টান
মনোরঞ্জন ঘোষাল
মহাকর্ষ সব কিছুই টানে। আর তড়িৎ বা চুম্বকের দুটি বিপরীত মেরু পরস্পরকে টানে। এই টান তোমার নগন্য মনে হয়। দুটি বিপরীত লিঙ্গের জীবের কাছে। তবে অবশ্য তাদের প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে। এর একটি জ্বলন্ত উদাহরণ আমার চোখের সামনে ঘটে গেল।
আমার ঘরে আমাদের সঙ্গে কটা পশু পাখির বাস আছে। তাদের মধ্যে কটা মোরগ মুরগি রয়েছে। একটা মজার ব্যাপার হল, এক সঙ্গে একাধিক মুরগি একটু কামড়া কামড়ি করে থাকলেও। এক সঙ্গে একাধিক মোরগ কখনোই থাকতে পারে না। সঙ্গে সঙ্গে তারা মারপিট শুরু করবে। এবং আমৃত্যু পর্যন্ত চলবে সেই মারামারি। একজন অপরের থেকে আলাদা না হওয়া পর্যন্ত তাদের এ দ্বন্দ থামে না।
ঝামেলা শুরু হল আমার ঐ খানে। এইবার তিনটি মুরগি হলে কী হবে, সঙ্গে জন্ম নিল দুটি মোরগ। তারা যখন ছোট ছিল পশু জন্তুদের মত দুই ভাইয়ে মিলে লড়াই লড়াই খেলা খেলতো। তবে সে খুব বেশি সময়ের জন্য নয়।
যখন বড় হল। মানে প্রাপ্ত বয়স্ক। তখন ওদের সেই ভাই ভাই সম্পর্ক কেমন যেন শত্রুতাতে পরিণত হল। তা দেখে আমি তাদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা নিলাম।
একটি মোরগ আর তার সঙ্গে মুরগি তিনটিকে রেখে দিলাম নীচের খোঁয়াড়ে। আর শুধু একটি মোরগকে রেখে দিলাম উপরে ছাদের একটি খোঁয়াড়ে। আমার এখানে খটাস বা ভাম বেড়ালের খুব উপদ্রব। তাই বেশ মজবুত করে মুড়িমাড়া দিয়ে তাদের রেখেছি। দিব্যি তারা চুপচাপ থাকছে।
নীচের খোঁয়াড়টি সময় মত খুলে দেওয়া হলেও, উপরেরটিকে সঠিক সময়ে খোলা হয় না। কখনও সেটিকে খুলতে বেশ বেলা হয়। তখনও বেশ চুপচাপ সে খোঁয়াড়েই বন্দি থাকে। মাঝে মাঝে অবশ্য আওয়াজ দেয় তার উপস্থিতি জানান দেবার জন্য।
তার মধ্যেই ঘটল এক কাণ্ড! সেদিনও উপরের মোরগটিকে বেলা পর্যন্ত ছাড়া হল না। এদিকে নীচের সকলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একটি মুরগি হঠাৎ সেদিন সিড়ি বেয়ে উপরে সেই মোরগের খোঁয়াড়ের সামনে এসে হাজির হল। আর ঠিক তখনই হুড়মুড় করে খোঁয়াড়ের দরজা ভেঙে বেরিয়ে এল মোরগটি।
সে যে বীর তা সে এতদিন জানতো না। ঐ মুরগির বৈপরীত্য লিঙ্গের টান তাকে উজ্জিবীত করেছে। তাকে চিনতে সাহায্য করেছে যে সে বীর। সে পারে ঐ শক্ত ভাবে এঁটে দেওয়া খোঁয়াড়ের দরজা ভেঙে ফেলতে।
শুধু ঐ একবার না। তার পর ঐ এক ঘটনা ঘটল আবার।
যৌবন বয়সে শুধু পাখি কেন, পশু মানুষ সবাই এমন বিপরীত লিঙ্গের একটা অদৃশ্য টান অনুভব করে। কোন বিপরীত শক্তিই সে টানকে প্রতিহত করে রাখতে পারে না। শীর্ণ শরীরেও দেখা দেয় বলশালী বেগ। আর হাতির মত শরীরেও জেগে ওঠে বাতাসে ওড়ার ভরসা। এ উপলব্ধি সবারই ঘটে থাকে। কেবল রীপু জয়ী সাধকদের মনে হয়ত এর প্রভাব পড়ে না।
==================
মনোরঞ্জন ঘোষাল
আত্মারামপুর
পশ্চিম রামেশ্বরপুর
বজ বজ
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন