**টোটোওয়ালা**
বৃষ্টিটা বেশ জোড়েই নামলো। রাস্তার পাশের চা-এর দোকানের টিনের শেডের নিচে খানিক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে অলোক বুঝলো, না, আজ তার আর স্কুলে যাওয়া হল না। যা শুরু হয়েছে, সাথে একটা ছাতা ও নেই যে কিছুটা পথ এগিয়ে যায়, অগত্যা বাড়ি ফিরে যাওয়াই ভালো। আলোক যখন প্রায় মনস্থির করে ফেলেছে, ঠিক সেই সময় কোথা থেকে দেবদূতের মতো একটা ফাঁকা টোটো এসে হাজির। চালক হাঁক দেয়,"বাবু যাবেন নাকি" ? অলোক এক মুহূর্ত সময় না নিয়ে দৌড়ে এসে টোটোতে উঠে পরে, "চলো ভাই, নবপল্লী বিদ্যা মন্দির"। টোটো চলতে শুরু করে।হঠাৎ যেন আলোকের ভীষণ জরুরি কথাটা মনে পরে-"ভাই ভাড়া কত গো"? টোটোওয়ালা একগাল হেসে বলে, "বাবু ২০ টাকা দিয়েন,বুজতেই তো পারছেন জলঝড়ের বাজার"। কথাটা শুনে অলোক কেমন যেন রেগে যায়, খানিক গলা চড়িয়েই বলে, "দেখো ভাই ভাঁড়া তো ১০টাকা,আমি তাই দেব, যাবে তো বল,নাহলে থাক"। টোটোওয়ালা তার আধখাওয়া বিড়িটা ফেলে গাড়ির গতি বাড়ায়, রাস্তার গর্তে জমে থাকা জল বাঁচিয়ে এগিয়ে চলে।
টোটোটা খানিকটা পথ এগিয়েছে, ওমনি কালো কোট ধারী দুই উকিল হাত উঠিয়ে টোটোটা কে দার করায়, সটান চেপে বলে, "এই যে আমাদের একটু কোর্টে ছেড়ে দাও দেখি। তাড়া আছে"। টোটোওয়ালা অলোক কে দেখিয়ে বলে, "আজ্ঞে ওই বাবুকে ইস্কুলে নামিয়ে দিয়েই আপনাদের পৌঁছে দেব,এক মিনিট ও দেরি হবে না"। কথাটা উকিল বাবুদের পছন্দ হলো না, প্রায় রে রে করে, টোটো থেকে নেমে,চালককে ঘিরে ধরে, বেশ কিছু হম্বিতম্বী করেও যখন কাজ হল না, তখন নিচু গলায় বলতে থাকে, "আরে ভাই আমরা তো দুজন, তোর ডবল ভাড়া, ওনাকে বল না নেমে যেতে"। অলোকের বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে। টোটোওয়ালা কোনো কথা না বলে, একটা তীক্ষ্ণ হর্ন দিয়ে, গাড়িটা সজোরে চালিয়ে বেরিয়ে আসে। অলোক স্পষ্ট শুনতে পায় টোটোওয়ালার স্বগতোক্তি "শালা হারামি"।
************************************
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন