Featured Post
ভ্রমণকাহিনি ।। মুকুটমণিপুরের মণিমুক্তা ।। কাকলী দেব
- লিঙ্ক পান
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মুকুটমনিপুরের মণিমুক্তা
কাকলী দেব
(1)
অনেক দিন ধরেই একজন ছটফট করছে, কোথাও ঘুরতে যাবার জন্য। নিজেই নানারকম প্ল্যান করছে, ইউ-টিউবে ভিডিও দেখছে, বেড়ানোর। মাসে একবার অন্তত ঘুরতে না বেরোলে, ওর শরীর খারাপ হয়, মন খারাপ হয় ততোধিক !তাই প্রায় প্রতি মাসেই বেড়ানোর একটা আয়োজন করতেই হবে! কোভিডের সময়ে ঘোরাঘুরি তে গাড়ী টা খানিক নিরাপদ বলে সেটাতে ভর করেই আমরা বেড়িয়ে পড়ি। তার আবার গাড়ী চালানোয় ভীষন আনন্দ! আমি একটু, "ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শিষের ওপর একটি শিশির বিন্দু "- থিওরীর খুব ভক্ত!
(2)
এখন বসে আছি কংসাবতীর ধারে, পিয়ারলেস রিসর্টে। আমাদের কটেজের মুখ নদীর দিকে,সামনে বারান্দা। তারপরেই বাগান, সেটা পেরিয়ে রিসর্টের কম্পাউন্ডের পাঁচিল। তার পরেই মিষ্টি নামের, শান্ত নদী কংসাবতী। এত সুন্দর নাম, কবেকার কোন সময়ের মানুষের রাখা, তা কে জানে! কোনও নদীকে এত কাছ থেকে আগে কখনও দেখিনি! নদীর এইখানটায় যেন একটা লেকের মত! জলে তরঙ্গ আছে কিন্ত উথাল পাথাল ঢেউ নেই। কংসাবতীর ওপরে, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মাটির বাঁধ আছে। বৃহত্তম মাটির বাঁধ হল হীরাকুঁদ, ওড়িশায় !
আজ 25শে জানুয়ারি তে বাঁধের ওপরের রাস্তা বন্ধ। 25 আর 26 দুদিন রাস্তা বন্ধ থাকে। তাই কাল যাব, ঠিক হল! অন্য সময়, বিশেষত শীতকালে বা কোনও ছুটির দিনে এখানে পর্যটকদের খুব ভীড় হয়। দু বছর ধরে করোনা কালে লোক সমাগম যৎসামান্য! এখানে আবহাওয়াও ভাল, হালকা শীত! আজ বেলা দুটো নাগাদ এসে পৌঁছে লাঞ্চ করলাম। দারুণ খাওয়া দাওয়া! তারপর দুপুরে গাড়ীর চালক মশায়ের কিঞ্চিত দিবানিদ্রা নাহলে চলে না! বিকেলে বেড়োলাম টোটো করে ঘুরতে! সেই টোটো আবার ব্যাটারী তে চলে, তার গতি গরুর গাড়ীর থেকে একটু বেশী!
এখানকার পুরনো কিছু নিদর্শন আমাদের ঘুরিয়ে দেখাল টোটোচালক। ব্রিটিশ আমলের
বিপ্লবীদের সাহায্যকারী রাজা রাইচরণের প্রাসাদের ধংসাবশেষ, অম্বিকা দেবীর মন্দির, দক্ষিনা কালী মন্দির, লোকাল মার্কেট ইত্যাদি দর্শন করিয়ে সেই অমায়িক টোটোয়ালা আমাদের কাছে 500 টাকা চার্জ নিল যেটা স্পষ্টতই অনেক বেশী কিন্ত পর্যটকদের কাছ থেকে ওদের এই প্রত্যাশা অযৌক্তিক হলেও মেনে নিতে হয়, বিশেষ করে যেসব জায়গা র অর্থনীতি মূলত পর্যটন কেন্দ্রিক!
অম্বিকা দেবী র মন্দির টি সাতশো বছরের পুরনো ! এখন কার পুরোহিত রা ও সেই সময়কার পূজারী দের উত্তরসূরী।
সাতশো-হাজার বছরের প্রাচীন দেবী অম্বিকার মূর্তি!কংসাবতীর ধারে ধারে নিম্ন বর্গীয় হিন্দু বা সাঁওতাল দের মধ্যে একটা সময়ে জৈন ধর্ম মত প্রচলিত ছিল।তাদের ও আরাধ্যা দেবী ছিল অম্বিকা। এইসব প্রাচীন ঐতিহ্য গুলি আরও ভাল ভাবে সংরক্ষনের দরকার ছিল। যেটা আমাদের দেশে খুব কম হয়েছে, তাই ইতিহাস ও হারিয়ে যাচ্ছে, ঐতিহাসিক তথ্য সংগ্রহের গুরুত্ব হয়তো খুব কম লোকের কাছেই আছে এখন । কারণ বর্তমানে মানুষ নানান কারণে জর্জরিত!
(3)
আমি যেখানেই যাই, প্রতি বারই কিছু না কিছু নিতে ভুলে যাবই। এটা আমার ট্রেড মার্ক বলা যেতে পারে। এবারে দু, দুটো চটি এত যত্ন করে গুছিয়ে চেয়ারের ওপর রেখে দিয়েছিলাম, যে শেষ মুহূর্তে আর সেটা আনতে ভুলে গেলাম। তবে আমার এই স্বভাবের জন্য শুধু যে আমি দায়ী, একথা ভাবাটা একদম ভুল হবে, কারণ কোথাও বেরনোর আগে আমাদের বাড়ী তে এমন একটা তাড়াহুড়োর বাতাবরণ তৈরী হবে, তখন যে কোনও লোকের ই এমন হওয়াটা খুব স্বাভাবিক! আর সেই তাড়াহুড়ো ,কার দ্বারা সৃষ্ট হয়, সেটা নিশ্চয়ই এতক্ষনে আপনারা বুঝতে পারছেন। তাই জন্য গতকাল লোকাল মার্কেট থেকে কিনতে হল একজোড়া হাওয়াই চটি। আজ 26শে জানুয়ারি , প্রথমে ব্রেকফাস্ট সেরে গাড়ী নিয়ে ই বেরনো হল, কিন্ত যতটা ঘোরাঘুরি হবে, সেই পরিমাণ তেল নেই, তাই গাড়ী তে তেল ভরতে খাতরা গেলাম প্রথমে। আজকে যাব, ঝিলিমিলি, তালবেড়িয়া আর সুতান ফরেষ্ট! খাতরা থেকে ঝিলিমিলি যাওয়ার রাস্তা অপূর্ব সুন্দর। কলকাতার থেকে যতটা পথ এসেছি, তার মধ্যে কিছু কিছু জায়গা ছাড়া পুরো রাস্তা ই খুব ভাল। PWD নাকি কাজ করেনা, কিন্ত তার কোনো প্রমাণ এখানে পাইনি। পথের দুধারে সাঁওতালী দের গ্রাম গুলো দেখবার মত সুন্দর! কী পরিচ্ছন্ন মাটির বাড়ী সব, তাতে আবার নিপুণ শিল্প কর্মে র প্রকাশ! মনে হল, দারিদ্র্য থাকলেও এরা কেউ ই হতদরিদ্র নয়। কৃষিই এদের মূল রোজগারের সূত্র!ঝিলিমিলি র মোড় থেকে যাচ্ছি তালবেড়িয়া ড্যাম দেখতে। রাস্তার অনেকটাই যদিও কাঁচা রাস্তা, তবুও বড় গাড়ী নিয়ে যাওয়াটা খুব একটা অসুবিধা জনক হলনা। ড্যাম টি র ওপর থেকে অপূর্ব দৃশ্য!পরিবহন দফতরের তারিফ করলেও পর্যটন দফতর নিয়ে অনেক অভিযোগ জমা হচ্ছে মনে র মধ্যে।এত সুন্দর ড্যাম কে আরও আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে গড়ে তোলার কাজ টা তাদেরই । আমি তো নাম টাই জানতাম না, পর্যটন কেন্দ্র গুলোর সম্পর্কে প্রচারের কাজ টা ও তাদের ই করার কথা ! বিদেশ ঘুরতে গিয়ে দেখেছি, কত সামান্য, সাধারণ জায়গা কে বিশ্বের দরবারে কীভাবে তুলে ধরা হয়!
তালবেড়িয়া থেকে একটু তাড়াতাড়িই বেড়িয়ে আসতে হল, কারণ আকাশের মেঘ দেখে মনে হল, এই বুঝি, মুষল ধারে বৃষ্টি নামল!
এবার আমরা আবার ঝিলিমিলি তে ফিরে এসে, সরকারী পর্যটন নিবাস, রিমিল ইকো রিসর্টে এলাম। ভারী সুন্দর জায়গায় অনেক গুলো ট্রি হাউস বানানো। অনেক পর্যটক ওখানে আছে দেখলাম। পকোড়া সহযোগে চা খেলাম এখানে।এত বড় ছিল পকোড়ার সাইজ যে সব খেতে পারলাম না, দুটো প্যাক করে নিয়ে এলাম, মুকুটমনিপুরের রিসর্টের দুটো বাচ্চা কুকুরের জন্য! একটু সন্দেহ ছিল তেলে ভাজা খাবার ওরা খাবে কিনা, সন্দেহ অমূলক প্রমাণ করে ওরা সেগুলো মহানন্দে চেটেপুটে খেল। মাত্র দুদিনের পরিচয় ওদের সাথে আমার! আমাদের ঘরের দরজার সামনে পোষা কুকুরের মত বসে, মুখের দিকে করুণ ভাবে তাকিয়ে ল্যাজ নাড়ে! সঙ্গে করে আনা সব বিস্কুটের প্যাকেট ওরাই প্রায় শেষ করল!
ঝিলিমিলি থেকে সুতান ফরেষ্টে যাবার রাস্তা ও ভীষণ সুন্দর। রাস্তার দুপাশেই শাল, পিয়াল, সেগুন, মহুয়া র জঙ্গল। একেবারে গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে রাস্তা গ্যাছে। জন মানুষ চোখে পড়ে মাঝে মাঝে। হয়তো মেয়েরা কাঠ কুটো মাথায় করে যাচ্ছে। মেয়েরা যথারীতি পরিশ্রমী।
ঝিলিমিলি থেকে আসার সময়, সুতান ফরেষ্টে ঢোকার রাস্তা পড়বে ডানদিকে আর খাতরা থেকে আসতে গেলে পড়বে বাঁদিকে। এবার শুরু হল পথের উতরাই, পাহাড়ী রাস্তা , অতুলনীয়! এরকম পাকদন্ডী পথের ওপর দিয়ে ও আমাদের গাড়ী চলছে সাঁ সাঁ করে, যেমন সমতলে চলে। এইসব সময় আমার রোষের , উত্তর আসে, " আমার ড্রাইভিং স্কিল টার ও টেষ্ট হয়ে যাচ্ছে! " জাতীয় কথায়!
অবশেষে মিনিট পনেরো যাবার পর গভীর জঙ্গলের মধ্যে একটা উপত্যকার মত, সেটা পিকনিক স্পট, ক্যম্পিং এর ব্যবস্থাও আছে। বারবিকিউ এর আয়োজন হত, যখন এখানে লোকে বেড়াতে আসত, কিন্ত গত দুবছর সব বন্ধ থাকার পরে, ইদানিং একটু একটু করে আবার লোকের আনাগোনা বাড়ছে! পৃথিবী টা যেন "go as you like "খেলতে খেলতে stand still হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। তার মধ্যেই আমাদের মত কতিপয় ট্যুরিস্ট দের ঘোরাঘুরি। এখানে একটা watch tower ও আছে। কী গভীর নৈঃশ্বব্দ এখানে, মানুষের কোলাহল অবাঞ্ছিত! জঙ্গলের ভেতর সাঁওতাল দের অনেক ছোট ছোট গ্রাম আছে। যত টুকু দেখলাম তাতে এদের প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। কত ভদ্র আর মার্জিত সবাই !
বয়স্ক মানুষ থেকে ছোট শিশু পর্যন্ত, সবার সুন্দর কথাবার্তা আর ব্যবহার!
জঙ্গলের পথ বেয়ে, মাথায় শুকনো জ্বালানী কাঠ বয়ে আনা দুজন সাঁওতাল রমনী কে জিজ্ঞেস করি,"ফটো তুলব, তোমাদের?" একজন বলে, "আমাদের আর কি ফটো তুলবে গো? আমরা জংলী মানুষ!" আমি মনে মনে বলি, শহুরে জংলীদের থেকে, তোমরা যে আসলে কত সুন্দর, সে যদি জানতে!"
শুধু সাঁওতাল দেরই নয়, বাঁকুড়ার সাধারণ বাঙালিরা ও খুব শান্তিপ্রিয়, অযথা চীৎকার চেঁচামেচি চোখে পড়েনি। শহরের ডিগ্রি ধারী ভদ্রলোকরা, শহুরে শিক্ষায়, শুধুমাত্র উদ্ধত, অর্বাচীন হয়েছে!
(4)
এবার ফেরার পালা। ফিরে আসি আবার, খাতরার দিকে! খাতরা মোড় থেকেই আমাদের মুকুটমনিপুরের রাস্তা ধরার কথা কিন্ত আমরা তার আগেই একটা বাঁ দিকের রাস্তা ধরে ফেলি ভুল করে! তাতেও অসুবিধা কিছু নেই, অম্বিকা নগরের মধ্যে দিয়ে চমৎকার রাস্তা, যেটা গোড়াবাড়ী হয়ে মুকুটমনিপুরে ঢোকে।
27শে জানুয়ারী মানে আজ আমরা সকালে ব্রেকফাস্ট করে বেরোলাম নৌকাভ্রমনে। সেকথায় পরে আসছি।ব্রেকফাস্টের সময় আলাপ হল এই রিসর্টের রিসেপশনিষ্ট অর্চনা মান্ডির সঙ্গে। একটি সাঁওতালী শিক্ষিত, রুচিশীল মেয়ের সাথে আলাপ করে মুগ্ধ হলাম। নিজের কাজ সামলাচ্ছে এই রিসর্টে ,আজ সাত বছর ধরে! রিসর্টের ঠিক পেছনেই ওদের গ্রাম, দুই ছেলেকে বোর্ডিং স্কুলে রেখে পড়ায়, কারণ অর্চনা আর ওর বর দুজনকেই কাজে বেরোতে হয়, তাই ছেলেদের দেখাশোনা ঠিক ভাবে হয়না। যদিও, করোনা কালে স্কুল, বোর্ডিং সবই বন্ধ। দু বছর ধরে ছেলেরা তাই বাড়ীতেই, শাশুড়ীর তত্বাবধানে।
এখানকার বাকী স্টাফরা ও প্রত্যেকে খুবই ভাল! পল্লব হল পিয়ারলেস রিসর্টের ম্যানেজার, যে আবার অভিজিতের স্কুলের বন্ধু! অভিজিত আমাদের বাড়ীতে ইন্টিরিয়রের কাজ করেছিল। অভিজিত দের পৈতৃক বাড়ী খাতরায়।
লোকাল লোকজনের সঙ্গে কথা বলে, একটা জিনিস মনে হল যে আমাদের আঞ্চলিক শিক্ষার মান এখনও অনেক উঁচুতে। আজকাল কলকাতা বা অন্য বড় শহরে বসে যে শিক্ষা আমরা ছেলেমেয়েকে দিয়ে চলেছি তার সঙ্গে এই মফস্বলীয় বা গ্রামীন শিক্ষার একটা পার্থক্য আছে। এখানে সহজ সরল, শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত মানুষের মধ্যেও এক গভীর মানবিকতার অবস্থান, যেটা শহুরে, ফাঁপা, লোক দেখানো, চাকচিক্যময় শিক্ষায় হারিয়ে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্য আমাদের, দুর্ভাগ্য urbanisation এর!
প্রথম দিন এসেই টোটো চেপে পাশের অম্বিকা নগরের প্রাচীন দ্রষ্টব্য গুলো দেখা, দ্বিতীয় দিন নিজেদের গাড়ীতেই ঘুরলাম, ঝিলিমিলি, সুতান ফরেষ্ট আর তালবেড়িয়া। এবার তৃতীয় দিন আমরা কোথায় যাব,এই ব্যাপারে রিসর্টের সবার সঙ্গেই কথা বলে, নেট সার্চ করে ঠিক করলাম যে, নৌকাবিহার করব আর ঐভাবে ই কয়েকটা জায়গা আরও ঘুরব।সকাল বেলা, ন'টা নাগাদ ব্রেকফাস্ট সেরে আমরা রেডি, বেরোব বলে, রিসর্টের পেছনের ঘাট থেকেই নৌকা ছাড়বে! নৌকার মাঝি, ছেলে টি দেখি রিসর্টের গেটে দাঁড়িয়ে। পরে নাম জানলাম, রাবণ সর্দার! নাম এবং পদবী দুটো র সাথে তার চেহারা এবং স্বভাবের বিস্তর ফারাক!
অত্যন্ত অমায়িক অথচ সাবলীল বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ সে! পাশের খগড়া গ্রামে থাকে। ওদের গ্রাম টা যেতে আসতে চোখে পড়েছে, 'মুক্ত আকাশ ' নামের একটি পাঠাগার দেখে খুব যাওয়ার ইচ্ছে ছিল কিন্ত সেটা শেষ পর্যন্ত আর সময়াভাবে হয়ে ওঠেনি।
নৌকা করে আমরা কংসাবতীর ওপর দিয়ে চললাম, বনপুকুরিয়া দ্বীপের 'ডিয়ার পার্কে! সেখান থেকে আবার আসব মুকুটমনিপুরেই পরেশনাথ মন্দির আর কালী মন্দির দেখতে, এরকমই ঠিক হল। বনপুকুরিয়া যেতে লাগল প্রায় ঘণ্টাখানেক! আবার সেই একটা কাঁচা আঘাটায় গিয়ে আমাদের নৌকা ভেড়াল রাবন মাঝি। কোথাও ভাল বাঁধানো ঘাট চোখে পড়লনা।পর্যটন দফতর এই কাজগুলো কেন করছেনা, সেটা ভেবে আমার বেশ অবাক লাগল!
ট্যুরিস্ট দের আকর্ষণ করতে গেলে তো একটা সঠিক পরিকাঠামোর দরকার!
রাবণ একটা পিঁড়ি পেতে দিল,আমরা কোনরকমে নামলাম তাতে পা রেখে। যাইহোক, দু'পা এগোলেই পাওয়া যাবে ভ্যান রিকশা। ডিয়ার পার্কে যাওয়া এবং আসার ভাড়া মোট দুশো টাকা। এইসব ভ্যান রিকশা এবং নৌকা গুলো খুব সুন্দর দেখতে, বেশ নতুন মনে হল! মাঝি দের এখন সরকারী সমবায় সমিতি গড়ে উঠেছে, তাতে রোজগার স্থিতিশীল হয়েছে আগের থেকে। নদীর ঘাট থেকে ডিয়ার পার্কের রাস্তা, অপূর্ব নির্জনতায় ভরা। এইসব জায়গায় সরকারী বা বেসরকারী রিসর্ট হলে, তার বানিজ্যিক উন্নতির সম্ভাবনা আছে বলেই মনে হল! তখন আরও অনেকেই শহুরে জঙ্গল ছেড়ে আসল জঙ্গলে নিরিবিলি খুঁজতে চলে আসবে। এইসব ভাবতে লাগলাম ভ্যানে বসে পা দোলাতে দোলাতে। এবার এসে গেছি ডিয়ার পার্কে। বাইরে থেকে দেখে একটুও impressive মনে হচ্ছেনা। পর্যটক হাতে গোনা কজন, একটা হরিণের ও দেখা নেই। বনসংরক্ষন দফতর ভাল কাজ করছে তবে কিছুটা যেন দায়সারা ভাবে! কাঁটাতারে ঘেরা একটা বিশাল এরিয়ার মধ্যেই নাকি শ' খানেক হরিণ দের বসবাস। বহু অপেক্ষার পরেও যখন কোনও হরিণ চোখে পড়ছে না, তখন আমাদের ভ্যান চালক ছেলে টি এসে তার নিজস্ব কায়দা প্রয়োগ করল! অঃ অঃ করে জোরে জোরে ডাকতে লাগল, আর পাতা সুদ্ধ বড় গাছের ডাল তুলে এনে আমাদের হাতে দিল। এই ডাল কাঁটা তারের বেড়ার ফাঁকে গলিয়ে দিয়ে ওদের কে লোভ দেখাতে হবে, তবেই ওনারা দর্শন দেবেন। সত্যিই তাই হল। একে একে তিনটে সোনার হরিণ , সহজে পাতা খাওয়ার লোভে এসে দাঁড়াল বেড়ার ওপারে! কয়েক টা ছাগল আবার আমাদের আশে পাশে ঘুর ঘুর করছে পাতা খাবে বলে! প্রায় একই ধরনের দেখতে, শুধু চামড়ার পার্থক্যের জন্য গর্বিত হরিণ কুল, আর ছাগল বেচারারা চিরকাল অন্ত্যজই থেকে গেল! এত সুন্দর দেখতে হরিণ দের যে, সীতা যে কেন মায়াবী হরিণ দেখে তার ছলনায় ভুলে 'আমার সোনার হরিণ চাই ' বলে জেদ ধরেছিল, তা সহজেই অনুমান করা যায়!
এরপর ফেরার পালা। বনরক্ষীদের কোয়ার্টার পার্কের পাশেই, কর্মচারীর সংখ্যা ও ভাল, কিন্ত সব কিছু ই একটু অবহেলিত মনে হল!
কাছেই একটা ফুলের বাগান তথা পার্ক আছে, সরকারী প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। মাত্র দশ টাকা র টিকিট কাটলে ভেতরে ঢুকতে দেবে, বৃদ্ধ গেটরক্ষী। ভ্যান রিকশা করে আবার ফিরে এলাম সেই আঘাটায়, যেখানে রাবণ মাঝি তার মোটর বোট নিয়ে অপেক্ষারত। বোট চলল বেশ স্পীডে, এলাম এবার পরেশনাথ মন্দিরের ঘাটে। এখানেও ঘাটের অবস্হা তথৈবচ! সেই যে ড্যামের ওপর দিয়ে সাত কিলোমিটার লম্বা রাস্তা, তাতে এসে উঠলাম। এই রাস্তার ওপরই দুটি মন্দির আছে। পরেশনাথ মন্দিরে যেতে গেলে অনেক সিঁড়ি ভাঙতে হয়, একটু কষ্টকর হলেও ওপরে মন্দিরের চাতালে এসে দাঁড়ালে মন ভাল হয়ে যায়! খোলা আকাশের নীচেই শিবলিঙ্গ, নন্দী, ভৃঙ্গী এদের মূর্তি রাখা আছে, একটা বেদীর ওপর।প্রাচীন রটনা অনুসারে এই মহাদেবের মাথায় ছাদ করা যাবেনা তাই শত ঝড়, জল, বৃষ্টির মধ্যেই এরা দাঁড়িয়ে আছে বছরের পর বছর ধরে। আজ আবহাওয়াও খুব ভাল, ঝকঝকে রোদের সঙ্গে মনোরম হাওয়া বইছে! এরকম পরিবেশে পূজোর আয়োজন দেখে মন ভাল হয়ে যায়। এখানকার পুরোহিত মশাই বললেন, তারা বংশ পরম্পরায় এই পূজা করছেন। মকর সংক্রান্তির সময় প্রতি বছর মেলা বসে, আশেপাশের গ্রামের মানুষ ভীড় করে।তবে কোভিড আক্রান্ত পৃথিবীর নিয়ম অনুসারে এখন সবকিছুই স্থগিত আছে। এই মন্দির দর্শন করে একটু দূরের কালী মন্দির ও দেখতে গেলাম। এটি একটি নতুন গড়ে ওঠা মন্দির, বেশ সুন্দর, পরিচ্ছন্ন!
বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে যখন এই ড্যাম তৈরী হয় তখনই মাটি খুঁড়তে গিয়ে অনেক প্রাচীন মূর্তির সন্ধান মেলে। এইসব দেবদেবীর মূর্তি এবং মন্দির বহু পুরনো সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে, সরকার থেকে ড্যাম তৈরির সময়েই এই ছোট টিলার ওপর নতুন করে মন্দির গড়ে দেয়। গতকাল 26শে জানুয়ারি অবধি ড্যামের ওপরের রাস্তা টা বন্ধ ছিল, আজ থেকে যানবাহন চলাচল খুলে দিয়েছে তাই আমরা ঠিক করলাম যে রিসর্টে ফিরে লাঞ্চ করে আবার গাড়ী নিয়ে আসব এই রাস্তায়। যে লোক টির মাধ্যমে আমরা বোট ভাড়া করেছিলাম সে আমাদের একটু মিসগাইড করেছিল হয়তো তার নিজের স্বার্থে ! রাস্তা খোলার খবর জানলে আমরা হয়তো তিন হাজার টাকা দিয়ে বোট ভাড়া করতাম না। তবে, বনপুকুরিয়া যেতে গেলে বোট ছাড়া রাস্তা নেই। বাই রোড যেতে গেলে এত ঘুরে যেতে হবে, যে সে ঝামেলা না করাই ভাল!
পরেশনাথ পাহাড় এবং মন্দির এখনও আর্কিওলজিকাল সাইট হিসেবেই পরিচিত। এইসব জায়গায় অন্তত হাজার বছরের ইতিহাস লুকানো আছে!
( 5)
আমরা এবার ড্যামের ওপরের রাস্তা থেকে নেমে এলাম, যেখানে আমাদের বোট অপেক্ষারত। সব মিলিয়ে আমাদের ঘন্টা চারেক সময় লাগল। ফিরে এলাম রিসর্টে বোটে করে। লাঞ্চের মেনু বলে দিয়ে গেছিলাম, তাই সেইমত খাবার খেলাম তৃপ্তি করে! দুপুরের ঘুম জলান্জলি দিয়ে এবার আবার গাড়ী নিয়ে বেরনো হল। কারণ ড্যামের ওপরের রাস্তা টা explore করতে হবে।
পিয়ারলেস রিসর্টের সবই ভাল কিন্ত আসা যাওয়ার পথ টা এত সরু যে দুদিক দিয়ে দুটো গাড়ী একসাথে যাওয়া অসম্ভব! বেরিয়ে এরকম বিপাকেই পড়তে হয়েছিল।
ড্যামের ওপর গাড়ী নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা ফ্রি গেটপাশ নিতে হয়, যাতে দু ঘন্টা সময় বেঁধে দেওয়া আছে। সাত কিলোমিটার যাবার পরেও আমাদের আরও যাবার ইচ্ছে ছিল কিন্ত তাহলে ফিরতে দেরী হয়ে যাবে। আবার সেই যাবার পথের বাঁ দিকে পড়ল পরেশনাথ মন্দির আর ডান দিকে কালী মন্দির। ড্যামের ওপর দিয়ে ফেরার সময়ে নামলাম 'মুসাফিরানা' বলে একটা পার্কে,এটাও টিলার ওপরে, একটা ভিউ পয়েন্ট আছে, যেখান থেকে দেখা যাচ্ছে কংসাবতী আর কুমারী নামক দুই নদীর মিলন দৃশ্য! মুকুটমনিপুরের নাম টা ও কেন হয়েছে, সেটা এখানে দাঁড়ালে বোঝা যায়। তিনটে উঁচু টিলা ঠিক মুকুটের মত এই জায়গার একপাশে আছে।
এবার ড্যামের ওপর থেকে নেমে এলাম মুকুটমনিপুরের হস্তশিল্প মার্কেটে।সবই এখন সরকারী দোকান, বিশ্ব বাংলা প্রকল্পের আওতা ভুক্ত।এদের মধ্যে একটা দোকানে শুধু ডোকরা আর পোড়া মাটির জিনিস রাখে, বাকী রা নানা রকম মনোহারী হস্তশিল্প সম্ভারে সজ্জিত। আমার বেশ খানিকটা কেনাকাটা হল।তার মধ্যে অনেকদিনের শখ ছিল বড় পোড়ামাটির ঘোড়া কেনার, সেটাও হল।
কাল সকালেই ফিরে যাব।মনে হচ্ছিল, আর না ফিরে এখানেই থাকি, অবশ্য এটা আমার বেড়াতে গিয়ে কোনও জায়গা ভাল লেগে গেলে প্রতিবারই মনে হয়।কিন্ত সত্যিই খুব ভাল হল আমাদের মুকুটমনিপুর ভ্রমণ। লং ড্রাইভ হল, নতুন জায়গা দেখা হল!
হয়তো তেমন বড় কোনও গ্ল্যামারাস জায়গা নয়, কিন্ত নিছক ভ্রমণের নিখাদ আনন্দ পাওয়ার জন্য এই সব জায়গার তুলনা নেই ! কলকাতার থেকে খুব দূরে নয় জায়গা গুলো, গাড়ী নিয়ে বেড়াতে যাবার জন্য আদর্শ। গ্রাম বাংলার স্বাদ পেতে হলে যেতেই হবে।
কাকলী দেব
- লিঙ্ক পান
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
জনপ্রিয় লেখা
প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা
লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত। সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম। মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন। সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন্ন সাহিত্য
মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি
লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', '
কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার
বসন্তের কোকিল তুমি বিচিত্র কুমার (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে। (০২) এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ। তারপর প্রতিটি শীতের ভোরে অনেক রোদের পরশ মেখে ছুঁয়ে যেতে আমার বুকের বাঁ পাস শিশির রেখা, তখন প্রতিটি ভোর হয়ে যেত ভীষণ রকম মিষ্টি আর ছিলো শুধু বসন্তের ঘ্রাণ মাখা। প্রতিটি সকালে একঝাঁক মায়াবী পাখি অনুভবের
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সূচিপত্র কবিতা ।। তৈরি হয় এক নতুন বিপ্লবের পটভূমি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী কবিতা || প্রতিবাদ || জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। সেই মেয়েটি রাত জাগে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। শপথ ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। কোরাস রাত ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই ।। দীনেশ সরকার অণুগল্প ।। ব্যাকবোন ।। বিশ্বনাথ প্রামাণিক কবিতা ।। আন খুঁজে আন শিরদাঁড়াটা ।। জয়শ্রী সরকার কবিতা ।। জীবন এখন ।। লাবণী পাল কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই! ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা ।। যুদ্ধ , প্রতিনিয়ত ।। সুমিত মোদক মুক্তভাবনা ।। কী বলব! ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রতিবেদন ।। বিচার পাক অভয়া ।। জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় অভয়ার যে চিঠিটা আজো পাওয়া যায়নি ।। আশীষকুমার চক্রবর্তী কবিতা ।। জগন্মাতা নাকি তিনি ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। মেয়েটির মৃত্যু দেখে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। অন্ধকারের আলো ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। ঘোষণা ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। অপেক্ষায় ।। রণেশ রায় কবিতা ।। গ্লানি ।। সুজন দাশ কবিতা ।। বিনীত আবেদন ।। শংকর ব্রহ্ম কবিতা ।। তুই যে মেয়ে তিলোত্তমা ।। অশোক দাশ কবিতা ।। শোক সন্তাপের দুর্গা ।। সুদামকৃষ্ণ মন্ডল ক
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪
সূচিপত্র গল্প ।। উৎশব উৎসব ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। বাংলায় প্রথম আত্মজীবনী লেখিকা রাসসুন্দরী দেবী ।। সবিতা রায় বিশ্বাস মগরাহাট (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) এলাকার স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগধারা ইত্যাদি (পর্ব-৬)।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। একটি মৃত্যু, অজস্র প্রতিবাদ ।। নাসির ওয়াদেন কবিতা ।। অন্ধকার জগৎ ।। সুপ্রভাত মেট্যা গুচ্ছকবিতা ।। আবদুস সালাম কবিতাগুচ্ছ ।। হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় খোলা কবিতা ।। মানস মণ্ডল নিবন্ধ ।। সম্পর্ক ।। সংঘমিত্র ব্যানার্জি উপন্যাসিকা ।। উদয় ।। তপন তরফদার সিনেমা রিভিউ ।। ছবি : বহুরূপী, পরিচালক : রাজাদিত্য ব্যানার্জি ।। আলোচনা: জয়শ্রী ব্যানার্জি গল্প ।। গল্পটা মিথ্যে নয় ।। বিকাশকলি পোল্যে অণুগল্প ।। স্পিড ব্রেকার ।। দেবাংশু সরকার কবিতা ।। একটা পুরোনো অঙ্ক ।। রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। গোপন সম্মোহন ।। বিশ্ব প্রসাদ ঘোষ কবিতা ।। আগুনের পাখী হব ।। কাকলী দেব দুটি কবিতা ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। বেঁচে থাকে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। হে অনিন্দ্য, রক্তাক্ত মাকড়সার সর্বাঙ্গ ঋষি দৃশ্য খাও
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু
"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান
"নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)। আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার সফ্ট কপি ডাউনলোড করতে ছবিতে ক্লিক করুন। ====০০০==== মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যাটি অনলাইনে অর্ডার করে বাড়িতে বসে পেতে পারেন অর্ডার করার লিঙ্ক: https://notionpress.com/read/nabapravat-utsab-2023 NABAPRAVAT30 কোডটি ব্যবহার করলে কম দামে পাবেন। (প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ নিরাশাহরণ নস্কর। সম্পাদক, নবপ্রভাত।)
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় পার্থ সারথি চক্রবর্তী কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই। খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই হবে বলে মনে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন