ভুলেও ভূত খাবেন না
প্রদীপ দে
ওরে বাপরে!
বেড়িয়ে যা মা পেট থেকে !
হয়েছে কি, আজ সরস্বতী পুজো তায় সিঙ্গেল, তাই অগত্যা বাড়িতেই খিচুড়ি খেয়ে অলস ঘুম ঘুমোতে যাচ্ছি, এমন সময়ে মোবাইলে কেলোর ডাক এল,
-- কিরে? কি করিস? হাগদার মোড়ে চলে আয়, ' ' ' সরস্বতী মেলা ' বসেছে। মাছ ভাজা খাওয়াবো, চলে আয়।
-- তুই হাড়কিপ্টে খাওয়াবি ?
-- হ্যাঁ। আজ মালকড়ি কামিয়েছি, তাই ……
দৌড় মারলাম। সাইকেলে পোঁ পোঁ ……
শহর প্রান্তে বিরাট মেলা। সব জোড়ায় জোড়ায় একেবার জুড়ে জুড়ে ঘুরছে, খাচ্ছে। আমরা দুজনেই সিঙ্গেল। দেখে মন খারাপ হলেও কিছু করার নেই। মনের কষ্ট মনই জানে।
মেলা চষে খেলাম। সন্ধ্যা নামলো। আলো ঝিলমিল করে উঠলো। আমি কেলোকে বললাম,
-- কিরে মাছ কোথায়?
কেলো বললে,
-- ওই তো মাছের মেলা। চল, মাছভাজা খাওয়াবো।
সত্যি ভাজা মাছের হাট। কেলো মাছ ভাজা অর্ডার দিল। পেমেন্টও করে স্লিপ নিয়ে নিল। আমি তো অবাক! যাকগে, ভাজামাছ এসে গেল দুই প্লেটে সাজিয়ে।
কেলো গপাগপ খেতে লাগলো। আমি ভাবছি কোন মাছটা আগে খাবো। তা প্রথমেই বড় ইলিশ ভাজাটা মুখে ঢুকিয়ে দিলাম। দাঁতে কামড় বসাতেই মাছ ভেঙে গুঁড়িয়ে গলায় প্রবেশ করতে লাগলো, আর আমার অস্বস্তি বাড়তে লাগলো, গলা দিয়ে " হাঁউ মাঁউ খাঁউ " স্বরে কাঁদুনে আওয়াজ বের হতে থাকলো।
গলা ব্যাথা শুরু হয়ে গেল। হাত থেকে প্লেট পড়ে গেল। কেলো ভয় পেয়ে গেল,
-- কি হলো রে? কি হল?
-- আমি গলার ব্যাথায় কাতরে উঠলাম। ও তাড়াতাড়ি আমাকে সাইকেলের সামনে বসিয়ে ও নিজেই প্যাডেল করতে করতে ছুটলো ডাক্তারের কাছে।
ডাক্তার ভালোভাবে পরীক্ষা করে নাজেহাল হয়ে গেল। কোন কিছুই ধরতে পারলো না। বেকার সময় নষ্ট। গলায় ব্যাথা বাড়তে লাগলো, আর আওয়াজে বুঝলাম নারীর স্বরে কথা,
-- " হাঁউ মাঁউ খাঁউ "
আমি বাড়ি চলে এলাম। মা শুনে কেঁদে পাড়ার মাকু ওঝাকে ডাকলো। ওঝা এসে সব মেপে সব বুঝে জানালো,
-- খাইসে, মছলিখাকি গলায় সেঁইদিয়ে গেইসে।
মা কেঁদেকেটে একশা।
-- সে কি বাছা ?
-- আর কি কই ? মাইয়া ভূত! সিঙ্গেল পাইয়া ....
-- ছাইড়ে দেন বাবা। ছাইড়ে দ্যান ....
-- হ্যাঁ হ্যাঁ দ্যাকতাছি ………
ওঝা ঝাড়ন- ফোড়ন, নাচন- কেঁদোন করলো। দেখি একটা বড় ঢেকুর তুললাম আর পেত্নীর ঢলাটা গলা দিয়ে নেমে পেটে চলে গেল।
ওরে! বাপরে! পেটে সে কি ব্যাথা?
মরে যাই ... আর মরে যাই …
আওয়াজে ঘর ভরে গেল, " কাঁউ মাঁউ খাঁউ "
ওঝাও বেকায়দায়। আবার ফুঁ ফাঁ দিল। এবার দেখি প্রবল বেগে একটি বাতকর্ম হয়ে গেল। আর পরিস্কার বুঝলাম পেত্নীটি সেই বেগে পায়ুদ্বারে গিয়ে আটকে গেল।
-- " চাঁউ মাঁউ খাঁউ "……
উরিঃ বাওরে! একি হলো রে?
এ কি যন্ত্রণা রে?
পেট ফেটে গেল …
ওঝা তাড়াতাড়ি এক গ্লাস জোলাপ খাইয়ে দিল।
মিনিট খানেক বাদে বিরাট বেগে বড় বাহ্যে করতে ছুটলাম। পেট থেকে " ফাঁউ ফাঁউ ফাঁউ " আওয়াজ তুলে ' মাছউলি ' বেরিয়ে গেল।
ওহঃ কি শান্তি রে! কি শান্তি!
ওঝা মায়ের থেকে ভালো কামিয়ে নিল ঠিকই, কিন্তু একটা ভালো উপদেশ দিয়ে গেল,
-- চেম্বারটার ময়লাটারে জলদি সাফ করিয়ে লিবেন কিন্তু ....
------------------------------
প্রদীপ কুমার দে
বিরাটী আবাসন
এল আই জি -৯
এম বি রোড
নিমতা
কোলকাতা -৭০০০৪৯
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন