google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re 'নবপ্রভাত' বইমেলা ২০২৩ সংখ্যা পাঠে দু-একটি কথা ।। অরবিন্দ পুরকাইত - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

'নবপ্রভাত' বইমেলা ২০২৩ সংখ্যা পাঠে দু-একটি কথা ।। অরবিন্দ পুরকাইত





'নবপ্রভাত' বইমেলা ২০২৩ সংখ্যা 

একান্ত পাঠে দু-একটি কথা

অরবিন্দ পুরকাইত



একটি বছর পরে নব প্রভাত মুদ্রিত আকারে আবার হাতে এল। বইমেলা ২০২৩ সংখ্যা হিসাবে। যদিও এই পত্রিকার মাসিক ওয়েবজিন সংস্করণ নিয়মিত চলছে। নিয়মিত চলছে এই গোষ্ঠীর 'কথাকাহিনী' এবং শিশু-কিশোরদের 'কিশলয়' ওয়েবজিনও।
       সাহিত্যের বিভিন্ন বিভাগ নিয়ে প্রস্তুত সংখ্যাটির বেশ কিছু লেখা ভাল লেগেছে। প্রথমেই বলতে হবে অনিন্দ্য পালের 'যুদ্ধ-কবিতা এবং কবিতায় যুদ্ধবিরোধ' ও অভিষেক ঘোষের 'কবিতা লিখব কেন' লেখা দুটির কথা। বলতে বাধা নেই, এ লেখা দুটি এবারের সংখ্যার অন্যতম মূল্যবান লেখা। দৃষ্টান্তযোগে শ্রী পালের লেখাটি একটি নিটোল প্রবন্ধ হয়ে উঠেছে। দু-একটি ব্যতিক্রমের উল্লেখ-সহ তিনি লিখেছেন, "আমাদের দেশের কবিরা অবশ্যই 'যুদ্ধ নয় শান্তি চাই' এর পক্ষে কবিতা লিখেছেন, কিন্তু সেগুলো যুদ্ধ-কবিতা বা যুদ্ধবিরোধী কবিতার কোনটাই নয়। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আর যুদ্ধ সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান ছাড়া সৈনিকের সঙ্গে গোলাবারুদের এবং মৃত্যুর বিভীষিকাময় ভালোবাসার স্বাদ পাওয়া খুব দুরূহ ব্যাপার।" অবশ্যই প্রণিধানযোগ্য এ উক্তি। যে-কোনো কবিতা-লিখনপ্রয়াসী— বিশেষত যাদের ঘনঘন কবিতা পায়— শ্রী ঘোষের লেখাটা থেকে কিছু পেতে পারেন বলেই বিশ্বাস। একাধারে সাংবাদিক-সাহিত্যিক ননী ভৌমিকের উপর 'ননী ভৌমিক : জন্মশতবর্ষের অর্ঘ্যদীপও তিমিরবিলাসী' শীর্ষক লেখাটির জন্য সঞ্জয়কুমার দাসকে ধন্যবাদ। এটি প্রকাশ করে সম্পাদক মহাশয় একটি দায়িত্বের পরিচয় দিয়েছেন। 'লোকজ সংস্কৃতি যার ক্ষেত্রস্থল মূলত গ্রামাঞ্চল' শীর্ষক লেখায় সবিতা বিশ্বাস মূলত লোকজ সংস্কৃতির নানান ধরনের কথা বলেছেন সংক্ষেপে। তবে লেখাটা আরও একটু সুসংবদ্ধ হতে পারত এবং আর একটু বিস্তৃত। সংক্ষিপ্ত লেখা হলেও পুনরাবৃত্তি এড়ানো যায়নি।
       ছোটগল্প ও অণুগল্প মিলিয়ে উনিশটি লেখার বৈচিত্র্য নিশ্চয়ই উল্লেখনীয়। বিশেষ করে ভালো লাগে বিজয়ন্ত সরকারের 'একক' শিরোনামে তিনটি অণুগল্প, চন্দন মিত্রের 'মণিমালার আখ্যান', আবিরা ব্যানার্জীর 'কুট্টুসের নুড়ি', প্রিয়ব্রত দত্তের 'সুগন্ধ'। ভাল লেগেছে দেবযানী পালের 'আন্তরিক', সোমা চক্রবর্তীর 'গড়ুরের জন্ম', সুব্রত দেবের 'আশ্রয়', মনসিজ বিশ্বাসের 'গানকাকু', শেফালি সরের 'বিধির নির্বন্ধ', বিশ্বনাথ প্রামাণিকের 'ক্রোধ' প্রভৃতি গল্পগুলি। কোনও কোনও গল্প পড়লে মাঝে মাঝে একটা কথা মনে হয়। গল্প কি কেবলই তার লেখকেরই কথা! অর্থাৎ লেখকই তাঁর পাত্র-পাত্রীদের সমস্ত কথা একাই গড়গড় করে বলে যাবেন, তাঁর সৃষ্ট চরিত্ররা তেমন কিছুই বলবে না! অর্থাৎ আমার বক্তব্য হল, গল্প একজনই  বলছেন নিশ্চয়ই, কিন্তু আমাদের অজানা নয় যে গল্পকার (গল্পলেখকের কথা বলছি না কেবল, আজকের গল্পের উৎস হিসাবে, যাঁরা মুখে মুখে গল্প বলতেন তাঁদের কথাও যদি ধরি) গল্প বলার সময় তাঁর গল্পের পাত্রপাত্রী হয়ে যেতেন অনেকসময়। অনেক গল্পই দাবি করে লেখকের গল্পবুননের সঙ্গে সঙ্গে গল্পের চরিত্রদের মুখ দিয়ে বলানো তথা তাদের মাধ্যমেও প্রকাশ ঘটানো। সোজা কথায়, কোনও কোনও গল্প কিছু সংলাপ দাবি করে। অন্যথায়, বিশেষত একটু বড় গল্প একঘেয়েমিতে আক্রান্ত হওয়াও আশ্চর্য নয়। গল্পে সংলাপও যে এক শক্তিশালী অস্ত্র তা নিশ্চয়ই আজ আর বলার অপেক্ষা রাখে না। একটিমাত্র সংলাপ কোনও গল্পকে অনেককিছুই দিতে পারে, লেখককে রেহাই দিতে পারে অনেকখানি বর্ণনার হাত থেকেও। বিষয়বস্তুর কথায় যাচ্ছি না, ঊষা মল্লিকের 'পড়ন্ত বেলায়' পড়তে গিয়েও মনে হয়েছে কথা ক'টি।
       ছাপ্পান্ন জন কবির বিভিন্ন স্বাদের কবিতা রয়েছে। কারও বা একাধিক। বেশির ভাগ কবিতাই ভাল লেগেছে। ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের আঠারোটি ছড়া রয়েছে আঠারো জন ছড়াকারের। ভাল লাগে বেশির ভাগ ছড়াও।
       'আদর্শনিষ্ঠ ও আপোষহীন' মানুষ শিশির দাসের 'রামসাগরের উপাখ্যান' নামের 'কিছুটা আত্মজৈবনিক' উপন্যাসের চন্দন মিত্রকৃত আলোচনাটি খুব ভাল লাগল। এই আলোচনাটির প্রয়োজন বিশেষভাবে অনুভূত হল এই কথা ক'টি পড়েও : 'এই উপন্যাস আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমাদের মহাপুরুষ ভজনার অসারতা। যে সকল মহাপুরুষের গলায় মালা দিয়ে আমরা শ্লাঘাবোধ করি এইসময়ে যদি আমরা তাঁদের নাগাল পেতাম তাহলে ভাঙা কুলো বাজিয়ে তাঁদের সামাজিক চৌহদ্দির বাইরে পাঠিয়ে দিতাম— এই জ্বলন্ত সত্যকে তুলে ধরেছেন লেখক তাঁর রামসাগরের উপাখ্যান উপন্যাসে।' সঙ্গত কারণেই আলোচক আক্ষেপ করেছেন 'এমন একটি অসাধারণ উপন্যাস প্রচারের আলো না-পেয়ে অপরিচিতের অন্ধকারে আত্মগোপন করে রইল' বলে। বর্তমান আলোচকের আগ্রহ রইল বইটি পড়ার।
       উদিত শর্মার মুক্তগদ্য 'কেন গান...' শীর্ষক ছোট্ট লেখাটি ভাল লেগেছে। সম্পাদকীয়তে সঙ্গত কারণেই বলা হয়েছে, 'সর্বক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের জন্য গলাফাটানো কতটা সঙ্গত সে বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে আমাদের।'
       প্রচ্ছদ ভাল। প্রচ্ছদ বিষয়ে কোথাও কিছু উল্লেখ চোখে পড়ল না। সম্পাদকীয় পাতায় পত্রিকার বর্তমান সংখ্যার উল্লেখ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।

             *             *             *
       

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন