google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re অণুগল্প ।। শিবাংশী ।। চন্দন মিত্র - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

অণুগল্প ।। শিবাংশী ।। চন্দন মিত্র

শিবাংশী

চন্দন মিত্র

মেয়েটা বেশ বড়ো হয়ে গেছে, ফাইভে পড়ে। মা মাঝেমধ্যে মুখ ঝামটা দেয়, 'একটা টাকা আবার টাকা', যার মর্মান্তিক তাৎপর্য হল একটা ছেলে থাকলে বংশটা রক্ষা পেত। কিন্তু এগোতে সাহস পাইনি। একটা অফিসে দারোয়ানি করে যা পাই, তাতে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। এর ওপর যদি মেয়ের ঘাড়ে আবার একটা মেয়ে এসে পড়ে তো খেল খতম! সাহস জোগাল স্বয়ং প্রভু। তার সাহসে ভর করে শেষমেশ সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললাম।

     প্রভু আমার ক্লাসমেট ছিল। না, না, তার নাম মোটেও প্রভু নয়। আসলে আমি এখন আর তার নাম উচ্চারণ করতে পারি না, অন্যদের মতো প্রভু নামেই ডাকি। অত বড়ো একজন অলৌকিক ক্ষমতাধর বাকসিদ্ধকে আমি নাম ধরে ডাকতে পারি! আমার বিদ্যে তো মাধ্যমিক তক। প্রভু বিএ পাস, সিদ্ধপুরুষ। হতদরিদ্র পরিবার থেকে কেবল অলৌকিক মাহাত্ম্যের জোরে আজ সে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিয়ে করেছে বড়োলোক বাড়িতে। কুঁড়েঘরের ভিটের উপর জুতসই বাড়ি হাঁকিয়েছে। শিষ্যদের দানেই তার এই গোবরে পদ্ম হয়ে ফোটা। ফুটবেই না বা কেন! প্রভু যা বলে তা ফলে যায়। সাক্ষাৎ শিবের অবতার বলে কথা। ছুটির দিন দেখে একদিন প্রভুর শরণাপন্ন হই। আমাকে দেখেই প্রভু সব বুঝতে পারে, বলে, 'অত ভয়ের কী আছে! কাজে লেগে পড় এবার তোর বাড়ি আলো করে স্বয়ং মহেশ্বর আসবেন।' আমি বলি, প্রভু আমাকে বাঁচালে। পায়ে হাত দিয়ে ভক্তিভরে প্রণাম করি। প্রভু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে একটি রুদ্রাক্ষ হাতে দিয়ে বারতিথি মেনে কীভাবে কী করতে হবে সব বুঝিয়ে দেয়।  

    বড়োমুখ করে বুক বাজিয়ে সবাইকে বলেছিলাম। কিন্তু হল না। ঘরেবাইরে রীতিমতো প্যাঁক খেতে লাগলাম। মেয়ের উপর মেয়ে দেখে মা তো সংসারে রাতদিন ফুটন্ত লাভা ছড়াতে লাগল। তার সব রাগ গিয়ে পড়ল বউমার উপর। প্রভুর কথা বেদবাক্য, নিষ্ফল হওয়ার নয়। আমিই বোধহয় কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করে ফেলেছিলাম। সংসার শরশয্যা হয়ে উঠল। জ্বালা জুড়োনোর জন্য কোথায় যাই? যাওয়ার তো সেই একটাই জায়গা প্রভুর পাদপদ্ম। পা থেকে তুলে চোখের জল মুছিয়ে প্রভু বলল, 'তোরা সাধারণ দৃষ্টির মানুষ, অন্তর্দৃষ্টি পাবি কোথায় রে! তোর বাড়িতে যে এসেছে সে শিবাংশী।' আমি কথার মাথামুণ্ডু না-বুঝতে পেরে ফ্যালফ্যাল করে তার জ্যোতির্ময় মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। প্রভু রহস্যময় হাসিতে মুখমণ্ডল ভরিয়ে বলে, 'বুঝলি না তো। বোকা কোথাকার।'

====================

চন্দন মিত্র

ভগবানপুর (হরিণডাঙা)

ডায়মন্ড হারবার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
সূচক- ৭৪৩৩৩১

       

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন