google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re মানুষ কী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নিকট ভৃত্যমাত্র? ।। শেফালি সর - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

রবিবার, ১৬ জুন, ২০২৪

মানুষ কী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নিকট ভৃত্যমাত্র? ।। শেফালি সর

ঝড়

মানুষ কী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নিকট ভৃত্যমাত্র? 

শেফালি সর


          বিধাতার অপরূপ সৃষ্টি এই বিশ্বপ্রকৃতি। মাটি, জল, বাতাস, আলো, গাছপালা, পশুপাখি ও মানুষ। অকূল সমুদ্র যেমন আছে, তেমনি আছে অসীম আকাশ।নীচে জল মাঝখানে স্থল উপরে আকাশ। এই দুইয়ের মধ্যে চলে জীবজগতের দৌরাত্ম ও প্রতিপত্তি। এদের সকলকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এই প্রাকৃতিক পরিবেশ। উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রত্যেকেই প্রত্যেকের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা নিয়ে বেঁচে রয়েছে। প্রকৃতি চলে তার আপন খেয়ালে। কখনো শান্ত ধীর গতিতে, কখনো বা অশান্ত, ভয়ংকর দ্রুত গতিতে। যে প্রকৃতিতে সকল প্রাণী ও উদ্ভিদ জন্মায়, বাঁচে ও বাড়ে সেই প্রকৃতি আবার এমন রুদ্র ও বীভৎস রূপ ধারণ করে যার প্রভাবে সকল প্রাণী ও উদ্ভিদ অবলীলায় ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। তবুও বলা যাবে না  যে মানুষ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দাসত্ব স্বীকার করে চলেছে।
            
            মানুষ প্রভুত্বের স্পর্ধায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। তবুও অবহেলিত জীর্ণ দীর্ণ কুটির থেকে স্ফটিক খচিত আকাশচুম্বী প্রাসাদ, ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র কীট পতঙ্গ থেকে মহাপরাক্রমশালী মানুষ সকলেই অনিবার্যভাবে লুটিয়ে পড়ছে ধ্বংসের করালগ্রাসে। প্রতিবছরই দেখা যায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নিত্য  সঙ্গী  ভূমিকম্প, বন্যা,খরা, ঘূর্ণিঝড়, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, শিলা বৃষ্টি প্রভৃতিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ অকালে প্রাণ হারায়। পৃথিবীর মধ্যে জাপান হল ভূমিকম্প প্রবণ দেশ। এরপর আছে ইটালি। তবে ভারতে গত ১০০ বছরে কুড়িটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্প ঘটেছে। ১৯৭৬ সালে চিনে ভূমিকম্পে প্রায় সাত লক্ষ মানুষের জীবন্ত সলিল  সমাধি হয়েছিল।

             জলই জীবন একথা আমরা সকলেই জানি। জলের সঙ্গে জীবজগতের সম্পর্ক অভিন্ন। আবার এই জলই যখন প্রলয়ঙ্করী রূপ নিয়ে শত শত যোজন জনপদ গ্রাস করে ফেলে তখন লক্ষ লক্ষ মানুষের ও জীবজন্তুর মৃত্যু হয়। এছাড়া এই জলই জমির ফসল নষ্ট করে।

          ঘূর্ণিঝড় ও এক ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়। বায়ুমণ্ডলে নিম্নচাপ জনিত  পরিস্থিতির জন্য ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড় ঘটে গেলে মনে হয় -- অচিনপুরী থেকে কোন ক্ষ্যেপা টে দৈত্য যেন স্বপনপুরীর রাজকন্যাকে জয় করতে না পারার জন্য আক্রোশে সমগ্র রাজ্যটা লন্ডভন্ড করে দিয়ে চলে গেল।

     এভাবেই বজ্রপাত, শিলা বৃষ্টি  সবই প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এই সমস্ত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের খবর যখন সংবাদপত্র  ও রেডিওর  মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তখন একটা প্রশ্ন যেন কাঁটার মত বিঁধে মনে--" সত্যিই কী মানুষ এইসব বিপর্যয়ের কাছে ভৃত্য মাত্র?
            
            সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকে প্রকৃতি চলছে তার নিজস্ব নিয়মে।এর ব্যাতিক্রম নেই। বৈচিত্রের মাঝে ঐক্য - এটাই প্রকৃতির প্রকৃত প্রাণসূত্র। প্রকৃতি কোনদিন জীবজগতের  ক্ষতির চেষ্টা করে না। জীবজগতের নেপথ্য শিল্পী হল চেতনা। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কাছে মানুষের দাসত্ব স্বীকারের কোন প্রশ্নই আসে না। প্রকৃতির অনন্ত বৈচিত্র্যের দিকে তাকিয়ে আদিম মানুষ বিস্ময়াবিভূত হলেও প্রকৃতির অশুভ শক্তি গুলির বশ্যতা স্বীকারের পরিবর্তে সেই বিপর্যয়গুলিকে জয় করার চেষ্টা করেছে। একইসঙ্গে  প্রকৃতির কল্যাণকর দিকগুলিকে নিজের প্রয়োজনে  লাগিয়ে জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনার সংগ্রাম চালিয়েছে মানুষ। সেই সংগ্রাম  আজও অব্যাহত। কুসংস্কারকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় গুলির অনেক রহস্য উদঘাটন করে ফেলেছে মানুষ। তাই সবশেষে বলি -- মানুষ নিশ্চয়ই একদিন প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের উপর প্রভুত্ব বিস্তার করতে সক্ষম হবেই হবে।

---------------------:-------------------

                         শেফালি সর 
                        জনাদাঁড়ি 
                        গোপিনাথপুর 
                পূর্ব মেদিনীপুর
                      ৭২১৬৩৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন