Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

রীনা তালুকদারের প্রবন্ধ ও কবিতা

শ্রমজীবি মানুষের অস্তিত্বে মে দিবস



প্রতিবছর মে দিবস আসে শ্রমিকের কপালে লাল কাপড় বেঁধে। বদলায় না শ্রমিকের
শ্রম, ঘাম ও কামের জগত। 'মে দিবস' বিশ্বে একটি আলোচিত দিন। কেন আলোচিত সে
বিষয়টি পৃথিবীর প্রত্যেক খেটে খাওয়া মানুষ মাত্রই বর্তমান বিশ্বে জানে।
অন্তত: বিস্তারিত না জানলেও কাজের বিরতি বা এই দিন ছুটি থাকায়। এতদিনে
মানুষ এই বিষয়ে যথেস্ট সচেতন ভাবেই জানে। ছুটি থাকলেও এমন কতক পেশা আছে
যারা মে দিবসে কাজ না করলে তাদের মুখে কেউ খাবার তুলে দিবে না। এসব পেশার
মানুষের কাছে মে দিবসের তাৎপর্য বুঝা না বুঝার মধ্যে কোন আলাদা পার্থক্য
নেই। মে দিবসের তাৎপর্য বর্তমানে ব্যাপক। এ বিষয়ে বিশ্লে¬ষণ করতে হলে
পৃথিবীর সৃষ্টির ইতিহাসে চোখ বুলিয়ে আসতে হয়। বিশ্বের বয়স প্রায় ১৫০০
কোটি বছর। তাহলে পৃথিবীর সৃষ্টি ধরা যায় আজ থেকে ৪৬০ কোটি বছর আগে।
প্রাণের আবির্ভাব হয়েছিলো ১০০ কোটি বছরের মধ্যে। কিন্তু এ সময়ে কখন,
কোথায়, কিভাবে মানুষের জন্ম তা সঠিক ভাবে কেউ বলতে পারেনি। বিশেষজ্ঞদের
অনুমান হোমো ইরেক্টাসকেই পৃথিবীর প্রথম মানুষ। বনমানুষ ও হমিনিত্তের
বংশের এ পৃথিবীতে আগমন ঘটে প্রায় ৩৫ লক্ষ বছর পূর্বে। যদিও তাদের
অস্ট্রালোপিথেকাস জাতীয় অমানুষ মনে করে মতামত ব্যক্ত করেন অনেকেই। বিতর্ক
যাই থাক এ হোমোইরেকটাস একজন মানুষ হিসাবে কাঁচা মাংস ঝলসে ভক্ষন করেছেন
বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। সে সঙ্গে পরবর্তী সময়ের ইতিহাসে দেখা যায় যে
নেআন্ডাটাল মানুষ ইউরোপের তুষার যুগে কঠিন শীতে নিজেকে রক্ষা করে জীবন
বাঁচিয়েছেন এবং সে সময় প্রিয় মানুষকে কবর দেয়ার প্রচলন শুরু করেছেন।
তারপরই আবিস্কার হয় ক্রোমানীয় মানুষ। যার ধারাবাহিকতায় আজকের
হোমোসেিিপয়েনস্ জাতি। ক্রমশ: তুষার যুগ হতে প্রস্তুর যুগ-মধ্যপ্রস্তুর
যুগ- অস্ত্র আবিস্কারের যুগ এবং নব প্রস্তর যুগ। আর এ যুগে এসে মানুষ দেহ
সজ্জার পাশাপাশি উৎপাদন শুরু করল। খাদ্যের জন্য আর প্রকৃতির উপর নির্ভর
না করে নিজেরাই উৎপাদনে নেমে পড়ল। উৎপাদনের সাথে গৃহ পশু পালন জীবন
জীবিকার ক্ষেত্রে ঘটিয়েছে এক নতুন বিপ¬ব। এ নব প্রস্তর যুগই কৃষি ও পশু
পালন যুগ হিসাবে আজকের বর্তমান সময় পর্যন্ত মানুষের সভ্যতার বিকাশ
ঘটেছিল। নব প্রস্তর যুগের উত্থানের মধ্য দিয়ে ক্রমেই মানুষ চাষাবাদের
কাজের সহায়ক হিসাবে বিভিন্ন দ্রব্যাদি আবিস্কার করে। শস্য উৎপাদনের
পাশা-পাশি ফলমূল ও গৃহপালিত পশু ইত্যাদি মানুষের জীবন জীবিকার ক্ষেত্রে
দারুণ ভাবে অবদান রেখেছে। পরবর্তীতে সময়ে যখন বিনিময় ব্যবস্থার শুরু হয়
তখন দ্রব্যের বিনিময়ে দ্রব্য বিনিময় হতো আর এভাবেই মানুষ তাদের প্রয়োজনীয়
চাহিদা মেটাত। এ সময়ে মানুষ গোত্রতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। এক
একটি গোত্র বন বাদাড়ের পৃথক পৃথক এলাকায় বসবাস করতে আরম্ভ করে। মানব
সভ্যতার ইতিহাসে কৃষি সভ্যতার বিকাশের সাথে গড়ে ওঠে সামন্তরিক প্রথা। আর
এ সামন্ত প্রথা মানুষকে কঠিন শাসকে পরিণত করেছে। সামন্ত প্রথা মূলত
মানুষের শিকারের অভাব এবং খাদ্যের অভাবে মানুষ যখন দিশেহারা তখনই যাদের
শক্তি বেশী ছিল তারা অন্য গোত্রের মানুষের উপর আক্রমণ চালাত এবং পশু,
খাদ্য দ্রব্য লুণ্ঠণ ও মানুষ হত্যা করত। মানুষের মধ্যে জন্ম হয় হিংসা
বিদ্বেষ, লুটপাট, দখল ও হত্যার রাজত্ব। এজন্য মূল্য পায়নি সমাজের
পেশীশক্তির মানুষের কাছে অপেক্ষাকৃত দূর্বল মানুষেরা। এসব প্রথায় ভূমি
অধিকারী জমিদারদের অসামঞ্জস্য নীতি বা শোষণের কাছে খেটে খাওয়া দিন মজুর,
কৃষক, বর্গাচাষী সহ শ্রমজীবি মানুষের স্বপ্ন নিস্পেষিত হয়েছে যুগ যুগ
ধরে। ফলে নিচুস্তরের মানুষের সাথে উচু স্তরের মানুষের অর্থনৈতিক বৈষম্য
তৈরী হয়। অর্থনৈতিক বৈষম্য মানুষকে মানুষের দুঃখ দুর্দশা বুঝার চেয়ে
প্রভুত্ব প্রথার জন্ম হয়। শুরু হয় দূর্বলের উপর সবলের অত্যাচার,
নির্যাতন। ফলে এসব প্রভুরা তাদের ইচ্ছেমত ভূমি দাস, ক্রীতদাস প্রথা
চাপিয়ে দিয়েছে। মানুষের মধ্যে সামাজিক বৈষম্য বেড়েই চলছে। যাদের
অর্থনৈতিক ক্ষমতা যত বেশী তারা ততবেশী রাজত্ব করেছে, লুটপাট করেছে,
মানুষকে অমানুষে পরিণত করেছে। বর্তমান আধুনিক বিশ্বের উৎকর্ষতায় তীর,
বল¬ম, দা, খুন্তি, কুড়াল এসবের পরিবর্তে এক সময়ের ক্ষমতাবান মানুষের
দস্যূরূপ এখন অস্ত্র সন্ত্রাসীতে পরিণত হয়েছে। ১৯৩৯-১৯৪৫ সালের দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির উপর ভয়াবহ পরমাণু
বোমা হামলা মানব ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্যতম সময় আধুনিক অস্ত্র বিশ্বে।
ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়েছে সমাজের বিত্তবান অসাধু মানুষের হাতে। গরীব চিরতরে
গরীব হয়েই দিনাতিপাত করছে। শিল্পের বিকাশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কিছুটা
আর্থিক সংস্থান হলেও বহু গুণে বেড়ে গেছে পুজিবাদ, বুর্জোয়াবাদ ও
সাম্রাজ্যবাদ। সমাজের প্রতিটি স্তরে মধ্যস্বত্ব ভোগী স্থান দখল করে
নিয়েছে। ফলে একচেটিয়া মুনাফাভোগী মানুষ আভিজাত্য আর বিলাসী জীবন যাপনে
অভ্যস্থ হয়ে যায়। ফলে শ্রমজীবি মানুষ তাদের অবস্থার পরিবর্তন খুব একটা
করতে পারেনি। মে দিবস যতই জানান দিক শ্রমের নির্ধারিত সময় ৮ ঘন্টা।
কিন্তু অত্যাধুনিক বিশ্বে এ প্রমাণ এখনো মুটে মুজুরদের ভাগ্যে জোটেনি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে দেখা যায় গার্মেন্টস শিল্প কিছুটা পরিবর্তন হলেও
ওভার টাইম নামে শ্রমিকদের এখনো সঠিক শ্রমের মূল্য দেয়া হয় না। বরং
একশ্রেণীর অসাধু লোক এ ধরণের শিল্পকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। খেটে
খাওয়া শ্রমিকদের দূর্বলতার সুযোগে তাদের দিয়েই তাদের কর্মসংস্থানের
শিল্পে বার বার আঘাত করছে। আবার মালিক পক্ষও খুব যে তাদের সুবিধা দিচ্ছে
তা কিন্তু নয়। শ্রমিকের চাকুরী ও চাটাই সংক্রান্ত কোন স্পষ্ট নিয়ম নীতি
না থাকায় এবং যতটুকু আছে তা সঠিক বাস্তবায়নের অভাবে যখন তখন শ্রমিক
অর্ন্তভুক্তি ও মালিকের ইচ্ছেমত চাটাই ব্যবস্থা শ্রমিকের জীবন যাপন
অনিরাপদ হয়ে পড়ে। ফলে শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে যায়। এ সুযোগে এক শ্রেণীর
লোক তাদের কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটে। অনেক ক্ষুদ্র শিল্প আছে যেখানে এখনো
শ্রমের নির্ধারিত কোন সময় নেই। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ সার্বজনীন মানবাধিকার
ঘোষণা করে। এই ঘোষণা অনুযায়ী একটি সাধারণ মাপকাঠি স্থির করে ধনী-দরিদ্র,
সবল-দুর্বল, পুরুষ-নারী, জাতি-ধর্ম সকল মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করার
দায়-দায়িত্ব স্বীকার করে নেয়। অষ্টাদশ শতকে ফরাসি বিপ¬বের মাধ্যমে ইউরোপে
বুর্জোয়া-বিপ¬বের শে¬াগান ঘোষিত হয়। মার্কসিস্টরাও বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে
দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন করে। অনেক দেশেই মার্কবাদী সরকার প্রতিষ্টিত হয়।


   কলকারখানায় শ্রমজীবি মানুষকে দৈনিক ১৬ ঘন্টা কাজ করতে হতো। কিন্তু মজুরী
দেয়া হতো সে তুলনায় কম। এ ব্যবস্থায় শ্রমিকদের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য
এবং অমানুষিক পরিশ্রমে দিন দিন ক্ষোভ জমা হয়। তারা প্রতিবাদ করার চেষ্টা
করে। কিন্তু তাদেরকে বাধ্য করা হয় ধারাবাহিকভাবে ১৬ ঘন্টা কাজ করতে। এ
অমানবিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণী ধীরে ধীরে সংঘŸদ্ধ হতে থাকে।
গঠন করে বিভিন্ন নামে শ্রমিক সংগঠন। একত্রিত হয়ে তারা ৮ ঘন্টা কাজের সময়
নির্ধারণ করার দাবী করে। আন্দোলন দানা বাধতে থাকে । এক সময় তা বিক্ষোভে
রূপ নেয়। বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদ একত্রিত হতে থাকে। এই ৮ ঘন্টা কাজের জন্য
সময় নির্ধারণ বিষয়ে প্রথম ৮ ঘন্টা শ্রম, ৮ ঘন্টা মনোরঞ্জন ও ৮ ঘন্টা
ঘুমের তত্ত্ব দিয়ে অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরতে ইংল্যান্ডের সমাজ বিজ্ঞানী
রবার্ট ওয়েন বেশ আড়োলন সৃষ্টি করেন। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক।
প্রথম প্রতিবাদ জানায় 'হে' মার্কেটের শ্রমিকরা। ১৯৮৬ সালের এপ্রিলের শেষে
দিকে আন্দোলন আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। পরবর্তীতে ১ মে, ১৮৮৬ সনের
আমেরিকার শিকাগো শহরে ৩ লাখেরও বেশী শ্রমিক ধর্মঘটের ডাক দেয়। পুঁজিবাদী
এবং মালিক শ্রেনী স্টিম রোলার চালায় শ্রমিকদের উপর। শুরু করে শ্রমিকদের
উপর গুলিবর্ষণ। শ্রমিকরাও তাদের অস্থিত্বের প্রশ্নে পাল্টা আক্রমন করে। ৪
এপ্রিল সভাস্থলে পুলিশ হাজির হয় শ্রমিক নেতা স্যামুয়েল ফিন্ডেন -এর
বক্ততা শেষে সবাইকে সভাস্থল ছাড়ার নির্দেশ দিলে বোমার আঘাতে ২ পুলিশ
সদস্য মারা যায়। শুরু হয় জনতা পুলিশ গোলাগুলি হয়। পরবর্তীতে শ্রমিকরা
গ্রেফতার হয় ৮ জন। এদের মধ্যে ৭ জনের মৃত্যুদন্ড ১ জনের ১৫ বছরের জেল
হয়। আমেরিকার ইলিনয়ের গভর্ণর রিচার্ড জেমস ১৮৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ফিন্ডেন
ও স্ত্রোয়ারের মৃত্যুদন্ড মওকুপ করে যাবৎজীবন কারাদন্ড দেন। বাকী ৫ জনের
বিপ¬বী লিঞ্জ নিজের তৈরী বোমায় মারা যান বন্দী অবস্থায়। অন্যরা ১১
নভেম্বর পারমন্স, স্পাইস, ফিসার ও অ্যাঞ্জেলকে ফাঁসীতে ঝোলানো হয়। এদের
মধ্যে বিপ¬বী স্পাইস বলেছিলেন- ''এমন একদিন আসবে যেদিন আমাদের নীরবতা
তোমরা যে কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে চাও, তার চেয়েও শক্তিশালী হবে।" আন্দোলনে
শুরুতে প্রায় ১০ জন পরবর্তীর্তে আরো ৮ জন শ্রমিক মারা যায়। এ আন্দোলন
ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বের আনাচে কানাচে। অব্যাহত আন্দোলনে ১৪ জুলাই, ১৮৮৯
সালে ফ্রান্সের প্যারিসে ২য় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ
সম্মেলনে শ্রমিক সংগঠন ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের আইনী বৈধতা সহ ৮ ঘন্টা কাজের
সময় স্বীকৃতি পায়। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা নিয়ে তারপরও
তালবাহানা করতে থাকে। আবারও শ্রমজীবি মানুষ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয় ১৮৯১
সনে। একপর্যায়ে চলতে থাকে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা। এরপর
সমঝোতা হয় আমেরিকান কংগ্রেসে ১৮৯৪ সালে ১ মে দিনটি আর্ন্তজাতিক শ্রমিক
দিবস এবং এ দিন সাধারণ ছুটির দিন ধার্য হয়। সারাবিশ্বে সেই হচ্ছে মে
দিবসের সূচনা। যা বর্তমানে স্বাভাবিকতায় রূপান্তরিত হয়েছে। সভ্যতার নতুন
দিক উম্মোচন করে মুদ্রা ব্যবস্থা। মুদ্রা ব্যবস্থার পথ ধরেই শুরু হয়
বাণিজ্যের প্রসার। মুদ্রা ব্যবস্থা প্রসারের সাথে সাথে মানুষ আরো বেশী
রকমের ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে ওঠে। ফলে বর্তমান সমাজে মানুষের মধ্যে কয়েকটি
স্তুরে মানুষের শ্রেণী বিভাগ হয়েছে। আর এর সাথে পাল¬া দিয়ে বাড়ছে
বৈষম্যও। বিশ্ব আধুনিক হলেও আজও শ্রমিক পায়নি ন্যায্য মজুরী। পায়নি
সামাজিক মূল্যবোধ, অর্থনৈতিক মুক্তি, রাজনৈতিক অধিকার এবং গণতান্ত্রিক
ব্যবস্থায় পায়নি নাগরিক সুবিধা ও অবাধ মত প্রকাশের স্বাধীনতা। শ্রম আইনের
সুফল পায়নি নিচুস্তরের শ্রমিক। উচ্চস্তরে উন্নত শ্রমিকরা এসব আইনের ধার
ধারে না বরং এসবের উর্ধ্বেই জীবন যাপন করে। ফলে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়
হতে সকল পেশায় মানুষের মধ্যে বিস্তর বৈষম্য ও অসন্তোষ বেড়ে গেছে। ১৯১৭
সালে রুশ বিপ¬ব মূলত অভিজাততন্ত্র, ধর্মযাজকদের প্রভাব ও দমন পীড়ন নীতির
জন্যই সংঘটিত হয়। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ১৮৬১ খ্রীষ্টাব্দে রাশিয়ার
ভূমিদাস শ্রেণীকে মুক্তি দিয়েছিল। কিন্তু এ সময়ে কৃষকদের খুব একটা উন্নতি
হয়নি। একই সময়ে পোল বিদ্রোহে দ্বিতীয় জার দমন নীতি অনুসরণ করেন। একই ভাবে
তৃতীয় জার এসে বিপ¬বী ও উদারনীতিকদের দমন করেন। পরবর্তীতে দ্বিতীয়
নিকোলাসের সময়েও রাশিয়ায় সামন্ততান্ত্রিক ও বৈদেশিক পুঁজিবাদ শাসিত সমাজ
ও রাষ্ট্রব্যবস্থা বিন্দু মাত্র পরিবর্তিত হয়নি। উপরন্তু অভিজাত ও
ধর্মযাজকদের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। ১৯০৫ সালে ফ্যাদার গ্যাপনের শান্তিময় শোভা
যাত্রা সেন্ট পিটার্সবাগের পথে লাঠি ও গুলি বর্ষিত হয়। একই সময়ে
জার্মানীর সাথে রাশিয়া যুদ্ধে হেরে যায়। সামন্ততান্ত্রিক রাশিয়া দুর্বল
ছিল এবং জার কর্তৃক জনসাধারণের আশা আকাঙক্ষা অবহেলিত হয়। একই সাথে
জার্মানীর শ্রমিকদের সুংসগঠিত বৈপ¬বিক লেলিনের দল বলশেভিক পার্টি যুদ্ধে
জয় লাভ করে। ফলে রাশিয়া ভেঙ্গে যায়। এর প্রভাব সারাবিশ্বেই পড়ে। প্রথম ও
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর পরই দুটি ব¬ক তৈরী হয় আমেরিকা পুঁজিবাদ
ব্যবস্থা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিজম ব¬ক তখনই মানুষের বৈষম্য সবচেয়ে
ব্যাপক ভাবে বেড়ে যায়। যা আজও অব্যাহত। বাংলাদেশে একের পর এক শিল্প
কারখানা গুলো ধবংস হচ্ছে দেশি বিদেশী ষড়যন্ত্রে। এক সময়ের সোনালী আঁশ
পাট। এখন শুধুই রূপ কথার গল্প এদেশের মানুষের কাছে। গার্মেন্টস থেকে
বিশাল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে বাংলাদেশ। সেই গার্মেন্টস হচ্ছে
প্রতিবেশী দেশ গুলোর ষড়যন্ত্রের শিকার। বর্হিবিশ্বে চামড়ার প্রচুর চাহিদা
থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। একের পর এক প্রতিটি গার্মেন্টসে
দাঙ্গা, আগুন, শ্রমিক নির্যাতন, হত্যা, লাভের তুলনায় শ্রমিকের মজুরী কম,
বেতন বৈষম্য ইত্যাদি অজুহাতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পোশাক শিল্প। দেশীয়
বিনিয়োগকারীগণ আগ্রহ হারাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের পোশাকের আন্তর্জাতিক বাজার
দখল করছে অন্য দেশ। তবে আশার কথা মানুষ জেগে ওঠেছে। শাহবাগ নতুন প্রজন্ম
সমাজের হাতিয়ার হিসাবে জেগে ওঠুক। বঞ্চিত মানুষ তাই চায়। কিন্তু তারা যেন
কমিউনিজমের বৃত্তবন্দী জালে আবদ্ধ হয়ে না পড়ে। শাহবাগ যাই হোক অন্তত:
মানুষকে আরেকবার নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেছে।
তাগিদ দিয়েছে সামনে অগ্রসর হবার। অনগ্রসর খাতে প্রযুক্তিমূলক অগ্রসর
ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবী। বাংলাদেশের মাইক্রোক্রেডিট ব্যবসার নামে
গ্রাম ও শহরে মানুষ সুদ ও ঋণের জালে ঘুরপাক খাচ্ছে। পুঁজিবাদ ও
সামাজ্যবাদী আচরণেই গড়ে তুলেছে অস্ত্রবাদী বিশ্ব। এর থেকে মুক্তির পথ
জানে না শ্রমজীবি খেটে খাওয়া নিরন্ন মানুষ। তবু সমাজের কলম সৈনিকরা সচেতন
ভাবে তাদের যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছে। নিশ্চয় একদিন মুক্তি আসবেই মানুষের
মনের। মনের মুক্তিই খুলে দিবে বিশ্বের অন্ধ পথের দুয়ার। দেখবে আলোর পথ
প্রতিটি মানুষ। প্রতিটি মানুষের পরিচয় হবে মানুষ। থাকবে না কোন ধরনের
বৈষম্যের বেড়াজাল।

-------------------------০০০০০------------------------------...


।।কবিতা।।


মে দিবস তুমি চেয়ে আছো কার চোখে ?



একখন্ড জন্তুর মাংস
টুকরো বরফের আশায়
আর্য জীবন পরোয়া না করে
পাথর, কাঠের হাতিয়ারে
বন্য পশু জীবন যাপন
নদী তীর ঘেঁষে পৃথিবীর সভ্যতা
শাখা প্রশাখায় বিস্তৃত
কলের লাঙ্গলে চাষবাস মাড়াই
যন্ত্রের কলধ্বনিতে নৌ জাহাজ
আকাশের বুকে সৌর বিমান
ইন্টারনেটে বিশ্ব ভ্রমণে গ্লোবাল মানুষ
মঙ্গলে অভিযান নতুন লোকালয়ের সন্ধ্যান
বছর ঘুরে মে দিবস আসে
নতুন নতুন সংকটে মেয়েলী কিশোর
কিশোরেরাও নিখোঁজের তালিকায় না ওঠায় নাম
মে দিন যাদের তৈরী তারাই নানা বিপত্তি বাদক
সংকূলে জড়িয়ে জীবন বিধি বিপরীতে
যানবাহনে নিরাপদ নেই নারী
ওঠতি কিশোর অপরাধী নানা ফাঁদে
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বেকার হাজার হাজার
রাজপথ ঘুমাতে পারে না কখনো
একদিন ঈশ্বরী পাটনী স্বপ্ন দেখেছিলেন
তার সন্তনরা যেনো থাকে দুধে ভাতে
মাছে ভাতে লোক ঐতিহ্যের বাঙালীর
খোলনৈচা উপড়ে আছে জাতীয় জীবনে

মে দিবস তুমি চেয়ে আছো কার চোখে ?
কোন্ প্রিয় প্রেম তোমার
অভাবের পেঁয়াজী ঝাঁঝে সালফার
মিশ্রিত হাইড্রোজেন বিক্রিয়া থামাবে

ভালোবাসার টানাপোড়েনে
দূরত্বে দূর পরশ্রী বুকের মানুষ
লালফিতে কপালে বাধা দুরন্ত লড়াকু ষাড়
হেরে যায় প্রতিঘাতে
মে দিবস আত্মহত্যা করছে শ্রম শিশুর শ্রমে
কখনো কখনো লাশ মিলে
গেরস্থের পানির ট্যাংকির ভেতর
পঁচা দুর্গন্ধে ঠিকনাহীন কুকুরেরা ডাস্টবিন পাহাদার

মে দিবস তোমার সফলতার গান শুনবে
বলেই সে দিন রেসকোর্সে লক্ষ লক্ষ প্রাণ
পদ্মার স্প্যানে দেখা যায় আশার বাণী
সমাজ জীবনে হাতুড়ির ভোতা শির
জং ধরা কান্তে কৃষকের জোড়াতালি
ক্ষুদে পন্ডিতের কাছে এখন আর সুখপাঠ্য নয়
এইম ইন লাইফ
বিবেকের ভেতর জমে যাচ্ছে পরাজয়ের গ্লানি শত

মে দিবস তুমি এসেছো আঠারো'শ শতকে
আর নাম নেই যাবার
বলো, ঘুরতে কি মন চায় না কখনো ?
লোকালয় থেকে দূরে কোথা ... ও
কোথায় তোমার সমতার মাপকাঠি !





জেগে আছে জন হেনরী



কৃষ্ণ আমেরিকান লোক কাহিনীর শক্তিমান বীর
জনপ্রিয় জন হেনরীর প্রতিবাদী মিছিল এখনও চলমান
পৃথিবীর শ্রম জীবিদের বুকের বারুদে
জেগে আছে হেনরীর টগবগে লাল রক্ত¯্রােত
আঠারশতকের সত্তর দশকে ভার্জিনিয়ার তালকোটের
সেই হাতুড়ি শ্রমিকের কণ্ঠ বেজে চলছে অবিরাম
বিশ্বের আনাচে কানাচে ঘরে ঘরে
সহোদরদের ভাটোয়ারায়
বাস্পীয় ইঞ্জিন নয় কেবল ইলেকট্রিক মেশিন
অত্যাধিক কম সময়ে কত কত ভারী ভারী
ক্রিয়াযজ্ঞ সম্পাদন করে যাচ্ছে মানুষের
মানুষকে পরিশ্রম থেকে নিস্কৃতি দিতে
যান্ত্রিক রোবট চলছে মানুষ রূপে
স্বাচ্ছন্দময় যাপিত জীবনে আরামের চরম পরিণতি
সময় কিনে নিচ্ছে অর্থ আর যন্ত্র
তবুও মানবিক মানুষ যেমন আছে
আছে পাশে আমানবিকও
কেবল প্রাপ্তির হিসাব নিকাশে
সহোদর বিচ্ছিন্ন হয় হৃদয় থেকে
স্ব-অধিকার দুয়ারে মে দিবস সতেজ সর্বদা ঘরে বাইরে।
==================================


 রীনা তালুকদার
কবি ও প্রাবন্ধিক 
বাংলাদেশ 


মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩