁ তাই দেখিনি দুদিন? আওয়াজ পেয়েই দৌড়ে এলাম যদি বলতে ভুলে যাই, তোমার আবার বড় অসুবিধা হবে।
-- আচ্ছা আমি গিয়ে জেনে নেব'খন ...
-- জেনে নেবে মানে? আমি বলতে না পেরে পেট ফুলে মরে যাচ্ছি আর কি!
আমি চাবি না ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম, হয়তোবা কোন শোক সংবাদ হবে।
-- তাহলে আগে বলেই বাঁচুন।
মহিলা আমায় পাত্তাই দিলেন না, উপরন্তু ঝিঙাফুলকে বলতে লাগলেন,
-- এই গোটা শ্রাবণ মাস মানেই বাবার জন্মমাস। বর্ষার ঝরায় বাবার মাথায় ধারা দিতে হবে কিন্তু !
ভীষণ টায়ার্ড তাই দুজনাই শুনেও না শোনার ভাণ করে ঘরে ঢুকে পড়লাম।
চারদিনেই ঘর অগোছালো। পরিস্কার করার ইচ্ছে যায় হারিয়ে। শরীরের ধকল আর মনের নিরানন্দ। সুখের শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে এসে ঝামেলায়! ঝিঙাফুলের অবস্থা আরো খারাপ। মাস খানেক মায়ের আদর খেয়ে আজ সে একেলা। তার উপর এত সংসারের কাজ! দেখছি ওর মুডটা ভীষণই খারাপ। তখনও জানিনা ওর মাথায় আরো অন্য চিন্ত ঘুরপাক খাচ্ছে। যাইহোক পেটে কিছু দিতে চিড়ে মুড়ি খেয়ে নিলাম।
আর অল্প প্রয়োজনীয় কিছু কাজ সেরে সোজা বিছানায়। বিছানার উপরের পাখা চালিয়ে আরাম খাচ্ছি। বউ আগেই শয্যা গ্রহণ করেছে। আমারও মন খারাপ, কাল থেকে অফিস যেতে হবে। বউও দেখি আনমনা। আমি একটু এগিয়ে গিয়ে ওকে ছুঁলাম।
-- কি চিন্তা করছো?
-- কাল থেকে একমাস আর আমায় তুমি ছোঁবে না।
-- কেন বলোতো?
-- শুনলে না এটা বাবার মাস?
-- তোমার বাবা কি এই মাসেই তোমাদের ছেড়ে চলে গেছিলেন? বাবাঃ এই মহিলা তাও জানেন? কিন্তু আমি জানি না?
-- তুমি কি তাই ভাবি! শহরে থাকো অথচ কোন জ্ঞান নেই? সব্বার বাবাকেও চেনো না?
-- সব্বার? একজনই?
-- ভোলে বাবা!
-- ওহঃ পাগলাভোলা শিববাবা!
-- ছিঃ কি ভাষা? হ্যাঁ এই শ্রাবণ মাসেই ওনার জন্মমাস।
-- ওহঃ তাই ? তাতে তোমায় ছুঁলে কি হবে?
-- আমি এই একমাস উপোস থেকে বাবার মাথায় জল ঢালবো...
-- কিন্তু আমি কোথায় জল ঢালবো? তোমাদের বাড়িতে যে কথা দিয়েছি, চারমাসেই ভালো খবর দেবো?
-- তোমার আর অত চিন্তা করতে হবে না। অনেক সুবিধা নিয়েছো, এবার আর কোন সুযোগ পাবে না।
-- সে কি? তুমিও কি নারী মুক্তি আন্দোলনে নাম লেখালে?
-- অনেক হয়েছে। এবার আলোটা নেভাও!
মনটা আনন্দে ভরে উঠলো কারণ ঝিঙাফুলকে আমি চিনি তো। ও একটু বেশি বকে কিন্ত ভালোবাসে অনেক। তাই তাড়াতাড়ি লাইটের সুইচটা টিপে দিয়েই সটান বিছানায় উঠেই বউয়ের আস্তানায় মুখ লুকালাম, আর ঝিঙাফুলের নরম কানে কান লাগিয়ে জানতে চাইলাম,
-- আজ তো কোন বাঁধা নেই? যা কিছু নিয়ম হবার , হবে কাল থেকে ... তাইতো?
বউ আর কিছুই শুনলে না আমাকে খুব জোরে চেপে ধরলো অস্ফুট শব্দে চকচক করে উঠলো ওর চোখ মুখ " আমার অসভ্য একটা!"
-----------------------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন