Featured Post
ছোটগল্প ।। বিকেল বাঁচাও আন্দোলন ।। সুবীর ঘোষ
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
বিকেল বাঁচাও আন্দোলন
সুবীর ঘোষ
সবাইকে কফি দিয়ে নিজে এক কাপ কফি নিয়ে মাঝখানের সোফাটায় এসে বসল বর্ণালী। হঠাৎ খেয়াল হতেই বলে উঠল - - ও মা নীপা, শুভ্রা, ভাস্বতী তোমরা বিসকুট নিচ্ছ না কেন? এই বলেই বিসকুটের প্লেটটা এমন ভাবে সবার নাকের সামনে ঘুরিয়ে দিল যেন দুর্গা প্রতিমার সামনে ধুনুচি নাচ শুরু করতে যাচ্ছে। যে যার দুটো একটা বিস্কুট তুলে নিয়ে আবার সেঁধিয়ে গেল নিজের নিজের জায়গায়। তার মধ্যে নীপা আর ভাস্বতীর আঁচল পড়ো পড়ো হয়েছিল। তুলে নিল দুজনেই। অবশ্য আজকাল বুক ঢাকতে মেয়েরা অত খাটাখাটনি করে না। টিভিতে প্রায়ই দেখা যায় মেয়েরা নাচছে ব্রা- এর মত ছোট একটা জামা পরে। ইচ্ছে করেই তারা সামনে ঝোঁকে বারবার যাতে ছেলেদের ইচ্ছেটাকে আর একটু চাগিয়ে দেওয়া যায়। এই কফি আড্ডার মহিলাবৃন্দ নিজেদের অবশ্য আলট্রামডার্ন ভাবে না। সবারই বয়েস পঁয়তিরিশের ওপর। ওদের মধ্যে গোপা, শ্যামলী, কঙ্কণা আর সুপ্তিমা মাঝে মধ্যে সালোয়ার কামিজও পরে। বাকিরা সবাই শাড়ি। ওরা আটজন ছাড়াও আছে নমিতাদি আর মধুমিতাদি। ওরাই সব থেকে বড়ো।
চা - পর্ব শেষ হলে নীপাই প্রথম মুখ খুলল—নমিতাদি, আমরা একটা এন জি ও খুলতে পারি না? নমিতাদি জবাব দিতে সময় নেয় না—কেন পারবে না? বলো, কী বিষয়ে কাজ করতে চাও ?
-- গ্রামোন্নয়ন। নীপা বেশি তলিয়ে না ভেবেই বলে দেয়।
-- গ্রামোন্নয়ন তো একটা বিরাট ব্যাপার। তার মধ্যে স্বাস্থ্য আছে, সংস্কৃতি আছে, বাসস্থান আছে, পানীয় জল আছে, খাদ্য সংস্থান আছে, শিক্ষা আছে। কোন বিষয়টা নিয়ে কাজ করতে চাও ঠিক করো।
--শিশুশিক্ষা নমিতাদি। বলে ওঠে শ্যামলী ।
-- না না মোটেই ভালো এরিয়া নয় ওটা। কঙ্কণা তার মতামত দেয়। আমরা স্কুল খুলে বসবো। মা বাবারা দু চার দিন মজা দেখতে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবে। তারপর কোন বাচ্চা যাবে মাঠে বাবাকে খাবার দিয়ে আসার জন্যে। কেউ যাবে গরুছাগল চরাতে। আমি ওর মধ্যে নেই, নমিতাদি। আমরা যেহেতু গ্রামে কোনদিন থাকিনি অর্থাৎ গ্রামের কাদাজলে হাঁটাচলার যখন আমাদের কোন অভ্যেস নেই তখন আমরা যা কিছু করব সব শহরকেন্দ্রিক হলেই ভালো হয়। গোপা পাকাপোক্ত অভিমত ব্যক্ত করে। গোপা মধুমিতাদির সমর্থন পায়-- গোপা ঠিকই বলেছে। এই শহরকে বেস করেই আমরা অনেক কিছু করতে পারি। এখন ঠিক করো সবাই কি করবে ।
সুপ্তিমা এতক্ষণ চুপ করে ছিল। তবে ওর স্বভাবমত দাঁত দিয়ে নখ কাটার কোন বিরাম ছিল না। ও হঠাৎ নখ ছেড়ে দিয়ে তেড়ে ফুঁড়ে উঠল -- শোনো সবাই। একটা আইডিয়া দিই। এখানে আসার জন্য যখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছি তখন বাজে বিকেল সাড়ে চারটে। বাসস্ট্যান্ডে আসতেই দেখি পিলপিল করে স্কুলের ছেলেমেয়েরা বেরিয়ে পড়েছে। কেউ সাইকেলে, কেউ মোপেডে, কেউ বা মা-বাবার গাড়িতে, কেউ কেউ আবার বাস ধরার জন্য দাঁড়িয়ে। সবাই কোথায় যাচ্ছে জানো? সব যাচ্ছে টিউশনিতে। দেশটার কী হোল বলো তো? স্কুলের টাইমে টিচাররা ঠিকমত পড়াবে না। আবার তার কাছেই বাড়িতে ছুটতে হবে টিউশনি পড়তে। টিউশনি পড়লে স্টুডেন্ট ভাল নম্বর পাবে, না পড়লে সে – ই আবার অ্যাভারেজে নেমে যাবে ।
কঙ্কণাও যোগ দেয়—একে তো বাবার অর্থব্যয়। আটটা সাবজেক্টের আটটা টিচার। এ যেন সেই বর্গিকে খাজনা দেওয়ার ব্যাপার। বর্ণালীও বলে ওঠে——শুধু কী তাই? আমাদের সময়কার কথা চিন্তা কর ৷ আমরা বিকেল হলেই যে যার খেলতে বেরুতাম। একটু বড়ো বয়েসে বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা। আর এখনকার বেচারা ছেলেমেয়েদের বিকেলবেলাটা চলে যাচ্ছে মাস্টারদের পেছনে ছুটতে ছুটতে।
আমরা কিন্তু অন্যদিকে সরে যাচ্ছি বর্ণালী—নমিতাদি বলে। সুপ্তিমা আবার ট্র্যাকে ফিরে আসে। সেটাই তো বলছি। আমরা যে এন জি ও - টা করব তার নাম হবে, "বিকেল বাঁচাও"। আর আমাদের আন্দোলনটা হবে যাতে ছেলেমেয়েদের হাত থেকে বিকেলবেলাটা কেড়ে নেওয়া না হয়। টিউশনি পড়ুক কিন্তু তা হতে হবে হয় সকালে বা সন্ধেতে অর্থাৎ পড়ার সময়টাতে। নীপা প্রশ্ন করে—কিন্তু বিকেলে পড়তে পাঠাচ্ছে কারা? ছেলেমেয়েদের মা বাবারাই তো, ঠিক কীনা? সুপ্তিমা বলে—তা ঠিক, কিন্তু বাধ্য হয়ে। একজন টিচার যিনি একটার পর একটা ব্যাচ পড়ান তিনি তো বিকেলে একটা দুটো ব্যাচ রাখবেনই। তিনি তো আর মাঠে সাইকেল চালাতে বেরোন না। মধুমিতাদি সমর্থন দেয়—ঠিক আছে। এই আন্দোলনটা চালানোর মধ্যে পদার্থ আছে। সংগ্রামটা হবে প্রথমে মাষ্টারদের বিরুদ্ধে। বিকেলে কোন ছেলেমেয়েকে পড়ার জন্য ডাকা চলবে না। আর তারপর মা বাবাদের বিরুদ্ধে যে বিকেলে ছেলেমেয়েদের খেলতে ছেড়ে দিতে হবে।
ভাস্বতী আর শুভ্রা চুপ করে বসে ছিল। ওদের ছেলেমেয়েরা একটু বড়ো। বিকেলে পড়তে যায় ম্যাথস্ টিচারের কাছে। সেখান থেকে পাশেই চলে যায় ইংরেজি টিচারের বাড়ি। অবশ্য সুপ্তিমার ছেলেও বড়ো।
সম্মিলিত সিদ্ধান্তে সেদিনকার কফির আড্ডায় স্থির হয়ে গেল যে তাদের সংগ্রাম হবে বিকেল বাঁচানো নিয়ে আর তাই সংস্থার নাম ঠিক হয়ে গেল, "বিকেল বাঁচাও সমিতি"। নীপার বর কাজ করে পৌরসভায়। সে তার বরকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নিয়মকানুন অনুযায়ী যা যা কাগজপত্র লাগে তা তৈরি করাল। সংস্থার অফিসের ঠিকানা হিসেবে দেওয়া হয়েছে বর্ণালীদের বাড়ির ঠিকানা। মিটিং সাধারণত সেখানেই হয় তবে মাঝে মাঝে এর ওর বাড়ি ঘুরিয়ে ফিরিয়েও বসা হয়। প্রচার সচিব করা হয়েছে গোপাকে। তার বর কবিতা লেখে বলে গোপাও একটু আধটু লেখালেখির চর্চা করে। তবে প্রচারের কাজটা গোপা ভালই করেছে। দু'মাসের মধ্যেই কেবল টিভির বিজ্ঞাপন মারফৎ সারা শহর জেনে গেল তাদের অভিনব আন্দোলনের কথা। খবরের কাগজের হকারদেরকে ধরিয়ে দেওয়া হল তাড়া তাড়া ইস্তাহার। খবরের কাগজের ফাঁকে হলুদ কাগজে ছাপা বিজ্ঞাপন পৌঁছে গেল ঘরে ঘরে। তাছাড়া মিছিল ও মিটিং করে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হল দুটি কথাঃ ,এক—বিকেলের টিউশনি বন্ধ করতে হবে। দুই—ছেলেমেয়েদের বিকেলে খেলার মাঠে পাঠাতে হবে। আর ক'মাস পরেই জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা। যে সব অভিভাবক জয়েন্টের দিকে তাকিয়ে আছেন তাঁরা তো রেগে আগুন। তাঁরা বললেন—ও সব মহিলা সমিতির কথাবার্তা আমরা শুনব না। কেরিয়ারটা আগে না বিকেলে মাঠের হাওয়া খাওয়াটা।
স্টেট ট্রান্সপোর্ট অফিসের প্রভঞ্জনবাবুর মন্তব্য সবাইকে ছাড়িয়ে গেল। -- আমরা তো ছাত্রজীবনে বিকেলবেলাগুলো মাঠেই কাটিয়েছি। ইস্টবেঙ্গল- মোহনবাগানও কিছু কম করিনি। ভলি ব্যাডমিন্টন ফুটবল ক্রিকেট কিছু বাদ দিইনি। আখেরে হলটা কি? সেই তো কেরানিবাবুর বেশি এগুনো গেল না। তা আজকালকার ছেলেরা যদি একটু চেপে পড়ে কেরিয়ারটা বানিয়ে নিতে পারে তার পরে তো পায়ের ওপর পা তুলে খাবে।
বিকেল বাঁচাও আন্দোলনের কর্মীরাও পিছিয়ে পড়তে চায় না। প্রতিটি নামী টিউটরের বাড়ির কাছাকাছি নজরদারি শুরু হয়ে গেল। বেশির ভাগ টিচারই বিকেলের দেড়ঘন্টা স্লটের ছেলেমেয়েদের সন্ধের দিকে চালান করে দিলেন। যাঁরা খুব ব্যস্ত টিউটর তাঁদের মধ্যে রায়স্যার আর গাঙ্গুলীস্যার চালিয়ে যেতে লাগলেন। একদিন নমিতাদি দাঁড়িয়ে থেকে গাঙ্গুলীস্যারের বাড়িতে ইনকাম ট্যাক্স রেড করিয়ে দিলেন। গাঙ্গুলীস্যার কোন ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নই জমা দিতেন না। দেখা গেল তাঁর স্ত্রীর নামে একটি বাড়ি এবং তাঁর নিজের নামে পাঁচটি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। গাঙ্গুলীস্যারের দুর্দশা দেখে রায়স্যার ছাত্রভর্তি কমিয়ে দিলেন। তাঁর বাড়িতে যেহেতু ইন্টারনেট আছে তিনি তাই শুধু সেইসব স্টুডেন্টকেই নিতে লাগলেন যাদের ইন্টারনেট সুবিধা আছে। পড়ানো বেশির ভাগই হয় পি সি মারফৎ। ই মেলে নোট যায়। সাক্ষাতে বুঝবার দরকার পড়লে ছাত্রছাত্রীরা এক দু'জন করে গিয়ে অল্পক্ষণের মধ্যে রায়স্যারের কাছে বুঝেই আবার ফেরৎ আসে। তবে এসবের জন্য রায়স্যার টিউশনি ফি বাড়িয়ে দিলেন অনেকটাই ৷
বিকেল বাঁচাও সমিতির এখন নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই। প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন খেলার মাঠে হাজির থাকতে হয়। পরিসংখ্যান এনে পি সিতে ঢোকাতে হয়। রিপোর্ট বের করতে হয়। কোনো বাড়ির ছেলেমেয়ে দীর্ঘদিন মাঠে না এলে তার বাবা মার নামে বাড়িতে সতর্কবার্তা পাঠানো হয় ।
অনেকদিন কেটে গেল। শহরে এখন আর বিকেলের সময়টাতে কেউ টিউশনি পড়ায় না। খেলার মাঠে ছাত্রছাত্রীর মাথাপিছু উপস্থিতি সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন। এর মধ্যে সমিতির বর্ষপূর্তি উৎসব হয়ে গেল। গোপা তার লেখা একটি দীর্ঘ কবিতা শুনিয়ে সবাইকে প্রায় ঘুম পাড়িয়ে এনেছিল । সবার ঘুম ভাঙল খাবার ডাকে। বর্ণালী দারুণ চিকেন রান্না করেছিল। নীপা বেঁধেছিল প্রনচিলি। বউদের ব্যস্ততা দেখে স্বামীরাও ব্যস্ত
হয়ে পড়েছে যে যার মতো। বর্ণালীর বর সিনেক্লাবের শো শেষ করে আজকাল বাড়িতে ঢোকে।
নমিতাদির বর সন্ধেবেলা চা খেয়েই বেরিয়ে যায় তাসের আড্ডায়। গোপার বর নাকী আজকাল কবিতার প্রেরণা খুঁজতে অফিসের পরে যুবতি সেক্রেটারিকে নিয়ে নিরিবিলিতে গিয়ে বসে ডায়ান্থাস বারের কেবিনে।
এর মধ্যে সমিতির অফিসে খবর এল বিকেলে টিউশনি যে একদম বন্ধ হয়েছে তা নয়। তবে টিউটরদের বাড়িতে এখন আর ক্লাস হয় না। হয় পড়ুয়াদের বাড়িতে। সাইকেল বা মোপেডে করে এসে ঢোকেন টিউটর। ছাত্রছাত্রীরা আগেই এসে বসে থাকে পূর্বনির্ধারিত ছাত্র বা ছাত্রীর বাড়িতে। যতক্ষণ পড়ানো চলে, সেই ছাত্র বা ছাত্রীর মা বারান্দায় চেয়ার পেতে বসে নজর রাখেন বিকেল বাঁচাও সমিতির কাউকে এ তল্লাটে দেখা যাচ্ছে কীনা। তারা যদি কেউ এসে কড়া আপে কড়া নাড়ে তাহলে কী করতে হবে তা-ও ঠিক করা আছে। বইখাতা ঢুকে যাবে এদিক ওদিক। ভিডিও গেম চালিয়ে দেওয়া হবে। আর টিউটর ভদ্রলোক পাড়ার দেওরের মতো গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে গল্প জুড়ে দেবেন।
একদিন রাতে খাবার টেবিলে সুপ্তিমার ছেলে সুদীপ্ত বলল—মা সামনের মাস থেকে রোহনদের বাড়িতে সপ্তাহে একদিন করে একটা ক্লাস হবে শুধু জয়েন্ট প্রিপারেশনের জন্য।
--কে নেবে ক্লাস?
--কলকাতার একটা ইনস্টিটিউটের একজন নামকরা টিচার । ওদের হাত থেকে প্রত্যেকবারই একগাদা করে ছেলেমেয়ে জয়েন্ট পায়। আমি ওটাতে জয়েন করতে চাই।
--ফি কত ?
--সাড়ে পাঁচশো।
— সপ্তাহে একদিন, সাড়ে পাঁচশো?
-- কতক্ষণ ক্লাস জানো? পুরো চার ঘন্টা। তিনটে থেকে সাতটা। শনিবার শনিবার ।
--- অসম্ভব। নিজে আন্দোলন করছি আর ছেলেকে পাঠাবো বিকেলের কোচিং-এ?
--তাহলে ঐ নিয়েই থাকো। জয়েন্ট আশা কোরো না। ডিগ্রি কলেজে সিট বুক করে এসো— যাও।
| --অন্য টিচারের কাছে যা!
— অন্য টিচার আর আর রুদ্রপলাশ কাঞ্জিলাল এক হল। তবে তোমার কোনো চিন্তা নেই
মা। রোহনদের বাড়িতে কেউ হামলা করতে পারবে না ।
--কেন ?
--রোহনের মা ঠিক ঠিক করেছে স্যার ঢুকে গেলেই মেন দরজায় তালা লাগিয়ে বাগানের দরজা দিয়ে ঘুরে এসে বাড়িতে ঢুকবে। তার ফলে কেউ যদি ঐ সময় আসেও সে বাইরে তালা দেখে চলে যাবে। আবার সাতটার পর বাগানের দরজা দিয়ে বেরিয়ে তালা খোলা হলে স্যার আর ছেলেমেয়েরা বেরিয়ে যাবে। আর তাছাড়া তখন তো সন্ধেও হয়ে যাবে ।
--দেখ যা ভাল বুঝিস। যখন তোরা এত আঁটঘাট বেঁধে রেখেছিস্।
মাস তিনেক পরে সেদিন সমিতির একটা জরুরি মিটিং ছিল। বাচ্চাদের মধ্যে ভিডিও গেমের ক্রমবর্ধমান আকর্ষণ ও তার ক্ষতিকর দিক নিয়ে একটা সেমিনার আয়োজন করা হবে। অতিথি হোটেলের কনফারেন্স হল বুক করা থেকে শুরু করে যাবতীয় মাইক্রোপ্ল্যানিং করতে হবে। এ নিয়ে মিটিং। বর্ণালীর বাড়িতে। কিন্তু ঐ দিনই সকালে বর্ণালীর অসুস্থ শ্বশুরকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়েছে। হৈ হট্টগোলে হার্টের রোগীর অসুবিধে হতে পারে। তাই মিটিং-এর জায়গাটা একটু বদল করতে হল। নমিতাদি সুপ্তিমাকে ফোনে বলল—সুপ্তি, তোর ওখানে আমরা তিনটে নাগাদ আসছি। বর্ণালীর কথা তো শুনেছিস। মিটিংটা তোর ওখানেই হোক। চা- ফা খাওয়াস কিন্তু ৷
তিনটে বললেও চট্ করে বাস পেয়ে যাওয়ায় নমিতাদি সুপ্তিমার বাড়ি পৌঁছে গেল মিনিট পনের আগেই। মধুমিতাদি আর গোপা প্রায় একসঙ্গেই এসে ঢুকল।
অনেকগুলো পায়ের আওয়াজ পেয়ে নমিতাদি বলল- -দ্যাখ্ সুপ্তি বাকিরা বোধ হয় সবাই একসঙ্গে এসে গেল। আমাদের মেয়েরা কাজটাকে খুব সিরিয়াসলি নিয়েছে, কি বলিস্ ?
গোপা উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে একদল ছেলে রনো, শৈবাল, পিন্টু, করণ, ভিকি, চন্দন। গোপা অবাক হয়— কীরে খেলতে বেরিয়েছিস এতো রোদে ?
--খেলতে কী করে বেরোয় ? দেখছো না হাতে বইখাতা ? নমিতাদি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ৷ হৈ চৈ-এ ভেতর ঘর থেকে সুদীপ্ত বেরিয়ে এল। মধুমিতাদি প্রশ্ন করে—তোমার বন্ধুরা এখন এখানে ? এখন তো আমাদের সমিতির মিটিং আছে।
সুদীপ্ত কিছু বলার আগেই ভিকি বলে ওঠে—রোহনরা তো কলকাতা গিয়েছে। এ হপ্তায় জয়েন্ট প্রেপের ক্লাস তো সুদীপ্তর এখানে হবার কথা।
-- কটার থেকে? প্রশ্ন ছোঁড়েন নমিতাদি।
-- তিনটে – সাতটা। ভিকির উত্তর।
-- সুপ্তি, এদিকে আয়। নমিতাদির বজ্রকন্ঠের আদেশ।
==================
সুবীর ঘোষ
৩০১,আশ্রয় অ্যাপার্টমেন্ট
গ্রুপ হাউসিং
বিধান নগর
দুর্গাপুর—৭১৩২১২
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন