গল্প ।। সিপাহী বিদ্রোহের কবলে ।। সৈকত মাজী - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Thursday, July 18, 2024

গল্প ।। সিপাহী বিদ্রোহের কবলে ।। সৈকত মাজী

সিপাহী বিদ্রোহের কবলে

সৈকত মাজী 

ক্লাস এইটে পড়ে শুভ্র। কাল ইতিহাস পরীক্ষা ওর, সেজন্য দুপুর বেলা খেয়ে দেয়ে বসেছে বই নিয়ে, পড়ছে সিপাহী বিদ্রোহ। কিছুক্ষণ পড়া হয়েছে এমন সময় দরজাতে কে যেন ধাক্কা দিচ্ছে। দরজা খোলার পর শুভ্রর চক্ষু চড়কগাছ। সামনে দাঁড়িয়ে ইতিহাস বইয়ে দেখা সৈনিকদের মত সাজ পোশাক পরা একজন।
- কে আপনি? কি চাই?
- আমি মঙ্গলপান্ডে, চল যুদ্ধ করতে হবে তোকে। মহাবিদ্রোহ শুরু হয়ে গেছে, চল চল জলদি চল আমার সাথে।
- কি-ই-ই-ই? না না আমি যাবো না কাল আমার পরীক্ষা,আমি যদি যাই আর মা যদি জানতে পারেনা তাহলে আমার আস্ত রাখবে না, দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন।
- না না ওটি হচ্ছে না বাছাধন। আমরা ওদিকে যুদ্ধ করবো আর তুমি শুধু দুই পাতা পড়ে পরীক্ষাতে লিখে নাম্বার পাবে সেটি হবে না, যুদ্ধ তোমাকে তো করতেই হবে। এমনি এমনি না গেলে তোমাকে জোর করে নিয়ে যাবো আমি।
- দয়া করুন স্যার সত্যি বলছি আমার কাল পরীক্ষা, তা নাহলে সত্যি সত্যি, মা কালীর দিব্বি বলছি স্যার আপনার সাথে গিয়ে ইংরেজদেরকে ওদের ঠাকুরদার নাম ভুলিয়ে দিয়ে আসতাম।আজ গেলে আমার মা আমার আস্ত রাখবে, ছেড়ে দিন স্যার, নেস্কট বার মা কালীর দিব্বি বলছি স্যার যাবো।
- না কোনো কথা হবে না, আমাকে দেখছি জোর করে তোমাকে তুলে নিয়ে যেতে হবে, দাঁড়াও আমি ডাকছি লোক...
তাঁতিয়া তোপি, রজব আলী, বাহাদুর শাহ একবার সবাই আসবেন তো এ তো যেতে চাইছে একে তুলে নিয়ে যেতে হবে,
এই শুনে শুভ্র এক দৌড়ে পালিয়ে চলে এসেছে বাইরে, তারপর দৌড়াতে দৌড়াতে এসে পৌঁছেছে ওদের বাড়ির সামনে পুকুর পাড়ে, আর এসে লুকিয়েছে ওদের বানানো মাছ ধরার গোপন আড্ডাতে।
- খুব বাঁচান বেঁচে গেছি। আর একটু হলেই তো...এখানে কেউ আসতে পারবে না... কেউ জানেই না... হি হি হি..
এমন সময় ঝোপের ডাল পাতা সরিয়ে শুভ্র যেখানে বসে দম নিচ্ছিলো সেখানে ঢুকল একজন ভদ্রমহিলা, পরনে রাণীদের মতো পোশাক কিন্তু একটু আলদা, যুদ্ধের সাজ হাতে একটা তলোয়ার, শুভ্র দেখেই চিনেছে ইতিহাস বইয়ে ছবি দেখেছে। ঝাঁসির রানী লক্ষীবাঈ।
- এই যে রাজার কুমার উঠুন, নবাবপুত্তুর উঠুন... তাড়াতারি উঠুন...
- রানীমা আপনিও এসেছেন আমার কাছে যুদ্ধে সাহায্য চাইতে, কিন্তু আমার যে কাল পরীক্ষা আমি তো যেতে পারবনা রানী লক্ষীবাঈ, ক্ষমা করবেন,
- ওঠ বলছি বেয়াদপ, দুপুরবেলা পড়তে এসে না পড়ে ঘুমানো হচ্চে তোমার। তারপর আবার আলতু ফালতু কথা... দাঁড়াও  আজ তোমার হচ্ছে। আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন...
এই বলে যেই রানী লক্ষীবাঈ তলোয়ার বাগিয়ে এগিয়েছে অমনি দৌড়াতে গিয়ে কিসে যেন পা আটকে পড়ছে শুভ্র, মাথাতে হাত বুলাতে বুলাতে উঠে দাঁড়িয়ে, চোখ কচলে দেখে রুল হাতে চোখ গোল গোল গোল করে দাড়িয়ে একদৃষ্টিতে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মা।

===============

 

সৈকত মাজী 

বেলডাঙা, কুস্থলিয়া,বাঁকুড়া,722133



No comments:

Post a Comment