পীযূষ কান্তি সরকার
ট্রেজারি অফিসার মিস্টার শেঠি প্রতিটি ফটোকপি চেক করছেন আর তাঁর প্রতিটি কাজ কল্লোল মানসিক অস্থিরতা নিয়েই নিরীক্ষণ করে চলেছে। আধার, প্যান, ভোটার কার্ড বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে তার কোনো চিন্তা নেই কিন্তু গোলমাল যেখানে সেটা কী তাঁর নজর এড়িয়ে যেতে পারবে!
শেষ পর্যন্ত সেই তাঁর শ্যেনদৃষ্টিতে ধরা পড়েই গেল তার নন-লায়াবিলিটি সার্টিফিকেট। গোলমাল পাকিয়েছিল ডিলিং ক্লার্ক স্যাণ্টো, সমস্যা এক্ষেত্রেও সামলাতে হবে সেই কল্লোলকেই।
চাকরি থেকে অবসরের পর কেটে গেছে একটি বছর। জমানো টাকা খরচ হতে হতে ঠেকেছে তলানিতে। তবু ধৈর্যচ্যুত হয় নি সে। পেনশন অফিসে ছুটোছুটি করতে করতে জুতোর শুকতলা ক্ষয়ে চুন। ভুল-ভ্রান্তি ধরা পড়ার পর এ-অফিস সে-অফিস ঘুরে তার স্কুলে ফিরে এসেছে পেনশন ফাইল। ভুল সংশোধন করে ডিআই-এর তদারকিতে পাঠানোর পর তাগাদা দিয়ে দিয়ে অবশেষে এলো পেনশনের পে-অর্ডার। সেখানেও গাঁট। ডিলিং ক্লার্ক স্যাণ্টো পাঁচদিনের মেডিকেল লিভ কাটিয়ে যদি বা এলো তো করল ভুল। কল্লোলকেই কী গুনতে হবে মাশুল !
নতুন হেডমাস্টার সই-সাবুদ করে স্যাণ্টোর ফর্মানুযায়ী বলেছিলেন ডিআই-কে দিয়ে সই করিয়ে নিতে। পূর্ব-পরিচয়ের সুবাদে ডিআই সই করে দিয়ে বলেছিলেন "না-করালেই ভালো করতেন ।" আবার ট্রেজারি অফিসারও সেই সুরেই বললেন, " নন-লায়াবিলিটি সার্টিফিকেট দেবে আপনার ইনস্টিটিউশন, সেখানে সরকারি অফিসারের সই নিষ্প্রয়োজন। করাতে গেলেন কেন ?"
কল্লোল বুঝল স্যাণ্টোর আত্মম্ভরিতা তার পথের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরাসরিই বলল, "স্যার এই ভুল আমাদের ডিলিং-ক্লার্কের মস্তিষ্কপ্রসূত। অলরেডি একবছর পার হয়ে গেছে। এখন যদি এই কারণে ফিরতে হয়...!"
না। আর ফিরতে হয়নি তাকে।
-----------
পীযূষ কান্তি সরকার
১/১, কুচিল ঘোষাল লেন, কদমতলা হাওড়া -১
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন