google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re গল্প ।। কেন পারলাম না ।। অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪

গল্প ।। কেন পারলাম না ।। অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ

কেন পারলাম না 

অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ 


বাসের ঠিক পিছনের সিটেই একটা জায়গা পেলাম বসার। জানলার ফাঁক দিয়ে চলে যাচ্ছে কত গাছ,দোকান, বাড়ি।  মনে হলো এই তো সব ঠিকই আছে। এগিয়ে চলেছি গন্তব্যের দিকে।  শান্তিপুরের শাড়ির অনেক গুলো অর্ডার আছে।সামনেই জামাইষষ্ঠী। বুঝতেই পারছেন আমি একজন  মহিলা শাড়িব্যবসায়ী। জীবনের অনেকটা সময় লড়াই করে এই জায়গায় পৌঁছেছি। এখন অবশ্য অভ্যাস হয়ে গেছে এভাবে মার্কেটিং করতে । যতই কষ্ট হোক হাল ছাড়িনি। নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি নিজের চেষ্টায়। 
এখন  নিজেকে একজন স্বাধীন ব্যবসায়ী ভাবতে বেশ লাগে।  সিটে বসে কতকিছুই মনে পড়ে। 
হঠাৎ জোরে গানের আওয়াজ শুনে পিছন  ফিরে তাকালাম। তিনজন বছর ১৯ - ২০ বয়সের অল্পবয়সী ছেলে ফোনে গান বাজিয়ে চলেছে।  
চেহারার বর্ণনাটা একটু বলি। এককানে দুল,সামনের লাল নীল চুল।  পান কিংবা কোনো নেশার জিনিস খেয়ে দাঁতগুলো বেশ  কালো।  রঙিন জামায় উগ্র সেন্টের গন্ধ।আর  এক হাতে বালা। বেশ জোরে নিজেদের মধ্যে গল্প করে চলেছে, সেই সঙ্গে ফোনে গান বাজিয়েছে।
সামনের সিটে একজন ভদ্রলোক নম্রভাবেই বললেন, গানটা একটু আস্তে বাজাতে পারছ না। গান শুনতে হয় তো,কানে হেডফোন দিয়ে শোনো। অন্যকে এভাবে বিরক্ত করছ কেন?
সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটি,দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলল,বাসটা কি তোর বাপের? বেশ করব জোরে গান চালাবো। তুই বলার কে রে? বলার সঙ্গে সঙ্গে আরও জোরে গান চালিয়ে ভদ্রলোকের একেবারে কানের কাছে গিয়ে ফোনটা ধরে থাকলো। 
আরও একবার বললেন, এসব অসভ্যতা বন্ধ করো।নিজের জায়গায় ভদ্র ভাবে বসে গান শোনো। আরও রেগেমেগে  সঙ্গে সঙ্গে   মুখের সামনে চড় তুলল ছেলেটি। দুজন সহপাঠী হাতটা ধরে থামিয়ে দিল। 
বাস ভর্তি প্যাসেঞ্জার। সবাই পিছন ফিরে তাকালো একবার।  অথচ কেউ কিচ্ছু বলল না।  এত বড়ো একটা অন্যায় চোখের সামনে দেখেও মুখ ফিরিয়ে নিল সবাই। কি অদ্ভুত ব্যাপার। কারোর মনে হচ্ছে না, এই অসভ্য ছেলেগুলোকে শাসন করা উচিৎ। 
খুব ইচ্ছে করছে একটা টেনে কষিয়ে চড় মারি ওই অসভ্য ছেলেগুলোকে।
অথবা কিছু তো বলি। 
কিন্তু পারিনি কিছু বলতে।আর সবার মতো বিদ্রেষমূলক তাকিয়ে বাইরে দিকে চোখ ফক্সঘুরিয়ে নিলাম। 
ভদ্রলোক আর কিছু না বলেই পরের স্টপিজে নেমে পড়লেন। 
ছেলেগুলো অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে।  যেন কোনো লড়াইয়ে জিতে গেল।
আর এতগুলো মানুষ বিনাপ্রতিবাদে ওদের সাফল্যের সঙ্গী হয়ে গেলাম।  ধিক নিজেকে। ধিক এই বোবাকালা মানুষগুলোকে। আমিও এদেরই একজন।
নেমে পড়লাম নিজের গন্তব্যে।  কিন্তু নিজেকে আজও ক্ষমা করতে পারিনি। কেন পারলাম না একটু প্রতিবাদ করতে?
কেন পারলাম না ওদের বুঝিয়ে দিতে,এটা   ভারতবর্ষ।স্বামীজির গড়া ভারতবর্ষ। নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের ভারতবর্ষ। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন