Featured Post

বাংলা সাহিত্যে এখনো জনপ্রিয় বহু পঠিত ও চর্চিত বঙ্কিমচন্দ্র ।। পাভেল আমান


বাংলা সাহিত্যে এখনো জনপ্রিয় বহু পঠিত ও চর্চিত বঙ্কিমচন্দ্র 

পাভেল আমান

 
ছাত্রাবস্থায় যে সাহিত্যিকের গল্প উপন্যাস পাঠ করে বাংলা সাহিত্যের প্রতি এক অফুরন্ত ভালোলাগা উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছিল সাহিত্যকে আত্মস্থ করে সাহিত্য অনুরাগী হয়ে উঠেছিলাম সর্বোপরি সাহিত্য যে প্রকৃতার্থী সমাজের যথার্থ দর্পণ তাই স্পষ্টভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখনীতে। নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্য খুঁজে পেয়েছিল এক অনন্য উত্তরণের রসদ যার পরতে পরতে উৎকর্ষতা সমৃদ্ধির নিশান। বাংলা সাহিত্যে এক নব দিশার সৃষ্টি করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র।আজ ২৬ জুন নৈহাটির কাঁঠালপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলা ভাষার প্রথিতযশা সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। প্রয়াত হন ১৮৯৪ সালের ৮ই এপ্রিল। বাঙালি নবজাগরণের অগ্রদূত, বাংলা সাহিত্যের সার্থক ঔপন্যাসিক, বাংলা সাহিত্যধারার প্রতিষ্ঠাতা পুরুষদের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অগ্রজ । তিনি ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য, ভাষা, সমাজ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে উৎকৃষ্ট প্রবন্ধ রচনা করে বাঙালি জাতিকে চিন্তা-চেতনায় ও মননশীলতায় দীক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি বাংলা ভাষার তুলনামূলক সমালোচনা ধারার পথ প্রদর্শক এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের সমন্বয় সাধনকারী হিসেবে খ্যাত। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গ্রাজুয়েট । কর্মজীবনে তিনি সরকারি আমলা ছিলেন । 
 
        ১৮৭২ সালে প্রকাশিত বাংলা মাসিক সাহিত্য পত্রিকা বা সাময়িকপত্র বঙ্গদর্শন এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় । ছদ্মনাম হিসেবে তিনি কমলাকান্ত নামটি ব্যবহার করেছিলেন। তাকে বাংলা উপন‍্যাসের জনক বলা হয়। এছাড়াও সাহিত্যের রসবোদ্ধাদের কাছ থেকে তিনি সাহিত্যসম্রাট আখ্যা লাভ করেন । বঙ্কিম রচিত আনন্দমঠ উপন্যাসের কবিতা বন্দে মাতরম কে ১৯৩৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ভারতের জাতীয় স্তোত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন। তার রচনা 'বঙ্কিমী শৈলী' বা 'বঙ্কিমী রীতি' নামে পরিচিত।বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যের প্রতি প্রবল অনুরাগের সঠিক প্রতিফলন ঘটেছিল তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির মাধ্যমে। তিনি ঐতিহাসিক, সামাজিক, ব্যঙ্গ কৌতুক, ধর্মীয়মূলক ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন।তিনি তাঁর সাহিত্য সাধনার দ্বারা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রভূত উন্নতি সাধন করেন। কবিতা দিয়ে শুরু করলেও পরে উপন্যাস, প্রহসন, নাটক, প্রবন্ধ প্রভৃতি লিখেছিলেন।বাংলা সাহিত্যে তিনিই প্রথম সার্থক উপন্যাস রচনা করেছিলেন বলে মানা হয়। 'দুর্গেশনন্দিনী' ছিল তাঁর লেখা প্রথম স্বার্থক বাংলা উপন্যাস।একে একে তিনি পনের টি উপন্যাসের জন্ম দেন যার মধ্যে একটি ইংরেজি উপন্যাসও ছিল। তাঁর রচিত উপন্যাসগুলির মধ্যে, 'দুর্গেশনন্দিনী', 'কপালকুণ্ডলা', 'মৃণালিনী', 'রাজসিংহ', 'দেবীচৌধুরানি', 'আনন্দমঠ', 'সীতারাম', 'রজনী', 'বিষবৃক্ষ','কৃষ্ণকান্তের উইল', ,'যুগলাঙ্গুরীয়', 'চন্দ্রশেখর', 'ইন্দিরা', 'রাধারানী' প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
 
        এ কথা সর্বজনবিদিত উনবিংশ শতকের সাহিত্য জগতের নক্ষত্র ও বাংলা উপন্যাসের প্রথম সার্থক স্রষ্টা যে তাঁর সাহিত্য রচনার মাধ্যমেই ভারতবর্ষের জাতীয় জাগরণ ও মুক্তি সংগ্রামকে আলোড়িত করবেন সেটাই কাম্য।বাংলা সাহিত্যে বঙ্কিমযুগের সুচনার সাথে সাথেই ধর্ম, সামাজিক আদর্শ, ও দেশ প্রীতি নতুন রূপে ধরা দিল। বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যবোধ চেতনা ও ভাবনা ছিল বহুমাত্রিক। সাহিত্যকে যুগোপযোগী প্রাসঙ্গিক করে পৌঁছে দিয়েছিলেন পাঠকের দরবারে। তার লেখনীতে উদ্ভাসিত হয়েছে সমসাময়িক দেশ কাল সমাজ জীবন ধর্মীয় ভাবনা সর্বোপরি জাতীয়তাবাদের উত্তরন। বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত 'ভারত-কলঙ্ক' ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রবন্ধে তাঁর প্রগাঢ় দেশ প্রীতির নিদর্শন মেলে।মৃণালিনীতে সূচনা হয় স্বাজাত্যবোধের। বিশিষ্ট সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় বলেছেন মৃণালিনীতেই বঙ্কিমচন্দ্র প্রত্যক্ষ পূজক রূপে গৈরিক উত্তরিয় পরিধান করে মন্দিরে প্রবেশ করেন। দেশের জন্য উপন্যাসের নায়ক হেমচন্দ্রের স্বার্থত্যাগ- তাঁর আত্মোৎসর্গের প্রবল আকাঙ্ক্ষার মধ্যেই নবযুগের মহিমান্বিত ঋষির ধ্যানযোগের রুপ সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দেশ মাতৃকার পূজায়োজনের সূত্রপাত এখানেই। সে আয়োজনের পুজা সার্থক হয়ে উঠেছে ' আনন্দমঠে'।মৃণালিনীতে সাধকের কাছে মাতৃপূজার যোগের পন্থা ,নিয়ম, মন্ত্র যেন অস্পষ্ট- সেজন্য সেখানে প্রবল হয়ে উঠেছে দেশানুরাগের প্রবল উচ্ছ্বাস। অন্যদিকে আনন্দমঠে ঋষি যেন সিদ্ধপুরুষ। আনন্দমঠে দেশপুজা-পদ্ধতী পাশ্চাত্য পদ্ধতীর অনুকরণ নয়- ভারতীয় সংস্কৃতির চিরাচরিত নিষ্কাম স্বদেশ প্রেম। বাংলা উপন্যাস ও বাংলা গদ্য সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চরিত্র চিত্রণ, শিল্পসৃজন, বর্ণনা, নান্দনিকতা এবং সর্বোপরি বাংলা গদ্যের উৎকর্ষ সাধনে বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর পূর্বসূরিদের থেকে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছিলেন। তাঁর সম্পাদিত 'বঙ্গদর্শন' পত্রিকার মাধ্যমে একটি নতুন লেখকগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে।সামগ্রিকতার বিচারে উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে বাংলা সাহিত্যের ভগীরথ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাঁর প্রতিভা বলে বাংলা সাহিত্যের মরু প্রান্তরে পবিত্র মন্দাকিনী স্রোত প্রবাহিত হয়েছিল।

        বঙ্কিমচন্দ্র বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে শৈশব অবস্থা থেকে যৌবনে পৌঁছে দিয়েছিলেন। শুধু নামেই নয়, প্রকৃত অর্থেই তিনি বাংলা সাহিত্যের 'সাহিত্য সম্রাট' ছিলেন। তাঁর সাহিত্যপ্রতিভা ,দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি ভালোবাসা তাঁকে অমরত্ব দান করেছে। তিনিই আমাদের মাতৃপূজার বোধন মন্ত্রের প্রথম বৈদিক ঋষি 'বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়'!বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তার অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতে, "সত্য ও ধর্মই সাহিত্যের উদ্দেশ্য "। খ্যাতি বা অর্থের উদ্দেশ্যে লেখা নয়; লিখতে হবে মানুষের কল্যাণ সাধন কিংবা সৌন্দর্য সৃষ্টির অভিপ্রায়ে। বাংলা সাহিত্যের ভান্ডার সমৃদ্ধ ও বিকশিত বঙ্কিমের কালজয়ী সৃষ্টির সম্ভারে। তিনি এখনো সমভাবে সাহিত্য পিপাসুদের মননে জনপ্রিয় চর্চিত ও পঠিত। বাংলা সাহিত্যে তিনি রয়ে যাবেন চিরকালীন।

=======================
পাভেল আমান- হরিহরপাড়া- মুর্শিদাবাদ

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী