Featured Post
পুরাণকথা ।। প্রসঙ্গ : রাম সীতা ।। দীপক পাল
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
প্রসঙ্গ : রাম সীতা
দীপক পাল
পদ্মপুরাণে রাবণ বধের পর আরম্ভ এবং পূর্বের ঘটনা ডায়েরির মত দিন-ক্ষণ দিয়ে লেখা। রাম যখন জনক রাজার গৃহে হরধনু ভঙ্গ করেন তখন তাঁর বয়স ১৫ বছর। সীতা তার চেয়ে ৯ বছর ছোট, তাঁর বয়স তখন ৬ বছর। বিবাহের পর ১২ বছর তাঁরা অযোধ্যায় সুখে বাস করেন। বন গমনের সময় রামের বয়স ২৭ ও সীতা ১৮ বছরের তরুণী। ১৩ বছর বনবাসের পর রাবণ সীতা হরণ করেন মাঘ মাসের কৃষ্ণা অষ্টমীর বিন্দু মুহূর্তে। সীতার বয়স তখন ৩১, অর্থাৎ রামের বয়স ৪০ বৎসর। দশমাস পরে সীতার সন্ধান পাওয়া যায় জটায়ুর বড় ভাই সম্পাতির কাছে। সেদিন ছিল অগ্রহায়ন মাসের শুক্লা নবমী। লঙ্কায় গিয়ে হনুমান সীতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসার পরে অষ্টমীর বিজয় মুহূর্তে রামচন্দ্র যুদ্ধ যাত্রা শুরু করেন। অমাবস্যা পর্য্যন্ত তাঁরা সমুদ্র তীরে শিবির করে বাস করেন। পৌষ মাসের শুক্লা দশমী থেকে ত্রয়োদশী পর্য্যন্ত সেতু বন্ধ হয়। তারপর দ্বিতীয়া পর্য্যন্ত সৈন্যদের সমুদ্র অতিক্রম হয়। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়াতে যে যুদ্ধ আরম্ভ হয় তা চৈত্র মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে রাবন বধের পর ৮৭ দিনের দিন সেই যুদ্ধ শেষ হয়।
রাম রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন ঠিকই কিন্তু বলেন, চরিত্র রক্ষা, অপবাদ খন্ডন ও তাঁর বিখ্যাত বংশের গ্লানি দূর করবার জন্য তিনি সীতাকে বর্জন করবেন। সীতা অগ্নি পরীক্ষায় বসে তার সতীত্বের প্রমাণ দিলেন। এর পরেও তিনি অযোধ্যার রাজা হয়ে বসে অন্তঃসত্ত্বা সীতাকে বর্জন করে বনবাসের পাঠিয়েছিলেন। অথচ সীতা হরণের কারণ ছিল লক্ষ্মণের দ্বারা সূর্পনখার নাক কান কাটা আর তাতেই রাবণ প্ররোচিত হয়েছিল কৌশলে সীতা হরণ করার। এছাড়া প্রজাদের মনোরঞ্জনের জন্যও তিনি সীতাকে ত্যাগ করেন। এতবছর একসাথে থেকেও কি রাম সীতাকে ঠিক চিনতে পারেন নি?
আমাদের শাস্ত্রে ৭ টা পুরী মোক্ষদায়ীকা নামে পরিচিত। তাদের প্রথম হলো অযোধ্যা। মায়া হলো হরিদ্বার। অবন্তিকা উজ্জয়িনীর নাম। যুদ্ধে অজেয় বলে নগরের নাম হয়েছিল অযোধ্যা। ব্রহ্মার প্রপৌত্র সূর্য্য। তার পুত্র মনু এই অযোধ্যার পত্তন করেছিলেন। এই সূর্য্য বংশে ৩৩ পুরুষ পরে রাম। ব্রহ্মাকে ১ নম্বর ধরলে রাম হচ্ছে ৩৭ নম্বর। এই বংশেই জন্মগ্রহণ করেছেন মান্ধাতা, সগর প্রভৃতি রাজারা। এ রামায়ণের হিসাব। বিষ্ণুপুরাণের মতে সূর্য্য ও রামের মধ্যে আছেন ৬৫ জন। ভগীরথ, হরিশচন্দ্র প্রভৃতি রাজারাও আছেন।
বিদেশী পণ্ডিতেরা মনুকে বলেন খ্রীষ্টের জন্মের ৩১০০ বছর আগের মানুষ। আমরা প্রাচীন কাল বলতে যে মান্ধাতার আমল বলি, সেটা ২৭৪০ খ্রীষ্ট পূর্বাবদে।। রাম রাজত্ব করেছিলেন খ্রীষ্টের জন্মের প্রায় ২০০০ বছর আগে। বিশ্বামিত্র মুনিকে আমরা হরিশচন্দ্র রাজাকে পরীক্ষা করতে দেখি ২৫৪০ খ্রীষ্ট পূর্বাবদে। এই পণ্ডিতদেরই মতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হয়েছিল খ্রীষ্টের জন্মের ১৪০০ বছর আগে। তার মানে লঙ্কার যুদ্ধ ও কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ব্যবধান ৫০০ বছর। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় অযোধ্যার রাজা ছিলেন বৃহদবাহু। তিনি ছিলেন সূর্যবংশের রাজা। অভিমন্যু তাঁকে বধ করেন।
আবার রাম ও বৃহদবাহুর মধ্যে তিরিশ পুরুষের ব্যবধান আছে বলে মনে করা হয়। এ কথা মেনে নিলে এদের কালের ব্যবধান ১ হাজার বছর কম করে হয়। আর এটা স্বীকার করলে রাম রাজত্ব করেছেন চার থেকে সাড়ে চার হাজার বছর আগে।
মৎস্য পুরাণে একটা মজার কথা আছে। বুদ্ধদেবেরও জন্ম নাকি এই সূর্য্য বংশে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর তিনি সূর্য্য বংশের পঞ্চবিংশতি পুরুষ। পণ্ডিতেরা মেনে নিয়েছেন যে শাক্য জাতি সূর্য্য বংশেরই একটি শাখা। শাক্য নামে এক রাজা বৃহদবাহু বা বৃহদ্বলের উত্তর পুরুষ আর বুদ্ধদেব তার অষ্টম পুরুষ।
-০-০-০-০-০-০-০-
Photo Curtsy: pinterest
Dipak Kumar Paul,
DTC Southern Heights,
Block-8, Flat-1B,
Diamond Harbour Road,
Kolkata-700104.
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন