পোস্টগুলি

Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

অরবিন্দ পুরকাইতের মুক্তভাবনা

ছবি
পিলসুজ ও আলো পিলসুজ। দীপাধার। দীপের প্রায় নিত্য তোয়াজ, দীপাধারের নয়। দীপ আলো দান করে, সেই আলোটি পাওয়ার জন্যে তার সলতে পাকানো থেকে তৈলদান। সলতে উসকে দেওয়া। সর্বোপরি দীপটির পরিপাটি যত্ন। কেন-না লোকে আলো চায় এবং তার পর দেখে কোথা থেকে আলোটা আসছে। কার মাথায় বসে সে আধার আলো দিচ্ছে তা নিয়ে কার আর মাথাব্যথা! তাই দীপাধার অর্থাৎ পিলসুজের দিকে তেমন করে নজর পড়ে না, দরকার হয় না নিয়মিত পরিচর্যারও। তার গায়ে লেগে অনেক অবহেলার ধুলো। তার গায়ে জড়িয়ে থাকে গড়িয়ে-পড়া পোড়া তেলের ক্লেদ। সভ্যতার ময়লা গায়ে মেখে, সভ্যতার আলোদানকারী দীপের তাপ এবং চাপ সহ্য করে ধরে থাকে সে সভ্যতার আলো। আমরা ঘরকে আলোকিত দেখি, খোদ পিলসুজেই সচরাচর সরাসরি পৌঁছায় না সে আলো। আলো-মাথায়-করে দাঁড়িয়ে থাকে সে আবছা-আবছা দৃশ্যমানতা নিয়ে, সামান্য আলোর আভাসমাত্র গায়ে মেখে। কখনও মায়াবি, কখনও ভূতুড়ে এক সত্তায়। কোনও বিশেষ দু-এক দিনে, আরাধ্য দেবদেবী কিংবা মান্য অতিথি-অভ্যাগতদের সন্তোষবিধানে এবং সেইসঙ্গে নিখুঁত আয়োজনের শিরোপা পেতে, তার দিকে একটু নজর। অযত্নের স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম সেই দু-একটি দিন। ব্যতিক্রমই। আলো-ঝলমল সুসজ্জি

সুপ্রীতি বর্মনের প্রবন্ধ

ছবি
সভ্যতার পিলসুজ অগ্নিদ্দীপ্ত সমৃদ্ধশালী সভ্যতার অট্টালিকাসম প্রত্যাশার নীচে ধ্বস কুঁড়েঘরের ভাঙা চালে চাঁদের আলো।ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পূর্নিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।বিলাসিতায় হুঁকোয় উড়ানো উল্লাসী ধোঁয়া উবে যায়।পড়ে থাকে করতলগত দৃঢ়মুষ্টিতে পোড়া চিতাভস্ম ছাই দুটাকার বিড়ি। ঠোঁটের ফাঁকে বিভাজিকায় নগ্ন খোলা হাওয়ায় সংসারের চাপ খানিকটা হ্রাস পায়।চোখে তখন চালচিত্র ভাসে কুমারটুলীর মৃন্ময়ীর।আমার ঘরের লক্ষ্মী তখন ব্যস্ত গোবরের ঘুঁটে দিতে হস্তপদ্মে পাঁক অশ্লীল না শুভ মহরৎ আমার উদরপূর্তির আয়োজন।লৌহসম বজ্রদৃঢ় পেশী সাতমণ ভার সামঞ্জস্যে গাঁইতির কোপ মাটির কোলে আঁচড়ে অন্ন ফলে। কোমর অবধি কিংবা হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে ঠায় নিমগ্ন একাগ্রচিত্তে মায়ের জরায়ুতে বীজধান রোপন দুইহাত দিয়ে কোমলচিত্তে পিতার বিশ্ব চরাচরে তুমি পালনপিতা।ঠুনকো আরাম পরিত্যাগে কপালের ঘাম পায়ে ফেলে উদয়াস্ত কঠোর পরিশ্রমে তোমার ভাগ্যের তালা খোলে। দূর্ভাগ্যের কঠোর শানিত ঘায়ে পায়ের তলার জমি চলে যায় অস্তাচলে।রবি তখন ফোঁটা ফোঁটা চোখের জলে ঝুপ করে ডুব অন্তহীন সমুদ্রে তোমার যেন আত্মহত্যা।সামর্থ্যের দড়িতে দাঁড়িয়ে একপ

রীনা তালুকদারের প্রবন্ধ ও কবিতা

শ্রমজীবি মানুষের অস্তিত্বে মে দিবস প্রতিবছর মে দিবস আসে শ্রমিকের কপালে লাল কাপড় বেঁধে। বদলায় না শ্রমিকের শ্রম, ঘাম ও কামের জগত। 'মে দিবস' বিশ্বে একটি আলোচিত দিন। কেন আলোচিত সে বিষয়টি পৃথিবীর প্রত্যেক খেটে খাওয়া মানুষ মাত্রই বর্তমান বিশ্বে জানে। অন্তত: বিস্তারিত না জানলেও কাজের বিরতি বা এই দিন ছুটি থাকায়। এতদিনে মানুষ এই বিষয়ে যথেস্ট সচেতন ভাবেই জানে। ছুটি থাকলেও এমন কতক পেশা আছে যারা মে দিবসে কাজ না করলে তাদের মুখে কেউ খাবার তুলে দিবে না। এসব পেশার মানুষের কাছে মে দিবসের তাৎপর্য বুঝা না বুঝার মধ্যে কোন আলাদা পার্থক্য নেই। মে দিবসের তাৎপর্য বর্তমানে ব্যাপক। এ বিষয়ে বিশ্লে¬ষণ করতে হলে পৃথিবীর সৃষ্টির ইতিহাসে চোখ বুলিয়ে আসতে হয়। বিশ্বের বয়স প্রায় ১৫০০ কোটি বছর। তাহলে পৃথিবীর সৃষ্টি ধরা যায় আজ থেকে ৪৬০ কোটি বছর আগে। প্রাণের আবির্ভাব হয়েছিলো ১০০ কোটি বছরের মধ্যে। কিন্তু এ সময়ে কখন, কোথায়, কিভাবে মানুষের জন্ম তা সঠিক ভাবে কেউ বলতে পারেনি। বিশেষজ্ঞদের অনুমান হোমো ইরেক্টাসকেই পৃথিবীর প্রথম মানুষ। বনমানুষ ও হমিনিত্তের বংশের এ পৃথিবীতে আগমন ঘটে প্রায় ৩৫ লক্ষ বছর পূর্বে

রণেশ রায়ের প্রবন্ধ

ছবি
প্রাচুর্যের অভিশাপ ---- একটা স্ববিরোধিতা (সম্প্রতি প্রকাশিত বিক্ষুব্ধ এ ভারতের অংশবিশেষ) প্রকৃতির নীলাভ উদাস আকাশ থেকে বিজন জঙ্গলে সুউচ্চ বৃক্ষের মিনারের ফাঁক দিয়ে আলোর চ্ছ্বটা বর্ষিত হয়। উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে জঙ্গল আলো আঁধারের লুকোচুরি খেলায়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোন এক শিল্পীর তুলির টানে প্রকৃতি সেজে ওঠে। প্রকৃতির অপ্রতিহত ক্ষমতার নিদর্শন প্রতিফলিত হয় মুক্ত বাতাসের স্পর্শে, জলের অবিরাম কলকল প্রবাহে, জঙ্গলের আশ্রয়ে, পাহাড়ের প্রত্যয়ে। প্রকৃতির নিয়ম রক্ষা করে মানুষের সঙ্গে তার এক মেলবন্ধন গড়ে উঠেছে এই প্রকৃতির জগতে যেখানে আধুনিক 'সভ্যতা'র আলো বর্ষিত হয় না। মানব গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে সমুদ্র তটে পাহাড়ের কোলে জঙ্গলের আশ্রয়ে। নাগরিক সভ্য সমাজের বন্ধন না মেনে এরা যারা এক বন্ধনহীন জীবন যাপন করে চলেছে তারা হল আদিবাসী। প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ মানব সম্পদ। পৃথিবীতে অসংখ্য এই মানব গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত হয়েছে মানব সমাজ। অসংখ্য মানব গোষ্ঠীর অন্যতম হলো বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠী। তাদের দুর্ভাগ্য তারা জানত না যে প্রকৃতির অকৃপণ দান বর্ষিত হয়েছে তাদের ওপর। তারা শুয়ে থাকে প্রকৃতির এই দান

বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা

ছবি
পথে প্রান্তরে দৃশ্য বদলে যায় রঙ রূপ রেখা এবং আস্তে আস্তে যে দেখছে সেও চোখে সানগ্লাস নিয়ে তুমি স্থির কর্পোরেট সূর্যের আলোয় ফলতঃ তোমার চোখে পড়ছে না কারা বাসুকী নাগের মতো ধরে আছে আমূল দুনিয়া । পোশাক পাল্টায় চোখের আদলে কিছু ভিন্নতার দাগ এই বদলে যাওয়া চারপাশ পর্ব থেকে পর্বত পর্বত থেকে পাথর পাথর থেকে প্রাসাদ । মানুষের সভ্যতার শুরু হয়েছিল অরণ্যে গুহায় তারপর আস্তে আস্তে নদীতীর খুঁজে নেওয়া পথ ও প্রান্তর ধরে হাঁটতে হাঁটতে হাইওয়ে । প্রান্তজীবি মানুষেরা সভ্যতাকে এতদূর বয়ে নিয়ে এল অথচ তাদের তুমি অসভ্য বর্বর ভাবছো হায় আস্ফালন। প্রকৃত শিল্পী থাকে উদাসীন মেঘের আড়ালে নীরবে অন্ধকারে একা ছায়া মেখে আলো লিখে চলে। --------০০০------- বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় আদ্রা, পুরুলিয়া

বিশ্বজিৎ লায়েকের কবিতা

ছবি
  শ্রম, শস্য, অনাহার এক। একটা জলহই -এর লেকেন ঢুকে যাছি ই'দেয়াল থেকে উ'দেয়াল দেয়াল কি জানে — সে গাঁ-গঞ্জ আর নাই মেয়েরা টুকটুকে লাল ঠোঁটে ভোরের লেডিস স্পেশাল ঘরে ফেরে দুপুরবেলা — রাঁধে, বাড়ে, খায় বাচ্চারা ইংলিশ মিডিয়ামে আলফাবেট শেখে স্বামীও সচল পয়সা — সোহাগে খেলে চাঁদ পাশাপাশি বসে টিভি সিরিয়াল কতকিছু শেখে চুল, ত্বক, নখের আরাম বিজ্ঞাপনে যেমন দেখায় উঁচু বুক, শূন্য ফিগার তুলসীতলায় জ্বলে মোমবাতি ফুঁ দিয়ে নয় মোবাইলে বাজে শঙ্খনাদ অমনি অমনি একদিন ঢুকে যায় গর্ভে পরকীয়া শীতের আরাম দুই। মাটির দেয়ালে ঝুলছে মেডেল আটা প্যাকেটের পলিথিনে ঘুমিয়ে আছে শান্ত শংসাপত্র নীচে মাননীয়'র উজ্জ্বল সহি পায়ে আর বশ নাই খুড়া গণেশ, কার্ত্তিক, কিরাতের মহড়া পিঁধে আগলা-পিছলা উলফা আসরে ধুম লাচ যুয়ান মরদ তখন — লাচ দেখাইয়ে পিরিত বিহা, ছেলে-পুলান দু'চুখে দেদার খুয়াব পেটে ভুক তবু মহড়া পিঁধলে এখনু নিজেকে রাজাই লাগে লাচ ছাড়িস না ব্যাটা, ভুখ তো ভুখ, দিন ফুরালে নুন মাড়েই সোয়াদ পিতলের ঘটিতে কনকনে জল এই কিরাতভূমে তিন। ঘাটের চাতালে বসে গা ঘষছে মধ্যদুপুর স্নান এই দ

চারুর মুক্তগদ‍্য

ছবি
শত আমিনার আত্মকথা জীর্ন শাড়ির ভাঁজে শীর্ন শরীর। ইটভাটার সকালের দৃশ্য পটে ফুটে ওঠে ব্যস্ত শত আমিনার চরিত্র। ওরা দিন মজুর। খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষী। দিনের আলো নিভে এলে মালিক শ্রেনী অস্বচ্ছ পর্দা সরিয়ে ঢুকে পড়ে জীর্ন শাড়ির ভাঁজ খুলে শীর্ন শরীরের অভ্যন্তরে। কাল সাপের ছোবলের আতঙ্কে কেঁদে ওঠা শব্দ প্রাচীর ভেদ করে ছড়াতে পারেনা উদার আকাশে। দেওয়ালের প্রতিটা ইটে তখন শ্রমকন্যাদের অসতী হওয়ার ছাপ। একমুঠো অন্নের জোগানের জন্য লুটে পুটে খায় মালিক শ্রেনী। তবু পূর্নতা পায়না অভুক্ত পেট। হাড় সর্বস্ব শরীর গুলো সারাদিনের পরিশ্রমে বেদনার্ত তবু মালিকের দালাল প্রান্তে জড়িয়ে নেয় তাদের। শীতল পানীয়ের বোতলে ঢেলে দেয় শ্রমকন্যাদের থকথকে কালো রক্ত। চোখের জলে ঝাপসা হয়ে আসে তার দুটি চোখ । ফুটপাতের এককোনে অসাড় দেহটাকে মেলে দেয় আমিনা। ছায়াময় বাতিস্তম্ভের নীচে তার লজ্জাবনত শরীর । ভোরের আলো ফুটতে তখনও কিছু ঘন্টা দেরি। তারপর ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে বাবু আর বাবুর বিবিদের চুমুক। আর আমিনা ? সে চলেছে তোমাদের সুখী ইমারতের ইট গড়তে। সব কিছুর আড়ালে যে গল্পটা আছে তাই ফুটে ওঠে প্রতিটি কাঁচা ইটের অলিন্দে অল

প্রিয়দর্শী চক্রবর্তীর কবিতা

ছবি
  দুশো বছরের ছায়াবৃক্ষ     (স্মরণে বরণে কার্ল মার্কস) তুমি এসেছিলে বলে... তুমি এসেছিলে বলে কাঠফাটা রোদে আকাশ ভেজানো বৃষ্টি, মেঘের আদরে কৃষকের স্নান, বুক বেঁধে বাঁচে কৃষ্টি। তুমি এসেছিলে বলে বৃন্তেশাখায় কৃষ্ণচূড়ার লাল, মেহনতি ঘামে ঘনায় প্লাবনে পূর্ণচাঁদের কাল ! তুমি এসেছিলে বলে অনাহার তবু আজন্ম পথে হাঁটে, স্বপ্নপ্রলেপে যৌথ খামার নিশান ওড়ায় রাতে। তুমি এসেছিলে বলে দিনদুনিয়ায় ঘুরছে রথের চাকা প্রগতির ঢঙে সারথী মানুষ রামধনু রঙ মাখা। তুমি এসেছিলে বলে সংবেদ আজও আজানেই খোঁজে মন্ত্র, নীলকন্ঠেও বিষ মুছে দিয়ে বুনে যায় গণতন্ত্র...। তোমার সঙ্গে সখ্য আমার মহাকাল গিঁটে বন্দি ইতিহাসই জানে, কিসের উজানে ছুঁয়ে যায় এই সন্ধি...! তুমি আসবে বলেই-ই... ---------------000------------------- প্রিয়দর্শী চক্রবর্তী দেশবন্ধুনগর, বাগুইআটি কলকাতা-700059

পারিজাতের গল্প

ছবি
গোধূলি চোর "বাঃ, বউয়ের রঙটা তো বেশ হয়েছে! খুব সুন্দর! এই নে, এই টাকা কটা রাখ দেখি! এ দিয়ে কিছু কিনে দিস ওকে। কেমন?" গোধূলি চোখ তুলে তাকায় ভটচাজ্ গিন্নীর দিকে। বিশাল বপু, একটু আধটু হাঁটতেই হাঁপ ওঠে। আশ্বিনের শেষাশেষিও কপালে চিড়বিড় করছে ঘাম। বয়স — তা পঞ্চাশ মতো হবে! তবে ঠিক ঠাহর হয়না — শরীর দিয়ে যেন এখনও মাখন চুঁইয়ে পড়ছে! অবশ্য রইয়ে সইয়ে রাখা শরীর অমন তো একট আধটুু হবেই! এতো আর তার মায়ের মতো কালি পরা অকালে বুড়িয়ে যাওয়া একটুখানি জীবন নয়! কমলি ছোঁ মেরে টাকাটা নিয়ে নেয় ভটচাজ্ গিন্নীর হাত থেকে। "ও ধোলো রূপেই তো মজেছে আমার ছেলে। তাই তো কিছু দেয়া থোয়া নেই ড্যাংড্যাং করে কালীঘাটে গিয়ে সিঁদুর পরিয়ে ঘরে তুলল এই মেয়েছেলেটাকে।" সিঁড়ির হাতলটা ধরে একপা পিছিয়ে যায় গোধূলি। কানের পাশদুটো কেমন গরম হয়ে যাচ্ছে। চোখদুটো জোর করে নামিয়ে নেয় সে— যাতে মুক্তাবৎ বৃষ্টি না ঝরে পরে অচিরেই! "তোর সবেতেই বাড়াবাড়ি কমলী! বাড়িতে লক্ষ্মী এলো, তাকে পেয়েও তোর সুখ নেই!" পান খাওয়া লাল পুরু ঠোঁটদুটো ফাঁক করে একখাল হাসে কমলী। "আমাদের আবার সুখ! গেরামে যাও বা একরক

সবর্না চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা

ছবি
একটা মেয়ের গল্প রোজ একটা আলোর আলপিন এসে স্বপ্নে বিঁধে যায় মেয়েটার। ততক্ষণে চড়ুইটা ঘুলঘুলিতে কিচকিচ করতেই থাকে.... জল আঁচড়ে মেয়েটা দুহাত উড়িয়ে দেয়। ঘরের আনাচকানাচ থেকে মুখে করে টেনে আনে ধূলো। চেটে নেয় ধবধবে মার্বেলের মেঝে। তারপর আঁশবটিতে কুচিয়ে নেয় তার স্বপ্নের বেশ খানিকটা উন্মুক্ত আকাশ। জ্বলন্ত গ্যাসের সামনে বাষ্প হয়ে উবে যায় শরীরের নোনতাজল। বিন্দুবিন্দু মেঘ ঘুরপাক খেতে থাকে মাথার চারধারে... রোজই দুকাপ ধোঁয়াওঠা আদাচায়ের গন্ধে তার 'দাদাবৌদি'র মাথার ওপর সূর্য হেসে ওঠে..... একরত্তি 'ভাইটি'র সবকিছু সেরেসুরে শেষমেশ বাথরুমে ঢোকে একবালতি ফেনা মুখেনিয়ে। তারপর নিরালায় বসে গান লেখে তার কুঁচকে যাওয়া ঠান্ডাহাতে। রঙীন বুদবুদে ভেসে ওঠে তিনবেলা খেতেপড়তে দেওয়া হাজারদুইমাসমাইনের তার গোছগাছ সংসার। তাকে ছাড়া এখানে কালবৈশাখী ওঠে... অথচ, পান থেকে চুন খসলেই চড়ুইটার সাথে তাকেও বুঝি উড়ে যেতে হবে অন্য এক মানচিত্রের আকাশে... =============০০০============ Sabarna Chatterjee Shalbagan, Noapara Barasat, Kol-125

রবীন বসুর নিবন্ধ ও কবিতা

ছবি
।।নিবন্ধ।। ওরা  কাজ করে : শিশু শ্রমিক    সরকারি হিসেবে বলা হয় ৭ থেকে ১৭ ওরা শিশু শ্রমিক l আমরা জানি ৭ নয় ৫ থেকেই  শুরু হয়ে যাচ্ছে শ্রমিক জীবন l বর্ণপরিচয় সহজপাঠ নয়, ওদের শিক্ষা শুরু হয় সেই ভোর হতে, আর শেষ হয় দিনাবসানে বা অনেক রাতে l  ওদের গুরুকুল চায়ের দোকান, পাইস হোটেল, ধাবা,  ইটভাটা, মোটর গ্যারাজ, পাথর খাদান, ফ্ল্যাট বাড়ি, রাজ মিস্ত্রি কাজ— বিস্তৃত সে পরিমণ্ডল l ব্যাপক আকাশ l তবে সে আকাশে আলো নেই, শুধুই মেঘলা আবছায়া আর স্তিমিত অন্ধকার l অথচ কত আলো, কত আয়োজন চারপাশে l গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষে ভোট আসে, সর্বজনীন শিক্ষা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, শিশু সুরক্ষা অধিকার আইন, শিশুশ্রম  বিরোধী আইন,কত বিন্যস্ত সুচারু কারুকার্যময় বাহারি বিলাপ ! তবু  গোটা ভারতবর্ষে ৬ থেকে ১২ কোটি শিশু শ্রমিক l এটা সরকারী হিসেব, তাই রাজনীতি  ঢুকে আছে, বাস্তব নিদারুণ এক ভয়াবহ চিত্র দেয় l দারিদ্র্য আর সামাজিক সুরক্ষার অভাব এই শিশুশ্রমের মূলে l উন্নত দেশগুলিতে সামাজিক সুরক্ষা বলয় থাকে, কিন্তু ভারতবর্ষের মত তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়শীল দেশে সামাজিক সুরক্ষা না থাকায় আর উদার অর্থনীতির ধাক্কায় বেক

প্রশান্ত সেনের কবিতা

ছবি
সাক্ষী আষাঢ় মাস রংটা গায়ের মিশকালো তার কেষ্টচরণ নাম হাতজোড়া তার কেটলি ও ভাঁড় দরদরে গায়ে ঘাম। কত্তটুকুন বয়স-বা আর হয়তো বছর দশ; কিংবা বারো --- শৈশবে তার শুকনো সকল রস। হাড় ভাঙানো খাটনি যে তার বেতন তিনশো ষাট পেট ভরা তার নেই যে খাবার পকেট গড়ের মাঠ। পান থেকে চুন খসল যদি রক্তচক্ষু দর্শন যায় শুকিয়ে অশ্রুনদী হোক যত গাল বর্ষণ। গাল খেয়ে দিন যায় তবু হায় গাল ভরা তার হাসি লক্ষ্মীদেবী হননি সহায় তাই খাটে ফরমাশি। ফুটপাতে তার বিছ্না পাতা আশমানী ছাদ ভরসা নন বিধাতাও পরিত্রাতা নামলে পরে বর্ষা। একদিন হায় মুষলধারায় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি... জল থৈ থৈ সব রাস্তায় যেইদিকে যায় দৃষ্টি। বৃষ্টি মাথায় সারাটি রাত কেষ্ট ভিজে চান আঁকড়ে ধরে সেই ফুটপাত রাত্রি অবসান। বৃষ্টি সাথে লড়াই করে এবার অবসর সারাটি রাত যোঝার পরে গা-কাঁপিয়ে জ্বর... বৃষ্টিভেজা রাতের পর জল যদিও থামে থামল না আর কম্পন জ্বর বাড়ল উচ্চগ্রামে। কমল না আর তার সেই জ্বর ফেলল সে শেষ শ্বাস রইল পড়ে ফুটপাত-ঘর সাক্ষী আষাঢ় মাস। ------ooo------ ©প্রশান্ত সেন নজরুল পার্ক, পূর্ব

স্বপ্ননীল রুদ্রর কবিতা

ছবি
বৃক্ষদূত _________________________ সমস্ত টবে এখন ফুলের সুদীর্ঘ উপন্যাস শিকড়ে শিকড়ে সুসংবদ্ধ বাক্যবিন্যাসের রস নাগরদোলার মতো অস্থির ঘূর্ণন সঙ্গে নিয়ে গাছ গাছে প্রদক্ষিণে পরখ করে ফুলের যশ সমস্ত টবে এখন কলুষ-নিবারক পঠন স্নিগ্ধতার শব্দবন্ধ, নিবিড় সমাসবদ্ধ পদ--- উন্মুক্ত গ্রন্থাগারের মতো অবাধ প্রবেশ হয়ে রসের নিরক্ষরতা ত্বরিত করে দিয়েছে রদ সমস্ত টবে এখনও মাটির ভেতরে শ্বাস নেয় টবওয়ালার সস্তায় খরচা করা নিনাদিত হাঁক, শুকিয়ে যায়নি তার রক্ত জলকরা ঘামের ফোঁটা মূল বেয়ে উঠে তারা ফুলে ফুলে লাগিয়েছে তাক ঠেলাগাড়িতে লাদাই হয় গাছ-ধারনের সারি, সারি সারি শ্রমের সজ্জায় বিমূর্ত সবুজ ফাগ--- বহুদিন আসে না পাড়ায় টববাহী বৃক্ষদূত সময় তাকে করাতে কেটেছে কি ভুলে অনুরাগ? _________________________________ স্বপ্ননীল রুদ্র "কল্পসুগন্ধী " হাকিমপাড়া ডাক ও জেলা: জলপাইগুড়ি _________________________________

আর্যতীর্থর দুটি কবিতা

 স্রেফ ছুটি শ্রমদিবসের ছুটির মজায় থাকেন শ্রমের দার্শনিক ঘুম ভাঙিয়ে চা দিয়ে যান মাইনেবিহীন তাঁর শ্রমিক। অফিসবাবু আড়মোড়া দেন শ্রমদোহাইয়ের ফাঁকতালে, বাড়ির বউয়ের শ্রমের ঘানি মে দিবসের প্রাক্কালে। পয়লা মে'তে বন্ধ যত ব্যাঙ্ক ও অফিস সরকারী, ( সারাবছর শ্রমের পরে এটুক ছুটি দরকারী) পায়নি ছুটি এ টি এমে নজর রাখা চৌকিদার, সিকিউরিটি শ্রমিক কিনা খবর রাখে কেউ কি তার! রিক্সাওয়ালার সকাল থেকেই প্যাডেল টানার এক রুটিন চলছে অটো, খালি পেটে ছুটির মানে অর্থহীন। রাজমিস্ত্রি, খুচরো শ্রমিক , ফুটপাতিয়া দোকানদার পয়লা মে'তে ব্যস্ত সবাই করতে ভাতের জোগান তার। পয়লা মে'তে ব্যাঙ্গে হাসে ছাঁটাই হওয়া চটশ্রমিক, অন্তত কেউ কারখানাটা বন্ধ হওয়ার ব্যাখ্যা দিক। শ্রমের মানে প্রোমোটারের দয়ায় খাওয়া একবেলা কাজ পাবে কে ঠিক করে দেন নেতা এবং তাঁর চেলা। শ্রমের ঘামের এপিটাফে চিটফান্ডের নাম লেখা, মজদুর সব তৈরী আছে , কাজের কোনো নেই দেখা। শ্রম এ দেশে খিদের সাথে কেঁদে করে রোজ আপোষ অশ্রমীদের ছুটি ছাডা আর কিছু নয় মে দিবস। --------০০০--------  ।।লিংক।। প্রতিটি শ

শর্মিষ্ঠা বিশ্বাসের অণুগল্প

 শনিবার    ********    শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস  প্রতিটা শনিবার আমার কাছে মহার্ঘ,এটুকু বলতেই আমি রিমিকে বললাম- বুঝেছি।পল্টু আসে তো? কবে থেকে পল্টু রিমি'র ছেলে হয়ে উঠেছে, একথা আমার জানা। সেই সেবার, যেবার আমরা উত্তরণ সেবা সোসাইটি থেকে ব্যাসপুর গ্রামে হেল্থ ক্যাম্প করতে গিয়েছিলাম! আর ক্যাম্প চলাকালীনই ওই গ্রামেরই পঞ্চায়েত সদস্যা সুমিত্রা রজক একটি হাড়জিরজিরে ছেলেকে ক্যাম্পে এনে হাজির করেছিলেন।           সুমিত্রার শেষ কথাটা এতদিন হলেও ভুলিনি। সুমিত্রা-- ওর দু' বার জন্ডিস হয়ে গেছে।কি বলবো বলুন, বিড়ি শ্রমিকদের পরিবারে এমন ঘটনা আখছার! ওর বাবা গত হওয়ার পর  ওর মা'ই কষ্ট করে চার ভাইবোনের সংসার চালান। ছেলেটি মেধাবী। ক্লাস নাইন পর্যন্তই! এরপর জন্ডিস! একটা কিছু ব্যাবস্থা করুন আপনারা। নইলে চোখের সামনে...        এরপরই রিমির সেই দ্বার্থহীন কথা-- তোমার জামাকাপড় নিয়ে এসো। আমার সাথে যেতে হবে তো তোমাকে! তবুও ও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে আমি কনুই দিয়ে রিমিকে গুতো দিয়ে বলেছিলাম- নেই!                                  বহুদিন বাদে একটা কথা মনে পড়ে গেল আমার।আমাদের গাড়িটা চলতে শুরু

সোমা ভারতীর কবিতা ও অণুগল্প

ছবি
শ্রমিক ওইখানে কারখানা হবে- সবুজের বুকে মিটিমিটি সন্ধ্যাতারা। শ্রমিকের ঘরে ভিনদেশী চাঁদ নেমে আসে, মিথ্যের অজগর চোখ টিপে হাসে। খড়ের ছাউনিতে স্বপ্ন পিছলে যায়, এক বিন্দু শিশির চোখের কোনে। একুশের মেয়েটা লাল চেলি খোঁজে, মায়ের কপালের টিপ সূর্যর মত জ্বলে। ঠান্ডা ঘরে অঙ্ক কষে কোট-প্যান্ট-টাই পোশাকের আড়ালে খাদ্যলোভী। পান্তাভাতে লঙ্কা ঘষে শ্রমিকের ছোট মেয়ে, তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে অবসরে ক্লান্ত উৎসবে অবসন্ন শ্রমিক বিপ্লবী।  স্লোগানের ফোয়ারায় ভিজতে ভিজতে লাল ফিতে কাটে প্রশিক্ষিত হাত। শ্রমিকের হাতে ফোস্কা পড়ে ছিটেবেড়ায় নতুন করে মাটি, বছরের ফেরে বোনাস মেলে বন্ধ কারখানার তালা-চাবি। শ্রমিকের প্রতিশব্দ তখন বিপন্নতা। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় না, খিদেটাই মরে যায়। পাততারি গোটানো অজগর শ্রমিকের বিক্ষোভে গলা মেলায়, আড়ালে ডাবা পেট হজমের বড়ি খায়। গান্ধীর দেশ,বুদ্ধের দেশ, এ দেশ নির্বোধের ও। সভ্যতার স্তরে স্তরে ঘূনপোকার বাসা, মরচে পড়া প্রতিবাদ,সংবিধান শব দেহ। রঙ বদলায় নীতি বদলায়, অপুষ্ট হাত পতাকা তুলে নেয়। মিছিলের শেষে ক্লান্ত পায়ে 

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪