Featured Post
মেল্লক গ্রামের মদনগোপাল জীউর মন্দির ।। সায়ন মণ্ডল
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মেল্লক
গ্রামের মদনগোপাল জীউর মন্দির
সায়ন মণ্ডল
মদনগোপাল
জীউ মন্দির হলো হাওড়ার
সামতার কাছে মেল্লক গ্রামে
অবস্থিত। এই
মন্দিরটি গোপালের মন্দির হিসেবে স্থানীয়ভাবে
পরিচিত। দক্ষিণ
পূর্ব রেল পথ অনুযায়ী
এটি দেউলটি স্টেশন থেকে
প্রায় চার কিঃমিঃ মেল্লক
গ্রামে অবস্থিত। শরৎচন্দ্রের
বসতবাড়ি সামতাবেড় যাওয়ার রাস্তা ধরে যেতে
হয়। এই
গ্রামের জে এল নং-২০। এছাড়া
আরোও একটি সহজ পথ
রয়েছে যা সাম্যতা শরৎচন্দ্র
চট্টোপাধ্যায় রোড থেকে দেড়
কিলোমিটারের পথ। এই
মদনগোপাল জিউর মন্দিরটি হাওড়া
জেলার সবচেয়ে প্রাচীন ও পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম
আটচালা মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম।
এই মন্দিরটি আটচালা
স্থাপত্যের ওপর পোড়ামাটি দ্বারা
অলঙ্কৃত। এটি
মন্ডলঘাট পরগনার ১৭শ তম
শতাব্দীতে (১৬৫১ সালে) জমিদার
মুকুন্দপ্রসাদ রায়চৌধুরী র দ্বারা নির্মিত। মন্দিরে
মদনগোপাল জিউর বিগ্রহটি দক্ষিণমুখী। তবে
ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়
মন্দিরের প্রবেশপথে প্রতিষ্ঠান কালের ওপর একটি
ফলক নির্মিত ছিল, যা কালের
গহ্বরে নষ্ট হয়ে গেছে। তাতে
লেখা ছিল — "সুবম/ স্তু সকা/
ব্দাঃ/১৫৭৩।" অর্থাৎ
১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্টিত হয় এই মন্দিরটি।এই
তথ্যটি হাওড়া জেলার কথা
ফেসবুক পেজ থেকে পেয়েছি।
হাওড়া জেলার কথা
ফেসবুক পেজের তথ্য অনুযায়ী
তারাপদ সাঁতরা মহাশয়ের "হাওড়া
জেলার পুরাকীর্তি" গ্রন্থে লেখা রয়েছে মন্দিরের
প্রবেশপথের বেদির ওপর ওড়িশা
স্থাপত্য অনুযায়ী গরুড় দেবের মূর্তি।
প্রধান প্রবেশ পথে রয়েছে
খিলান, উঁচু বেদি, রাম কর্তৃক মারীচবধের
টেরাকোটার অলংকরণ, বাঁদিকে লক্ষ্মী সরস্বতী ও ডান দিকে
শুধু রাম লক্ষণ এর
মূর্তি ও বেশ কয়েকটি
ছোট বড় পদ্মফুলের ফলক
দেখা যায়। বাঁকানো
কার্নিসের নীচে অনুভূমিক
একসারি পোড়ামাটির ফলকে পাখি, পৌরাণিক দেবদেবী ও দশাবতার রূপায়ন
করা রয়েছে। কার্নিশ
এবং এই ফলকগুলির মাঝামাঝি
শূন্যস্থান পূরণের জন্য ১
ইঞ্চি (৩০.৫ সে.
মি.) ব্যাসের পোড়ামাটির বন্ধনীযুক্ত অনেকগুলি প্রস্ফুটিত পদ্ম পরপর নিবন্ধ।
মন্দির- পাদমূলে ভিত্তিবেদীর অনুভূমিক সারিবদ্ধ কোন অলংকরণ নেই
কিন্তু থামগুলি 'টেরাকোটা' সজ্জাশোভিত। এছাড়া
মন্দির গত্রএর টেরাকোটার বিষয়বস্তু
রয়েছে কৃষ্ণলীলা, বিবিধ ভঙ্গিতে মহন্ত,
বেদেনীদের কসরত প্রভৃতি।
স্তম্ভের উপরিভাগে ত্রিভঙ্গ -কৃষ্ণ এবং আরো
উপরে সূক্ষ্ম নকাশি লতা ।
দালানের ভিতরের দেওয়ালে পদ্ম
ও নকাশি লতা এবং
পূর্ব দিকের অতিরিক্ত দরজাটির
উপরে সুন্দর কয়েকটি লম্ফমান
সিংহ দেখা যায় ।
সাবেক মন্দিরে টেরাকোটা সজ্জার পরিমাণ যে
আরও অনেক বেশি ছিল
তাতে সন্দেহ নেই ।
প্রায় পাঁচ ফুট(১.৫ মি.) উঁচু
ভিত্তিবেদির উপর প্রতিষ্ঠিত ও দৈর্ঘ্যে
৩৪'৫"(১০.৫ মি.
), প্রস্থে
২৮'৩" (৮.৫ মি.
) এবং উচ্চতায় প্রায় ৪৫ ফুট(১৩.৭ মি),
এ মন্দিরের সামনের এবং পুবদিকের
দালানের ও গর্ভগৃহের পশ্চিমের
ছোট কুঠুরির ছাদ টানা- খিলান
দ্বারা এবং গর্ভগৃহের ছাদ
চার দেয়ালের কোণে উদগত লহরার
উপর স্থাপিত গম্বুজ দ্বারা নির্মিত। প্রধান
প্রবেশ পথের পাথরের চৌকাঠের
গায়ে খোদাই কাজ দেখে
মনে হয় সেটি কোন
প্রাচীন মন্দিরে ব্যবহৃত দ্বারপার্শ্ব। দক্ষিণের
দালানে কষ্টিপাথরে নির্মিত পাল যুগের কিছু
ক্ষয়িত ও ভগ্ন
বাসুদেব মূর্তিটির উচ্চতা এবং প্রস্থ
আনুমানিক ৩.৫'× ১.৭৫' ( ১.১ মি.× ৫৪
সে.মি.)'", সংস্কার কাজের সময় অনেক
কাজ নষ্ট হয়ে গেছে।
মন্দিরের গর্ভে রয়েছে পিতলের
সিংহাসনে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি। এছাড়া
মন্দিরের গর্ভগৃহের মুখের দিক করে
বসে রয়েছে বেলেপাথরের গরুড়
মূর্তি। এই
মন্দিরে বছরে দুটি সময়ে
বিশেষ পুজার্চনা হয়ে থাকে।
একবার জন্মাষ্টমীর দিন ও দ্বিতীয়বার
বার্ষিক উৎসব যা দোল
উৎসব। এছাড়া
মানসিক কারোর থাকলে সেইদিনে
পুজো হয়ে থাকে।
তবে জিউর নিত্য পুজো
হয়ে থাকে। এখানে
দোলের সময়ে যে বিশেষ
পুজো হয়ে থাকে, সেটি
বেশ আড়ম্বরপূর্ণ হয়ে থাকে।
দোলের দিন সকালে নির্দিষ্ট
পালকিতে চড়ে রাধাকৃষ্ণ আশুতোষ
মুখার্জির বাড়ি যায়।
সেখানে ভোগ রাগাদি সহ
পূজার্চনা চলে। পূর্বে
রায়েদের বাড়ি যেত।
তবে এখন আশুতোষ মুখার্জির
বাড়ি যায়। পুনরায়
সন্ধ্যায় মদনগোপাল মন্দিরে ফিরে আসে।
দোলের পরের দিন পুরীর
মত হোলি উৎসবের দোল
বসে। এখানে
বাইরে একটি রাসমঞ্চ এর
জন্য নির্দিষ্ট ঘর আছে ।
সেখানে বাঁশ দিয়ে দোলনা
বাঁধা হয়।
তবে মন্দিরের সৌন্দর্য এখন পুরোপুরি নষ্ট
হয়েছে। ১৯৭৪
সালে মন্দিরটিকে পশ্চিমবঙ্গ পুরাতত্ত্ব সংসদ অধিকার করলেও
তারা ঠিকঠাকভাবে রক্ষনাবেক্ষণ করতে পারছে না। ১৯৭৪
সালে মন্দির সংস্কারের সময়
সামনের অংশ বেশ কিছু
নষ্ট হয়ে যায়।আবার পরবর্তীকালে এটিকে
সংস্কারের সময়ও প্রচুর পরিমাণে
টেরাকোটার কাজ নষ্ট হয়ে
যায়। আবারো
২০০৮ সালে কিছু অংশ
ভেঙে পড়ায় আবারও সংস্কার
করা হয়। ২৪
শে ফেব্রুয়ারি ২০২০
সালে নতুন করে মন্দির
সংস্কার করা হয়েছে।
বারেবার সংস্কারের ফলে বর্তমানে টেরাকোটার
অলংকরণের কাজ প্রায় নেই
বললেই চলে। সেই
সৌন্দর্য অনেকটাই এখন ম্লান হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ
পুরাতত্ত্ব সংসদের উচিত মনোযোগ
দিয়ে মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণ করা। নচেৎ
ভবিষ্যতে মন্দিরের ইটও খুঁজে পাওয়া
যাবে না। মন্দিরে
গাঁজাখোর, মাতালদের আস্তানা হয়েছে। ওখানকার
বাচ্ছারা খেলার ছলে মন্দিরের
টেরাকোটার কাজ নষ্ট হচ্ছে।
ছবিঃ
Sayani Mondal
মেল্লক
গ্রামের মদনগোপাল জীউর মন্দির
সায়ন মণ্ডল
মদনগোপাল
জীউ মন্দির হলো হাওড়ার
সামতার কাছে মেল্লক গ্রামে
অবস্থিত। এই
মন্দিরটি গোপালের মন্দির হিসেবে স্থানীয়ভাবে
পরিচিত। দক্ষিণ
পূর্ব রেল পথ অনুযায়ী
এটি দেউলটি স্টেশন থেকে
প্রায় চার কিঃমিঃ মেল্লক
গ্রামে অবস্থিত। শরৎচন্দ্রের
বসতবাড়ি সামতাবেড় যাওয়ার রাস্তা ধরে যেতে
হয়। এই
গ্রামের জে এল নং-২০। এছাড়া
আরোও একটি সহজ পথ
রয়েছে যা সাম্যতা শরৎচন্দ্র
চট্টোপাধ্যায় রোড থেকে দেড়
কিলোমিটারের পথ। এই
মদনগোপাল জিউর মন্দিরটি হাওড়া
জেলার সবচেয়ে প্রাচীন ও পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম
আটচালা মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম।
হাওড়া জেলার কথা ফেসবুক পেজের তথ্য অনুযায়ী তারাপদ সাঁতরা মহাশয়ের "হাওড়া জেলার পুরাকীর্তি" গ্রন্থে লেখা রয়েছে মন্দিরের প্রবেশপথের বেদির ওপর ওড়িশা স্থাপত্য অনুযায়ী গরুড় দেবের মূর্তি। প্রধান প্রবেশ পথে রয়েছে খিলান, উঁচু বেদি, রাম কর্তৃক মারীচবধের টেরাকোটার অলংকরণ, বাঁদিকে লক্ষ্মী সরস্বতী ও ডান দিকে শুধু রাম লক্ষণ এর মূর্তি ও বেশ কয়েকটি ছোট বড় পদ্মফুলের ফলক দেখা যায়। বাঁকানো কার্নিসের নীচে অনুভূমিক একসারি পোড়ামাটির ফলকে পাখি, পৌরাণিক দেবদেবী ও দশাবতার রূপায়ন করা রয়েছে। কার্নিশ এবং এই ফলকগুলির মাঝামাঝি শূন্যস্থান পূরণের জন্য ১ ইঞ্চি (৩০.৫ সে. মি.) ব্যাসের পোড়ামাটির বন্ধনীযুক্ত অনেকগুলি প্রস্ফুটিত পদ্ম পরপর নিবন্ধ। মন্দির- পাদমূলে ভিত্তিবেদীর অনুভূমিক সারিবদ্ধ কোন অলংকরণ নেই কিন্তু থামগুলি 'টেরাকোটা' সজ্জাশোভিত। এছাড়া মন্দির গত্রএর টেরাকোটার বিষয়বস্তু রয়েছে কৃষ্ণলীলা, বিবিধ ভঙ্গিতে মহন্ত, বেদেনীদের কসরত প্রভৃতি। স্তম্ভের উপরিভাগে ত্রিভঙ্গ -কৃষ্ণ এবং আরো উপরে সূক্ষ্ম নকাশি লতা । দালানের ভিতরের দেওয়ালে পদ্ম ও নকাশি লতা এবং পূর্ব দিকের অতিরিক্ত দরজাটির উপরে সুন্দর কয়েকটি লম্ফমান সিংহ দেখা যায় । সাবেক মন্দিরে টেরাকোটা সজ্জার পরিমাণ যে আরও অনেক বেশি ছিল তাতে সন্দেহ নেই । প্রায় পাঁচ ফুট(১.৫ মি.) উঁচু ভিত্তিবেদির উপর প্রতিষ্ঠিত ও দৈর্ঘ্যে ৩৪'৫"(১০.৫ মি. ), প্রস্থে ২৮'৩" (৮.৫ মি. ) এবং উচ্চতায় প্রায় ৪৫ ফুট(১৩.৭ মি), এ মন্দিরের সামনের এবং পুবদিকের দালানের ও গর্ভগৃহের পশ্চিমের ছোট কুঠুরির ছাদ টানা- খিলান দ্বারা এবং গর্ভগৃহের ছাদ চার দেয়ালের কোণে উদগত লহরার উপর স্থাপিত গম্বুজ দ্বারা নির্মিত। প্রধান প্রবেশ পথের পাথরের চৌকাঠের গায়ে খোদাই কাজ দেখে মনে হয় সেটি কোন প্রাচীন মন্দিরে ব্যবহৃত দ্বারপার্শ্ব। দক্ষিণের দালানে কষ্টিপাথরে নির্মিত পাল যুগের কিছু ক্ষয়িত ও ভগ্ন বাসুদেব মূর্তিটির উচ্চতা এবং প্রস্থ আনুমানিক ৩.৫'× ১.৭৫' ( ১.১ মি.× ৫৪ সে.মি.)'", সংস্কার কাজের সময় অনেক কাজ নষ্ট হয়ে গেছে।
মন্দিরের গর্ভে রয়েছে পিতলের সিংহাসনে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি। এছাড়া মন্দিরের গর্ভগৃহের মুখের দিক করে বসে রয়েছে বেলেপাথরের গরুড় মূর্তি। এই মন্দিরে বছরে দুটি সময়ে বিশেষ পুজার্চনা হয়ে থাকে। একবার জন্মাষ্টমীর দিন ও দ্বিতীয়বার বার্ষিক উৎসব যা দোল উৎসব। এছাড়া মানসিক কারোর থাকলে সেইদিনে পুজো হয়ে থাকে। তবে জিউর নিত্য পুজো হয়ে থাকে। এখানে দোলের সময়ে যে বিশেষ পুজো হয়ে থাকে, সেটি বেশ আড়ম্বরপূর্ণ হয়ে থাকে। দোলের দিন সকালে নির্দিষ্ট পালকিতে চড়ে রাধাকৃষ্ণ আশুতোষ মুখার্জির বাড়ি যায়। সেখানে ভোগ রাগাদি সহ পূজার্চনা চলে। পূর্বে রায়েদের বাড়ি যেত। তবে এখন আশুতোষ মুখার্জির বাড়ি যায়। পুনরায় সন্ধ্যায় মদনগোপাল মন্দিরে ফিরে আসে। দোলের পরের দিন পুরীর মত হোলি উৎসবের দোল বসে। এখানে বাইরে একটি রাসমঞ্চ এর জন্য নির্দিষ্ট ঘর আছে । সেখানে বাঁশ দিয়ে দোলনা বাঁধা হয়।
তবে মন্দিরের সৌন্দর্য এখন পুরোপুরি নষ্ট
হয়েছে। ১৯৭৪
সালে মন্দিরটিকে পশ্চিমবঙ্গ পুরাতত্ত্ব সংসদ অধিকার করলেও
তারা ঠিকঠাকভাবে রক্ষনাবেক্ষণ করতে পারছে না। ১৯৭৪
সালে মন্দির সংস্কারের সময়
সামনের অংশ বেশ কিছু
নষ্ট হয়ে যায়।আবার পরবর্তীকালে এটিকে
সংস্কারের সময়ও প্রচুর পরিমাণে
টেরাকোটার কাজ নষ্ট হয়ে
যায়। আবারো
২০০৮ সালে কিছু অংশ
ভেঙে পড়ায় আবারও সংস্কার
করা হয়। ২৪
শে ফেব্রুয়ারি ২০২০
সালে নতুন করে মন্দির
সংস্কার করা হয়েছে।
বারেবার সংস্কারের ফলে বর্তমানে টেরাকোটার
অলংকরণের কাজ প্রায় নেই
বললেই চলে। সেই
সৌন্দর্য অনেকটাই এখন ম্লান হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ
পুরাতত্ত্ব সংসদের উচিত মনোযোগ
দিয়ে মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণ করা। নচেৎ
ভবিষ্যতে মন্দিরের ইটও খুঁজে পাওয়া
যাবে না। মন্দিরে
গাঁজাখোর, মাতালদের আস্তানা হয়েছে। ওখানকার
বাচ্ছারা খেলার ছলে মন্দিরের
টেরাকোটার কাজ নষ্ট হচ্ছে।
ছবিঃ
Sayani Mondal
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন