Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

প্রবন্ধ ।। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ।। পাভেল আমান

  মাইকেল মধুসূদন দত্ত

 পাভেল আমান

 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কখনও কখনও এমন সব সাহিত্যিকের আবির্ভাব ঘটে যাদের প্রতিভার গুণে সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। মধুসূদন দত্ত ছিলেন এমনই এক অনন্য সাধারণ মৌলিক প্রতিভার কবি। বাঙলা কাব্যের সুদীর্ঘ যাত্রাপথের মোড় ঘুবিয়ে দিয়েছেন মধুসূদনের কাব্যকৃতি। তাঁর সাহিত্য জীবনের বিস্তার খুব বেশী নয়। কিন্তু তার সাহিত্যিক জীবন ছিল নানান ঘাত প্রতিঘাত  চড়াই-উতরাইএ পরিপূর্ণ। তবু বাংলা সাহিত্যে নিজেকে সু প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সৃষ্টিশীল তার ধারাবাহিকতায়।১৮২৪ সালে ২৫ জানুয়ারি অবিভক্ত বাংলাদেশের যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন অমিত্রাক্ষর (সনেট) ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। বাবা জমিদার রাজনারায়ণ দত্ত কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত উকিল ছিলেন। মা জাহ্নবী দেবী ছিলেন সাধ্বী ও গুণশালিনী নারী। জমিদারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও কবিতার জন্য প্রথম তারুণ্যেই বিসর্জন দিয়েছেন জীবন, ভোগ ও প্রথাগত প্রতিষ্ঠার অভিলাষ। ষোলো বছরের যুবক সবেমাত্র কলেজের ছাত্র, স্বপ্ন বাঁধলেন জীবনে কবি হবেন, বড় কবি- মিল্টন, হোমার, ওভিদ, টাসোর মত বড় কবি। ফলে ধর্মান্তরিত হলেন, রূপান্তরিত হলেন ত্যাজ্য পুত্রে। হয়ে গেলেন আত্মবঞ্চিত এক রিক্ত পথিক। প্রতিভাকে কষ্ট পেতে হয়, প্রতিভাধরদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় যুগে যুগে এমন দৃষ্টান্ত বিপুল। বাংলা সাহিত্যের সর্ব প্রথম এই পরিণতি বরণ করেন তিনি। একাধিক কারণে তিনি বিশিষ্ট, স্বতন্ত্র ও অনন্য।

বাংলা সাহিত্যে আমরা মূলত তিনটি যুগ বিভাজন দেখতে পাই। এর মধ্যে আধুনিক যুগ একটি। সাহিত্য ক্ষেত্রে আধুনিক কথাটা যখন উচ্চারিত হয় তখন মধুসূদন এর নামটি স্মরণে আসে ও মূল্যবান হয়ে দেখা দেয়, অন্তত কবিতার পাঠক, গবেষক ও সাহিত্য চর্চাশীলদের নিকট। মধুসূদন এর কৃতিত্ব হলো তিনি সর্বপ্রথম আমাদের কবিতায় আধুনিক বোধ ও চৈতন্যের সূচনা করেন। এ কারণে তিনি সর্বপ্রথম তুখোড় প্রতিভাধর সার্থক আধুনিক কবি ব্যক্তিত্ব। জীবন ও বাস্তবতা অনুসঙ্গে সর্বপ্রথম প্রাসঙ্গিক সাহিত্য প্রতিভা।বাংলা সাহিত্যে বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত সাহিত্য কর্মের মধ্যে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ১২টি গ্রন্থ এবং ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত ৫টি গ্রন্থ রয়েছে। Timothy PenPoem ছন্দনামে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ, The Captive ladie  দ্বিতীয় গ্রন্থ vissions of The past। পদ্মাবতী নাটক, তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য, মেঘনাদ বধ মহাকাব্য, বীরাঙ্গনা , ব্রজাঞ্জনা হেক্টের বধ, মায়াকানন বঙ্গভাষা'কপোতাক্ষ নদ' ইত্যাদি সনেট। এই সনেটগুলো ১৮৬৬ সালে চতুর্দশপদী কবিতাবলি নামে প্রকাশিত হয়।সাহিত্যে অমর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে মহাকবির স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। মধুকবি তাঁর বিরল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন বাংলা সাহিত্যে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই। অসাধারণ প্রতিভাধর এই কবি তাঁর সৃষ্টিশীলতায় বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে করেছেন সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর।মধুসূদন বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক মহাকাব্য 'মেঘনাদ বধ' ও প্রথম সার্থক নাটক 'কৃষ্ণ কুমারী' প্রকাশ করেন ১৮৬১ সালে।
কবিতায় আনেন নতুন স্বাদ, শব্দ প্রয়োগ, ছন্দ ও বিষয়বস্তু সবকিছুতেই একটি নতুন পরিবর্তন সাধন করেন। ফলে বাংলা কবিতা মানুষের নিকট আধুনিক মননের এক বিস্ময়কর চমক নিয়ে আবির্ভূত হয়। মধুসূদন এর কারণে বাংলা কবিতা সর্বপ্রথম আবৃত্তি যোগ্য হয়ে ওঠে। তবে যৌবনের প্রথম উচ্ছ্বাসে বেশ কিছু ইংরেজি কবিতা রচনা করেন, ঈধঢ়ঃরাব খধফু নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। তবে এসব লেখা তাঁর জীবনে তেমন কোনো সুফল বয়ে আনেনি। তিনি মূল কাজটা করেন বাংলা ভাষায়। তাই বলা যায় কবিতা, নাটক, মহাকাব্য এই তিনটি ক্ষেত্রেই মানুষকে অসম্ভব গ্রাহ্য করে একটি সত্যিকার মূল্যবোধ ও বাস্তবতা প্রতিষ্ঠা করেন। যেমন 'কৃষ্ণ কুমারী' নাটকে জীবনের নিগূঢ় চিত্র ফুটে উঠেছে। বিসংবাদ ও সঙ্ঘাতের মধ্য দিয়ে নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের বিপন্ন জীবনের ছবি দেখা যায়। এক অনিবার্য অসহায়তা মানুষকে করেছে বিহ্বল, করুণ পরিণতির মুখোমুখি। এ ঘটনা সর্বকালের মানুষের জন্য একটি অনিবার্য সত্য বহন করে।মধুসূদনের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য কর্ম "মেঘনাদ বধ" মহাকাব্য। গ্রিক ও ইংরেজি সাহিত্যে অধিত বিদ্যার অভিজ্ঞতা এ গ্রন্থ রচনায় তিনি সচেতনভাবে প্রয়োগ করেন। স্টাইল ও বিষয়বস্তুর দিক থেকে অনেক সাদৃশ্য পাওয়া যায়। মেঘনাধ বধ কাব্য বাংলা সাহিত্যে সর্ব প্রথম অধিক মূল্যবান একারণে- এ কাব্যে প্রবল সর্বনাশের মধ্যেও মানবের ব্যক্তিত্ব ও জীবনের বন্দনা উচ্চকিত হয়েছে। প্রবল প্রতাপশালী রাবন নিজ পুত্র হত্যা প্রত্যক্ষ করেছেন। পুত্রহত্যার শোক তাকে ব্যথিত বিচলিত করছে না। তাঁর একমাত্র উৎকণ্ঠা তাঁর দেশে পরদেশী শত্রু বাহিনী রামেরা। অস্তিত্ব বোধের এমন দৃষ্টান্ত বিশ্ব সাহিত্যেও বিরল, যদিও 'চাঁদ সওদাঁগর' চরিত্রটি অনুরূপ দৃষ্টান্তের কথা স্মরণ করে দেয়। সুতরাং বিবিধ বিচারে এ কথা বলা যায় কবি মধুসূদন বাংলা সাহিত্যের সর্ব প্রথম জীবনবাদী আধুনিক কবি। মাইকেলের ব্যক্তিগত জীবন ছিল নাটকীয় এবং বেদনাঘন। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন মাত্র ৪৯ বছর বয়সে কলকাতায় কপর্দকশূন্য করুণ অবস্থায় মারা যান মহাকবি মাইকেল মধুসূদন।
বাংলা সাহিত্য কে মাইকেল মধুসূদন দত্ত পৌঁছে দিয়েছিলেন এক উচ্চমার্গীয় স্থানে যেখানে বাংলা ভাষা সংস্কৃতি কৃষ্টি ঐতিহ্য জাতীয়তার গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিকতার মর্যাদা ও প্রশংসা লাভ করেছিল। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন দত্তের অবদান অপরিসীম ও চিরস্মরণীয়। ২১০ তম জন্মদিনে মধু কবির প্রতি রইল শ্রদ্ধা ভক্তি ও ভালোবাসা। পরিশেষে বাঙালিরা সর্বোপরি পাঠকেরা যত বেশি মাইকেল মধুসূদনের রচনাবলী পাঠ করবেন তত বেশি তার সম্পর্কে চর্চা ও আলোচনা হবে যা বাংলা সাহিত্যকে আরো বেশি সমৃদ্ধ ও বিকশিত করবে।

-----------------------

রচনা- পাভেল আমান

হরিহরপাড়া -মুর্শিদাবাদ


মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক