Featured Post
প্রবন্ধ ।। জানা-অজানা তারকেশ্বর মন্দির ।। সৌভিক দে
- লিঙ্ক পান
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
সৌভিক দে
শ্রাবণ মাস শিবের মাস। শিব যে অনার্য দেবতা – সেকথা সকল পণ্ডিতই মেনে নিয়েছেন। দক্ষের বৈদিক যজ্ঞে শিবের নিমন্ত্রণ পাওয়ার কথাই নয়, কিন্তু তাই বলে একসভা লোকের সামনে তাঁর ব্যাপক নিন্দায় খেপে শিবশক্তি মিলে যে মহাপ্রলয় সৃষ্টি করেছিলেন সেটিকে আর্য-অনার্য সংঘাত বলেও মান্যতা দিয়েছেন পণ্ডিতরা। অনার্য ব্যাপ্ত ভারতে আর্যজাতির অনুপ্রবেশ একসময় অনার্য দেবতাদের সেই সভ্যতার অঙ্গীভূত করতে উঠে-পড়ে লাগেন। তাই বেদে রুদ্র, শিবের প্রতিপক্ষ, না কি অনুকৃতি – এ নিয়েও মতভেদ আছে। পুরাণের জন্মকালে এক সমন্বয়ের চেষ্টা চলে সেই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে। এই আত্তীকরণের পদ্ধতিটি বহুবিধ সুবিধার ব্যবস্থা করেছিল সামগ্রিকভাবে সমাজ ব্যবস্থাপনায় সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা ব্রাহ্মণকুলের পক্ষে। তারকেশ্বরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আর তারকেশ্বর বললেই অবধারিত ভাবে মনে পড়বে, শ্রাবণ মাসে ভক্তদের উক্ত শৈবক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে বাঁক কাঁধে যাত্রার কথা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জলপূর্ণ মঙ্গলঘট সন্তানসম্ভবা নারীর প্রতীক। এই ঘটে করে জল বহন – নিঃসন্দেহে প্রাচীন মাতৃকা আরাধনারই দ্যোতনা, সে-সব নিয়ে আমরা উদাসীন। হুগলির তারকেশ্বরের বিখ্যাত মন্দিরে বাঁক কাঁধে পদযাত্রা করে পৌঁছে শিবের মাথায় শ্রাবণ মাসে জল ঢালার যে প্রথা, সেটা উপমহাদেশের প্রাচীন মাতৃকা উপাসনার স্মারক; তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বাঙালি সম্ভবত শিবের মাথায় জল ঢালার বিষয়টা আগে পালন করত না। কারণ, মধ্যযুগে বা ইংরেজ আমলে বাংলায় এই শ্রাবণ মাসে জলবাহী পদযাত্রা উৎসবের কোনও নথি-প্রমাণ নেই। বাংলা জুড়ে শ্রাবণ মাসে মূলত মা মনসারই ব্রত পালন হত, আজও গ্রামাঞ্চলে তা বিপুল পরিমাণে হয়। শহরাঞ্চলেও এই উপাসনার ধারা তুলনায় অল্প হলেও বর্তমান।
যার দ্বারা আত্মার সংস্কার সাধিত হয়, তা-ই সংস্কৃতি। সুতরাং ব্যক্তির মত জাতির, ব্যষ্টির মত সমষ্টির সংস্কারের মূল ভিত্তি হল সংস্কৃতি। জাতির জীবিকা অবলম্বনও সংস্কৃতি। আবার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, আচার-ব্যবহার, সমাজের রীতিনীতিও সংস্কৃতি। সঙ্গীত, সাহিত্য, শিল্পকলা, কাব্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানও সংস্কৃতি। যে জাতির জীবিকার অবলম্বন যত উন্নত, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা যত নির্দোষ, মানস সম্পদ যত সমৃদ্ধ – তার সংস্কৃতিও তেমনই উৎকৃষ্ট। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ কিন্তু এর অনেক ক'টাতেই দুর্বল। তাই বাঙালির নিজস্বতাও দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। উত্তর ভারতে এই শিবের মাথায় শ্রাবণ মাসে জল ঢালা এক বিশাল বড় উৎসব – সেখান থেকেই বাঙালিরা প্রভাবিত। যদিও প্রথাটি প্রাচীন। মনে রাখতে হবে, উত্তর ভারতের দীর্ঘ অংশ শুষ্ক। উত্তর ভারতে অনেক স্থানেই আজও দীর্ঘ যাত্রা করে খাওয়ার জল নিয়ে আসতে হয়। এই প্রথা সেখান থেকে এসেছে, এমন সম্ভাবনাই প্রবল। হরপ্পা সভ্যতা পরিত্যক্ত হওয়ার পেছনেও সরস্বতী নদী শুকিয়ে আসা অন্যতম একটি কারণ। জল ঢালার পেছনে এক সুপ্রাচীন কৃচ্ছসাধন ও তীর্থযাত্রার প্রথা কাজ করে থাকে। কিন্তু নদীমাতৃক সুজলা-সুফলা বাংলায় এমন প্রথা বেমানান, দীর্ঘ দূরত্ব থেকে জল বয়ে আনার এই উৎসব অন্তত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বা জলময় পূর্ববঙ্গের হতে পারে না। তাছাড়া সন্ধ্যা রায় অভিনীত 'বাবা তারকনাথ' সিনেমার সাফল্যের পরে, জল বয়ে নিয়ে শিবের মাথায় ঢালার প্রবণতা খুবই বেড়ে যায়।
তারকেশ্বরের আজকের জনপ্রিয়তার চাপে হারিয়ে যেতে বসেছে, বিগত সময়ের উক্ত মন্দির কেন্দ্রিক কেচ্ছা-কাহিনী সমূহ। বিশেষ করে, ১৯-শতকে তৎকালীন ব্রিটিশ রাজ শাসনাধীন কলকাতার জনসাধারণ্যে বহুল আলোচিত একটি যৌন-কেলেঙ্কারী বিষয়ক অনেক তথ্য আজও অপ্রকাশিত। তা সংগঠিত হয়েছিল – 'এলোকেশী' নামীয় এক নারী, যিনি নবীন চন্দ্র নামীয় এক সরকারি কর্মচারী স্ত্রী ছিলেন, তার এবং তারকেশ্বরের শিব মন্দিরের প্রধান পুরোহিত বা মোহন্ত মাধবচন্দ্র গিরির মধ্যে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে নবীন তার স্ত্রীর শিরোশ্ছেদ করে। পরবর্তীতে ১৮৭৩ সালে তারেকশ্বর হত্যা মামলা নামে একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিচার কার্য সম্পন্ন হয়। এদিকে মাধবগিরি দুমাস নিরুদ্দেশ থেকে পরে আত্মসমর্পণ করে। মামলায় স্বামী নবীন এবং মোহন্ত – উভয়কেই বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি প্রদান করা হয়। মোটা জরিমানা হল মাধবচন্দ্র গিরির। সঙ্গে তিন বছরের কারাবাস।
ঘটনার ঘনঘটা। আসমুদ্র হিমাচল আসক্ত হল। ভক্ত বাড়ল তারকনাথের। দেবদেবী ছেড়ে কেচ্ছা উঠল কালীঘাটের পটে। নাটক, প্রহসন সস্তা রঙ্গ পেল। ছবির বই এলো বাজারে। এ ধরণের অন্তত ৩৪ টী বইয়ের কথা জানা গেছে, যার কয়েকটি চিত্রশোভিত। শেষ হয়ে আবার ছাপল। বটতলা লক্ষ্মীদেবীর দাক্ষিণ্য পেল। বেঙ্গল থিয়েটার মাইকেলের 'শর্মিষ্ঠা' ছেড়ে অখ্যাত লক্ষ্মীনারায়ণ দাসের 'মোহন্তের এই কি কাজ'-এ মুনাফা পেল। নাটকফিরতি মানুষ পাঁচালি গাইল, 'মোহন্তরে লয়ে কত নিউশ ছাপিল।/ মোহন্ত লইয়া কত থিয়েটার হলো।।/ মোহন্ত লইয়া কত বৈষ্ণবাদিগণ।/ সঙ্গীত গাইয়া অর্থ করে উপার্জন...।।' রোজনামচায় মানুষ এলোকেশী শাড়ি, এলোকেশী বঁটি, পানের ডিব্বা নিয়ে বাড়ি ফিরল। বিজ্ঞাপনে মোহন্তর জেলে টানা ঘানির তেল ব্যাথার অব্যর্থ ওষুধ হয়ে বাজারে এল।
ধর্মকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে যেভাবে শাসন করা হয়েছে, বশীভূত করে রাখা হয়েছে, এবং বোকা বানিয়ে রাখা হয়েছে, তার তুলনা ইতিহাসে খুব কমই আছে। সে হিন্দুধর্ম বলুন, ইসলাম বলুন, বা খ্রিস্টধর্মই বলুন। জিইয়ে রাখা অশিক্ষার হাত ধরে এসেছে ধর্মান্ধতা, এবং ধর্মান্ধতার হাত ধরে এসেছে ঘৃণা ও হিংসার রাজনীতি। এই সিস্টেমের সবচেয়ে বড়ো বলি হয়েছে গরিবরা, তথাকথিত 'নীচু জাতের' মানুষরা এবং মেয়েরা। আর সবচেয়ে লাভবান হয়েছে বিত্তশালীরা এবং সংগঠিত ধর্মের ধ্বজাধারীরা। ধর্মের আড়ালে অসামাজিক ও অপরাধমূলক কাজ করার প্রবণতা বহুদিনের। সাধারণ মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির অপচেষ্টার অসংখ্য ঘটনা লিপিবদ্ধ রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। তবে যা জানা গিয়েছে বা কাগজে কলমে লেখা হয়েছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশী ঘটনা বাস্তবে সংঘটিত হয়েছে যার কোনও তথ্য নেই। যতটুকু তথ্য পাওয়া যায় সেখানেও কারচুপি থাকে। প্রায় দু'শ বছর আগে তারকেশ্বরের তৎকালীন মোহন্ত শ্রীমন্তগিরি খুনের দায়ে ধরা পড়েছিলেন। ঘটনাটি ১১ ই সেপ্টেম্বর ১৮২৪ (২৮ ই ভাদ্র ১২৩১) অধুনা বিলুপ্ত 'সমাচার দর্পণ' নামক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল –
"তারকেশ্বরের মহন্তের পুণ্য প্রকাশ। - শুনা গেল যে তারকেশ্বর নিবাসি শ্রীমন্তগিরি সন্ন্যাসী স্বীয় ধর্ম্মকর্ম্ম সংস্থাপনার্থ এক বেশ্যা রাখিয়াছিল তাহাতে জগন্নাথপুরনিবাসি রামসুন্দরনামক এক ব্যক্তি গোপের ব্রাহ্মণ ঐ বেশ্যার সহিত কি প্রকারে প্রসক্তি করিয়া ছদ্মভাবে গমনাগমন করিত। পরে সন্ন্যাসী তাহা জানিতে পারিয়া ২ চৈত্র শনিবার রাত্রিযোগে সন্ধানপূর্ব্বক হঠাৎ যাইয়া বেশ্যাকে কহিল যে একটু পানীয় জল আন আমার বড় পিপাসা হইয়াছে তাহাতে বেশ্যা জল আনিতে গেলে সন্ন্যাসী সময় পাইয়া ঐ ব্রাহ্মণের বক্ষঃস্থলের উপর উঠিয়া তাহার উদরে এমত এক ছোরার আঘাত করিল যে তাহাতে তাহার মঙ্গলবারে প্রাণ বিয়োগ হইল পরে তথাকার দারোগা এই সমাচার শুনিয়া ঐ সন্ন্যাসীকে গ্রেপ্তার করিয়াছে এইমাত্র শুনা গিয়াছে।"
ঘটনার প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস পরে জানা যায় যে অপরাধের জন্য মোহন্তের ফাঁসী হয়েছে। ২৭ শে মার্চ ১৮২৪ (১৬ ই চৈত্র ১২৩০) তারিখে 'সমাচার দর্পণে'ই প্রকাশিত খবরটি ছিল এইরূপ –
"ফাঁসী। - পূর্ব্বে প্রকাশ করা গিয়াছিল যে তারকেশ্বরের শ্রীমন্তরাম গিরি এক বেশ্যার উপপতিকে খুন করিয়া ধরা পড়িয়াছিলেন তাহাতে জিলা হুগলীর বিচারকর্ত্তারা তাহাকে বিচারস্থলে আনাইয়া বারম্বার জিজ্ঞাসা করাতে প্রাণভয়ে ভীত হইয়া তিনবার অস্বীকার করিলেন কিন্তু ধর্ম্মস্য সূক্ষ্ম গতিপ্রযুক্ত চতুর্থবারে স্বীকার করাতে শ্রীযুক্তেরা বহুতর আক্ষেপপুর্ব্বক ফাঁসী হুকুম দিলেন তাহাতে ১৩ ভাদ্র তারিখে রীত্যনুসারে তাহার ফাঁসী হইয়া কর্ম্মোপযুক্ত ফলপ্রাপ্তি হইয়াছে।"
শ্রীমন্তগিরির ফাঁসীর প্রায় ৫০ বছর বাদে তারকেশ্বরের মোহন্ত মাধবচন্দ্র গিরিকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনাও সময়ের অতলে তলিয়ে যায়। বলা ভাল, সে-সব তলিয়ে যেতে দেওয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যতম বিষয় হল, তারকেশ্বরের মন্দির চত্তরে রয়েছে তারকেশ্বর শিবের পুরনো মন্দির। সে-কথা আমরা ক'জনই বা জানি! মোহন্ত মাধবচন্দ্র গিরি ও এলোকেশী নিয়ে ঘটে যাওয়া কেচ্ছাকে কেন্দ্র করেই নতুন মন্দিরের প্রয়োজন হয় বলে অনেকে মনে করেন। পুরনো গর্ভ মন্দিরকে অপবিত্র রূপে চিহ্নিত করে, সেখান থেকে শিবলিঙ্গ তুলে নতুন গর্ভমন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। যদিও গৌরিপট্টটি রয়ে যায় পুরনো গর্ভমন্দিরে। তাই আজও পুরনো গর্ভমন্দিরে সন্ধ্যায় ধূপারতি হয়। কিন্তু সেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। সারাদিন উক্ত স্থান বন্ধ থাকে। আরতি নিয়ে প্রশ্ন করলে বলা হয়, "এখানেই তারকেশ্বরের আরাধনা শুরু হয়েছিল – তারই নিমিত্তে এই আরতি"। মোহন্ত মাধবচন্দ্র গিরি ও এলোকেশীকে কেন্দ্র করে পুরোনো গর্ভমন্দির কেন অপবিত্র রূপে চিহ্নিত হল – তা নিয়ে শোনা যায় নানা রসালো, মুখরোচক গল্প। এই সবই লোকমুখে প্রচারিত। যদিও তারকেশ্বরের মোহন্তদের কুকীর্তির কথা নানা গ্রন্থ, পত্রিকা, এমনকি সমাজমাধ্যমেও প্রকাশিত ও বহুল চর্চিত।
ক্ষেত্রসমীক্ষক দেবীশংকর মিদ্যা জানিয়েছেন, "সুপ্রাচীন যোনিবেদি সহ লিঙ্গ স্তম্ভ থেকে যোনিপট্টকে আলাদা করে নতুন ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সপ্তদশ অষ্টাদশ শতকে আগত দশনামী শৈব সম্পদায়। যেখানে লিঙ্গকে তোলা যায়নি, সেখানে যোনি পট্টকে সরিয়ে দিয়েছেন; আবার যেখানে লিঙ্গকে তোলা গেছে, সেখানে সেটিকে তুলে নতুন ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন তাঁরা।" ক্ষেত্রসমীক্ষায় এই ব্যাপারটা দেবীশংকর'বাবু অনেক জায়গায় লক্ষ্য করেছিলেন বলে আমায় জানান। কিন্তু তারকেশ্বরের পুরোনো মন্দির থেকে নতুন মন্দিরে শিবলিঙ্গ স্থানান্তর বিষয়ক তথ্যাদি প্রমাণসহ নথিবদ্ধ আজও হয় নি। এই প্রসঙ্গে দেবীশংকর'বাবু আরও জানিয়েছেন, "দশনামিরা যখন তারকেশ্বর হাতে নেয়, একই সময় হাতে নেয় ছত্রভোগ বা বড়াশীর অম্বু লিঙ্গ মন্দির। তাঁরা শশাঙ্ক প্রতিষ্ঠিত সুপ্রাচীন লিঙ্গ মূর্তি থেকে বিশাল সাইজের গৌরিপট্ট সরিয়ে দেয়।" সেটি এখনও রয়েছে ওখানে। তবে দশনামিরা বেশী দিন ছত্রভোগে থাকতে পারেন নি। ছয় প্রজন্ম পর, স্থানীয় যুগী সম্প্রদায়ের বিদ্রোহের ফলে তাঁরা চলে যান।
পুরনো মন্দিরের চূড়ার ভগ্নাবশেষের চিত্র রূপে যা পোস্ট করলাম, তা অতি প্রাচীন হতে পারে না। কারণ, এই নির্মাণ যথেষ্ট আধুনিক। ছবিটি পেয়েছি 'Bongodut Dock - TV'-র youtube channel থেকে। তার জন্যে শুভদীপ'বাবুর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। ভগ্নাবশেষটি দেখে আমার মনে হয়েছে, তা প্রবেশ পথের সিংহদ্বারের অংশ। তবে তারকেশ্বরের মন্দির একাধিকবার সংস্কার করা হয়েছে – একথা ঐতিহাসিক সত্য। 'প্রসঙ্গ তারকেশ্বর' গ্রন্থের রচয়িতা মানব মণ্ডল জানিয়েছেন, "এলোকেশী কাণ্ডের পর মন্দির অপবিত্র হয়েছিল – এমন কথা কোনও কোনও সংবাদপত্র লিখেছিল বটে। কিন্তু তারকেশ্বরের বর্তমান আটচালা মন্দির অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মাণ করে দেন গোবর্ধন রক্ষিত। বর্তমান মন্দির নির্মাণের নিখুঁত তারিখ জানা না গেলেও তারকেশ্বরের নাটমন্দিরের ফলক থেকে জানা যায় যে ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে হাওড়ার চিন্তামণি দে বর্তমান নাটমন্দিরটি নির্মাণ করে দেন। ফলে বর্তমান মন্দিরের প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে ঘটে যাওয়া এলোকেশী কাণ্ডের যথেষ্ট আগে।" অর্থাৎ শিবলিঙ্গ যদি স্থানান্তরিত হয়েও থাকে, তাহলে তার সঙ্গে এলোকেশী কাণ্ডের কোনো সম্পর্ক নেই – এটা একপ্রকার প্রমাণিত হল।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, লন্ডনের ভিক্টরিয়া আলবার্ট মিউজিয়ামে ১৮৭৩ সালের সমসাময়িক একটি কালীঘাট পটচিত্র আজও রক্ষিত। চিত্রে বাম দিকের সামনের অংশ জনৈক এক ব্যক্তির সামনে মোহন্ত মাধবচন্দ্র গিরি ও ডান দিকে দুই জন মহিলার সঙ্গে এলোকেশী বর্তমান। মোহন্ত ও এলোকেশীর মধ্যবর্তী অংশের পিছন দিকে আজকের তারকেশ্বর মন্দিরই দেখা যাচ্ছে। এমনকি মন্দিরের দরজার ভিতর দিয়ে গর্ভমন্দিরে অধিষ্ঠিত তারকনাথের শিলা এই পটচিত্রে দৃশ্যমান। অতএব, এলোকেশী বিষয়ক কেচ্ছার সঙ্গে পুরোনো মন্দির থেকে নতুন মন্দিরে শিবলিঙ্গ স্থানান্তরের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ভক্তদের ভক্তির প্রাবল্যে আঘাত করার জন্যে এই তথ্যসমূহ প্রকাশ করা হয় নি, সঠিক ইতিহাস জানার ও জানানোর আগ্রহ থেকেই এমন প্রয়াস।
এরপরেও তারকেশ্বরের মোহন্তদের অনাচার ও অত্যাচার এক নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অনেকে ধরেই নিয়েছিল যে এটাই নিয়তি এবং এর প্রতিবাদ করে কোন লাভ নেই; বরং তাতে মোহন্তর রোষের শিকার হতে হবে। ইংরেজ শাসকেরা সুবিধা ও অর্থের লোভে ক্ষমতাবান মোহন্তর পক্ষ সমর্থন করায় মোহন্তর বিরুদ্ধাচারণ আরও কঠিন হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এহেন দুর্নীতিগ্রস্ত মোহন্তকেও ক্ষমতাচ্যুত করতে একটি আন্দোলন গড়ে উঠেছিল এবং প্রাথমিকভাবে মোহন্তর বিরুদ্ধে সংগঠিত হলেও ক্রমশঃ এটা স্বাধীনতা আন্দোলনের অংশ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তারকেশ্বরের মোহন্ত ছিলেন সতীশচন্দ্র গিরি। তিনি নিয়ম করেছিলেন – বিয়ের আগে এলাকার কুমারীদের তার কাছে পাঠাতে হবে; তার এলাকায় নতুন বধূ হয়ে আসা সব মহিলাদের তার আশীর্বাদ নিতে হবে; মন্দিরে প্রবেশ করার আগে সব দর্শনার্থীদের ভিজে কাপড়ে তার সামনে গিয়ে অনুমতি নিতে হবে ইত্যাদি। বিগ্রহের কাছে পৌঁছতে অনেকগুলি দরজা পেরোতে হত এবং প্রত্যেক বারই পৃথকভাবে প্রবেশ মূল্য দিতে হত। মোহন্তকে মনে করা হত 'ধর্মের ধারক এবং বাহক'। প্রবর্তিত নিয়মগুলিকে ধর্মীয় আচার ও অনুশাসনের অঙ্গ বলে চালান হত এবং ধর্মভীরু মানুষ বিনা প্রতিবাদে এগুলি মেনে নিত। যদিও দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে সমস্যাটির সমাধান হয়। উক্ত মোহন্ত সতীশচন্দ্র গিরি জনসাধারণের কাছে ক্ষমা চেয়ে তারকেশ্বর ছেড়ে চলে যান। মন্দির চালানোর জন্য একটি পরিচালন সমিতি গঠন করা হয় এবং হুগলীর জেলা-জজের রায় অনুযায়ী ঠিক হয় – যিনিই মোহন্ত হোন না কেন, তাঁকে পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্ত মেনে কাজ করতে হবে।
এত বিতর্ক সত্ত্বেও তারকেশ্বর মন্দির ও তারকনাথ কেবলমাত্র বাঙালির নয়, বাংলায় বসবাসকারী সারা ভারতের শৈব ও অশৈব সকল সম্প্রদায়ভুক্ত হিন্দু ভক্তমাত্রেরই অতি গুরুত্বপূর্ণ এক তীর্থস্থান। বিশেষ করে বাংলায় বসবাসকারী মারওয়ারী সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ এই তীর্থস্থানের প্রতি বহু কাল ধরেই খুব আকৃষ্ট। আজ বাঁক কাঁধে তারকেশ্বর যাত্রা সমাজের একাংশের কাছে হুজুগে পরিণত হয়েছে। তাতে কতটা ভক্তি আছে, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। ধর্ম-কেন্দ্রিক ইতিহাসাশ্রিত তথ্যের সঙ্গে ভক্তিবাদের সংঘাত যুগ যুগ ধরে চলছে। এর শেষ অসম্ভব। তবু সঠিক তথ্য পরিবেশন ও জানার অধিকারকে মান্যতা না দিলে, নিজেদের ইতিহাসকে অসম্মান করা হয়। বিশ্বাস ও অন্ধবিশ্বাসের মধ্যে যে বিরাট ফাঁক থাকে, তা এমন প্রামাণ্য তথ্য দিয়েও ভরাট করা সম্ভব নয়। তবু চেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে। সত্য জানার পরেও বিশ্বাস অটুট রাখা সম্ভব; তারকনাথ স্বয়ম্ভু শিবলিঙ্গ নয়, এই শিলা কাশী পর্যন্ত মোটেই বিস্তৃত নয় – এমন সব যুক্তিযুক্ত তথ্য জানার পরেও, তারকেশ্বর শিলা রূপে প্রতিষ্ঠিত দেবাদিদেব মহাদেবকে আন্তরিক ভাবে ভক্তি করা যায়।
==================
তথ্যসূত্রঃ
১.) শিবঠাকুরের আপন দেশেঃ মোহন্ত-এলোকেশীর কেচ্ছা এবং দেড়শো বছরের বাংলা আবেগ, অরিত্র দে, বঙ্গদর্শন'২৩ এপ্রিল, ২০২১।
২.) এলোকেশী-মোহন্ত কথা – একটি ফিরে দেখা কাহিনী ও একটি আন্দোলন, দীপক সেনগুপ্ত, অবসর : তথ্য ও বিনোদনের ওয়েবসাইট।
৩.) তীর্থের ঝাঁক, কৌশিক দত্ত, অষ্টম অধ্যায়, প্রতিদিন রোববার ডট ইন'৭ এপ্রিল, ২০২৪।
৪.) প্রসঙ্গ তারকেশ্বর, মানব মণ্ডল, প্রজ্ঞা পাবলিকেশন, পরিমার্জিত দ্বিতীয় সংস্করণ।
চিত্রঋণঃ সংবাদ প্রতিদিন
- লিঙ্ক পান
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
জনপ্রিয় লেখা
প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা
লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত। সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম। মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন। সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন্ন সাহিত্য
মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি
লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', '
কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার
বসন্তের কোকিল তুমি বিচিত্র কুমার (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে। (০২) এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ। তারপর প্রতিটি শীতের ভোরে অনেক রোদের পরশ মেখে ছুঁয়ে যেতে আমার বুকের বাঁ পাস শিশির রেখা, তখন প্রতিটি ভোর হয়ে যেত ভীষণ রকম মিষ্টি আর ছিলো শুধু বসন্তের ঘ্রাণ মাখা। প্রতিটি সকালে একঝাঁক মায়াবী পাখি অনুভবের
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সূচিপত্র কবিতা ।। তৈরি হয় এক নতুন বিপ্লবের পটভূমি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী কবিতা || প্রতিবাদ || জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। সেই মেয়েটি রাত জাগে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। শপথ ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। কোরাস রাত ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই ।। দীনেশ সরকার অণুগল্প ।। ব্যাকবোন ।। বিশ্বনাথ প্রামাণিক কবিতা ।। আন খুঁজে আন শিরদাঁড়াটা ।। জয়শ্রী সরকার কবিতা ।। জীবন এখন ।। লাবণী পাল কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই! ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা ।। যুদ্ধ , প্রতিনিয়ত ।। সুমিত মোদক মুক্তভাবনা ।। কী বলব! ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রতিবেদন ।। বিচার পাক অভয়া ।। জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় অভয়ার যে চিঠিটা আজো পাওয়া যায়নি ।। আশীষকুমার চক্রবর্তী কবিতা ।। জগন্মাতা নাকি তিনি ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। মেয়েটির মৃত্যু দেখে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। অন্ধকারের আলো ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। ঘোষণা ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। অপেক্ষায় ।। রণেশ রায় কবিতা ।। গ্লানি ।। সুজন দাশ কবিতা ।। বিনীত আবেদন ।। শংকর ব্রহ্ম কবিতা ।। তুই যে মেয়ে তিলোত্তমা ।। অশোক দাশ কবিতা ।। শোক সন্তাপের দুর্গা ।। সুদামকৃষ্ণ মন্ডল ক
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪
সূচিপত্র গল্প ।। উৎশব উৎসব ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। বাংলায় প্রথম আত্মজীবনী লেখিকা রাসসুন্দরী দেবী ।। সবিতা রায় বিশ্বাস মগরাহাট (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) এলাকার স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগধারা ইত্যাদি (পর্ব-৬)।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। একটি মৃত্যু, অজস্র প্রতিবাদ ।। নাসির ওয়াদেন কবিতা ।। অন্ধকার জগৎ ।। সুপ্রভাত মেট্যা গুচ্ছকবিতা ।। আবদুস সালাম কবিতাগুচ্ছ ।। হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় খোলা কবিতা ।। মানস মণ্ডল নিবন্ধ ।। সম্পর্ক ।। সংঘমিত্র ব্যানার্জি উপন্যাসিকা ।। উদয় ।। তপন তরফদার সিনেমা রিভিউ ।। ছবি : বহুরূপী, পরিচালক : রাজাদিত্য ব্যানার্জি ।। আলোচনা: জয়শ্রী ব্যানার্জি গল্প ।। গল্পটা মিথ্যে নয় ।। বিকাশকলি পোল্যে অণুগল্প ।। স্পিড ব্রেকার ।। দেবাংশু সরকার কবিতা ।। একটা পুরোনো অঙ্ক ।। রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। গোপন সম্মোহন ।। বিশ্ব প্রসাদ ঘোষ কবিতা ।। আগুনের পাখী হব ।। কাকলী দেব দুটি কবিতা ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। বেঁচে থাকে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। হে অনিন্দ্য, রক্তাক্ত মাকড়সার সর্বাঙ্গ ঋষি দৃশ্য খাও
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু
"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান
"নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)। আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার সফ্ট কপি ডাউনলোড করতে ছবিতে ক্লিক করুন। ====০০০==== মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যাটি অনলাইনে অর্ডার করে বাড়িতে বসে পেতে পারেন অর্ডার করার লিঙ্ক: https://notionpress.com/read/nabapravat-utsab-2023 NABAPRAVAT30 কোডটি ব্যবহার করলে কম দামে পাবেন। (প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ নিরাশাহরণ নস্কর। সম্পাদক, নবপ্রভাত।)
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় পার্থ সারথি চক্রবর্তী কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই। খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই হবে বলে মনে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন